হ্যাপি বার্থডে, ম্যাক!

হ্যাপি বার্থডে, ম্যাক!

গানপারে ম্যাক ওর্ফে মাকসুদুল হকের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা পাওয়া যায়, যা তাঁর প্রকাশিত বইগুলায় নাই। নিশ্চয় এই লেখাগুলো অচিরে ম্যাক বইয়ের আওতায় নেবেন। শুধু রকসিন নয়, বাংলাদেশের কালচারাল ফ্রন্ট ও আন্ডারগ্রাউন্ড যদি চিনতে এবং জানতে চায় কেউ ঝটিতি — ম্যাকের লেখা পড়ে সে বেনিফিটেড হবে। এত অন্তরঙ্গভাবে, এত স্ফুলিঙ্গভাষায়, এত রোয়াব ও রোদন সমেত বাংলাদেশের শহরসংস্কৃতি নিয়া আর-কেউ কলম চালিয়েছেন বলাটা কঠিনই হবে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও অধিপতিমানস নিয়া ম্যাকের যাবতীয় রচনারাজি আবর্তিত, হোক তা ন্যারেটিভগদ্য কিংবা কাব্য অথবা গানবাজনা।

ব্যান্ডসংগীতের জগতে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও উদ্দাম সময়ের প্রতিভূদের মধ্যে অন্যতম মাকসুদুল হক। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ক্ষেত্রটিতে তাঁর বিচরণ অত্যন্ত সৃষ্টিদীপ্ত, পদক্ষেপগুলো সুস্পষ্টরূপেই দৃপ্ত, মাকসুদের অবদান এদেশের সংগীত-অঙ্গনে একবাক্যেই স্বীকৃত। নতুন দিনের ব্যান্ড ও ননব্যান্ড সংগীতকারদের কাছে ম্যাক তথা মাকসুদ অত্যন্ত উদ্দীপক এক নাম।

গায়ক, কবি, প্রাবন্ধিক, সংস্কৃতিবীক্ষক ও সম্প্রচারবিশেষজ্ঞ মাকসুদুল হক ওর্ফে ম্যাক হক বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম ফিডব্যাক  ব্যান্ডের সাবেক লিড-ভোক্যাল্; ১৯৯৭ সালে ফিডব্যাক  থেকে বেরিয়ে ব্যান্ড ফর্ম করেন মাকসুদ ঢাকা  নামে, সেইসঙ্গে বাংলাদেশের ফকিরিধারার গানের ফিউশনধর্মী নিরীক্ষা চালানোর জন্য গড়ে তোলেন গরিমা গানের দল  শীর্ষক পৃথক গানদল।

আবহমান বাংলা গানে জ্যাজ্-রক্ ফিউশন্ উপস্থাপনের জন্য ম্যাক যুগপৎ নন্দিত ও নিন্দিত। নন্দিত যাদের কাছে, তারাই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠাংশ। ফিডব্যাকে থাকাকালীন মাকসুদুল হকের গীতিকবিতায় এবং অনবদ্য গায়নে অ্যালবামগুলোর মধ্যে ‘মেলা’, ‘জোয়ার’, ‘উল্লাস’, ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’, ‘বাউলিয়ানা ১ম খণ্ড’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য; ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ ব্যানারে উল্লেখযোগ্য সংকলনের মধ্যে ‘(অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ’ তৎকালীন সাংস্কৃতিক স্থিতাবস্থায় মারাত্মক অস্বস্তির ঢেউ তুলেছিল। বাংলা গানে এই অ্যালবাম — (অ)প্রাপ্তবয়স্কের নিষিদ্ধ  — রাজনৈতিকতাদীপ্তির জন্যই দিশারী।

মিউজিকের পাশাপাশি লিখনতৎপর ম্যাক গীতিকবিতা ছাড়াও প্রবন্ধ-নিবন্ধ-কলাম রচনায় সিদ্ধহস্ত শুরু থেকেই এবং নব্বইয়ের দশকের তারুণ্যস্পর্ধিত শহরসাংস্কৃতিক বিভিন্ন নোশন ধরে ধরে ম্যাকের লেখাপত্রগুলি ডিনামাইটের মতো ক্রিয়া করেছে টার্গেট রিডারদের মধ্যে। লিখছেন বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায়, বেশি ইংরেজিতেই যদিও, ম্যাকপ্রণীত বাউল ও ফকিরি ধারার সুলুকসন্ধানী বিদ্যায়তনিক ইংরেজি প্রবন্ধগুলো অনুসন্ধিৎসু সকলের দ্রষ্টব্য। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গদ্যবই ‘আমি বাংলাদেশের দালাল বলছি’, কবিতাবই ‘দি বাংলাদেশ পোয়েট অফ ইম্প্রোপ্রায়েটি’, গবেষণা-আখ্যানগ্রন্থ ‘বাউলিয়ানা, ওয়্যর্শিপিং দি গ্রেইট গড ইন ম্যান’ প্রভৃতি। রিসেন্টলি ‘বাংলাদেশের রকগাথা : আজম খানের উত্তরাধিকার’ শিরোনামে ম্যাকের একটা ইংরেজি লেখার বঙ্গানুবাদিত বই রিলিজ হয়েছে।

ম্যাক প্রায় চার দশক ধরে বাউলসংগীত ও বাউলসংস্কৃতি নিয়া কাজ করছেন নিরলস অনুধ্যানের সঙ্গে। বাংলাদেশে রকসংগীতের একজন পথিকৃৎ শিল্পী ম্যাক ‘বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন’ তথা বামবার প্রতিষ্ঠাকালিক সভাপতি, দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়া আসছেন দেশের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইটস্ ম্যুভমেন্টের। বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ম্যাকের কন্ট্রিবিউশন অনস্বীকার্য।

গানে এবং লেখাজোখায়, চিন্তায় এবং তৎপরতায় নিরন্তর সক্রিয় ম্যাকের জন্মদিনে গানপারের তরফ থেকে আমরা শুভেচ্ছা জানাই। হ্যাপি বার্থডে, ম্যাক!   — গানপার

… …

COMMENTS

error: