সিনেমায় তাঁর অভিনীত অধিকাংশ চরিত্রের নামই বিজয়। ‘জঞ্জির’ থেকেই বিজয়ের শুরু হয়েছিল জয়যাত্রা। তারপর থেকে এই বিজয়যাত্রা থামাইতে পারে নাই কেউ। অব্যাহত জয়যাত্রা আজও। অমিতাভ চলচ্চিত্রগমন। ১৯৬৯ থেকে শুরু হয়েছিল সম্ভবত। সন-তারিখের ভুলভাল উইকি দিয়া আমরা শুধরাই নিতে পারব। তবে অমিতাভজির ক্যারিয়ারে অ্যাক্সিডেন্টে একবার পা ভাঙা আর তারপরে একবার ব্যবসায় নেমে দেউলিয়া হওয়া ছাড়া আর-কোনো বড় ভুলতুরুটি বিশেষ নাই। দীর্ঘশ্বাস থাকলেও থাকতে পারে, রেখাজির সনে প্যেয়ার ইত্যাদি। কিন্তু ওইসব দিক দিয়া আমরা না যাই বরং।
অত লম্বা জার্নিতে এবি বিশেষ মুসিবতে পড়েন নাই, নেহরু/গান্ধী ডাইন্যাস্টির সঙ্গে একটা আশনাই ছিল তাঁর বরাবর, ছিলেন রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ড। চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি অ্যাংরি ইয়াং হিরোর রোলে প্লে করেছেন। ‘লম্বু’ সম্বোধনে ছিলেন মশহুর। বয়স বাড়লে একসময় তাঁরে ‘বিগ-বি’ ডাকার চল হয়। এখনও তা-ই। বিগ-বি। কিংবা আমিতজি। নিরঙ্কুশ শ্রদ্ধা পান সর্বভারতীয় দুনিয়ায়।
এলাহাবাদে জন্ম তাঁর, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১১ অক্টোবরের কোনো-এক শুভদিনে। বাপ তাঁর কবি। বিখ্যাত কবি হরিবংশ রাই বচ্চনের তিনি সাহিবজাদা। মায়ের নাম তেজি বচ্চন। বাপের সুবাদে নেহরু পরিবারের সঙ্গে ছেলেবেলা থেকেই ছিল ঘনিষ্ঠতা। রাজীব-অমিত বন্ধুত্ব স্কুলডেইজ থেকেই। বোমাহামলায় রাজীবজি ইন্তেকাল করার পরে টেলিভিশনে দেখেছি তিনি সৎকারপ্রোগ্র্যামে লিড দিচ্ছেন নেহরুপরিবারের সম্মতিতেই।
অমিতজির ডেব্যু হয় ‘সাত হিন্দুস্তানি’ শীর্ষক ছবি দিয়া। তখন ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ। তখনকার বিখ্যাত পরিচালক খাজা আহমেদ আব্বাস তার ‘সাত হিন্দুস্তানি’ সিনেমায় কাস্ট করানোর জন্য অমিতকে সিলেক্ট করেন। শুরু হলো লাকি সেভেনের মাধ্যমে।
এরপর, ‘সাত হিন্দুস্তানি’ রিলিজ করার পর, ১৯৭০ সালে অমিতাভ আরও দুইখানা পার্ট পাইলেন ‘রেশমা আউর শেরা’ এবং ‘প্যেয়ার কি কাহানি’ সিনেমায়। এইগুলো সমস্তই হাঁটিহাঁটি পায়ে স্টার্ট তাঁর। বাহাত্তরে একসঙ্গে বেশ-কয়েকটায় চান্স পাইলেন। অভিনয় করলেন। ‘বোম্বে টু গোয়া’, ‘সংযোগ’, ‘রাস্তে কি পাত্থর’, ‘বংশি বিরজু’ এবং ‘এক নজর’ সিনেমায় এই বছরেই রিলিজ পেয়েছিল একলগে।
এরপর এল সময়। রিলিজ হলো ‘জঞ্জির’। স্যুপারহিট। তখনকার বোম্বাই সিটিতে শুরু অভিতাভযুগ। এক নয়া কায়দার নায়কের দেখা পেল সিল্ভার স্ক্রিনের সবাই। বিশেষ একটা ভাবমূর্তি ঘিরে খ্যাতি বাড়তে লাগল বিজয় থুক্কু অমিতাভ বচ্চনের। বিশেষ একটা ইমেইজ। এই ইমেইজটাই ডিফ্রেন্ট স্ট্রোক পেল ‘মজবুর’, ‘দিওয়ার’ এবং ‘শোলে’ রিলিজের পরে। সেই বিশেষ ইমেইজটাই ব্যঞ্জনায় ব্যাপ্তি পেল।
শুধু যে রাগী যুবকের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন, অন্য রোলে প্লে করেন নাই, তা নয়। ভিন্ন ধরনধারনের অভিনয়ঋদ্ধ অনেক চরিত্রও অমিতাভের কাজতালিকায় আছে। সেইগুলার দেখা আমরা পাই বিভিন্ন সময়ের সিনেমায়। ‘অভিমান’, ‘সওদাগর’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘মিলি’, ‘ম্যায় আজাদ হুঁ’ প্রভৃতি সিনেমায় লম্বুজি স্রেফ হাতপা নাড়িয়ে নয় অ্যাক্টিং দিয়েই হৃদয় জয় করেছিলেন ছবিদর্শকভোক্তাদের। আর নব্বইয়ের পরবর্তী নতুন অমিতাভের যে-যুগ শুরু হয়ে এখনও চলছে, সেই বিশেষ উচ্চতার অমিতাভ নিয়া আলাদা আলাপের সুযোগ খুঁজতে হবে। নেক্সট টাইম।
… …
- মুহাম্মদ শাহজাহান : অগ্রন্থিত প্রস্থান - March 15, 2023
- বইয়ের খবর লেখকের জবানে / মুমূর্ষু খয়েরি রাত ও শিবু কুমার শীল - February 28, 2023
- মাসানোবু ফুকুওকা : এক তৃণখণ্ডের প্রতিরোধ || আহমদ মিনহাজ - February 28, 2023
COMMENTS