অশ্লীলতম ছবি || সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

অশ্লীলতম ছবি || সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

৯০ ফিল্মোৎসবের উত্তপ্ততম ছবি কোনটি সে-সম্পর্কে কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। ভাগ্যক্রমে সে-ছবিটি আমিই দেখে ফেলেছি। সেটার কথা আর কেউ বলেননি।

গোড়ার দিকে ‘টেন্টেড হর্স প্লে’ নামে চেক ছবিটির ছিল জয়জয়কার। রাতের শো, তবু, বাপ রে, সে কী ভিড়! ভরাভর্তি হলের দরজা বন্ধ করে দেবার পর উলু দিয়ে গেট ক্র্যাশ করে একদল মেয়ে করিডোরের গণ-অবস্থানে যোগ দিলো। যাবতীয় কেলোর কীর্তি দেখিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করা হলো এই প্রশ্ন তুলে যে, ‘ওহে খোকাখুকুরা, দেখিলে তো, এইরূপ করিলে এইডস হয়!’

পূর্ব-ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাম্প্রতিক অবস্থার কারণ হিশেবে কেউ কেউ এর মধ্যে সুখনীতি (প্রিন্সিপল্ অফ প্লেজার) ও মার্ক্সের শ্রমতত্ত্বের বিরোধাভাস লক্ষ করেছেন। কিন্তু, একটি সমাজতান্ত্রিক দেশে ১৯৮৮-তে তোলা এই ন্যাক্কারজনক ব্লু-ফিল্মটি দেখে, আমি যা বুঝলাম, তা হলো, উক্ত মার্ক্স-ফ্রয়েড হেভিওয়েটে রেফারি ডারউইনেরও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। অর্থাৎ, বাঁদরামির।

যা-ই হোক। প্রসঙ্গে ফিরে আসি। পর্নোদৃশ্যের প্রকৃত কনয়সররা ভিড় করেছিলেন শিশিরমঞ্চে, আর্জেন্টিনার ছবিগুলি দেখতে। বেশিরভাগ ছবি তাদের হতাশ করলেও ‘দ্য ডগস অফ নাইট’ ছবিটি, আশা করি, করেনি। ছবিটিতে ভগিনীগমনের দৃশ্য ছিল। টিনএজার কর্মবিমুখ ভাই মিনোজা চায় বোন মেচাকে বেশ্যা বানিয়ে তার পয়সায় সচ্ছল থাকতে। বোন রাজি নয়। তাই একদিন নিজেই বলাৎকার করে সে কুমারী বোনের সব যৌনপ্রতিরোধ ভেঙে দিলো। মাত্র একবারই। কারণ, তার উদ্দেশ্য ছিল বোনকে বেশ্যা হতে বাধ্য করা। তারপর তো অনবরত স্ট্রিপটিজ।

লোকমুখে শোনা সঙ্গমের দৃশ্যসমৃদ্ধ অন্যান্য ফ্রাইপ্যানগুলি হলো : ভেনাস ট্র্যাপ (এফ-আর-জি), অ্যাবসেন্সসসেন্স (গ্রিস), হেভেন অ্যান্ড হেল (ডেনমার্ক) ইত্যাদি।

‘হাউ টু মেক ল্যভ টু অ্যা নিগ্রো উইদাউট গেটিং টায়ার্ড’ নামে একটি ছবির জন্য লম্বা লাইন পড়েছিল। ‘মেক ল্যভ’ মানে, বলা বাহুল্য, সঙ্গম করা। আগামী উৎসবে ‘ফাক ইউ’ নামে কোনো ছবি এলে তাকেও আপ্যায়ন করতে হবে। ভাষা ফরেন হওয়া নিয়ে কথা।

তবু, উৎসবের নিকৃষ্টতম (শ্রেষ্ঠ?) পর্নোছবিটি মনে হয়, ধান্দা বিনা, আমার কপালেই ছিল। ‘লাস্ট মেট্রো’ ও ‘দাঁতো’-র দেপার্দু এ ছবির নায়ক বলেই, ফ্রান্সের ‘টু বিউটিফুল ফর ইউ’ ছবিটি আমি দেখতে যাই। ছবি দেখে চক্ষু নয়, আমার কর্ণস্থির! কারণ এ ছবিতে কিছু দেখার ছিল না। কেউ বারেকের তরেও কাপড় খোলেনি। শুতে যায়নি। এ ছিল শুধু কানে শোনার ছবি, যদিও আমাদের সাবটাইটেল পড়েই তা শুনতে হচ্ছে। দেপার্দুর মুখ দিয়ে পরিচালক বার্ট্রান্ড ব্লাইয়ের যাকে বলে গ্লোরিয়াস খিস্তি শুনিয়ে গেছেন আগাগোড়া। সেন্ট্রাল কফিহাউসের হরিদার খিস্তি (বাংলার লেনি ব্রুস!) এর কাছে দুগ্ধপোষ্য। সুন্দরীশ্রেষ্ঠা স্ত্রীর প্রতি মূল বাক্যগুলো অনুমেয়।


গানপারটীকা
:
লাস্ট সেঞ্চুরির নব্বইয়ের দশকে এই নিবন্ধটি লিখিত হয়েছিল। মূলত নব্বই ইংরেজিতে কলকাতা শহরের একটি ফিল্মউৎসব হয়েছিল, উৎসবরিভিয়্যু ধাঁচের একটা রচনার ভিতরে এই নিবন্ধটি ছিল অংশ হিশেবে। এর রচয়িতা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। যেই নিবন্ধটা গানপারে রিপ্রিন্টেড হচ্ছে, এইটা গ্রহণ করা হয়েছে একটা বই থেকে, সেই বইয়ের নাম, — বই না-বলে চটিপুস্তিকা বললেই ব্যেটার বর্ণনা হয়, — ‘চলচ্চিত্র চঞ্চরী’। ইন্ডিয়ার প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই বই/পুস্তিকা জানুয়ারি নাইন্টিফাইভে বের হয়েছে। এই নিবন্ধটুকু বইধৃত বর্ধিত কলেবর যে-রচনাটির অংশবিশেষ, সেই রচনার শিরোনাম ‘ফিল্মোৎসব ১৯৯০ : রাজসূয় না অশ্বমেধ?’ গোটা বইটারই রচয়িতা সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। — গানপার

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you