বাউল গান : অথেনটিসিটি ও মালিকানার প্রশ্ন || সুমন রহমান

বাউল গান : অথেনটিসিটি ও মালিকানার প্রশ্ন || সুমন রহমান

মা লো মা’ গানটা খালেক দেওয়ানের নাকি রশিদ উদ্দিনের? এই বিতর্কের সমাধান সহজে হবে না। যেমন, ‘এসব দেখি কানার হাটবাজার’ গানটা লালনের বলে আমরা জানি। আবার মনোমোহন দত্তেরও প্রায় অবিকল একই গান আছে। দুই ক্ষেত্রেই যেটা কমন সেটা হলো, গানের লিরিক ষোলোআনা মেলে না, কিন্তু সুর একই থাকে। খালেক দেওয়ানের লিরিক আর রশিদ উদ্দিনের লিরিক বেশ খানিকটা আলাদা। লালন আর মনোমোহনের ক্ষেত্রেও ‘কানার হাটবাজার’ গানে একই ঘটনা ঘটেছে।

এখন এই যে ‘আসলে কার লেখা’-জাতীয় আলাপ, এটা নতুন ঘটনা। অথেনটিসিটি এবং মালিকানার প্রশ্ন। আমার ‘মাইগ্রেশন অব মেটাফরস’ বইতে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আছে। বাউল নিজে একটা হাইব্রিড চর্চা ছিল, নানা সূত্র থেকে সে নানাকিছু গ্রহণ করেছে। গানের ক্ষেত্রেও তাই, মালিকানা মুখ্য ছিল না। ফলে একই গান লালন ও মনোমোহন লিখেছেন, মাঝখানে হয়ত নিজেদের প্রেক্ষিত ও রুচি অনুযায়ী কিছু অদলবদল করেছেন। পরবর্তীতে আমরা যখন আমাদের নিজেদের মালিকানার বোধ নিয়ে বাউলকে বুঝতে গেছি, তখন আমরা এর মধ্যে অথেনটিসিটি আরোপ করেছি। বোঝার চেষ্টা করেছি কে আগে : লালন না মনোমোহন, খালেক দেওয়ান নাকি রশিদ উদ্দিন?

বাউল-প্রাক্সিসের জায়গা থেকে এটা খুব ফালতু বিতর্ক। কিন্তু বাউল-বেচা পুঁজিবাদী কালচারে এইটা বড় প্রশ্ন!

দুই বাউলের সমসাময়িক আমলে আলাপটা আত্মসাতের মামলা ছিল না। কিন্তু এই দেয়া-নেয়া তখন থেকেই চলছে। এখন যখন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এর হিস্যা নিতে আসছে, একে আত্মসাতের মামলা ধরা যায়। আমার কথাটা ছিল, কে কাকে আত্মসাত করেছে সেটা সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা কঠিন। রশিদ উদ্দিন ১৯৬৪-তে মারা গেছেন, আবার প্রায় কাছাকাছি সময়েই খালেক দেওয়ান এটা এইচএমভি  থেকে রেকর্ড করেছেন। ক্লু বলতে এতটুকুই। আবার তাদের গান যেহেতু খানিকটা ভিন্ন, তাই আত্মসাতের চেয়ে আপনায়নের জায়গা থেকেও দেখা যায়। কারণ এই চর্চা বাউলে ছিল। ‘সর্বতো মঙ্গল রাধে’ গানের হিসাব এই অইতিহাসিকতার ডোমেইনে নাই। এটা সমসাময়িক ঘটনা, এটাকে আত্মসাৎ বলায় দোষ দেখি না।


 

কোকস্টুডিয়ো কম্পোজিশনে আলোচ্য গান

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you