রিভিয়্যুয়িং জেমস্ ১৯৯৯ || জিনাত জাহান

রিভিয়্যুয়িং জেমস্ ১৯৯৯ || জিনাত জাহান

[ছোট্ট এই লেখাটা থেকে জেমসের মার্কেট আপডেট জানতে পারছি, কিন্তু মার্কেটটা আজকের নয় এবং আপডেটটাও যে এখনকার নয় তা তো বলা বাহুল্যই। শিরোনামেই ক্লিয়ার এইটা ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসের ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের অ্যালবাম বিকিকিনির বাজারজরিপ। তবে লেখার আদি শিরোনাম এইটা না, আদিতে লেখাটার লগে কোনো শিরোনাম ছিল না আদৌ। পত্রিকার শেষপ্রচ্ছদের অব্যবহিত আগের পৃষ্ঠায় একটি বিশেষ ট্রিটমেন্টের ফ্যুলপেজ্ ফোটোফিচারের এককর্নারে এইটুকু বর্ণনৈবেদ্য প্রকাশিত হয়েছিল শুধু। ফোটোর উপরিভাগে জেমসেরই বিখ্যাত সেই গানের লাইনটা খানিক বদলিয়ে নিয়ে উপর-নিচ শব্দপাতনে ছেপে পেইজমেকাপ দেয়া হয়েছিল, ‘পথের বাপই বাপ রে মনা পথের মা-ই মা’ ছিল সেই বিখ্যাত গানের লাইনটা, ঈষৎ বদলানো পঙক্তিটি ছিল ‘গানের বাপই বাপ রে মনা গানের মা-ই মা’। বাকিটুকু রচনায় দ্রষ্টব্য।

তবে যেইটা বলার অপেক্ষা রাখে তা এ-ই যে, এই রচনা ছাপা হয়েছিল ১৯৯৯ সনের পাক্ষিক আনন্দভুবন পত্রিকায়। এখন পত্রিকাটা আর বার হয় না। আজ থেকে ১৮/১৯ বছর আগে এইটা তামাদি হয়ে গেছে। এই পত্রিকার ভিতরে একাংশ, একফর্মা প্রায়, শুধুই মিউজিক কেন্দ্র করে আয়োজিত হতো। ওইটার আবার মূল পত্রিকা থেকে আলাদা নামও ছিল একটা : সারেগারে। সেই সারেগারেতে রেগ্যুলার নানাবিধ জরিপের পাশাপাশি মিউজিকের বাজারজরিপও হতো। পত্রিকার বর্ষপূর্তি এবং সারেগারের বর্ষপূর্তি আলাদা-আলাদাভাবে আয়োজিত ও উদযাপিত হতো। প্রধানত সমকালীন সংগীতবাজার মাথায় রেখে সেই একবারই বাংলাদেশে মেইনস্ট্রিমে একটা কাগজে কিছু কাজকর্ম নজরে এসেছিল। পরে বেশি-থেকে-বেশি তিন/চারবছরের লেজে এই ইনিশিয়েটিভ মুখ থুবড়ে পড়ে।

এই নিতান্ত হ্রস্ব রচনার পটভূমিটাও পড়লেই বুঝে ফেলা যায়; তারপরও ঘটনাটুকু সংক্ষেপে এ-ই যে, ‘লেইস ফিতা লেইস’ রিলিজের পরে সেইটা আশানুরূপ বাজার না পাওয়া – নাইন্টিএইটে সেইটা – তারপর ‘ঠিক আছে বন্ধু’ সোলো সংকলন দিয়া বাজারের বাজিটা মাত্ করা; ঠিক একবছরের ব্যবধানে – নাইন্টিনাইনে – জেমসের কব্জায় ফের বাজারের ঝুঁটি এসে যায়; সেজন্যে আপোস করতে হয়নি, নিজের গায়নশৈলী বাজারছাঁচে বদলাতে হয়নি, নিজেকে নুয়াতে হয়নি মার্কেটমাপে। এই জিনিশগুলো লক্ষ করতেই হয় জেমসের উত্থানপরিক্রমায়। এরপরে একসময় ইতিহাস বেঁকেছে, হয়তো, সেইটা আলগ বাত্।

অত পুরানা বাজারের খতিয়ান নিয়া গানপারের ফায়দা? আজকের বাজার নিয়া আলাপ নাই? নিশ্চয় আছে। এবং আজকের বাজার নিয়া আলাপের কথা মাথায় রেখেই তিতপুরানা বাজারের অলিগলিগুলো নখদর্পণে না-হলেও মোটামুটি জানাশোনার আওতায় রাখতে হবে। সেই গোপন মতলবেই নিরানব্বই খ্রিস্টাব্দের লেখাটা, তারও পূর্বাব্দের লেখাগুলো কুড়িয়েবাড়িয়ে যেখানে যেট্টুক পাওয়া যায়, আমরা আবার পৃষ্ঠা উল্টে দেখে যেতে চাই।

গৃহীত রচনাটা, আগেই বলা হয়েছে, ‘আনন্দভুবন’ ৩ বর্ষ ২২-২৩ সংখ্যা থেকে নেয়া; ‘সারেগারে’ পার্টের সেইটা ছিল তৃতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা; ১৬ এপ্রিল ১৯৯৯, ৩ বৈশাখ ১৪০৬; বর্ষশুরু সবিশেষ সংখ্যা যাকে বলে, সারেগারে জন্মদিন ইশ্যু বলা হয়েছে যদিও। রচনার লেখক আনন্দভুবনেই নিয়মিত ম্যুভি-মিউজিক ইত্যাদি নিয়া লিখতেন চোখে পড়ত, পত্রিকারই স্যালারিড স্টাফমেম্বার, হোয়ারঅ্যাবাউটস্ কিংবা তার রিসেন্ট স্ট্যাটাস আমরা জানতে পারি নাই। – গানপার]   


গানের বাপই বাপ রে মনা গানের মা-ই মা …

1303191273James’৯৮-এ  সারেগারে  প্রথম জন্মদিনের প্রথম কাভার হওয়ার পর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে সামান্যই। আরো প্রবল হয়েছে জেমসশিবির আর জেমসবিরোধী শিবিরের পার্থক্য। বেরিয়েছে দুটো অ্যালবাম – একটা ব্যান্ড, আরেকটা সোলো। প্রতিভাবান শিল্পীদের যা হয়, – নিজের সৃষ্ট সাফল্যের পথে দ্বিতীয়বার হাঁটতে চান না তারা, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পথের সন্ধান করেন। ফিলিংসের ব্যানারে ‘লেইস ফিতা লেইস’ অ্যালবামে সেই চেষ্টাই করেছিলেন জেমস্ – সত্যিকার বাংলা ঘরানার ব্যান্ড মিউজিক। যে-কোনো নতুন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে যা হয় ‘লেইস ফিতা লেইস’-এর ভাগ্যেও তা-ই ঘটেছে। সমালোচকদের প্রশংসা কুড়োলেও ইনস্ট্যান্ট সাফল্য পায়নি ততটা। অথচ অনেকের মতে এখন-পর্যন্ত-করা জেমসের কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ম্যাচিউরড সবচেয়ে প্রভাবশালী কাজ এই ‘লেইসফিতা’।

যে-কোনো নতুন ধরনের ভালো কাজের যা হয়, – আস্তে আস্তে তা ছড়িয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে, ‘লেইস ফিতা লেইস’-এর ভাগ্যেও তা-ই হয়েছে। অবশ্য এতে জেমস্ দমেছেন সামান্যই; বরং পরবর্তী ধাক্কাটা দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন। আর ধাক্কাটাও হয়েছে জব্বর। যে-ঘটনা বাংলাদেশের অডিয়ো-ইতিহাসে নেই তা-ই হয়েছে – বাজারে আসার প্রথম দিন তার সোলো অ্যালবাম ‘ঠিক আছে বন্ধু’ ব্ল্যাকে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে। ১৫দিন হয়নি বাজারে এসেছে, অথচ এর মধ্যেই মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে সোলো অ্যালবামের গানগুলো।

…….

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you