অ্যা পার্সোন্যাল জার্নি টু দি চিত্রশহর অফ সত্যজিৎ রাজন || আলফ্রেড আমিন

অ্যা পার্সোন্যাল জার্নি টু দি চিত্রশহর অফ সত্যজিৎ রাজন || আলফ্রেড আমিন

সারাদিন খিস্তি, ইন্টেলেকচ্যুয়াল ভাবগম্ভীর শহরে, বিজ্ঞাপুনে মানুষগুলার ‍মুখ ও মুখোশের ভেতরকার সময়টা খুব-একটা ভালো লাগে না। তবু স্বপ্নের ভেতরে শহরের মধ্যেই হাঁটতে থাকি।  এইরকম কোনো-এক সময়ে শিল্পী সত্যজিৎ রাজনের স্টুডিওতে প্রথম তার ছবিগুলো দেখি।  ঠিক একই সময়ে রিভারক্রুজে জ্বলে উঠেছে লাইট, লাশঘরে ঢুকে পড়ছে দুজন ঠাণ্ডামাথার খুনি, বৃথাসংঘের হিডেনস্কোয়াড পৃথিবীতে নেমে এসেছে বনবংশের শেষ সন্তানের খোঁজে, হয়তো আফ্রিকায় একবিংশ শতাব্দীর মধ্যবয়সী কোনো নারী তার পূর্বের স্মৃতির সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছেন ঘটমান ভবিষ্যৎ — কোথাও বাজছে ভায়োলিন, বিষে। কোথাও বদলায়নি কিছু।

শহর থেকে একটু দূরে, টাউনশিপের ঝাঁঝালো ইলেক্ট্রিক-রে যেখানে যায় নাই, সেখানে নেতিয়ে-পড়া চামড়ার ভাঁজের মতো জেগে আছে সুরমা — সামান্যতম জলের অধিকার।  এই আমার নদী।  হিউজ ক্রাইসিসের মধ্যে আমার গান-গাওয়া নদী।  ব্যক্তিগত বিষণ্নতার দিনগুলোতে, এই দুশ্চরিত্র স্বপ্নই আমার হাত ধরে থাকে।  পুরো শহরটিকে রিমেইক করতে করতে শেষ হয়ে আসে সময়, ডিউরেশন অফ ড্রিম।  তবু এই শহরে, শিল্পী সত্যজিৎ রাজনের স্যুরিয়েল চিলেকোঠায়, আমি এক প্রাচীন উদ্ভিদের দেখা পাই।  কখনো সেইসব উদ্ভিদশরীর প্রায় শতবর্ষ ধরে ঠাণ্ডা-হিমে জমাট হতে হতে আমার পূর্বপুরুষের হাড়ের ভেতরকার কোনো আর্তি আঁকড়ে ধরে।  রূপান্তরিত হতে হতে একটি অশেষ ও জীবন্ত মেটাফোর হিশেবে দুলে ওঠে আমার চোখের সামনে।  রহস্যময় অস্তিত্বের ক্রমোদ্গিরণ অথবা একটি গমক্ষেতের  ল্যান্ডস্কেপে হঠাৎ-করে নেমে আসে বিপণ্নতা। আমার শীত করতে শুরু করে।

উদ্ভিদের বেড়ে-উঠবার সঙ্গে আমার কি কোনো বর্নআপ রিলেশান থাকতে পারে? — কখনো কখনো স্বপ্নের মধ্যে, স্বপ্নের সময়টুকুর মধ্যে! আমি জানি, আমি পেরিয়ে এসেছি দুটো পাহাড়ের মাঝখানে দাঁড়ানো সাঁকো, চন্দ্রভাগা-ঝিলম-ইরাবতী-শতদ্রু-ব্রহ্মপুত্র-সুরমা-মাতামুহুরি-দানিয়ুব-রাইন — পৃথিবীর সব-ক’টি যুদ্ধের ময়দান। আভূমি ডুবন্ত জলে, রক্তনীল, কালো কালো পাথুরে জলে ভেসেছে একটি মুখ, প্রাসাদের — মিরুজিনে; আয়নার ছলে।

ট্রান্সেন্ডেন্টাল টেস্টামেন্ট
রহস্যময়ী সহোদরার মতো গোধূলিমদির অন্ধকার, কোনো-এক সম্রাজ্ঞীর অবয়ব থেকে ভোর, মেঘশান্তি, কাকদম্পতির কান্নাভেজা পথ পেরিয়ে এসেছ পথিকবর? স্বপ্ন তুমি দেখোনি তো! চাকা ঘুরছে। লাল চাকা। আমাদের রক্তের ভেতরে কান্না, মাটি, মহাযুদ্ধ, ভালোবাসা। তবু ব্যাবিলনের ধ্বংসস্তূপে আজও জোছনা ঝরে, অ্যাসিরিয়ায় প্রাসাদে প্রাসাদে নরমুণ্ড, ঈগলডানা প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে আছে। শতাব্দীগুলির পরাজিত ঘড়ির সামনে আমরা কেন এত কষ্ট পাবো? / কোনও বিশেষ সংস্কার কি আমাদের মহৎ করে তোলে না? / কালপুরুষ, ইস্পাতের দারুশিল্পী ঠিক, সেসময় আমাদের  দিকে / মানবঅভিযানের ভাঙা শরীর যা এই সন্ধেয় জোড়া লাগল আবার / দৈত্যাকার সেতুর নিচে ভেসে যায়”  

যে গোপন সংবেদন যাপিত-বাস্তবতার টানেল ধরে যেতে যেতে প্রকৃতির মুখোমুখি দৃষ্টিমান করে দাঁড় করায়, আপনাকে দাঁড়াতে বলে, আমরা সেখানে দাঁড়াবই। সে আমাদের রুটস্। কম্প্যাক্ট ন্যাচার। আমরা তখনই এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে বাধ্য, যা কি-না কল্পনার মতো, ইম্যাজিনেটেড।  এটি এমনই এক পরিস্থিতির সৃষ্টি, — ঘটনার দৃশ্যায়ন, দেখা, দেখানো, — ব্যাপারটা ডিফিকাল্ট। শিল্পী সত্যজিৎ রাজনের হিস্ট্রিক্যাল নেকেডনেস অফ হিস্ট্রি , কলোনি, দ্য রাভানা রিটার্নস্, হুয়েন হোপ গ্যন ডাউন, ইরেক্টাইল ডিস্ফাঙ্শন অফ দি সিভিলাইজেশন   ইত্যাদি শীর্ষনামা ক্যানভাসে একটা স্পিরিচ্যুয়াল পোলিটিক্যাল ইফেক্ট দেখতে পাই, চিরকালীন উত্থানজনিত সংকট আমাদের সময়ের গায়ে এবং গোটা মানবসভ্যতায়। এই সংকট সকলের। পঙ্কিল সময়স্রোতে, জ্যামিতিক বিপন্নতাঘাতে অবিরাম মরে যাওয়া, অবিরাম পলায়ন, অবিরাম পঁচে-পঁচে ইঁদুরগর্তে এন্ট্রান্স, হায় জীবন! হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা!

ইন সার্চ অফ অ্যাসেন্ডার
আজকের দিন একটা সওয়ারহীন ঘোড়ার মতন / আজকের দিন হ্রদের জলে পড়ন্ত একফোঁটা জল / আজকের দিন উপরেনিচে সাদা আলোর সম্পাত / কুমারীর হাত ধরে আছে দিনগুলোর পাখা / জ্বলন্ত মোমবাতি জ্বলন্ত কাগজ / ফিরতে পারবে না তুমি আর / স্থির হয়ে পারবে না দাঁড়াতেও / কবিতার শব্দাবলি কুঁকড়ে যাচ্ছে ভস্মস্তূপের ভিতরে / আমাদের চেয়ে বিশাল সব হতাশায় / হায়রোগ্লিফের লেখাঙ্কন

হ্যাঁ, আমাদের এই সময়ের তরুণ চিত্রশিল্পীদের মধ্যে সত্যজিৎ রাজনের পেইন্টিংগুলায় রঙের যে মিথস্ক্রিয়া, তা কখনো কখনো সময়কে, স্মৃতিকে, অস্তিত্বকে উসকে দেয়ার বয়স ঠাহর করতে পেরেছে। বার্নট সায়ান, এলিজারিন ক্রিমসন, সমুদ্রনীল, ভিরিডিয়ান হিউ, ওয়েলে প্যাস্টেলে মিক্সমিডিয়ার কম্প্যাক্ট ব্যবহার ব্যতিক্রম।

দি মোমেন্ট হোয়েন য়্যু ডিসকভার য়্যু ট্যু হ্যাভ উয়িংস, ডাইভার্জেন্স, টুমোরো নেভার ডাই, অ্যাসোসিয়েশন, ডিনায়িং দ্য ডেস্টিনি অফ ডেথ, ইটার্নাল কন্টেমপ্লেশন, মিথ অফ সিসিফাস  … ইত্যাদি ছবিগুলো একেকটা পাওয়ার্ফ্যুল জীবনের প্রতি নিবিষ্টতার কথা বলে, প্রেমের কথা বলে, ব্যাপ্ত জগজ্জীবনের কথা বলে।

একগুচ্ছ সত্যজিৎ রাজন চিত্রকর্ম

… …

COMMENTS

error: