‘বেইবি ড্রাইভার’ (Baby Driver) — মনে হয়, একটা মিউজিক্যাল ফ্যান্টাসি। একজন টিনেইজাররে দেখা যায়, লুটপাটের পর ক্রিমিন্যালদের ড্রাইভ কইরা পুলিশরে বেকুব বানাইতে।
বালকের নাম বেইবি; বি-অ্যা-বি-ওয়াই! ব্যাংক ডাকাতি, পোস্ট-অফিস ডাকাতির পর লুটপাটের টাকা ভাগাভাগি করতে দেখা যায়। উইথ অ্যাটিট্যুড। এইটা বলা দরকার। পরিচালক এডগার রাইট এই টিনেইজাররে পর্দায় শুধু ক্যারিশ্ম্যাটিক না, — ডন্টিং এক বিহেইভিয়্যর দিয়া দর্শকদের সামনে তুইলা ধরেন। যেমন তার ড্রাইভিং স্কিল — স্পিড, অ্যাক্সেলারেইটিং, স্কিডিং, ড্রিফটিং … এইসব আপনে কল্পনাতেও ভাবতে পারবেন না। কল্পনায় আপনে হারবেন। এই ম্যুভিটাতে আপনে এমন এক টিনেইজাররে দেখবেন যে মাথার ভিতর একটা ভারী ট্রমা নিয়া ছুটতেছে অন্ধকারের দিকে। এই ট্রমা দর্শকদের মাথার ভিতরও আঘাত করতে শুরু করে যখন তারা আবছাভাবে দেখে, মিউজিকের প্রতি গভীর প্যাশনেইট একটা মেয়ে স্বামী-সংসারের নিস্পেষণে ধীরে ধীরে মুইছা যাইতেছে; — বেইবির আম্মার কথা বলতেছি, যার গানের গলায় বেহেস্তের দরজা খুইলা যাইত যখন-তখন।
টিনেইজার বেইবি এই ট্রমার ভার মিউজিক দিয়াই হাল্কা করতে চায়। তার এক্সাইটমেন্ট, তার ইমোশন, তার অ্যাটিট্যুড সবকিছুই পর্দায় একের-পর-এক মিউজিকে আপনারে অন্ধকার হ্যলে অ্যাক্সেলারেইট করবে। ম্যুভিটা মিউজিকের আখড়া মনে হইব আপনার। মডার্ন, পপ, র্যাপ, জ্যাজ, মেটাল — সব এইখানে স্পেক্ট্রামের মতো সারি সারি লাইন হইয়া আপনারে দুলাইতে থাকব যতক্ষণ ম্যুভি শেষ না হইছে। কিন্তু এই ম্যুভিটা দেখার পর আমি কি এইসব ভাবছিলাম আসলে? মানে এই কথাগুলাই কি আপনাদের বলব — এই-রকম চিন্তা করছিলাম? না; এইসব না, মোটেও। আসেন, — আরেকটু আগাইবার আগে — স্কাই টনিয়া পেরেইরার এই গানটা একবার শুইনা লই :
জানি, শুইনা হাসবা তুমি
কিন্তু এই ব্যথা নিতে পারতেছি না আর —
রাত পোহাইলে তোমারে ছেড়ে চলে যাব আমি
জাইনো তুমি, পারতে আমি সবকিছুই করছি
ভিক্ষা আর চুরির পর — ধারও তো করছি আমি …
এই কারণে আমি সহজ
রবিবারের সকালের মতো এত সহজ
এই কারণে আমি সহজ
রবিবারের সকালের মতো খুবই সাদাসিধা
কেন তারা আমার পায় খালি শিকল পরাইতে চায়?
দেনা ছিল যত, সব তো শোধ করছি আমি।
তুমি যা বানাইতে চাও, আমি কি তা-ই হব নাকি?
ফেইক জিনিশ ভাল্লাগে না আমার; ভাল্লাগে না হারামি।
এই কারণে সহজ আমি
রবিবারের সকালের মতো এত সহজ
এই কারণে আমি সহজ
রবিবারের সকালের মতো খুবই সাদাসিধা
অনেক উঁচায় উঠব আমি
উঁচায় বইসা দেখব — যা করতেছি সব ঠিকঠাক হইতেছে তো
নিজের ডানায় উইড়া যাইতে চাই … একলা একলা
এই কারণে সহজ আমি
রবিবারের সকালের মতো খুবই সহজ
এই কারণে সহজ আমি
রবিবারের সকালের মতো এত সাদাসিধা
লোকজন এই-রকম বলতেছে, এই সময়ের স্যোশ্যাল মিডিয়াগুলা আমারে-আপনারে খুব সহজেই যোগাযোগ করাইয়া দিতে পারতেছে। এইখানে এক-ধরনের ডেমোক্রেসি সবার আছে — যখন সবাই ইচ্ছামতো নিজের-নিজের চিন্তাগুলা শেয়ার কইরা বেড়াইতেছে। যেমন ধরেন, — এইখানে একজন কালচারাল ফ্যাসিস্ট আর একজন উদারনৈতিক চিন্তকের সমান জায়গা আছে নিজেরে এক্সপ্রেস করার, শেয়ার করার। ফলে কেউ কেউ এই-রকম আশঙ্কা করতে পারেন যেমন এইভাবে এক-ধরনের হায়ারার্কি ক্রিয়েট হইতেছে যেইটা সমাজের বেসিক ঐক্যগুলারে ব্যাকস্ট্যাব করতে পারে। মানে কেউ তাইলে এই-রকম ডেমোক্রেসিরেও হাল্কাভাবে নিতে রাজি না।
অতএব আমরা এই কমিউনিকেশনের ভিতর একটা কমিউনিকেইটিং প্রোব্লেমরে ফেইস করা শুরু করছি। যেহেতু কমিউনিকেশন ইটসেলফ ইজ অ্যা বিজনেস; প্রোব্লেমটা মূলত এই বিজনেসের মূল দুইটা এলিমেন্টের মধ্যেই চলতেছে। এক হইল ভোক্তা — মানে, আমি আর আপনের মতো লোকজন; দুই হইল এই কমিউনিকেশন আমার আর আপনের মধ্যে যারা বেচতেছে তারা। আপনে খেয়াল করলে দেখবেন — এই হায়ারার্কি এখন আপনার আর আমার মধ্যে মোটেও আর নাই। যারা এই কমিউনিকেশন বেচতেছে — এই হায়ারার্কি এখন তাদের দখলে। সো আপনে যখন ভাবতেছেন চিন্তার লগে চিন্তার দ্বন্দ্ব হইলে শুধু আনফ্রেন্ডলি না, ফ্রেন্ডলি কিছু ব্যাপারও বের হইয়া আসতে পারে; তখন এইখানে তারা এইটারে একটা দ্বন্দ্ব হিসাবে — বা, বলা যাক — এরে একটা ভার্চুয়াল প্রোডাক্ট হিসাবে এই কমিউনিকেশনে সেল কইরা দিতেছে।
‘বেইবি ড্রাইভার’ দেইখা আমার আসলে এইসব কিছুই মনে হয় নাই। কিন্তু এইখানে আমি এমন একটা যোগাযোগ দেখছি — যেইটা আপনারে দুঃস্বপ্ন থেইকা বাইর কইরা নিয়া আসতে পারে। যেই ট্রমা নিয়া রাস্তায় রাস্তায় বেদিশা হইয়া ছুটতেছেন আপনে, এই যোগাযোগ এরে মুহূর্তেই উধাও কইরা দিতে পারে। যে-শূন্যতায় আপনে কোনোখানে আইসোলেটেড হইয়া রইছেন, সেইখানে এই যোগাযোগ আপনারে একটা স্ট্রেচার অফার করবে। আমি সেইটাই আপনারে বলতেছি এখন। আপনে আমার পাশে আইসা বসেন।
সাক্সেসফ্যুল এক অপারেশনের পর বেইবি একটা রেস্টুরেন্টে গেলে সেইখানে তার সাথে ডেবোরার পরিচয় হয়। ডেব্রা না; ডি-ই-বি-ও-আর-অ্যা। ডেবোরা। ষোলো-সতেরো বছরের একটা মেয়ে; এক ইন্টেন্স বিউটি। ওই রেস্টুরেন্টে ওয়েট্রেস হিসাবে কাজ করতেছিল। কথায় কথায় ডেবোরা বেইবিরে জানায় — তার খুব ইচ্ছা একদিন একটা গাড়ি নিয়া পূর্বে ছুইটা যাইতে। অথচ এই গাড়ি কীভাবে সে কিনবে; এই-রকম কোনো প্ল্যান পর্যন্ত তার নাই। সে খালি শাঁইশাঁই কইরা ছুইটা যাইতে চায়। আর এই সফরে তার সাথে থাকবে দূরে-ঝাপসা-হইয়া-শুইয়া-থাকা বিরান রাস্তা আর শুধু মিউজিক।
ডেবোরা যখন এইসব কথা বলতেছিল, ক্যামেরা তখন আমার চোখ দুইটারে বেইবির মুখের উপর নিয়া ফেলে। আমি বেইবির মুখের রঙ বদলাইতে দেখি। দেখি, ডেবোরার এই সাধারণ স্বপ্নটা কীভাবে বেইবিরে গিইলা ফেলতেছিল। যেন একটা ভাইরাস — নতুন এক ভূমিতে ছড়াইয়া পড়তেছে দলবল নিয়া। দেখি, ডেবোরার এই স্বপ্ন বেইবিরে রাস্তা দেখাইতেছে যেইটা সে এতদিন ধইরা খুঁজতেছিল। উর্বর এক ভাষার মতো, গভীর এক সুরের মতো, ছলছল দুইটা চোখের মতো ডেবোরার এই স্বপ্ন বেইবির ভিতর ঝাঁপ দিতেছিল। অতএব এইভাবে এই যোগাযোগের ভিতর এই-রকম এক প্রেমের খবর ‘বেইবি ড্রাইভার’ আমারে দিছে। এক ফেরিওয়ালা হইয়া আমি কি ডাকতেছি কারো ঘরের বাইরে? এক ডাকপিয়ন হইয়া আমি কি ছুটতেছি ঠিকানা-মুইছা-যাওয়া কোনো ঘরের খোঁজে?
বেইবি … ও বেইবি …
আই ল্যভ টু কল ইউ বেইবি
বেইবি … ও হো বেইবি …
আই ল্যভ ফর ইউ টু কল মি বেইবি
হোয়েন ইউ স্কুইজ মি রিয়েল টাইট
ইউ মেইক রঙ থিংস রাইট
অ্যান্ড আই ক্যান্ট স্টপ লাভিং ইউ
অ্যান্ড আই ঔন্ট স্টপ কলিং ইউ
বেইবি … ও বেইবি …
ইউ ল্যুক সো গ্যুড টু মি বেইবি …
Film Title: Baby Driver ।। Released Year: 2017 ।। Genre: action crime ।। Duration: 1 h 53 min ।। IMDb Score: 7.8/10 ।। Director: Edgar Wright ।। Stars: Ansel Elgort, Kevin Spacey, Lily James, Eiza González, Jon Hamm, Jamie Foxx, Jon Bernthal ।। Music Score: Steven Price ।। Net profit approximately $ 226.9 million
… …
- জন ডেনভার : তবুও শুনাইয়া যাব ফিইরা আসার গান || হাসান শাহরিয়ার - December 31, 2017
- রিলোডিং শিরোনামহীন অ্যান্ড জাদুকর রিঅ্যাওয়্যাইকেন || হাসান শাহরিয়ার - December 9, 2017
- কমিউনিকেশনের কলকাকলিমুখর করুণ দুনিয়ায় || হাসান শাহরিয়ার - November 26, 2017
COMMENTS