প্রিফেইস্ ড্রাফ্ট করা আদৌ দরকারি কি না, মার্লিকে (Bob Marley) যেটুকু লোকে চেনে সেটুকুই লিরিকানুবাদের এই নিবন্ধ প্রকাশকালে এনাফ কি না, ভাবতে ভাবতে দেখি প্রিফেইসের পয়লা লাইনটা ল্যাপস্ক্রিনে লকলকিয়ে এগোচ্ছে। এমন কোনোই নির্বন্ধ ধরাবাঁধা নাই যে একটাকিছু উপক্রমণিকা ছাড়া পাঠকমঞ্চে লেখা আপানো গর্হিত। বরঞ্চ সত্য উল্টাটা। পাঠকেরে বোকা ভাবতে নাই, রিডার ইজ্ ওয়াচিং য়্যু, পাঠক সব জানে। ইজ্ ইট? সত্যিই কি পাঠক সব জানে? দেখে কি পাঠক সবকিছু? সর্বদ্রষ্টা পাঠক তো গোল্ডের পাথরবাটি; কিন্তু জরুরি জিনিশটাও নজর করিয়া পাঠক দেখে কি? ইভেন যে-কাজের সুবাদে এই নাম তার, পড়া, পাঠক কি সেই কাজটায় মেহনত করে আজ আর, পাঠক কি পড়ে আজ আর? পড়ত কি বিগতকালে? হ্যাঁ, বিগতকালে একাধটু উতরচাপানির গরজে হলেও পড়ত, হতো পড়তে, এখন না-পড়েও দুনিয়া তামা-তামা করে ফেলা যায়। এখন না-পড়েই বিলকুল খারিজ করার বরাতে ব্যাপকতর পণ্ডিতির কালচার অতিশয় ট্রেন্ডি এই বিদ্যাবিধৌতা বাংলায়। যেমন দুইফোঁটা কাজের-কথা না কয়েও বর্তমানকালে একপ্যারা দশাসই প্রিফেইস্ রচে ফেলা যায়। এভিডেন্স অলরেডি হাজির; সো, গেট গ্যয়িং টু দ্য পরবর্তী প্যারা।
‘রাস্তাফারাই, রেগে ও বব মার্লি’ শিরোনামে একটা বই আছে বাংলায়; কেউ কি দেখেছেন বইটা? কাজী মুনতাসির বিল্লাহ বইটার অথার। নিশ্চয় দেখেছেন, অন্তত কেউ কেউ, অথচ টুঁ-শব্দটা নাই। বিতিকিচ্ছিরি বিষয়াদি নিয়া ফাঁদা গাদাগুচ্ছের বইরিভিয়্যু গোচরীভূত হয় ইহলোকে হররোজ, দুর্ধর্ষ এই বইটা গাদাগুচ্ছের সেই বিতিকিচ্ছিরিতার বেনিয়া হাওয়ায় অ্যাবসেন্ট। অবশ্য একদিক থেকে এইটা কাজটার দুর্ধর্ষতারই ইঙ্গিতবহ। দুনিয়াভরতি মিডিয়োক্যরদের ভিড়ে এহেন গরহাজিরা আখেরে একশবিরাশি রিমার্ক আর সাতশপঁয়তাল্লিশ মুখগ্রন্থমন্তব্যের চেয়েও মূল্যবান, মর্মবত্তাবাহী, সিগ্নিফিক্যান্ট। তবু, মন মানে না বাদলিবৃষ্টির এই ছিঁচকাদুনি ক্রিটিকের দেশে, দুর্দান্ত বয়ন ও বয়ানের একটা বই আমার ভায়ের বড়াইয়ে ভাসানো মহান বইমেলাকালীন কোনো গ্রন্থপ্রেমী টিভিতে-ফেবুতে লাইভে নিয়া আইলো না! কাজী বিল্লাহ-র তাতে একছটাকও মুনাফা বাড়ত না জানি, কিন্তু বইলিখিয়ে বেদম তরুণদের সামনে একটা আইডল বই অন্তত থাকত। কয়জন দেখেছে, কে জানে! যে দেখে, যে দেখবার কথা, সে তো সিনের বাইরে বিরাজে, সে তো নাইই সিনে বা আরাধনাপুণ্যে।
এই বইটা বাইর হয়েছে ২০১২ অব্দে। একশ চল্লিশ টাকা গাত্রমূল্য লয়ে। কেমন বিকিসিকি হয়েছে, এইটা আপাতত অনুমেয়। গ্রন্থমণ্ডপে এইসব বই বিক্রেতা রাখেন না, পাঠক্রেতাও খোঁজেন না। বাংলায় বার্থসার্টিফিকেটধারীরা দিনরাত কবিতায় হাবিল-কাবিল, কবিতায় মারাকাটা কাউকাউ, গসিপে আর গল্পোপন্যাসে হালুমহুলুম। ফলে বব মার্লি নোবেল না-পাওয়া পর্যন্ত বইটা ভারত-বাংলা সাধু ও চোর পরস্পর কারোরই নেক নজরে আসবে না ধরে নেয়া যায়। একদিক থেকে বাঁচোয়া বটে। এহেন চুরিপরস্পরির দেশে এইসব নজরদারদের নন্দিত সংঘাশ্রয় হইতে নিজেরে বাঁচিয়ে না-রাখতে পারলে অভিপ্রেত কাজকাম শিকেয় উঠবে।
এইটা আদৌ তথ্যচয়নিকা না। মার্লি (Bob Marley) নিয়া আংরেজিতে হাজার হাজার পাতা আছে নেটে, একক্লিকেই নিংড়ে এনে আখাম্বা বাংলায় বেহদ্দ অনুবাদে একটা মাল খালাস দিয়া কালারফ্যুল কোনো কবিতাসাহিত্যের সাইটে নিজনামে দস্তখত করে ছেপে দিতে পারেন আপনি নিশি অবসানের আগেই, কিন্তু এই বই সে-রকম উপরটপকা নাম-কা-ওয়াস্তে বেহুদা পাণ্ডিত্যফাটানো তথ্যতছরুপি কিছু না। ব্যাখ্যা আছে, বিশ্লেষ আছে, সংশ্লেষ আছে বাংলার গান-প্রাণ-রাজনীতিবিশ্বের সঙ্গে, এই বইয়ের পত্তরে পত্তরে, এবং সর্বোপরি আছে ড্রয়িংরুম আর ড্যান্সফ্লোরের বাইরেকার বব মার্লি।
প্রিফেইস মুসাবিদা করতে যেয়েও করা যাচ্ছে না এই বইটার কারণেই। সিচ্যুয়েশনটা পাড়ার বারোয়ারি দিবস-উদযাপনের মঞ্চে বেশ পাওয়া যাইত আগে, এখনও দুর্লভ নয় নিশ্চয়, “আমার পূর্ববর্তী বক্তা যা-কিছু বলার গিয়েছেন বলে, কাজেই আমি আর আমার বক্তব্য দীর্ঘায়িত করব না” ইত্যাদি। স্বীকার্য যে এই প্রিফেইসারের মুরদ ছিল না মার্লি নিয়া কাজী মুনতাসির বিল্লাহ যেভাবে এগিয়েছেন, যে-চেতনায় মার্লি রিডিস্কাভার করেছেন কাজী বিল্লাহ ছয়ফর্মাদীর্ঘ তার পেপারব্যাক বইটায়, যাপনের অনুবর্তী না-হলে এই কায়দায় মার্লি নিয়া আলাপ চালানো তথ্যপণ্ডিত ও বঙ্গপ্রভাষকদের বোকাহাবা সাহস দিয়াই সম্ভব, এই নিবন্ধকারের নাদানি দিয়া বাংলায় তিনচাইরটা তালিবালি গান হয়তো সম্ভব হতেও পারে।
এরপরও ম্যে বি ইনফোটেইনমেন্টের একটা আয়োজন করা সাধ্যাতীত ছিল না, আপকামিং একটা আয়োজনে সেই চেষ্টাটা তেড়েফুঁড়ে করবার মতলবও রয়েছে ষোলোআনা, আপাতত দুর্ধর্ষ ওই বইটার তরফদারি করেই নিপাত যাইছি। কিন্তু উইকিকেরানি হব কি না, খানিক দ্বিধা আছে এখনও। বর্তমান বাংলায় এত অবৈতনিক উইকিকেরানি, এত তাদিগের প্রবন্ধনিবন্ধপণ্ডিতি, প্লীহা প্রায় বিকল হইবার পথে বাংলা-মায়ের। ও হ্যাঁ, আরেকটা বইয়েরও খবর গুঁজে রাখি এই সুযোগে, ‘বব মার্লে : রক রেগ্যে রাস্তা আর শিকড়ের গান’ সেই বইয়ের নাম, ভাষান্তরিত সাতটা সাক্ষাৎকারের সংকলন এবং সঙ্গে গোটা-পনেরো গানের ইংরেজি লিরিক, তৎসঙ্গে একটা আড়াইপৃষ্ঠা মার্লিদিনপঞ্জি। দ্বিতীয় বইটি বিন্যাস, সংকলন ও সম্পাদনায় সন্দীপন ভট্টাচার্য। প্রথমোক্ত বইটা বাইর হয়েছে বাংলাদেশ থেকে, প্রকাশনালোগো ‘সমগীত’ ও ‘সংহতি’; দ্বিতীয় বইটা ভারতের, ‘মনফকিরা’ প্রকাশন। বব মার্লি নিয়া আর-কোনো গ্রন্থপুস্তকবইকিতাবের খবর জানা নাই। বিপুলা ভুবন, সুপ্রিয়া বাংলা আরও বিপুলা, অগোচরে থেকে যেতেও পারে এমন কত কত মণিমাণিক্য।
বক্তব্য দীর্ঘায়িত করব না বলেও বক্তব্য চালাইয়া যাওয়াই কিন্তু দস্তুর। দুইটা বাক্যালাপ পরিশেষে। এই লিরিকান্তর বিষয়ে। এইগুলা ভাবানুগও নয়, মূলানুগও নয়, তাইলে এইগুলা আদৌ কোনো কামে লাগবে কি? নিছক প্রচেষ্টা, প্রাথমিক, বাদবাকি দিনগুলোতে এই বিপদাপন্ন প্রচেষ্টাগুলোর অভিজ্ঞতা পাঠকদেরে পণ্ডশ্রম থেকে নিবৃত্ত করবে এবং/অথবা আরও নতুনতর বৈচিত্র্যবহ প্রচেষ্টায় ইন্সপায়ার করবে। কেবল বলি এইটুকুই যে, বাংলা কবিতা, বাংলা গান, বাংলা গ্র্যাফিতি ইত্যাদির ভিতর দিয়া মার্লির যে-গানগুলো অনায়াসে একটা আদলে এনে ফেলা গিয়েছে, অভিধান ব্যতিরেকে, সেগুলোই রয়েছে এখানে। পঙক্তি টু পঙক্তি, শব্দ টু শব্দ, অনুবাদ করতে যেয়ে কাঠের তক্তা মনে হয়েছে বলেই ইস্তফা দিয়েছি কাঠমেস্তরিগিরিতে। বেয়াড়া স্বাধীনতাই ইস্তিমাল করা হয়েছে বলিয়া আংরেজিজ্ঞানীদেরে ক্যশন দিয়া রাখিনু।
প্রস্থানের পূর্বে ব্যক্ত করিয়া যাই যে, এথাকার সব-কয়টা গানেরই স্যংরাইটার স্বয়ং বব মার্লি; তিনটা আছে যেগুলোর স্যংরাইটার অন্যে, এর মধ্যে একটাতে মার্লি অংশীদার অথার। আর, গানগুলোর শিরোনামপঙক্তি ইংরেজিতেই রাখা গেল মূল টেক্সট খুঁজে বের করা ইজি হবে ভেবে। এবং ভূমিকায় ব্যক্ত বইদ্বয়, বিশেষ করিয়া কাজী মুনতাসির বিল্লাহ প্রণীত অরিজিন্যাল বাংলা ব্যাখ্যানের বব মার্লি, বের করা আজকের যুগে বেবাকের অঙ্গুলিডগায়। লেট’স্ ট্রাই অ্যাট-লিস্ট। পড়া যায় কি না, নিম্নলিখিত বাংলাটা, ট্রাই করে দেখা যাক।
—————————–
গানের রাস্তা গানের গলি
কুড়িটা গানে বব মার্লি
নো উয়োম্যান নো ক্রাই ।। ক্রাই টু মি ।। স্টে উয়িথ মি ।। গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ ।। দেম বেলি ফ্যুল (বাট উই হাংরি) ।। ওয়ার ।। ইজ্ দিস্ ল্যভ ।। র্যাট র্যাস্ ।। ক্যুড য়্যু বি ল্যভড্ ।। গাঞ্জা গান ।। ওয়ান ল্যভ / পিপ্যল্ গেট রেডি ।। রিয়্যাল সিচুয়্যেশন ।। মিস্টি মর্নিং ।। রানিং অ্যাওয়ে ।। থ্রি লিটল বার্ডস্ ।। ন্যাচার্যাল মিস্টিক ।। সো মাচ ট্রাবল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ।। পজিটিভ ভায়ব্র্যাশন ।। আ’য়্যাম হার্টিং ইন্সাইড ।। রেভোল্যুশন
ভাষান্তর ও ভূমিকা :: জাহেদ আহমদ
গানপার প্রকাশ :: ফেব্রুয়ারি ২০১৮
—————————–
নো উয়োম্যান নো ক্রাই
না, কান্দে না মাগো
না, কান্দে না বুবু
না, কান্দে না সোনা
না, কান্দে না জানু
মনে পড়ে সেই দিনরাতগুলো রইতাম জড়সড়
শরণার্থীরা লঙ্গরে বসে সরকারি ছাউনিতে
দেখতাম যত ভণ্ডের দল উঠানে হয়েছে জড়ো
ধড়িবাজগুলা ভাব ধরে যেন জনতার মহা মিতে
ছিল বেশুমার আত্মীয় আমার প্রতিবেশী হিতকামী
ছিল তারা আজ নাই অনেকেই হারায়েছে চিরতরে
সুদিন আসন্ন বলেই নিজের অতীত ভুলি না আমি
তুমিও ভোলো না তাণ্ডবে কত স্বজন গিয়াছে মরে
না, কান্দে না মাগো
না, কান্দে না বুবু
না, কান্দে না সোনা
না, কান্দে না জানু
চোখ মোছো প্রিয়তমা
পানিঝরানি বৃথাই তোমার চোখের
কান্দে না, বাছা, কান্দার কিছু নাই
কিচ্ছুটিই তো ঘটে নাই কান্দনের
ভুলি নাই প্রিয় ভুলি নাই আমি ভুলি নাই দিনগুলো
মড়ার মতন দুইহাঁটু মুড়ে নিরাশ্রয়ের নতমুখ
সন্ধ্যায় কেউ জ্বেলে দিয়ে যেত উঠানে খড়ের আলো
জ্বলত অদূরে সেই আলোটুকু ঘুমনিভুনিভু উজবুক
চুলায় ডেকচি চড়ায়ে আমরা রানতাম জাউখিচুড়ি
ভাঙা থালে করে খেতাম দুজনে ঘেঁচুকচু খুদকুঁড়ো
সম্বল শুধু দুইখানা পা, নাই আর কোনো জুড়ি
ঠিক দেখে নিও পথচলা আমি আবার করব শুরু
চলে যাব আমি যেদিন বন্ধু লঙ্গরখানা ছাড়িয়া
আসিবে সুদিন বাজিবেই বীণ উঠিবে লোকেরা জাগিয়া
থাকবে না ভয় কোনো সংশয় এহেন দোজখ হাবিয়া
দ্যাখো দ্যাখো ওই বিচ্ছুরা দ্যাখো গোকুলে উঠিছে বাড়িয়া
আমি যাব চলে যেদিন বন্ধু লঙ্গরখানা ছাড়িয়া
আনিব তখন সঙ্গে একশ নিশানের হাওয়া কাড়িয়া
আনিব আমরা রাঙা প্রভাতের মাস্তুলখানা পাড়িয়া
দ্যাখো সবকিছু হবে ঠিকঠাক অভয়ের হাত নাড়িয়া
না, কান্দে না মাগো
না, কান্দে না বুবু
না, কান্দে না সোনা
না, কান্দে না জানু
চোখ মোছো প্রিয়তমা
পানিঝরানি বৃথাই তোমার চোখের
কান্দে না, বাছা, কান্দার কিছু নাই
কিচ্ছুটিই তো ঘটে নাই কান্দনের
আবারও বলছি, বলি পুনরায়, শোনো :
ডাকে পাখি খোলো আঁখি দ্যাখো সোনালি আকাশ
বহে ভোরের(ও) বাতাস … বহে ভোরের(ও) বাতাস …
ক্রাই টু মি
আসো, বসো, মন যদি চায় নিরলে একটু কাঁদো
মন যদি চায় আমারই সঙ্গে কান্নার গান বাঁধো
মুহূর্তে দ্যাখো উবে যাবে ব্যথা হৃদয়ের যত গ্লানি
নিমেষে বেদনা হাওয়া হয়ে যাবে পাষাণ গলিয়া পানি
ঝরাইয়া দাও যতটা-যা পারো চোখের অশ্রুধারা
কান্নায় যাক ধুইয়া যা-কিছু প্রতারণা-শঠতারা
কাঁদিতে এসেছ ভবপারাবারে, এই-তো রয়েছি আমি
হৃদয়-শরীর উজাড়িয়া যাও কাঁদিয়াই দিবাযামী
ঈশ্বরই শুধু জানেন যে আমি কীভাবে রেহাই পাই
তিনি ছাড়া এই অনাথের ব্যথা বুঝিবার কেহ নাই
নিরালায় আছি বিজনে বসিয়া শান্ত নদীর কাছে
এসো এসো সখা কাঁদো তনুঝোরা কান্নায় ত্রাণ আছে
কেঁদে যাও বসে এইখানে এসে এই-না কাঁধটি ঘেঁষে
এই-তো তোমার কাঁদিবার মতো বন্ধুটা ভালোবেসে
একলা প্রহর পাশ ফেরে দ্যাখো অনন্ত এই রোদন
মনস্তাপের বোঝা বইবার নাই কিছু প্রয়োজন
মুহূর্তে দ্যাখো উবে যাবে ব্যথা হৃদয়ের যত গ্লানি
নিমেষে বেদনা হাওয়া হয়ে যাবে পাষাণ গলিয়া পানি
ঝরাইয়া দাও যতটা-যা পারো চোখের অশ্রুধারা
কান্নায় যাক ধুইয়া যা-কিছু প্রতারণা-শঠতারা
হৃদয়-শরীর উজাড়িয়া যাও কাঁদিয়াই দিবাযামী
কাঁদিতে এসেছ ভবপারাবারে, এই-তো রয়েছি আমি
ঈশ্বরই শুধু জানেন যে আমি কীভাবে রেহাই পাই
তিনি ছাড়া এই অনাথের ব্যথা বুঝিবার কেহ নাই
নিরালায় আছি বিজনে বসিয়া শান্ত নদীর কাছে
এসো এসো সখা কাঁদো তনুঝোরা কান্নায় ত্রাণ আছে
কাঁদো সখা, কাঁদো, কাঁদিয়া হাল্কা হও
বয়ে যাও, বহো মনোযাতনার হাওয়া, হুহু ক্রন্দনবায়ু বও
স্টে উয়িথ মি
নতজানু হয়ে এইটুকু অনুনয়
দীনভিখারিরে যদি তব দয়া হয়
থাকো প্রিয়তমা আমার সঙ্গে থাকো
যত-যা-ই হোক ছাড়িয়া যাইয়োনাকো
করেছি কি ভুল এতটাই প্রিয়তমা
আমার ভুলের নাই কাফফারা-ক্ষমা?
রাত্তিরে করি কায়মনো মুনাজাত
চোখভরা পানি নিঁদহারা আঁখিপাত
করি মুনাজাত জোড়া লাগে যেন সব
দয়াময় যদি কবুল করেন স্তব
সুখী হব দোঁহে যেমন হবার কথা
কান্নার কোনো দরকার নাই অযথা
পাও না শুনতে হৃদয় আমার গাইছে ব্যাকুল স্বরে
থাকো প্রিয়তমা আমার সঙ্গে চিরটাকালের তরে
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সনে, শান্তি পাবে না কেন?
অনুক্ষণ যদি নিকটেই থাকি, কেন দোষারোপ হেন?
গেট আপ, স্ট্যান্ড আপ
জাগো, ওঠো : লড়ো তোমার অধিকার বুঝে নিতে
জাগো, ওঠো : লড়াই চালাও জুলুমের বিপরীতে
জাগো, ওঠো : চলুক লড়াই নিজের হিস্যা আদায়ের
জাগো, ওঠো : মুঠোটা আলগা কোরো না স্বাধীন হাতের
বেহুদা বয়ান করিতেছে ওই ইমামহুজুর শোনো
নসিহতে তারা পুকারিয়া যায় বেহেস্ত মাটির তলে
আমি জানি খুব ভালো করে জানি কিছুই জানে না তারা
জানে না আদতে কেমন করিয়া মাঠের ফসল ফলে
সোনার মতন চকমকালেও সোনা নয় সবকিছু
প্রচলিত ওই কিচ্ছাটা তুমি শোনো নাই আগুপিছু
নয়নসমুখে এবার তোমার নাচিছে আলোর রেখা
গা-ঝাড়া জাগিয়া ওঠো এইবার আপনার তরে একা
জাগো, ওঠো : চলুক লড়াই নিজের হিস্যা আদায়ের
জাগো, ওঠো : মুঠোটা আলগা কোরো না স্বাধীন হাতের
লোকে ভাবে দ্যাখো ভগবান নেমে আসবে আরশ থেকে
ব্যথা ও বেদনা বিনাশিয়া যাবে আনন্দরেখা এঁকে
অথচ তোমার থাকে যদি জানা জীবনের কত দাম
তখন তো তুমি নিজেই জীবনে প্রবেশিতে উদ্দাম
নয়নসমুখে এবার তোমার নাচিছে আলোর রেখা
গা-ঝাড়া জাগিয়া ওঠো এইবার আপনার তরে একা
ওঠো, জাগো! ওঠো, জাগো!
অধিকারটুকু হুঙ্কার করে মাগো!
ওঠো, জাগো! ওঠো, জাগো!
লড়াইফিল্ডে হুঙ্কারবোমা দাগো!
ওঠো, জাগো! ওঠো, জাগো!
কোনঠে সবাই? তীব্র নিনাদে রাগো!
হুজুরের যত তন্ত্রমন্ত্রে আমরা নিত্য নাজেহাল
মরতে মরতে স্বগ্গে চলেছি প্রভুনাম জপে উত্তাল
কবে বলো আর কখন বুঝব এটুকু সত্যসার :
জগদীশ্বর মূলত একটা মানুষেরই উপচার
কতদিন বলো চলবে এসব মিছা মলমের মজমা
পাব্লিক নয় চিরকেলে কোনো বোকাহুঁকো রসকদমা
নয়নসমুখে এবার তোমার নাচিছে আলোর রেখা
গা-ঝাড়া জাগিয়া ওঠো এইবার আপনার তরে একা
তাইলে ঠিকাছে, এসো এইবার, আসল কথায় চলো :
সকালে বিকালে রাত্তিরে ভোরে হুঙ্কারে হেঁকে বলো
ওঠো, জাগো! লড়াই নিজের অধিকার বুঝে নিতে
ওঠো, জাগো! লড়াই চালাও জুলুমের বিপরীতে
ওঠো, জাগো! লড়ে দূর করি যা-কিছু কূট ও ঝুটা
ওঠো, জাগো! কোরো না আলগা হাতের বজ্রমুঠা
দেম বেলি ফ্যুল (বাট উই হাংরি)
পেটভরা তারা আর আমরা ভুখা
আমাদের খিদা আর গনগনা রাগ
হাড়ভাঙা খাটি কাদাজলে একরোখা
তাদের গোলায় যায় আমাদের ভাগ
মরমিয়া গানে এসো উদ্বাহু নাচি
চিৎকারে হুল্লোড়ে ভুখানাঙা বাঁচি
বিপদের আঁচ ভুলে আয় করি নাচ
দুর্দশা ভুলে আয় এইখানে বাঁচ
ঝঞ্ঝা থামলে দ্যাখ উঁচা-মাথা গাছ
রোজকার চাল-ডাল বাজারেতে চড়া
মাথামোটা ধনীদেরও দশা ঘাটে-মড়া
খাড়াইবি কবে বল্ দুবলার দল
লোকে বলে, “দ্যাখো কত সেয়ানা পাগল!”
পেটভরা তারা আর আমরা ভুখা
আমাদের খিদা আর গনগনা রাগ
হাড়ভাঙা খাটি কাদাজলে একরোখা
তাদের গোলায় যায় আমাদের ভাগ
ফকিরি গানের ঘোরে হই মাতোয়ারা
প্রাণে প্রাণ মিলিলেই জীবনের ধারা
আল্লার এ-দুনিয়ায় কেউ কেউ ভুখা
যারা আছে পেটভরা তারা বহুমুখা
আরও কত শতকোটি খিদাভরা মুখ
ভুঁড়িওলা যারা শুধু ভদ্দরনোক
ঝড়জলে গোলামিতে নাহিকো কামাই
চুলায় চড়ে না হাঁড়ি পেটে খাইখাই
খিদে-পেটা ব্যাটাবিটি বিকট ভীষণ
ফুঁসে যদি ওঠে তবে তামাদি জীবন
ঘরে ঘরে ঠনঠন হাঁড়িপাতিলেরা
গানে গানে এ-বাঁচন ক্ষুধাক্রোধঘেরা
ওয়ার
যতদিন মানুষের একভাগ থাকবে বসে মগডালে উঁচু
আরেকভাগ থাকবে একদম পাতালতলে ন্যাকাবোকা কাঁচুমুচু
ততদিন মানুষ রইবে এমনটাই বিদঘুটে অবরুদ্ধ
ততদিন উঁচায়-নিচায় জারি রইবে যুদ্ধ
যতদিন মানুষেরা থাকবে শ্রেণি দিয়া বান্ধা
থাকবে মানুষবিচারের গোত্রবংশভজা ধান্দা
যতদিন ধলা-কালা মানুষের গতরের চামড়া
মানুষেরই মুখ দিয়া মানুষেরে ঘেন্নাবার মন্ত্র প্রচারিবে দুনিয়ার যত ধামড়া
ছাইচাপা আঙরার মতো ততদিন মানুষ রইবে ক্রুদ্ধ
ততদিন চলবেই থামবে না মানুষে-মানুষে এই যুদ্ধ
যতদিন মূলের অধিকারগুলো সমান না-হবে বেবাক লোকের জন্য
যতদিন চৌধুরী-চণ্ডাল হবে না কারো থেকে কেউই নিচু বা উচ্চ গণ্য
ততদিন রইবে এই সন্ধিবিহীন সংঘাত এই লড়াই সহজবোধ্য
ততদিন মুলতুবি নেই নিঃশেষে এই ন্যায়ের জন্য যুদ্ধ
যতদিন দুনিয়াজোড়া শান্তির স্বপ্ন রইবে পূরণের অপেক্ষায়
বিশ্বনাগরিকতা আর আন্তর্জাতিক নৈতিকতা থাকবে দূরের অদেখায়
একগোছা ভ্রান্তি নিয়া মানুষের জীবনযাত্রা সীমাহীন ভুলেরই নিগড়াবদ্ধ
চতুর্দিকে ব্যাপক রভসে কেবল যুদ্ধ ক্রূর ও কঠোর যুদ্ধ
যতদিন রক্তখেকো দুঃশাসনবাহিনী শিকলে বাঁধিয়া রাখবে আমাদেরে অসহায়
বেঁধে রাখবে আমারই স্বজনদেরে অ্যাঙ্গোলায় মুজাম্বিকে সাউথ-অ্যাফ্রিকায়
মানুষে-মানুষে মায়ার বাঁধন ভালোবাসার ব্রত যতদিন অবনমিত রইবে শেকড়সুদ্ধ
সোচ্চারে-নিরুচ্চারে ততদিন জারি রইবে এখানে-ওখানে সর্বত্র সন্ত্রাসত্রস্ত যুদ্ধ
যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ চলবে, যুদ্ধ পুবে যুদ্ধ পশ্চিমে
যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ চলবে, যুদ্ধ উত্তরে যুদ্ধ দক্ষিণে
এবং যুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ, যুদ্ধদামামা জালিমে ও মুজরিমে
এবং যুদ্ধ, শুধুই যুদ্ধ, যুদ্ধের অশনি নিশীথে এবং দিনে
ততদিনই যুদ্ধ রইবে জারি কিংবা তারচেয়েও ভয়াবহ যুদ্ধের গুজব
যতদিন অ্যাফ্রিকায় এক-আঁজলা শান্তির তৃষ্ণায় দলে দলে মানুষ হবে শব
লড়াই আমরা চালায়েই যাব — আমরা অ্যাফ্রিকানরা — লড়াই বাঁচামরার
আমরা জানি জিতে নেবই নেব লক্ষলোকের রক্তের দামে শান্তিরই উপসংহার
বিশ্বাস করি একটাই কথা : আমরা করব জয়
বিশ্বাস করি পৃথিবীটা হাড়বজ্জাত কোনো জালিমের জুয়ার দান তো নয়
বিশ্বাস করি পৃথিবীটা দানবের ধুনফুনধারা নয় — পৃথিবীটা মায়াদয়াভরা মানুষের
বিশ্বাস করি পৃথিবী নিছক উৎসবভূমি — হৃদয় দিয়ে কেবলই হৃদয় জয়ের
ইজ্ দিস্ ল্যভ
মায়াডোরে বেঁধে রাখিব তোমায় আদরের মৌতাতে
বাসিয়া যাইব ভালোটি প্রিয় প্রতিদিন প্রতিরাতে
একে অপরেরে ভাসাব সোহাগে একই চৌখুপি ঘরে
একই বিছানায় দেহবিনিময় করিব অঙ্গ ভরে
একই কামরায় ছিটকিনি দিয়া থাকিব প্রণয়ে উত্তাল
তোমাতে-আমাতে প্রেমদরিয়াতে সহায় দীনের দয়াল
কোন নামে এই অনুভূতিটারে চেনাব লোকের মাঝে?
একেই কি বলে ভালোবাসা সখি হৃদয়ে যে-গান বাজে?
কেমন করিয়া ডাকিব ইহারে কেমনে গাহিব গান?
তোমারে যা চাই বলিতে পারি না প্রাণ করে আনচান।
তোমারও কি ঠিক অনুরূপ দশা জানিতে ব্যাকুল মন
অতল হৃদয় কাতর হইয়া চাহিছে আলিঙ্গন?
সর্ব অঙ্গ উজাড়িয়া আমি দিতে চাই ভালোবাসা
চাইছি হৃদয় চিরিয়া দেখাব তুমিহীনতার হতাশা
আমার চাওয়ায় দ্বিতীয়টি নাই একটাই শুধু তুমি
দিতে চাই পাড়ি তোমারে লইয়া জীবনের মরুভূমি
জীবন ভরিয়া ভালোবাসাবাসি জীবন ভরিয়া প্রাণ
উছলিয়া যায় প্রেমের সুরমা আর মেঘনার গান
কোন নামে এই অনুভূতিটারে চেনাব লোকের মাঝে?
একেই কি বলে ভালোবাসা সখি হৃদয়ে যে-গান বাজে?
কেমন করিয়া ডাকিব ইহারে কেমনে গাহিব গান?
তোমারে যা চাই বলিতে পারি না প্রাণ করে আনচান।
তোমারও কি ঠিক অনুরূপ দশা জানিতে ব্যাকুল মন
অতল হৃদয় কাতর হইয়া চাহিছে আলিঙ্গন?
তোমাতে-আমাতে এই প্রীতিগীতে সহায় সুরের দয়াল
দোঁহে এসো রই খিল এঁটে একই খুপরিতে বেসামাল
সোহাগে ভাসাব একে অপরেরে একই চৌখুপি ঘরে
একই বিছানায় দেহের বাসনা মাখিব হৃদয় ভরে
স্নেহডোরে বেঁধে রাখিব তোমায় আদরের মৌতাতে
বেসে যাব ভালো জনমের মতো প্রতিদিন প্রতিরাতে
র্যাট র্যাস্
লোকেরা দেখছি ভীষণ চতুর
গর্ত হইতে বেরোনো ইঁদুর
বেরিয়েই ছোটা দিগ্বিদিক
তালেতে মাতাল জাতেতে ঠিক
জাতে ও বেজাতে বেতাল খেঁউড়
চারিদিকে দেখি ইঁদুরদৌড়
কিছু উন্দুর রাষ্ট্রনিষ্ঠ
কিছু উন্দুর বেজন্মা
কিছু উন্দুর কাষ্ঠসৃষ্ট
কিছু ভুয়া কামে সুকর্মা
ভারি ইঁদুরের ছোটাছুটি দিকে দিকে
এক-ইঁদুরের পুত্র খোঁজে আর-ইঁদুরের ঝিকে
কিছু উন্দুর নিমরা বিলাই
কিছু উন্দুর ডাকু
কিছু উন্দুর গোঁসাই নিতাই
কিছু মিছরির চাকু
যুগের হাওয়ায় ইঁদুর তুলেছে পাল
চলিছে ইঁদুর নৌকায় বেসামাল
আমিও গাইছি তালে তাল ঠুকে
গাইছি ইঁদুরগীতি
কীভাবে গাইলে তালি দেবে লোকে
ভাবনায় হারি-জিতি
কিন্তু তোমরা ভাবো তো একটাবার
বিলাইয়েরা যদি ছেড়ে যায় সংসার!
এমন শহর কল্পনা করা যায়?
একটাও নাই বিলাই, কিন্তু ইঁদুরেরা তড়পায়!
বেড়ে যাবে ধেড়ে-ইঁদুরের দৌরাত্ম্য
দুনিয়ায় যদি বিলাইয়েরা হয় ব্রাত্য
কুচুটে লোকেরা বাঁধায় হাঙ্গামা
রাজনীতি করে খেয়ে-পরে ধরে ধামা
নাগরিকেরাও মহাসুখে হয় শিকার
ইঁদুরের মতো মুখ বুঁজে নির্বিকার
এসবের থেকে তফাতে কেবল তারাই
ক্ষ্যাপা বাউলের ধর্মে যাদের ঠাঁই
বাউলের কাছে একটা মালা আস্ত দুনিয়াটাই
মন্ত্রীসান্ত্রী গুণ্ডাপাণ্ডা গোনার টাইম নাই
ইঁদুরদৌড়, ইঁদুরদৌড়, বেজায় ইঁদুরদৌড়
কচুরিপানার ফাঁকে দ্যাখো তবু স্রোতেলা গাঙের তোড়!
যখনই ভাবছ ধরাধামে নেমে এল শান্তি ও স্বস্তি
ঠিক তক্ষুনি দিকে দিকে দ্যাখো ধ্বংস ধস্তাধস্তি
ঠিক তক্ষুনি দিকে দিকে শুরু হয়ে গেছে পাঁয়তারা
কারে ল্যাং মেরে এগিয়ে কে যাবে এই ইঁদুরের ধারা
তারপরও বলি ইতিহাস মনে রেখো
ভুলিয়া যাইয়ো না রাস্তাটা কোনদিকে
এত জল এত নদনদী তবু দ্যাখো
লোকেরা চেঁচায় তৃষ্ণায় যত বোকাপাঁঠা চামচিকে
কেমন ফালতু লোকগুলা ভাবো হতচ্ছাড়ার দল
স্পষ্টত চোখে প্রতিভাত হয় মানুষের দঙ্গল
দৌড়েই তারা খায় ও ঘুমায় দৌড়েই হাগে-মুতে
এদিকে যা-কিছু লুটেপুটে খায় আঘাটার বারোভূতে
এমন মানবজনম দিয়া আর কোন কচুঘেঁচু হবে?
এমন জাতের বজ্জাতি প্রায় শেষহীন এই ভবে
এরচেয়ে দ্যাখো ঘোড়ার দিকেই দৃষ্টি বরং রাখো
ঘোড়াজাতিটার দিকে চোখ রেখে ভবিষ্যতটা ডাকো
এরচেয়ে দ্যাখো কুকুরের দিকেই দৃষ্টি বরং রাখো
কুকুরজাতির দিকে চোখ রেখে ভবিষ্যতটা ডাকো
অথবা মানুষজাতির দিকেই দৃষ্টি রাখছ যদি
ইঁদুরের কথা ভুলিয়া যাইয়ো না, থাকো দৌড়েই নিরবধি
ক্যুড য়্যু বি ল্যভড্
তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে?
নেবে নাকি ভালোবাসা?
মানুষের এই হৃদয়ানুভবে
নাই একটুকু হতাশা
মানুষেরে বৃথা বানায়ো না হাবাগোবা
খামাখা শেখাতে যেও না কিচ্ছু হোক-না পাগলা ভবা
আছে সকলেরই নিজের মতন বুদ্ধি এবং বোধ
বুদ্ধিদিব্য তুমি হবে হও আমি হব অদ্ভুত
ভালোবাসা জেনো কখনো তোমায় যাইবে না ত্যাজিয়া
ভালোবেসে দ্যাখো অসুরেও গায় পিউ-কাঁহা পাপিয়া
আমিই তো সেই আদিম গুহার আঁধার
আমাতে পশিবে পায়রাগুচ্ছ ভোরের পুষ্পবাহার
তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে?
নেবে নাকি ভালোবাসা?
মানুষের এই হৃদয়ানুভবে
নাই একটুকু হতাশা
জিন্দেগি এক আজব সফর
এবড়োখেবড়ো পথ
দু-ধারে ব্যাপক রক্তনহর
কাঁটা ও কূটের রথ
তর্জনী যদি উঁচাইতে হয় তবে
জেনে রেখো তুমি নিশ্চয় কারো বিরাগভাজন হবে
কাজেই তোমার করণীয়টুকু তুমিই বিচার করো
দুশমন ছেড়ে দরদিয়া ভাইবোনের হাতটা ধরো
তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে?
নেবে নাকি ভালোবাসা?
মানুষের এই হৃদয়ানুভবে
নাই একটুকু হতাশা
বদলাতে চাও নিজে বদলাও, ওদের কথায় নয়
তোমার সামনে মাতুব্বরেরা মানে যেন পরাজয়
আমাদেরে ভাই নিজেরই জীবন নিজেই যাপিতে হবে
একলা চলার দরকার হলে একলাই চলো তবে
ব্যাটারা বলবে ইনিয়েবিনিয়ে পুস্তকে মুখে-মুখে
এই দুনিয়ায় বাঁচবে ব্যাটারা বাকিরা মরবে ধুকে
ব্যাটাদের কথা কানে তুলিও না, দাও ছুঁড়ে ওই দূরে
ব্যাটাদের ভিড়ে বেঁচে থাকো তুমি বিষের বাঁশির সুরে
তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে?
নেবে নাকি ভালোবাসা?
মানুষের এই হৃদয়ানুভবে
নাই একটুকু হতাশা
পানিপিপাসায় বেঘোরে মরার দুশ্চিন্তাটা খামাখাই
ইঁদারাটা শুধু খনন করিয়া রাখিতে খেয়াল চাই
বৃথাই ভাবিছ করিবে কেমনে মানুষের মনোরঞ্জন
দুনিয়া খেয়েও ভরিবে না তার ভয়াল পেট ও মন
বলো তবে, বলো, তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে?
এই হাত থেকে নেবে নাকি ভালোবাসা?
মানুষের এই একটামাত্র মর্মদ্রাবী হৃদয়ানুভবে
একটাবারেরও জন্য হয় না হাল্কাদৃষ্ট ধোঁয়াশা
আবারও বলছি, প্রিয়তম শোনো, চিৎকারসুরে বলো
র্যেগে ও রক্-ন্-রল্ উত্তাল উদ্বাহু নাচি চলো
রকের তালে র্যেগের তালে মেশাই হৃদয়ছন্দ
দুখের দহনে করুণ রোদনে বেতাল জীবনানন্দ
তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে? নেবে নাকি ভালোবাসা?
মানুষের এই হৃদয়ানুভবে একটুকু নাই মিথ্যা কিংবা ধোঁয়াশা
আবারও বলছি, দিতে পারি আমি, নিতেও পূর্ণ সক্ষম
মানুষে-মানুষে ভালোবাসা ছাড়া আছে কোনো ধন পরম?
বলো তবে, বলো, তুমি কি আমার ভালোবাসা হবে?
এই হাত থেকে নেবে নাকি ভালোবাসা?
মানুষের এই একটামাত্র গগনভাসানী হৃদয়ানুভবে
একটাবারেরও জন্য জমে না হাল্কাদৃষ্ট কুয়াশা
গাঞ্জা গান
গাইঞ্জা খাইয়া টাল হব আমি আন্ধা না-হই যতক্ষণ
তুমি জানো আমি সিদ্ধি সেবনে রই দিনভর চনমন
যখনই ইয়ারদোস্ত অথবা সাধুদের পাই দরিশন
নৌকাটা নিয়া হ্যাঁচকা টানিয়া পাহাড়েতে করি আরোহণ
যতদিন আছি জীবনের ঘোরে গাইঞ্জা টানিব সুখে
গাইঞ্জা টানিব ডাঙায় আরশে জলরাশি-সম্মুখে
এই পৃথিবীতে এসে পেয়ে গেছি লিলুয়া ব্যথার বুক
সঙ্গে পেয়েছি হৃদয়সারানি ভেষজ সিদ্ধিথোক
গাইঞ্জা খাইব রোজ দিনে রোজ রাতে
গাইঞ্জা খাইব দুপুরে সুপ্রভাতে
গাইঞ্জা খাইয়া আমি হব নিরহং
গাইঞ্জায় সাফা করে কলবের জং
গাইঞ্জা টানার উপায় রয়েছে বহুৎ
গামলায় নিয়া গাইঞ্জা টানিও মনে যদি লাগে যুৎ
রয়েছে গাঁজার কল্কে এবং ছিলিম
বাঁশের ভিতর গাইঞ্জা ঠাসিয়া টানো বুকদ্রিমদ্রিম
হোঁৎকা মুটকো বোরুয়া বাঁশের ভিতর গাইঞ্জা ঠাসিয়া
টানিবারে যদি নাহি পারো তয় লাভ কী জীবনে বাঁচিয়া!
লাভ নাই ভাই গাইঞ্জা বিহনে লাভের গুড়েতে বালি
সিদ্ধি বিহনে ফাঁকির এ-জীবনে বেফায়দা হাততালি
যতদিন আছি জীবনের ঘোরে গাইঞ্জা টানিব সুখে
গাইঞ্জা টানিব ডাঙায় আকাশে জলরাশি-সম্মুখে
এই পৃথিবীতে এসে পেয়ে গেছি লিলুয়া ব্যথার বুক
সঙ্গে পেয়েছি হৃদয়সারানি ভেষজ সিদ্ধিথোক
ওয়ান ল্যভ / পিপ্যল্ গেট রেডি
একটাই হৃদয় আর একটাই প্রেম
একলগে থাকি চলো হয়ে রাধা-শ্যাম
শোনো শোনো ক্রন্দন শোনো শিশুদের
চাইছে একটি প্রেম একই হৃদয়ের
করজোড়ে বলি করো শোকরগোজার
একলগে থাকি মিলেমিশে একাকার
কটু কথা বলে যারা দাও বলিবারে
এইটুকু শুধু জেনে নাও সোচ্চারে :
বদের হাড্ডি যারা আছে দুনিয়ায়
পার পাবে এভাবেই পঙ্কিলতায়?
প্রেম যদি একই হয় হৃদয় কি দুই?
হৃদয় এবং প্রেম অদ্বিতীয় সই
অতএব কথাগুলো চূড়ান্ত হোক
অভিন্ন দুনিয়ার সমস্ত লোক
অভিন্ন লোকে যথা ছিল আদিকালে
একই হৃদমাঝারে খোলা-হাওয়াপালে
একই প্রেম স্থায়ী হোক অন্তিম তক
লোকমনে সবুজাভা পানের তবক
করজোড়ে বলি করো শোকরগোজার
একলগে থাকি মিলেমিশে একাকার
এবং আবারও শোনো বলি জোরেশোরে
দেহ-মনে এক থাকি নিকটে ও দূরে
একলগে লড়ে এই সাধুদেরে রুখি
মানুষের সনে হোক দানো মুখোমুখি
সয়েছি আমরা যারা দানবপ্রহার
খুঁজে নেবে এবে তারা পগারের পার
করজোড়ে বলি করো শোকরগোজার
একলগে থাকি মিলেমিশে একাকার
প্রেম যদি একই হয় হৃদয় কি দুই?
হৃদয় এবং প্রেম অদ্বিতীয় সই
অতএব কথাগুলো চূড়ান্ত হোক
অভিন্ন দুনিয়ার সমস্ত লোক
মানবজাতির তরে এই মুনাজাত
কবুল হবার আশে তুলি দুইহাত
করজোড়ে বলি করো শোকরগোজার
একলগে থাকি মিলেমিশে একাকার …
করজোড়ে বলি করো শোকরগোজার
একলগে থাকি মিলেমিশে একাকার …
রিয়্যাল সিচুয়্যেশন
পরিস্থিতিটা ভাবো দেখি একবার
জাতিতে-জাতিতে বজ্জাতি আর যুদ্ধ ধুন্দুমার
কবে থেকে শুরু হয়েছিল হেন বদমাশি ইহভবে?
এর থেকে বলো মুক্তি কীভাবে রেহাই মিলিবে কবে?
দেখেশুনে মনে হয় যেন শুধু ধ্বংসই সমাধান
কেউ নাই রোখে এই দৈত্য ও জঙ্গমত্ত প্রাণ
মনে হয় নাই কারোর সাধ্যি থামাইবে এই ত্রাস
ধুঁকছে মানুষ বেশুমার আর কাতারে-কাতার লাশ
যুদ্ধাসক্ত জংলিগুলার বেজায় বেড়েছে খাঁই
নিকটে বসতে দিলেই দেখবে কেড়ে নেবে গোটাটাই
ইঞ্চি দিলেই ছিনাইয়া নিতে চাইবে বারান্দাই
উঠান দাও তো দখল লইবে ব্যাপ্ত বসুন্ধরাই
পয়লা আসিয়া হাসিয়াখেলিয়া চাইবে ঘরের মরদ
বলা বাহুল্য রইবে না বাকি গৃহের নিপুণা আওরৎ
লইবে দখলে স্নেহের ছাওয়াল ভবিষ্যতের সম্পদ
মুখে যদিও প্রচারিবে এসব আপৎকালীন আলবৎ
দেখেশুনে মনে হয় যেন শুধু ধ্বংসই সমাধান
কেউ নাই রোখে এই দৈত্য জঙ্গমত্ত প্রাণ
মনে হয় নাই কারোর সাধ্যি থামাইবে এই ত্রাস
ধুঁকছে মানুষ বেশুমার আর কাতারে-কাতার লাশ
পরিস্থিতিটা আবারও ভাবিয়া দ্যাখো দেখি একবার
ভেবে দ্যাখো কত বজ্জাতি আর যুদ্ধ ধুন্দুমার
কবে থেকে শুরু হয়েছিল হেন বদমাশি ইহভবে?
এর থেকে বলো মুক্তি কীভাবে রেহাই মিলিবে কবে?
মনে হয় নাই কারোর সাধ্যি থামাইবে এই ত্রাস
ধুঁকছে মানুষ বেশুমার আর কাতারে-কাতার লাশ
কেউ নাই রোখে এই দৈত্য ও জঙ্গমত্ত প্রাণ
দেখেশুনে মনে হয় যেন পুরো সংহারই সমাধান
মিস্টি মর্নিং
সুরুজের দেখা নাই কুয়াশাসকাল
তবু তুমি ফুর্তিতে যেন ঝাঁপতাল
ধাঁধা লাগে ভেবে তবু ভাবি বারবার
নিতে নাহি সখা চাই দিতে উপহার
দিয়া যাব উজাড়িয়া যা-কিছু আমার
তুমিই জীবনে মম মায়াপারাবার
মনে পড়ে যায় সেই বন্ধুর বাণী
ধামাইল গানের তালে বলা কথাখানি
“সাঁতার না-জেনে বাছা নামিও না জলে”
যে-জলে আগুন জ্বলে মাঠে মেঘ ফলে
মাথার ভিতরে খেলে বেদনার ধুন
পালকপল্কা আর পাথরকরুণ
সকাল হয়েছে দ্যাখো আলো ফোটে নাই
এমন সময় প্রিয় তোমাকেই চাই
তুমি এলে এই দেশে আসিবে সুদিন
দুইজনে নীলিমায় হব উড্ডীন
রানিং অ্যাওয়ে
দে দৌড় দে দৌড় সুবোধ
দৌড়ের উপ্রে থাক
দৌড়াতে দৌড়াতে বেহদ
সুবোধ পলায়া যাক
দৌড়ের উপর যতই থাকিস
ভেবে দ্যাখ একবার
নিজেরে ছাড়িয়া বলতে পারিস
পালাবি কোথায় আর!
পালাবি কোথায় ওরে ও সুবোধ
কোথায় পগারপার?
ভয়-বিদ্রোহ-মোহ-কাম-ক্রোধ
তোরই তো অন্তঃসার
সারমর্মটা জানলিই যদি
কিসের জন্যি পালাবি?
কিসের জন্যি নিজেরই নদী
নিজেই ছাড়িয়া যাবি?
কিছু যদি তুই করবিই তবে
কেন এই পলায়ন?
ভেবে দ্যাখ কেন এসেছিলি ভবে
কেন এই নিষ্ক্রমণ?
কিছু যদি তোর করতেই হয়
না-হয় করবি ভুল
ভুলিয়া যা সব জয়-পরাজয়
চুল থেকে পদতল
করতেই যদি হয় তবে কর্
যথেচ্ছ ভুলচুক
এখানে জন্ম এখানে কবর
জখমে ভেষজসুখ
পালাবি কোথায় এ-শহর ছেড়ে
এ-ই তো প্রণয়ঘাঁটি
নিজহাতে তোকে নিতে হবে কেড়ে
মৃত্যুর আগের মাটি
সকলেই ভাবে কেন্দ্রে নিজেরে
ভাবে সে ব্যথায় দীর্ণ
অথচ কেউই জানে না আখেরে
যে জানে সে-ই স্বীয় অনুভবে শীর্ণ
দে দৌড় দে দৌড় সুবোধ
দৌড়ের উপ্রে থাক
দৌড়াতে দৌড়াতে বেহদ
সুবোধ পলায়া যাক
পালাবি কোথায় ওরে ও সুবোধ
কোথায় পগারপার?
ভয়-বিদ্রোহ-মোহ-কাম-ক্রোধ
তোরই তো অন্তঃসার
সারমর্মটা জানলিই যদি
কিসের জন্যি পালাবি?
কিসের জন্যি নিজেরই নদী
নিজেই ছাড়িয়া যাবি?
পালাতে পালাতে কই যাবি তুই
কোন পাতালের তলায়?
দেশে থাকিস কি বিদেশ-বিভূঁই
নিজেরই তো সব দায়
নিজেরেই নিজে আগলে রাখবি
কে আর বাঁচাবে তোকে?
নৌকার হাল ধরিয়া থাকবি
বিপদের সম্মুখে
কেউ তোরে দ্যাখ বাঁচাবে না এসে
এই নিধুয়ার বনে
বেহুদা ফ্যাসাদে রয়েছিস ফেঁসে
মায়াজালবন্ধনে
একবার তুই ঘুরিয়া দাঁড়া তো ভাই
দেখবি মামলা আপনাআপনি ডিসমিস
ভেবে দ্যাখ তুই আমি তো পালাই নাই
কারোর দুয়ারে যেয়ে করি নাই নালিশ
আমি জিন্দেগি জিনেছি আমারই নিয়মে
কোনো সমুন্ধির পুতেরে জিগাই নাই
খিদায় হাজার ফ্যাসাদে যাইনি দমে
একলার হাতে এনেছি নিজের অন্ন এবং ঠাঁই
কিন্তু আমিও পারতাম তোর মতন পালিয়ে যেতে
পারতাম আমি তিনলাফে একা ছাদে স্যুইসাইড খেতে
একমুঠো ঘুমবড়ি নিয়া হাতে পারতাম দিতে উড়াল
দুনিয়া আমারে ছাড়াতে চেয়েছে আমি তো ছাড়িনি হাল
যত যাতনাই থাকুক সুবোধ
পালাবি না ভাই দোহাই
জীবনেরে এ-ই মিহি প্রতিশোধ
আমি তো পালাই নাই!
থ্রি লিটল বার্ডস্
“সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে দ্যাখো
হুদাই চিন্তা করছো
দুর্ঘটনারে যত পারো ভুলে থাকো
মরবার আগে ভেবে ভেবে কেন মরছো!”
কথাগুলো কলকাকলিয়ে বলে যায়
সাতসক্কালে খয়েরি তিনটা শালিক
ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি তারা কার্নিশকিনারায়
সূর্যের হাসিচিহ্নিত তিন হাওয়াসায়রের নাবিক
তিনজন তারা তারস্বরে বলে উপরের কথাগুলো
চলে যেয়ে ফের ফিরিয়া আসিয়া বসে হৃদয়ের ক্রোড়ে
ফের শুরু করে মিঠে বোল আর সুরের কোমল তুলো
রহি রহি তারা গাহিয়া বেড়ায় আমারে লক্ষ্য করে
সেই গানজুড়ে একটাই কথা আস্থায়ী-অন্তরায়
“ফাটা আন্ডায় তা দিয়া ফায়দা নাই
বৃথাই বাদ্য মনস্তাপের ব্যথাবেদনার বাজনায়
বাতায়নপাশে ত্রয়ী উল্লাসে সানন্দা গান গাই।”
বলে যায় তিন তন্বী শালিক সকালের রোদ্দুরে
গেয়ে যায় গান ছিপনৌকার মতন গ্রীবাটা বাড়িয়ে
“দ্যাখো আমাদেরও রহিয়াছে কত দুঃখ অন্তঃপুরে
তবুও বাজাই সুখের সানাই আকাশের সীমা ছাড়িয়ে।”
“দ্যাখো সবকিছু হয়ে যাবে ফের ঠিকঠাক
খুঁটিনাটি নিয়া খুনসুটি করা খামাখাই
বৃথাই জীবন লইয়া তোমার ছিচকাঁদুনির ঢাক
উল্লাস করা ছাড়া দুনিয়ায় বাঁচার উপায় নাই।”
রিনরিন সুরে সকালের রোদে তিন শালিকের ফুর্তি
জীবনে যা-কিছু ম্লানিমার রঙ মুছে দেয় লহমায়
ফেলে দিতে বলে একে একে সব করুণ শোকের মূর্তি
তিন শালিকের সুরে আর গানে জিন্দেগি উছলায়
ন্যাচার্যাল মিস্টিক
বাউরি বাতাসে ভেসে আসে এক নিধুয়া মাটির বাউল
পাতো যদি কান শুনিবারে পাবে সহজিয়া তার সুর
উড়ছে এমন ডুগডুগি শোনো বিবাগী ও উন্মুল
দোতারার টান দুপুরের দেশে উদাস অচিনপুর
ভোগ করে যায় বিস্তর লোক যন্ত্রণা দুনিয়ায়
কাহার লাগিয়া যাতনাযাপন কে বলবে কী কারণ
অচেনা পাখিটা খাঁচার ভিতর হইতে উড়িয়া যায়
নেপথ্যে কে সে কলকাঠি নাড়ে জিজ্ঞাস করা বারণ
দুনিয়া যেভাবে চলবার কথা সেভাবে তো চলছে না
শাক দিয়া মাছ ঢাকার আমার কোনোদিনই নাই ধাত
যার কাঁধে যে-দায়িত্ব সে তা পালন তো করছে না
আমাদের নাই পালাবার কোনো অগ্র ও পশ্চাৎ
চারিদিকে এত প্রশ্নচিহ্ন উত্তর কোথা পাই
কিন্তু সবারই জিগানোর আমি জবাব খুঁজিয়া যাই
নিশ্চয় জানি একদিন সব উত্তর পাবো খুঁজে
কেবল অতীত রোমন্থনেই রইব না ঘাড় গুঁজে
বাউরি বাতাসে ভেসে আসে এক নিধুয়া মাটির বাউল
কান খাড়া করে একবার শোনো সহজিয়া তার সুর
উড়ছে এমন দোতারার ধ্বনি বিবাগী ও উন্মুল
কোন যন্ত্রে-যে বাঁধিবে সে-সুর ভাবিতেছে অন্তর
সো মাচ ট্রাবল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড
দুনিয়াটা বালামুসিবতে যেন করিছে টালমাটাল
ঘুরিছে একটা পাগলা লাটিম চৌদিকে বেসামাল
ঘুম থেকে জেগে সহসা আজিকে প্রভাতে রবির কর
পশিল পয়লাবারের মতন যেনবা প্রাণের ’পর
বোধোদয় হলো চলিছে যেভাবে দুনিয়াটা আগাগোড়া
আগুনহল্কা আর গুমখুনে বেবাকেই তাতাপোড়া
মানুষেরা দ্যাখো বোধোদয়হীন মস্ত অহংযান
ঘুরিছে-ফিরিছে একায়-কয়েকে ব্যাটাগিরিভরা প্রাণ
সক্কলে দ্যাখো মহানীলিমায় মাটির পৃথিবী ছেড়ে
যেনবা আপন প্রাণ বাঁচাতেই চাচারা উঠিছে বেড়ে
দুনিয়াটা বালামুসিবতে যেন করিছে টালমাটাল
ঘুরিছে একটা পাগলা লাটিম চৌদিকে বেসামাল
করণীয় খুব কঠিন কিছু তো নয়
কৃপা করো জীবে যেটুকু-যা পারো যদি সম্ভব হয়
যেটুকু তোমার দরকার নাই সেটুকু ছাড়িয়া দাও
অপরের তরে একটু বিলায়া খামাখাই পস্তাও
তুমি হয়তো-বা ভাবছ তোমার প্রোব্লেম কিছু নাই
নিশ্চয় তুমি বিভ্রমে থেকে দেখিছ রজ্জুটাই
ইয়াদ রাখিও ধুলাবাতাসেই ঘূর্ণিঝড়ের আভাস
বেখেয়াল যদি হয়েছ তবেই ঘটিল সর্বনাশ
সাহস রাখিও পথচলাকালে প্রকাশ্য দিবালোকে
ফেউয়া লাগিলে পেছনে তাহারে নিয়া আসো সম্মুখে
পথুয়া মানুষ আমরাই হব পান্থজনের সখা
আমরা স্ট্রাগল করিয়া যাইছি দিবারাতি নিলখা
তাহাদের কথা কী বলিব যত ভয়াবহ মহাজন
টাইমবোমার উপরে বসিয়া কাঁপিতেছে অকারণ
নিজেরাই তারা ডাকিয়া আনিছে নিকটে নিজের মৌত
উপত্যকায় মৃত্যুমিছিল মারণাস্ত্রের স্রোত
ঘুরিছে একটা পাগলা লাটিম চৌদিকে বেসামাল
দুনিয়াটা বালামুসিবতে যেন করিছে টালমাটাল …
দুনিয়াটা বালামুসিবতে যেন করিছে টালমাটাল
ঘুরিছে একটা পাগলা লাটিম চৌদিকে বেসামাল …
পজিটিভ ভায়ব্র্যাশন
বাঁচতে চাও তো বাঁচার মতন বাঁচো
জটামাথা বাউল ফকির হইয়া নাচো বা না-ই নাচো
বাঁচতে চাও তো বাঁচার মতন বাঁচো
করার কিছুই নাই যেহেতু শুধুই বাঁচতে পারি
সবাই আমরা সম্মিলিয়া বাঁচার ইচ্ছাধারী
বাঁচতে বাঁচতে ঠেলিয়া সরাই মৃত্যু ও মহামারী
নিত্য ঝগড়া বাঁধায়া চাইলে যেতে পারো রসাতলে
পেতে পারো সুখশান্তির ছোঁয়া অসুরের হলাহলে
যেমন-ইচ্ছা কাটাও জীবন সহস্র কৌশলে
একেরে অপরে কেন করিতেছ এত অচ্ছুৎজ্ঞান?
কথা ছিল শুধু দুনিয়া ব্যাপিয়া দান আর প্রতিদান
কথামতো যদি করিত সবাই জীবনেরে সম্মান!
সময় এখনও বহিয়া যায়নি কিছুটা আছে তো বাকি
কিছু অকারণ কাজিয়াফ্যাসাদে নিজেরে দিয়েছ ফাঁকি
নিরীশ্বরেরে না-ডেকে এসো-না নিখিলেরে গানে ডাকি!
নিশ্চয় জেনো সুদিন কখনো বাইট পায় না মিডিয়ায়
ফিরে ফিরে তবু নয়া জিন্দেগি তোমারে ডাকিয়া যায়
এই দিশা এই জীবনচিহ্ন নিশানে ও নিশানায়
দেরি নয় আর ধরো এইবার ধরো নতুনের দিন
উঁচাও তোমার হৃদয়াস্ত্রটা উঁচিও না সঙ্গিন
ওই দ্যাখো দূরনীলিমায় দিন উড়ন্ত উড্ডীন
আ’য়্যাম হার্টিং ইন্সাইড
ছিলাম যখন নেহাত বালক ছোট্ট একটি শিশু
সুখ ছিল মনে এবং শরীরে যেন নিষ্পাপ যিশু
সবকিছু পরে গেল বদলিয়া আচমকা একদিন
ফস্কিয়া গেল সুখসমুদয় যা-কিছুই ছিল রঙিন
ঘুরিয়া ঘুরিয়া ডাকি দিবারাতি ফিরে এসো ওগো সুখ
সন্ধান করে যাইছি তোমারে কেড়ে নাও যত দুখ
তুমি যদি ফিরে নাহি আসো তবে একাকী তোমার খোঁজে
বেড়াব চষিয়া পাহাড়-সাগর গোধূলির গম্বুজে
দেখা দাও ওগো সুখসহচরী জীবনে ফের একবার
যদি-বা না দাও খুঁজি পৃথিবীর যত ঘরদোরসংসার
খুঁজিব একাকী নির্জনতায় ভিড়ের শহর ও বন্দর
তুমি আর আমি চিরপ্রণয়ের মিলনে তেপান্তর
দ্যাখো ক-হাজার মাইল পারায়ে এখানে এসেছি আমি
বিপাকে-বিপদে বেজায় ব্যথায় কাৎরাই দিবাযামী
কী যাতনাবিষে ভেতরে ভেতরে এতটা আমার ক্ষয়
এতটাই আমি গিয়েছি ফুরিয়ে নেই কিছু সঞ্চয়
কৃপাতরু ওগো জগদীশ্বর আমার আওয়াজ শোনো
তুমি ছাড়া আর রোদন শোনার নাই ঈশ্বর কোনো
শোনো আমার এই ভাঙনের ধ্বনি শোনো ক্রন্দনগান
সুখ নাই তাই হাতড়ে বেড়াই সুখের সন্নিধান
তুমি আর আমি মিলিয়ামিশিয়া আছিলাম চখাচখি
ইশকুলে ডেস্কবেঞ্চিতে দুই নিগূঢ়ের সখাসখি
কিন্তু সহসা ঘটিল কী গোল তুমি দিলে ব্যথা প্রাণে
বেদনায় নীল হয়ে যেয়ে আমি ছড়িয়েছি সবখানে
হে নিরূপম জগদীশ্বর তোমারই তো আমি সন্তান
সুখ ও দুঃখ সত্যাসত্য সবই তো তোমারই দান
তোমারেই আমি দিবসরজনী ডেকেছি পাগলপারা
তোমারেই আমি করিয়াছি বিধি জীবনের ধ্রুবতারা
আইসো ফিরিয়া আমার চক্র ফিরে এসো সুখপাখি
ফিরিয়া না-এলে এই বিরানায় থামাব না ডাকাডাকি
ফিরে এসো মম সুখসখা আসো ভরে তুলি উপকূল
যদিও তোমারে খুঁজে-যাওয়া জানি বেজায় বিপদসঙ্কুল
বিপদাপদেরে করিনাকো ভয় জানি জানি নিশ্চয়
ভিতরে বিষের বালি থাকিলেও মুক্তো জন্ম লয়
বালিবিধৌত নদীটির ধারে দাঁড়ায়ে সখারে ডাকি
এসো এসো দোঁহে এ-জনমভরে বেদনার ঘরে থাকি
রেভোল্যুশন
সোচ্চার হলে সত্যের পাবে দেখা
আন্দোলনের হাওয়ায় দেখবে লাগবে না আর একা
ব্যক্তি জাগিয়া উঠিলেই দেখি বিপন্নতার পরাভব
ব্যক্তির সনে ব্যক্তি মিলেই বিপ্লব
বিপ্লব বিনে নাই কোনো সমাধান
চৌদিকে দ্যাখো ছলনাভ্রান্তি আর হতাশার গান
ঘুমাইতে যেতে চাই না রাত্রে পার্কের বেঞ্চিতে
সতর্ক রই সন্ধ্যা নামলে ছায়াটিরও বিপরীতে
দ্যাখো দোস্তরা আশা করি আমি বুঝাতে পারছি ঠিকঠাক
কয়েদিরা পাক মুক্তি যেমন মুক্ত পাখির ঝাঁক
সহায়তা চেয়ে নেতানেত্রীরে ডেকে আনিয়ো না ঘরে
এরা চায় বেঁধে রাখতে তোমারে তাদের খোঁয়াড় ভরে
যেখানে দেখিবে আগুন, উস্কে দাও
রক্ত ঝরছে দেখো তো ঝাণ্ডা ওড়াও
মনে রেখো তুমি পৃথিবীর দ্রোহসন্তান
পরাজয় হবে জেনেও দাওনি পিঠটান
আমাদের আছে বজ্রশব্দ ঝল্কানো তুখা আলো
অগ্নিশোভন জোনাকিরা আছে এবং রজনী কালো
ভয়ে-জড়সড় জন্মে কি লাভ মরে যাও আঁতুড়েই
সৃষ্ট জগতে ভয়কাতুরেরা লেজ রাখে গোটায়েই
ঈশ্বরআল্লা আমাদেরে দ্যাখো বানিয়েছে পেল্লাই
মিছামিছি কেন ভয় পেয়ে ভাগো মরমে মরিয়া যাই
আমাকে আমার মতো হতে দাও দেখবে তখন আমি
কীভাবে এমন খোঁড়ানো দুনিয়া করে তুলি দূরগামী
আমাকে আমার মতো হতে দাও শরীরের রঙ কালা
আমাকে আমার মতো হতে দাও হলুদ বা লাল উজালা
আকাশ ভরিয়া সূর্যতারারা থাকুক নিজের মতো
দুনিয়া ঘিরিয়া থাকুক ন্যায় ও নদীগিরি শত শত
আমাদের আছে বজ্রশব্দ ঝল্কানো তুখা আলো
অগ্নিশোভন জোনাকিরা আছে এবং রজনী কালো
… …
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
- লঘুগুরু - November 8, 2024
COMMENTS