পৃথিবীর প্রথম অর্থনৈতিক বিশ্বযুদ্ধ
পৃথিবীর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ও
পৃথিবীর সর্বশেষ বিশ্বযুদ্ধ চলমান…
আজকের বাঙলাদেশের বর্তমান যে ধারায় ব্যাংকিং চলছে ইউরোপ তা গত শতকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে, যা তাদের জন্য বর্তমান Z-গ্রেড। আমাদের ব্যাংকিং এখনো পড়ে আছে Z-গ্রেডে আর ইউরোপ চলে গেছে A-গ্রেডে। এই অর্থনৈতিক বিশ্বযুদ্ধকালীন আমাদের বিধ্বস্ত ও বিপর্যয়কর ব্যাংকিং অবস্থার বড় রকমের সংস্কার প্রয়োজন। ইউরোপের গত শতকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া Z-গ্রেড পলিসি থেকে আমাদের আরও অগ্রসর সুপার A-গ্রেডে যেতে হবে। কারণ ইউরোপের যা জাগরণ ঘটার তা ঘটে গেছে, এবার জাগরণ হবে এশিয়ার। সেজন্য আমাদের রাজনীতি থেকে অর্থনীতি সহ যা কিছু আছে সব কিছুতেই বড় রকমের ভাঙচুর বা সংস্কার দ্রুত গতিতে হচ্ছে এবং আরও হবে। এই অর্থনৈতিক বিশ্বযুদ্ধের সাথে এশিয়ার জাগরণে আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে Z-গ্রেড থেকে সুপার A-গ্রেডে নিয়ে যেতে হবে। তার পূর্বে এই একবিংশের নির্মম বাস্তবতা সম্পর্কে সবারই স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। সময়ের চলমান বিশ্বের নির্মম বাস্তবতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে তবেই-না নিজেদের সবকিছু নতুনরূপে গড়া সম্ভব। তাহলে চলুন সেই নির্মম বাস্তবতায়…
.
বিনিময় কোনও ব্যবস্থা নয় সর্বোচ্চ বিকৃতি হলো বিনিময়
বিপর্যয়ে সবাই সমৃদ্ধ হতে পারে না, যার সঞ্চয়ে তথ্য সাথে পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা থাকে সেই বিপর্যয়ে সমৃদ্ধ হয়, বাকিরা বিপর্যয়ে বিপর্যয়ে সময়ের আবর্জনা হয়। চার দশক পেরিয়ে আসা জীবনে দেখার চোখ খোলার পর থেকেই, প্রতিটি বিপর্যয় জীবনে মুক্তি দিয়েছে সাথে আগামীর জন্য প্রস্তুত করেছে। তেমনি এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ছিল ২০২০-এর সমাপ্তকালীন। সেই সময়টিতে জীবন ছিল মৃত্যুর দরজায়, ১০০ দিবস ঊর্ধ্বে গৃহের আসবাব ও দেড়হাজার বই (পৃথিবীতে বইয়ের সংখ্যা খুবই সীমিত, বেশিরভাগই বই নামে মলাটবদ্ধ আর্বজনা) ছিল খোলা আকাশের নিচে রাস্তায়; কোথায় থাকব কীভাবে খাবো সবই ছিল অনিশ্চিত। এই চরম বিপর্যয় থেকেই স্পষ্ট হয় — মানুষের সবই বিকৃতি; এ বিকৃতির মধ্যে সর্বোচ্চ বিকৃতির নাম — বিনিময়।
মানুষের পৃথিবীর ইতিহাসে নানান ভাষায় হরেক গোত্রে অগণন সম্প্রদায়ে, সবাই চেষ্টা করেছেন নিজেদের মুক্তির মাধ্যমে মানুষের মুক্তির। এর মধ্যে তিন সম্প্রদায়ের তিনজন সাথে সর্বশেষে একজন দিয়েই উপস্থাপনের সমাপ্তি টানব। এদের কারোই দর্শন দার্শনিকতা তত্ত্ব তাত্ত্বিকতা বা ভাবনাচিন্তা নিয়ে এ লেখা নয়, মূল সমস্যা চিহ্নিতকরণে কিঞ্চিৎ এলেও আসতে পারে…।
তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথমজন ভারতীয় গৌতম বুদ্ধ। গৌতম প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে নিজের মুক্তির মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন, যাকে নাম দেন নির্বাণ। তার উপস্থাপিত নির্বাণ পেতে প্রথমে ব্যক্তিকে ভিক্ষু হতে হবে, অর্থাৎ ভিক্ষার হাত পাতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির অহং মুক্তিতে নির্বাণের পথে এগিয়ে নির্বাণপ্রাপ্তিতে ব্যক্তির মুক্তি ঘটবে। অথচ ভিক্ষাবৃত্তি বিনিময়েরই অংশ। গৌতম সাহেব মানুষের মূল সমস্যা চিহ্নিত না করেই মুক্তির চেষ্টা করেন।
তিন সম্প্রদায়ের দ্বিতীয়জন গ্রিসের প্লেটো। প্লেটো প্রায় ২৪০০ বছর পূর্বে মানুষের সুন্দর জীবনের জন্য রিপাবলিক নামে একটি গ্রন্থ লেখেন। সেই গ্রন্থে তিনি কল্পিত এক রাষ্ট্রের উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন। তার কল্পিত জগতকে অনেকে ইউটোপিয়া বলেন। সেই রিপাবলিক আজও প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির পাঠ্যগ্রন্থ হলেও তার কল্পিত রাষ্ট্র কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখানে উল্লেখ্য, পাশ্চাত্য তাদের নিজেদের ভূরাজনৈতিক রাষ্ট্র গড়ার প্রয়োজনে অগণন গ্রন্থের মতোই সেই অংশগুলো রিপাবলিক থেকে নিয়েছে, যা দৃশ্যমান বাস্তবতায় প্রয়োগযোগ্য। কথা হলো প্লেটো সাহেবও মানুষের মূল সমস্যা বিনিময় চিহ্নিত না করে এক কল্পিত জগতের মাধ্যমে মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন।
তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে তৃতীয়জন আরবের খাদিজা। খাদিজা প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন। তিনি তৎকালীন বৃহৎ আরবের অন্যতম কর্পোরেটর ছিলেন। যেহেতু বিত্তবান তাই তিনি ভিক্ষা দিয়ে মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন। তার সেই ভিক্ষাদান পরবর্তীতে মুহম্মদ ও তার অনুসারীদের মাধ্যমে আরবীয় ভাষিক রূপ পায় কর্যে হাসনা ও যাকাত। খাদিজা ম্যাডামও পূর্বের দু’জনের মতোই মূল সমস্যা বিনিময় চিহ্নিত না করেই মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন, বিনিময়ের ভিক্ষাদানের মাধ্যমে।
গৌতমের ভিক্ষা নিয়ে, প্লেটোর কল্পিত জগতে, খাদিজার ভিক্ষা দিয়ে মুক্তির চেষ্টা বৃথায় হারালো; মূল সমস্যা বিনিময় রয়েই গেল।
এবার সমগ্র বিশ্বের প্রেক্ষাপটে কার্ল মার্কস মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন। সব মানুষ মুক্তি পেয়ে যাবে অর্থনীতিতে সমতা এলে, সবার মুক্তি ঘটে যাবে অর্থনৈতিক সাম্যবাদে। যাকে মার্কসীয় তন্ত্রবাদীরা বলেন — দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী সমাজতন্ত্র। মার্কস সাহেবও পূর্বজদের মতোই বিনিময় মূল সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেননি; উল্টো তিনি মূল সমস্যাকে জটলা পাকিয়ে করেন রাষ্ট্রীয় মালিকানা বা সামাজিক মালিকানার বিনিময়।
মোটের উপর বলতে গেলে এরা কেউই বিনিময় যে মানুষের সর্বোচ্চ সমস্যা তা চিহ্নিত না করে উল্টো বিনিময়কে পাশ কাটিয়ে মানুষের মুক্তির চেষ্টা করেন; যার ফলে আজও পৃথিবীর কোথাও মুক্তি ঘটেনি। পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক বিনিময়ের মাধ্যমে জাগরণ ঘটালেও পাশ্চাত্য সহ গোটা পৃথিবীর কোথাও মানুষের মুক্তি ঘটেনি। মানুষ শুধু তার নিজ স্বার্থে প্রকৃতি থেকে আলাদা হয়ে তার মস্তিষ্ক দিয়ে … রাজনীতি ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান (?) সহ যা কিছু বানিয়েছে আজ সবই তার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মস্তিস্ক দিয়ে বানানো কল্পিত ও পরিকল্পিত কোনও কিছুই কর্ম/কৃতি নয়, সবই তার বিকৃতি; তার চূড়ান্ত বিকৃতি হলো বিনিময়। বিনিময় কোনও ব্যবস্থা নয়, মানুষের সর্বোচ্চ বিকৃতি হলো বিনিময়।
.
সব মানুষ প্রত্যক্ষে পরোক্ষে নিজেই নিজেকে দাস বানিয়েছে
শুধু মানুষের পৃথিবী যারা চালাচ্ছে ও যাদের দিয়ে চালাচ্ছে…
বর্তমান মানুষের পৃথিবী চালাচ্ছে বিশ্বব্যবসায়ীরা। এই মানুষকে পরিচালনার জন্য বিশ্বব্যবসায়ীরা তিন ভাগে একাধিক শ্রেণী পেশার মানুষকে দালাল নিয়োগ করেছে।
.
প্রথম শ্রেণীর দালাল
বিশ্বব্যবসায়ীদের প্রথম শ্রেণীর দালাল হলো রাজনীতিবিদেরা, এ রাজনীতিবিদরা বেশিরভাগই জানে তারা ব্যবসায়ীদের নিয়োগকৃত দালাল। যে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দল যতদিন ব্যবসায়ীদের স্বার্থ হাসিল করে দিতে পারে, তার ও দলের ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ততদিন; যখন সেই ব্যক্তি ও দল স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয় তখনই তার পতন ঘটানো হয় কোথাও সংবিধানের কোথাও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে : সমগ্র বিশ্বে যেখানে যত রাষ্ট্রপ্রধান আছে সবাই ব্যবসায়ীদের বসানো দাস সরকার। তাহলে বিশ্বজুড়ে যে নির্বাচন হয় এসব কি? নির্বাচনের নামে বিশ্বে যা হয় তা হলো নির্ধারণ। এ নির্ধারণ পাশ্চাত্যে হয় সূক্ষ্মভাবে আর প্রাচ্যের সর্বাধিক দেশে স্থূলভাবে হয়; সহজব্যাক্যে বললে, যেখানে দৃশ্যমান বাস্তবতার (মুক্তি নয়) জাগরণ ঘটেছে সেখানে হয় সূক্ষ্ম, যেমন পাশ্চাত্যে এমেরিকা বৃটেন জার্মানি ফ্রান্স ইতালি…। ব্যবসায়ীদেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান আছে যাকে প্রচলিত ভাষায় বলে গণমাধ্যম, মূলত ওটা গণমাধ্যমের নামে আবর্জনামাধ্যম, যাকে একশব্দে বলে নিউজমিডিয়া। পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলোতে ব্যবসায়ীরা প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয় বা নির্ধারণ করে ওই দল বা ব্যক্তি তাদের জন্য ভালো, তারপর তাদের প্রতিষ্ঠান সেই মিডিয়ার মাধ্যমে দাসকানাদের (রাজনীতি যাদের দাস করে রেখেছে ধর্ম যাদের কানা করে রেখেছে সেই দাসকানাদের) বোঝায় এই দল ও ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভালো। তখন পাশ্চাত্যের দাসকানারা ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দল ও ব্যক্তিকে দিনের আলোয় ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে। অন্যদিকে প্রাচ্যের দু’চারটি রাষ্ট্র ব্যতীত বাকি সকল দেশে নির্ধারণ হয় স্থূল; অর্থাৎ যেসব স্থানে দৃশ্যমান বাস্তবতার জাগরণ ঘটেনি উল্টো কল্পিত চরিত্রকে কেন্দ্র করে কল্পিত জগতে আজও যারা পড়ে আছে। প্রাচ্যের স্থূল নির্ধারণ হয় রাতের আঁধারে ব্যালট ভর্তি করে আর বাকি ভোট দিবসে দেয় দাসকানারা, এই যেমন বাঙলাদেশ ভারত পাকিস্তান সহ অন্যান্য দেশে। কোথাও এতই স্থূল যে কোনও ভোটাভুটি নয় সরাসরি বসিয়ে রেখেছে, বৃহৎ আরব আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে যা রাজতন্ত্র নামে পরিচিত। ভোট দেয় দাসকানারা আবার ভোট দেয় না এই দাসকানারা। যার প্রমাণ ২০২৪-এর ৭ জানুয়ারি বাঙলাদেশে যে নির্ধারণ হয় সেদিন গড়ে ৯০% দাসকানারা ভোট দেয়নি। এখানে উল্লেখ্য, ভোটাভুটি জনগণের বিষয় নয়, তাই ভোট না দিলেই যে তারা জনগণ তা কিন্তু নয়, ভোটাভুটি থেকে নিবৃত্ত থাকা জনগণের অগণন পেশাদারিত্বের মধ্যে একটি বিষয়। জনগণ ও দাসকানাদের মধ্যে তফাৎ হলো দাসকানারা রাজনীতিসচেতন নয়, আর জনগণ রাজনীতি সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন হয়েও রাজনীতি অতিক্রম করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যা তার ভ্যাট/করে চলে সেদিকে মনোযোগ দেয়া। পুরো পৃথিবীতে জনগণ খুবই সীমিত, আর যেসব অঞ্চলে দৃশ্যমান বাস্তবতার জাগরণ ঘটেনি বিশেষ করে প্রাচ্যে জনগণ এতই সীমিত ১/২ লক্ষের মধ্যে মাত্র ১/২ জন জনগণ বাকিরা দাসকানা। ব্যবসায়ীদের মনোনীত প্রথম শ্রেণীর দালাল হলো রাজনীতিবিদ যারা সর্বাধিক জানে তারা ব্যবসায়ীদের মনোনীত দালাল; এর মধ্যে ডান বাম মধ্য উগ্রপন্থী সহ সকল রাজনীতিবিদ আছে।
.
দ্বিতীয় শ্রেণীর দালাল
প্রথম শ্রেণীর দালালরা সর্বাধিক বুঝতে পারলেও দ্বিতীয় শ্রেণীর দালালরা অতীব সামান্য কিছু পেশার মানুষ বুঝতে পারে, বাকি সর্বাধিক নিজের অজান্তেই ব্যবসায়ীদের দালালি করে যায়। এদের মধ্যে যে বুঝতে পারে সে কোনও হট্টগোলে না থেকে নীরবে নিজের ধান্দা করে যায়। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর পেশাদার দালালদের সাধারণ মানুষ মহান পেশার মানুষ ভাবে; বিনিময়ী বিকৃতিতে কেউই মহান বা তুচ্ছ নয় সবাই দাস, কেউ সরাসরি দাস কেউ দাস পরিচালনায় দাসানুদাস। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর দালালদের মধ্যে আছে শিক্ষক চিকিৎসক জজ ব্যারিস্টার, সাংবাদিক ব্যাংকার এনজিও পেশাজীবী সামরিক আধাসামরিক, ছাত্র আন্দোলকারী (ছাত্ররাজনীতি নয়, এরা বস্তাপচা আবর্জনা) সহ অগণন পেশার মানুষ। সহজভাবে বললে, এরা হলো বইপড়ুয়া বইপড়ানেওয়ালা বইলেখকদের দল। এই দ্বিতীয় শ্রেণীর দালালদের মধ্যে আছে ডান বাম মধ্য উগ্রপন্থী বুদ্ধিজীবী এমনকি ব্যক্তিক ও প্রাতিষ্ঠানিক গবেষক বিশেষজ্ঞের দল। বিনিময়ী বিকৃতিতে গ্রামসির অর্গানিক বুদ্ধিজীবী বইয়ের পৃষ্ঠায় লিখিত কিছু কথা ব্যতীত আর কিছু নয়, বর্তমান পৃথিবীতে অর্গানিক বুদ্ধিজীবীর অস্তিত্ব বিশ্বের কোথাও নেই।
.
তৃতীয় শ্রেণীর দালাল
প্রথম শ্রেণীর দালালরা সর্বাধিক বুঝতে পারে, দ্বিতীয় শ্রেণীর দালালরা খুব স্বল্পসংখ্যক বুঝতে পারে; অথচ তৃতীয় শ্রেণীর দালালরা কেউই বুঝতে পারে না তারা ব্যবসায়ীদের মনোনীত দালাল। তৃতীয় শ্রেণীর দালালরা নিজের অজান্তে ব্যবসায়ীদের দালালি করে যায়। এই তৃতীয় শ্রেণীর দালালরা বোঝে কম চিৎকার করে বেশি, এদের মধ্যে নানান পেশার মানুষ আছে।
এক শ্রেণী উপাসকের দল, ইয়াহুদির রাব্বি খৃস্টানের যাজক মুসলমানদের মোল্লা সনাতনের পুরোহিত ঠাকুর বুদ্ধিস্টদের অর্হৎ সহ মন্ত্রবাদী ৪২০০+ ধার্মিকের দল।
আরেক শ্রেণী নানাবিধ বিষয়ের ফ্যাশনিস্ট আন্দোলনকারী, আরো আছে ফ্যাশনিস্ট ডান বাম সহ নানান ছাত্রআন্দোলকারী। এ আন্দোলনকারীরা বোঝে কম চিৎকার করে বেশি, তার একটি উদাহরণ — বাম ছাত্ররাজনীতির উঠতি এক ছেলে জীবনানন্দ দাশকে বলছে : ‘আপনার লেখা কবিতায় বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নিপীড়িত বঞ্চিতদের কথা নেই, আপনি তো বুর্জোয়া!’ তখন জীবননান্দ সে-উঠতি ছেলেকে বলেন : ‘তুমি কি পুরো দাস ক্যাপিট্যালটা পড়েছ?’ ছেলেটি বলে : ‘না।’ সাথেসাথে জীবনানন্দ তাকে বলেন : ‘পুরো দাস ক্যাপিট্যাল আমার পড়া আছে, আগে তুমি দাস ক্যাপিট্যালটা পড়ো তারপর এসো আমার কাছে।’ কথা হলো জীবনানন্দ দাশ পৃথিবীর নানাবিধ ভাবনাকে জড়ো করে আনুভূতিক আকুতিতে কবিতার আঙ্গিকে তার লেখা প্রাকাশ করেন, তিনি কেন নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক তন্ত্রের দাস হবেন?
এই ফ্যাশনিস্ট আন্দোলনকারীদের মধ্যে আরও আছে পরিবেশবাদী, যারা নিজেদের দম্ভ নিয়ে বলে ‘পরিবেশ আন্দোলনকর্মী’ (?)। এরাও বোঝে কম চিৎকার করে বেশি, উদাহরণে বলা যায় — প্রত্যেক প্রাণীর বিবর্তনীয় রূপান্তরে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ ঘটেছে; কুকুরের নাসিকা যার মাধ্যমে কুকুর বহুদূর থেকে ঘ্রাণ পায়। বিড়াল পেঁচা অন্ধকারে দেখতে পায় তাই তাদের চোখের বিকাশ ঘটেছে। মানুষের কিঞ্চিৎ মস্তিষ্কের বিকাশের সাথে সামনের পা হাতে রূপান্তরিত হয়েছে। এভাবে জলে স্থলে সর্বত্র সব প্রাণীরই কোনও না কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশে বৃক্ষেরও শিকড়ের বিকাশ ঘটে। বৃক্ষ বিকশিত শিকড়ের মাধ্যমে নির্ধারিত দূরত্বে প্রতিটি বৃক্ষ সহ তৃণলতা নিজেদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মাটির নিচ দিয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে কর্মতথ্য আদানপ্রদান করে। এখন কথা হলো, সেই বৃক্ষ বা তৃণলতা যদি কোনও পাত্র/টব বা সিমেন্টঢালাই দেয়া নিচ ও চারপাশে দেয়ালে বন্দী হয়ে যায়, তখন সেই বৃক্ষ আর অন্যদের সাথে কর্মতথ্য আদানপ্রদানে ব্যর্থ হয়ে পুরোপুরি নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। এই ফ্যাশনিস্ট পরিবেশবাদীরা বিষয়টি বিন্দুপরিমাণও অবহিত না হয়ে নিজ আবাসালয়ে পাত্রে/টবে বা অন্যভাবে বৃক্ষপ্রেমের নামে সেই বৃক্ষকে নিঃসঙ্গ করে বৃক্ষসম্প্রদায়ের স্বাধীনতা হরণ করে। ওহে ফ্যাশনিস্ট পরিবেশবাদী সহ সকল মানুষ সম্প্রদায়, তোমরা পাত্রে বৃক্ষ, খাঁচায় পশুপাখি, কাচের খাঁচায় মাছেরা সহ অগণন সম্প্রদায়ের স্বাধীনতা হরণের কাজ করছ; আজ গৃহে বাইরে সর্বত্র বদ্ধ মন্ত্রতন্ত্রে তোমরা নিজেরাই নিজেদের স্বাধীনতা হরণ করেছ।
নারীবাদ সুন্দর, উগ্র নারীবাদ বিরক্তিকর। এই উগ্র নারীবাদীরাও বোঝে কম চিৎকার করে বেশি। এ উগ্র নারীবাদীরা দেড় হাজার বছর পূর্বের বৃহৎ আরবের সংস্কৃতি জাগরণে চেষ্টাকারী মক্কাকালীন মুহম্মদের প্রধান প্রশিক্ষক খাদিজার খবরই জানে না। দেড় হাজার বছর পূর্বে খাদিজা ম্যাডাম চেষ্টা করেছিলেন মুহম্মদের মাধ্যমে, তৎকালীন গোত্রে গোত্রে দ্বন্দ্বে লিপ্ত বৃহৎ আরব যেন সকলে মিলেমিশে একটা বৃহৎ সাংস্কৃতিক আরব হয় এবং আরবের জাগরণ ঘটে। কিন্তু খাদিজার সেই চেষ্টা তার অদৃশ্যায়ন (মৃত্যু)-র সাথেসাথে অবদমিত হয় মুহম্মদ যখন মদিনায় চলে যান। আজকের ইসলামিক আধ্যাত্মিক সুফিবাদ বলে যে বিষয়টি চলমান তার সূত্র-সূচনায় খাদিজা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন। এই উগ্র নারীবাদীরা পেছনের দেড় হাজার বছর পাঠ দূরে থাক, এই সেদিনের রোকেয়া সাখাওয়াতকে খণ্ডিত পাঠে তকমা দিয়েছে — ‘রোকেয়া নিম্নবিত্তের নারীবাদী নন, তিনি উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের নারীবাদী।’ উগ্র নারীবাদীদের এসব খণ্ডিত জেনে বিকৃত বোঝে বিভ্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ তাদের উত্তেজনা, উত্তেজনা পর্যবেক্ষণের জন্য ধ্বংসাত্মক।
আরেক শ্রেণী আছে যারা প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার নামে কর্মহীন আমি/ইগো রোগে আক্রান্ত — কর্মহীন ‘না না’ চিৎকারকারী। প্রতিষ্ঠান কি সেই তথ্যটাই তাদের কাছে স্বচ্ছ নয়, এর পূর্বেই উত্তেজনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার নামে পেশাদারিত্বহীন ‘না না’ চিৎকার করে। অ-প্রতিষ্ঠান হলো ভাঙা বা বিনির্মাণ আর প্রতিষ্ঠান হলো সেই বিনির্মাণকে নিয়ে চলমান। মহাবিশ্বের দিকে দেখলে দেখা যায় সর্বত্র ভাংচুর বা বিনির্মাণ বা বিশৃঙ্খলা; আবার এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেই খুবই সূক্ষ্মভাবে শৃঙ্খলা বিরাজমান । মহাবিশ্বের এই চলমান বিশৃঙ্খলা বা বিনির্মাণ হলো অ-প্রতিষ্ঠান আর এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে সূক্ষ্ম শৃঙ্খলা বা নির্মিত চলমান অবস্থার নাম প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানবিরোধী বলে মহাবিশ্বে কিছুই নেই, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা মানুষ সম্প্রদায়ের সময়অপচয়ী বানানো বিকৃতি ব্যতীত আর কিছু নয়।
এই তৃতীয় শ্রেণীর দালালদের মধ্যে বেশ মজার একটা শ্রেণী আছে যারা আদর্শবাদী দল। যেমন — এক টাকার ডাক্তার, বিনে পয়সার শিক্ষক…।
এই তৃতীয় শ্রেণীর দালাল উপাসকের দল, বিবিধ বিষয়ে ফ্যাশনিস্ট আন্দোলনকারী আদর্শবাদী সহ অগণন পেশার মানুষ। যারা বোঝে কম চিৎকার করে বেশি, তারা নিজের অজান্তে ব্যবসায়ীদের দালালি করে যায়।
তিন শ্রেণীর দালালদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা পুরো পৃথিবীর দাসদের পরিচলনা করে থাকে। পূর্বে দাস বাজারে ক্রয়বিক্রয় করা হতো, এখন দাস তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠান (বিদ্যালয়/দাসবাজার) করে তোলা হয়েছে। প্রাথমিক সনদপত্র [মূলত ওটা দাসত্বপত্র] সহ দাস, মাধ্যমিক দাসত্বপত্রের দাস, উচ্চ অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাসত্বপত্রের দাস। এইসব দাসত্বপত্রযুক্ত দাসদের মধ্যে কেউ কেউ উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসায়ীদের দলে চলে যায়, অন্যরা তিন শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের দালালিতে যুক্ত হয়, বাকি সর্বাধিক দাসই থেকে যায়। এছাড়াও অগণনের দাসত্বপত্র না থাকায় তারাও দাসই হয়।
মোটের উপর বলতে গেলে, দশ হাজার বছরের পরিক্রমায় সব শ্রেণীর মানুষ প্রত্যক্ষে পরোক্ষে নিজেই নিজেকে দাস বানিয়েছে। কেউ দাস পরিচালনায় দাসানুদাস কেউ সরাসরি দাস।
এ গেল মানুষের পৃথিবীর কথা। পৃথিবীতে মানুষ ছাড়াও জলে স্থলে অসংখ্য প্রাণী আছে তাদের কে বা কারা প্ররিচালিত করছে? মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীদের (গৃহপালিত ব্যতীত) কেউ পরিচালনা করছে না তারাও কাউকে পরিচালনা করছে না। মানুষ ব্যতীত সমগ্র যে-যার মতো চলে যাচ্ছে।
.
এই একবিংশে শুধু মানুষ সম্প্রদায় বিলুপ্ত হবে নতুবা তারা সম্ভাবনার সূচনা ঘটাবে
একবিংশ শতাব্দী পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর মানুষের জন্য বিপজ্জনক নতুবা আনন্দদায়ক। পূর্বেই উল্লেখ করেছি মানুষের চূড়ান্ত বিকৃতি হলো বিনিময়। মানুষ মাথা দিয়ে যা-কিছু বানিয়েছে সবই তার বিকৃতি; তার ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান রাজনীতি সহ আরও অগণন বিকৃতির পর বিকৃতিতে নিজেই বিকৃত হয়ে গেছে। তার মাথা দিয়ে বানানো সকল বিকৃতি তার বিপক্ষে গেছে, তার ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান রাজনীতি তার বিপক্ষে গিয়ে চূড়ান্ত বিকৃতি বিনিময় তাকে পণ্য বানিয়েছে, তাকে পরাধীন করেছে, তাকে নিষ্প্রাণ যান্ত্রিক আঙ্গিকে রূপান্তরিত করেছে। তার বানানো চূড়ান্ত বিকৃতি বিনিময়ের জন্য এই একবিংশ শতাব্দীতে সে বিলুপ্ত হবে, যেভাবে ডাইনোসর থেকে ডোডো পাখি বিলুপ্ত হয়েছে। আবার বিনিময় সহ সকল বিকৃতি থেকে মানুষ মুক্তি নিতে পারে তবে তারা সম্ভাবনার সূচনা ঘটাতে যাচ্ছে। এখানে বলছি সম্ভাবনার সূচনা, মানুষের বর্তমান বিজ্ঞান তাহলে কি?
আমাদের গ্যালাক্সি বা অন্য গ্যালাক্সি থেকে যারা আমাদের পৃথিবীতে নিয়মিত আসছে যাচ্ছে কখনো অবস্থান করছে, তাদের বিজ্ঞানের কাছে আমাদের বিজ্ঞান জন্মগ্রহণই করেনি। তাদেরকে আমরা দেখতে পাই না কারণ আমাদের চোখের সেই বিকাশ ঘটেনি; হয়তো বিড়াল বা পেঁচা যাদের চোখের বিকাশ ঘটেছে তারা দেখতে পায়। মাঝেমাঝে কিছু বিড়াল কোনও কারণ ছাড়াই কোনও একদিকে নির্ভয়ে আনমনে তাকিয়ে থাকে, হতে পারে সেই বিড়ালটি অন্য গ্রহবাসীদের দেখতে পাচ্ছে তাই তাকিয়ে থাকে।
নক্ষত্রকেন্দ্রিক শক্তিকে কাজে লাগানোর উপর নির্ভর করে রাশিয়ান এক বিজ্ঞানী শক্তির পরিমাপ করেছিলেন। যে গ্রহবাসী তার গ্রহের দিকে আসা নক্ষত্রের বিচ্ছুরিত শক্তিকে কাজে রূপান্তরিত করতে পারে সে গ্রহবাসী A-গ্রেডে, যে গ্রহবাসী নক্ষত্রের চতুর্দিকে বিচ্ছুরিত পুরো শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে সে B-গ্রেডে, যে গ্রহবাসি তার নক্ষত্র সহ চারপাশের নক্ষত্রের বিচ্ছুরিত শক্তিকে কাজে রূপান্তর ঘটায় সে C-গ্রেডে, এভাবে D…; এখানে উল্লেখ্য, রাশান বিজ্ঞানী ABCD এভাবে না করে অন্যভাবে করেছিলেন, আমাদের সহজ বোধগম্যের উপস্থাপনে এই পরিক্রমা দেয়া হলো। আপনারা নিশ্চয় অবহিত আছেন আমাদের সৌরজগতের নক্ষত্র সূর্য প্রতিনিয়ত সর্বদিকে শক্তি বিচ্ছুরিত করছে। আমরা পৃথিবীবাসীরা সর্বদিকে দূরে থাক শুধু আমাদের পৃথিবীর দিকে আসা শক্তির ১৩০০০ ভাগের মধ্যে ২.৫ ভাগ কাজে লাগাতে পারছি; বলা যায় তেরো হাজার ভাগ শক্তিই আমরা কর্মে রূপান্তর করতে পারছি না। এখন কথা হলো, অন্য গ্যালাক্সিবাসী যারা শত সহস্র নক্ষত্রের শক্তিকে কর্মে রূপান্তর করে আমাদের মাঝে আসছে যাচ্ছে কখনো অবস্থান করছে, তাদের বিজ্ঞানের কাছে আমাদেরে বিজ্ঞান কিছুই না। এখানে উল্লেখ্য, মানুষের মাথা দিয়ে বানানো কল্পিত চরিত্র জ্বিন ভূত বা অ্যালিয়েন এগুলো পুরোটাই মানুষের বিভ্রান্তি। কারণ এসব কল্পিত চরিত্ররা ভয় লোভ দেখায় যা মানুষেরই বানানো বিভ্রম, এমনকি কল্পিত চরিত্র অ্যালিয়েন পৃথিবী ধ্বংস বা দখল করে নেয় অন্য গ্যালাক্সিবাসী দখল করবে কেন, যেখানে মহাকাশের অসীম অনন্তে অগণন শক্তিধর নক্ষত্র বিচরণশীল। অন্য গ্যালাক্সিবাসী আামদের গ্রহে আসছে যাচ্ছে অবস্থান করছে এমনকি তারা ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন আলোকবর্ষ দূর থেকে আমাদের বার্তা পাঠাচ্ছে। দূর থেকে প্রেরিত অন্য গ্যালাক্সিবাসীদের সেইসব বার্তা আমাদের অল্প বিকশিত মস্তিষ্কের তৈরি নাসা সহ আরও যত রাডারযন্ত্র তা ধারণ করতে পারছে না; কেননা অল্প বিকশিত মস্তিষ্কের তৈরি রাডারও অল্প বিকশিত বা অসম্পূর্ণ। এই অসম্পূর্ণ রাডারযন্ত্র কিভাবে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন আলোকবর্ষ দূর থেকে প্রেরিত বার্তা ধারণ করবে? তাই অন্য গ্যালাক্সিবাসীদের বিজ্ঞানের কাছে আমাদের বিজ্ঞান কিছুই না।
এখন কথা হলো, আমাদের বিজ্ঞানের কিভাবে সূচনা ঘটাব? প্রথমেই আমাদের ধর্ম দর্শন রাজনীতি বিজ্ঞান ও চূড়ান্ত বিকৃতি বিনিময় থেকে মুক্ত হতে হবে। আমরা মানুষেরা আধুনিক (?), পূর্বে আদিম যুগে ছিলাম প্রকৃতিতে, সেই প্রকৃতি থেকে সংস্কৃতিতে আসি, তার পরপরই ধর্ম দর্শন রাজনীতি বিজ্ঞান সহ বিনিময় বিকৃতির পর বিকৃতিতে নিজেদের হারাই। এখন আবারও ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান রাজনীতি সহ অগণন বিকৃতির পর চূড়ান্ত বিকৃতি বিনিময় থেকে মুক্ত হয়ে আবার সংস্কৃতি হয়ে প্রকৃতিতে যেতে হবে। তবে এবার এক প্রাণী আরেক প্রাণীকে খাওয়ার খাদ্যচক্র থেকে মুক্ত হয়ে সংস্কৃতি থেকে প্রকৃতিতে যেতে হবে। আমাদের সব প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য এক প্রাণী আরেক প্রাণীকে খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই; আামাদের বেঁচে থাকার জন্য বায়ু জল সৌরশক্তি আলো সহ আরও অনেক উপকরণ আছে। আমাদের মধ্যে বৃক্ষ হলো জীবন্ত উদাহরণ, সে কাউকে না খেয়েই দিব্যি বেঁচে আছে। যেহেতু মানুষের কিঞ্চিৎ মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটেছে সেহেতু মুক্তির এই পথটা তাকেই বের করতে হবে। মানুষ মুক্তির পথ বের করলেও এখানে সকল প্রাণীর অংশগ্রহণ থাকতে হবে। মানুষের যেমন কিঞ্চিৎ মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটেছে ঠিক একইভাবে আরও অন্য প্রাণীদেরও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ ঘটেছে। বিড়াল পেঁচার চোখের, কুকুরের নাসিকার, বৃক্ষের শিকড়ের, এভাবে জলে স্থলে সর্বপ্রাণের ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকশিত অঙ্গমাধ্যমকে মানুষের বিকশিত মস্তিষ্কমাধ্যমের যোগে বিনিময়মুক্ত কর্মে সংযোজিত হতে হবে, যাকে কবিতার আঙ্গিকে লেখায় খুবই কম শব্দে উপস্থাপিত হয়েছে, সেটি নিচে যুক্ত করে রাখছি —
মাথা থেকে মানুষ ফেলে দাও আমি তুমি হারিয়ে যাবে,
লোভ ফেলে দাও ভয় হারাবে, ভয় ফেলে দাও লোভ
হারাবে, আশা ফেলে দাও নিরাশা হারাবে, হতাশা
ফেলে দাও আসা হারাবে…
বন্ধু, কর্মে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নেই অপচয়ও নেই
সেই কর্মীয় বোধগম্যে নির্ভারে… নির্ভারে… নির্ভারে…
প্রকৃতির সবুজের চোখের বিকাশে, নাসিকার একাগ্রে,
কর্ণের মৌনতায়, জিহ্বার স্পর্শতায়, ত্বকের চারপাশ
শোষণে, পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের জাগরণে; কোষের পরতে পরতে
অগণন সম্প্রদায়ে ভেতরে বাইরে সঙ্গীয় আনন্দে —
পূর্ণ বিকশিত মস্তিষ্কে —
. সংযোজিত হও কর্মের অসীম অনন্তে।
(হুমায়ূন আকাশ / দৈনিক কালের কন্ঠ সাহিত্যপাতা শিলালিপি, প্রকাশকাল ১৯ জুলাই ২০২৪)
এখন কথা হলো কোনও প্রাণী যদি কেউ কাউকে না খেয়ে বেঁচে থাকে তাহলে এত প্রাণী পৃথিবী ধারণ করতে পারবে না। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, রাশান বিজ্ঞানীর নক্ষত্রকেন্দ্রিক শক্তির কথা, আমাদের পৃথিবীর দিকে আসা সূর্যের ১৩ হাজার ভাগ শক্তি যা আমরা কর্মে রূপান্তরিত করতে পারছি না; তাকে কর্মে রূপান্তরিত করব মানুষ সহ সকল প্রাণীর চেষ্টায়। অতঃপর সূর্য শুধু পৃথিবীর দিকে নয় তার চতুর্দিকে যে শক্তি বিচ্ছুরিত করছে তাকেও আমরা কর্মে রূপান্তরিত করব সর্বপ্রাণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। সূর্যের বিচ্ছুরিত সকল শক্তিতে কর্মে রূপান্তরিত করে, আমাদের সৌরজগতের যত গ্রহ আছে, সে-সকল গ্রহে পানি বায়ু ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে সবার বাসযোগ্য করে সেসব গ্রহে স্থানান্তরিত হব। এভাবে পাশে আরও যত নক্ষত্র আছে সেসবকে আমরা কর্মে রূপান্তরিত করব; এমনভাবে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে সৌরজগৎ থেকে সৌরজগতে বিচরণ করব অন্য গ্যালাক্সিবাসীদের মতো। এখানে উল্লেখ্য, আইনস্টাইনপূর্ব ও আইনস্টাইন সহ পরবর্তী বিজ্ঞানীরা স্থানান্তরের কথা বলেছেন, তবে তারা বলেছেন পৃথিবী বাসের অযোগ্য হওয়ার পর, আর এ লেখার উপস্থাপনে বলছি পৃথিবী বাসযোগ্য রেখে অন্য গ্রহকে বাসের যোগ্য করে তোলার জন্য। এত সুন্দর পৃথিবী যদি বাসের অযোগ্য করে তুলি আমরা, তাহলে যে-গ্রহেই যাই তাকেও মানুষ এক পার্যয়ে বাসের অযোগ্য করে তুলবে। তাই পৃথিবীকে বাসযোগ্য রেখেই অন্য গ্রহকে বাসযোগ্য করতে হবে। এসব করতে হলে সবার পূর্বে মানুষকে তাদের সকল বদ্ধ মন্ত্রতন্ত্র থেকে বের হয়ে বিনিময়মুক্ত কর্মে আসতে হবে, যা কবিতার আঙ্গিকে লেখায় খুবই কম শব্দে উপস্থাপিত হয়েছে —
সময় ভাঙাগড়ার নিত্য বর্তমানে শোনায় দেখায় অনুভবে দৃশ্য বাস্তবতায় —
সবই বোধের উপলবদ্ধি। আজও বিবর্তনের রূপান্তরে আছি সবাই —
সময়ের অবগাহনে কেউ আসেও না যায়ও না — প্রতিক্ষণ প্রত্যেক প্রাণ
. নিজ আঙ্গিকে হয়ে ওঠে আবার ভেঙে পড়ে নবাঙ্গিকের সূচনায়…
সেই সূচনায় অবিকশিত যে যার মতো — কর্মের স্বঃস্ফূর্তে সর্বপ্রাণের
অঙ্গপ্রত্যঙ্গে- মানুষ নামের এক প্রাণের কিঞ্চিৎ মস্তিষ্কের বিকাশে —
যে যার মতো থেকে সে প্রকৃতি হয়ে — … রাজনীতি ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান সহ
অগণন বিকৃতির পর বিকৃতিতে বানায় চূড়ান্ত বিকৃতি — বিনিময়!
হারায় নির্ভার আনন্দের সুন্দর সহাবস্থান — হয় চিরনিঃসঙ্গ —
সেই নিঃসঙ্গের বিভ্রান্তিতে — কর্মহীন বিশ্বাস অবিশ্বাসের বদ্ধ মন্ত্রে তন্ত্রে —
আত্ম মোহান্ধে অহেতুক গোলকধাঁধার ঘোরে মেতে — নিজেই নিজেকে বানায়
— এক নিষ্প্রাণ যান্ত্রিক আঙ্গিক!
বহু মাধ্যম পেরিয়ে একবিংশের পর্দামাধ্যম হয়ে — তার সর্বান্তের
মস্তিষ্ক মাধ্যম নিয়ে — সর্বপ্রাণাঙ্গিকের নিজ নিজ বিকশিত অঙ্গমাধ্যমে
সংযোজিতে তাকে আসতে হবে — প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সর্বোচ্চ বিকৃতির বাইরে
— বিনিময়মুক্ত কর্মে।
কর্মেই মুক্তি বাকি সবই বিভ্রান্তি
(হুমায়ূন আকাশ / সাহিত্যপত্রিকা নকশিকাঁথা, ফেব্রুয়ারি ২০২৫)
পূর্বে বলেছি আবারও বলছি মানুষ যদি তার চূড়ান্ত বিকৃতি বিনিময় থেকে বেরোতে না পারে, তাহলে শুধু মানুষ সম্প্রদায় এই একবিংশ শতাব্দীতে বিলুপ্ত হবে অন্য প্রাণীরা থাকবে। আর যদি মানুষ বিনিময়মুক্ত কর্মে যেতে পারে তবে তারা এই একবিংশে সম্ভাবনার সূচনা ঘটাতে যাচ্ছে।
পৃথিবীর সব মানুষের মুক্তি ঘটবে তখন যখন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভারসাম্য আসবে। পাশ্চাত্যের (মুক্তি নয়) যা জাগরণ ঘটার ঘটে গেছে, এখন জাগরণ ঘটবে প্রাচ্যের — দ্রুতগতিতে।
এখন জাগরণ ঘটবে বৃহৎ প্রাচ্যের
এখন জাগরণ ঘটবে বৃহৎ বাঙলার
এখন জাগরণ ঘটবে বাঙলাদেশের
এই জাগরণে সর্বক্ষেত্রে ভাঙচুর হবে বিনির্মিত নতুন পৃথিবীর জন্য। একবিংশের মানুষের বিনির্মিত পৃথিবীতে আমরা বাস করছি। এর সূচনা ঘটে ২০০১-এর সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে এমেরিকায় বিমান হামলার মধ্য দিয়ে, যাকে শিরোনাম দেওয়া হয় ৯/১১। তারপরই আরও নানা ঘটনা ঘটে সর্বশেষে জীবানুযুদ্ধ করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, সামনে আরও নানা ঘটনা ঘটবে। সর্বমূলে বলতে গেলে পূর্বে উল্লেখিত কথায় ফিরে আসা যাক; পৃথিবীর প্রথম অর্থনৈতিক বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর তৃতীয় ও সর্বশেষ বিশ্বযুদ্ধ চলমান। এ-রকম অবস্থায় পুরো বিশ্বে শত শত বছর ধরে চলমান ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে এবং আরও হবে। ইউরোপের রয়্যাল ফ্যামিলির প্রতি সাধারণে যে সম্মানের চশমা পরানো আছে তা ভেঙে চুরমার হবে। প্রাচ্যের পরিবারতন্ত্র রাজতন্ত্র ধর্মতন্ত্র ও ইরানের খোমেনিতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটবে। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাংক বিশ্বসাস্থ্যসংস্থা সহ আরও অগণন সংস্থা, হয় নতুন করে গড়া হবে নতুবা বিলুপ্তি ঘটে নতুন নতুন সংস্থা তৈরি হবে। ডলার পাউন্ড ইউরোর সাথে পাল্লা দিতে প্রাচ্যে রাশিয়া, চীন বৃহৎ আরব ভারত সহ অন্যান্য দেশের প্রাধান্যে ডিজিটাল এশিয়া মুদ্রা চালু হবে, কেননা আমরা অর্থনৈতিক বিশ্বযুদ্ধে আছি। এই পরিবর্তিত নতুন বিনির্মিত ব্যবস্থায় প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ভারসাম্যে বাঙলাদেশের প্রস্তুতি থাকা দরকার, নতুবা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আামাদের সর্বক্ষেত্রে ভাঙচুর হচ্ছে এবং আরও হবে, এই ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে আমাদের নিজেদের গড়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হতে হবে; ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাঙলাদেশের অবস্থান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে। বাঙলাদেশের সংস্কৃতি রাজনীতি অর্থনীতি সহ সর্বক্ষেত্রের যেখানে যে আছি দক্ষ পেশাদারিত্বের সাথে দেশের সমৃদ্ধি ঘটাতে হবে, বিশ্বপরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে।
এই পরিবর্তনের মধ্যে আমাদের অর্থনীতিও বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরের যে-সকল ব্যাংক অপেশাদারিত্বে ছিল তারা দেউলিয়ার পর্যায়ে চলে গেছে। অন্যদিকে যেসব ব্যাংক দক্ষ পেশাদারিত্বের মধ্যে পরিচালিত করছে তারা টিকে আছে।
এই অর্থনৈতিক বিশ্বযুদ্ধে আমাদের টিকতে হলে ইউরোপের গত শতকের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া Z-গ্রেড পলিসি থেকে বেরিয়ে সুপার A-গ্রেডে আসতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্রঋণ/মাইক্রোক্রেডিট অতীব ভঙ্গুর ও জটিল থেকে জটিলতর অবস্থানে, যদিও ব্যাংকগুলো বলে সহজ শর্তে। বাস্তবে নতুন দক্ষ উদ্যোক্তার জন্য এই ক্ষুদ্রঋণ পাওয়া তার নাগালের বাইরে। ইউরোপ যেখানে কোটি টাকার গাড়ি শুধু রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে দেয়, সেখানে আমাদের এখানে লক্ষ টাকা নিতে দু’জন গ্রান্টার সহ নানাবিধ কাগজপত্র জমার মাধ্যমে জটিল থেকে জটিল পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এসব থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের আরও সহজ করতে হবে ক্ষুদ্রঋণ থেকে বৃহৎঋণ পর্যন্ত, যাতে উদ্যোক্তা নিত্য-নতুন ভাবনা নিয়ে বৃহৎ শিল্পকারখানায় সফলভাবে বিচরণ করতে পারে। অগণন নিত্য-নতুন উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়।
যতক্ষণ পর্যন্ত কোনও প্রাতিষ্ঠানিকতায় সাধারণের অংশগ্রহণ না হচ্ছে ততক্ষণ ওই প্রাতিষ্ঠানিকতা বৃহৎ রূপ ধারণ করতে পারে না। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সাধারণ চানাচুর চটপটি বাদাম সবজি বিক্রেতা সহ অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অংশগ্রহণ নেই। এমনকি তাদের জন্য কোনও ব্যাংক নেই যে ঋণ দান করবে। অথচ অতিক্ষুদ্র ব্যবসার সম্প্রসারণেই বৃহৎ ব্যবসার পূর্ণাঙ্গ রূপায়ন ঘটে। এইসব অতিক্ষুদ্রদের জন্য করতে হবে — অতি সাধারণ ঋণ বা ন্যানো ক্রেডিট।
.
অতি সাধারণ ঋণ বা ন্যানো ক্রেডিট
পূর্বেই জানাচ্ছি দাতব্য বলে কিছু নেই, সর্বত্রই প্রত্যক্ষে পারোক্ষে সবই ব্যবসা। এমনকি বাবাদের দরগা আখড়া বা উপাসনালয়ের দানবাক্স না থাকলে এসবের কোনও অস্তিত্বই থাকবে না। তাই ব্যাংক ঋণ দেবে সে-ঋণ যথাসময়ে তার সেবা বিনিময় সহ মূলধন ফেরত পাবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দুর্নীতি ছাড়া অর্থনীতি নয়। পৃথিবীর কোথাও কোনও রাষ্ট্র নেই যা দুর্নীতিমুক্ত। অর্থনীতির দুটি দিক : একটি দুর্নীতিযুক্ত যা টেবিলতলের অর্থনীতি বা আন্ডার্গ্রাউন্ড ইকোনোমি, অন্যদিকে টেবিলের উপরের অর্থনীতি বা জেনারেল ইকোনোমি। সমগ্র পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি যত দুর্নীতি চিহ্নিতকরণ প্রতিষ্ঠান [যেমন দুদক বা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন্যাল] আছে, এসব কিন্তু দুর্নীতি নির্মুল বা দুর্নীতি বন্ধকরণ প্রতিষ্ঠান নয়। এদের লক্ষ্য হলো টেবিলতলের অর্থনীতিকে উপরে আসতে না দেয়া। আরও সহজে বললে বলা যায়, তাদের লক্ষ্য দুর্নীতি যাতে সূক্ষ্মভাবে হয় যেন তা সাধারণের দৃষ্টিতে ধরা না পড়ে। আর সেই দুর্নীতি যদি স্থূলভাবে সাধারণের চোখে ধরা পড়ে যায় তখন দুর্নীতি চিহ্নিতকরণ প্রতিষ্ঠান তাকে দুর্নীতির ছাপ মেরে দেয়। আমাদের বিষয় টেবিলতলের অর্থনীতি নয়, টেবিলের উপরের সাধারণের অর্থনীতি, এমনকি অতীব সাধারণের অর্থনীতি।
অতি সাধারণ ঋণ বা ন্যানো ক্রেডিট পৃথিবীতে একেবারেই নতুন। আমাদের সর্বাধিক মানুষ ক্ষুদ্র থেকে অতিক্ষুদ্র ব্যবসায় জড়িত। এই অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা অসীম। দক্ষ পেশাদারদের বেলায় — যার যত সীমাবদ্ধতা তার তত সম্ভাবনা। আমাদের বিশাল সীমাবদ্ধতাকে সম্ভাবনায় রূপ দেবে এই ন্যানো ক্রেডিট।
ন্যানো ক্রেডিট দু’ভাগে ভাগ হবে। প্রথম ভাগে অতি সাধারণ ঋণ যা এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত, ফেরত দেওয়ার সময়সীমা এক সপ্তাহ। দ্বিতীয় ভাগে সাধারণ ঋণ যা ছয় হাজার থেকে পঁচিশ হাজার পর্যন্ত, ফেরত দেওয়ার সময়সীমা একশত দিবস। এই অতি সাধারণ ঋণ ও সাধারণ ঋণ বা ন্যানো ক্রেডিট নিতে কোনও গ্রান্টার লাগবে না, এমনকি কোনও ধরনের বিবিধ কাগজপত্রও লাগবে না; তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে ব্যাংক একটি ন্যানো ক্রেডিট কার্ড দেবে। ওই ন্যানো ক্রেডিট কার্ড দিয়ে তারা ঋণ নেবে আবার সেই কার্ড দিয়েই সেবা বিনিময় সহ মূলধন ফেরত দেবে। এই ন্যানো ক্রেডিট এখনই চালু সম্ভব নয়, সর্বনিম্ন তিন বছর থেকে সাত বছর সময় লাগতে পারে; যতদিন নিচের আঙুল ও চোখের ছাপ বায়োমেট্রিক এবং উপরের স্যাটেলাইটের পূর্ণ সংযোগ না ঘটছে ততদিন এই ন্যানো ক্রেডিট চালু সম্ভব নয়।
এই ন্যানো ক্রেডিট শুধু অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটি সম্প্রসারিত হবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্য-নতুন আইডিয়াবাজদের মাঝেও। এই আইডিয়াবাজদের সেই আইডিয়া যদি সাত থেকে একশ দিবসের মধ্যে ব্যাংকের সেবাবিনিময় সহ মূলধন ফেরৎ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাদেরও ন্যানো ক্রেডিট দেওয়া হবে। সবার দ্বারা উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব নয়, যাদের উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা আছে তারাই ন্যানো ক্রেডিট পাবে। ন্যানো ক্রেডিট সফলভাবে একাধিকবার নেয়া দেয়ার পর যদি সে ক্ষুদ্র বা মাইক্রো ক্রেডিটে যেতে চায় সেই দরজাও তার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এভাবে সেই উদ্যোক্তা যদি বৃহৎ ভারী শিল্পকারখানা স্থাপনের যোগ্য হয়ে ওঠে তার জন্য সে-দরজাও উন্মুক্ত রাখতে হবে। এই ন্যানো ক্রেডিটহোল্ডারদের ৯৭% সফল হবে, মাত্র ৩% ব্যর্থ হলেও হতে পারে, এই ৩% ব্যর্থতা পুষিয়ে নেবে ৯৭% সফলতায়।
এই অর্থনৈতিক বিশ্বযুদ্ধে আামাদের অংশগ্রহণ করে সফলতা পেতে হলে, গত শতকে ইউরোপের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া Z-গ্রেড পলিসি থেকে বেরিয়ে সুপার A-গ্রেডে যেতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। দেশের সর্বাধিক মানুষ অতি সাধারণ, এই অতি সাধারণকে ব্যাংকিং পরিষেবায় আনতে হলে অতি সাধারণ বা ন্যানো ক্রেডিটের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে হবে। এই অতি সাধারণের মাধ্যমে যদি অর্থনীতির ভিত্তিমূল শক্ত করা যায়, তবেই ক্ষুদ্র মাঝারি বৃহৎ অর্থনীতি তরতরিয়ে দৃঢ়ভাবে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠবে।
- মেঠোসুর কলরব : আবহমানের উৎসব || রূপকার - May 17, 2025
- মেঠোসুর আনন্দযাত্রা : গানময় এক সংবেদনশীল বাংলাদেশ || বিমান তালুকদার - May 9, 2025
- মাড়া || সুশান্ত দাস - May 3, 2025
COMMENTS