আমাদের দেশে ব্যান্ডসংগীতকে পপুলার করবার ক্ষেত্রে যে-কয়জন তারকার কথা একবাক্যে বলা যায়, তাদের মধ্যে অবশ্যই ব্যতিক্রম জেমস্। কি গানে কি পোশাকে-পরিচ্ছেদে ভিন্ন এক জেমস্। লম্বা চুল, পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, চাদর সবকিছুতেই আলাদা। তাকে বেশি লক্ষ করা যায় পাঞ্জাবি ও জিন্সের সাথে কেডস্ পরা, যা সাধারণত দেখা যায় না।
জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ এনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। বিশ্বখ্যাত এই ব্যান্ড বিটলস বলেছিল, “আমরা ঈশ্বরের সমান জনপ্রিয়” … বাংলাদেশে এ-ধরনের কথা বলার সময় এখনো আসেনি, সে-ধৃষ্টতাও কেউ দেখায়নি, অন্তত মিউজিশিয়্যানরা এ-রকম কোনো কথা এখনো বলেননি। আমরা সবাই জানি আমাদের জনপ্রিয়তা কতখানি, কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড বিটলসের সাহস আমাদের কখনোই হবে না। জেমসের ক্ষেত্রে এতটুকু বলা যায় তিনি তার অন্ধ ভক্তের কাছে অসম্ভব প্রিয়। তাকে তার অন্ধ ভক্তরা গুরু বলেই সম্মান করে থাকেন। তার ভক্তের সংখ্যা বেশিরভাগই বয়সে তরুণ।
জেমসের কিছু পাগল ভক্তের কথা আমি জানি ব্যক্তিগতভাবে। আমার ছোটভাই আছে, এইচএসসি ফার্স্ট-ইয়ারে পড়ে, ও জেমস্ বলতে অজ্ঞান। জেমসের প্রতিটি অ্যালবাম তার কেনা চাই। জেমসের পোস্টার সংগ্রহ করা তার হবি। ইদানীং দেখছি জেমসের পোশাকের স্টাইলও সে ফলো করছে, যেমন : পাঞ্জাবি, জিন্স, কেডস্, শীতের পোশাক সোয়েটার নয়, জেমসের মতো চাদর।
জেমসকে প্রথম যেদিন টিভির পর্দায় দেখি, তখন আমার কাছে মনে হয়েছে জেমস্ খানিকটা বাউলদের মতো। কিন্তু, অবশ্যই খানিকটা ভিন্নও। লম্বা চুল, পাঞ্জাবি, চাদর ইত্যাদিতে আমাদের দেশের প্রকৃত বাউলদের মতোই তিনি, কিন্তু জিন্স-কেডস্ ইত্যাদিতে খানিকটা ব্যতিক্রমও। এক্ষেত্রে বলা যায়, জেমস্ যদিও বাউল, কিন্তু তার নামের আগে অবশ্য নগর শব্দটি উল্লেখ করতে হবে। তাকে নগরবাউল বলেই ডাকা হয়। জেমসের অন্ধ ভক্তরাই তার প্রধান সম্পদ, না-হলে জুরিবোর্ডেও ডাক পড়ে না তার, বা বিশিষ্ট মহলে গুণী শিল্পীর যে-কদর সেটাও তার ভাগ্যে জোটে না।
জেমসের গানের বিষয়বস্তু ভিন্ন স্বাদের, যেমন : ফেরিওয়ালাদের কদর আমাদের দেশে খুবই কম, তারা সারাদিন কাঁধে বা মাথায় বোঝা নিয়ে মালামাল বহন করে। এই বিষয়গুলো যে কাব্যে ও গানে পরিণত হতে পারে, জেমস্ তার প্রমাণ।
এই ফিতা যার মাথায় রবে
আদর সোহাগ যতন পাবে
এই ফিতাটাই
জনম জনম বাইন্ধা রাখে।
জেমস্ যখন গেয়ে ওঠেন —
আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে
হেলেদুলে যায় কলসি কাঁখে
পলিজমা তার পাললিক মন
টোলপড়া গান ভীরু দু-নয়ন
হারাগাছের নূরজাহান
গাঙের জলে করে সিনান।
তার বেশকিছু গানে গ্রামীণ সোঁদা মাটির গন্ধ পাওয়া যায়, যেখানে আমাদের আবহমান গ্রামীণ সংস্কৃতির পরিচয় মেলে, এবং তার প্রকাশভঙ্গি আধুনিক ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন।
পপশিল্পী হিশেবে জেমসের নতুন পরিচয় শুরু হয় মিক্সড অ্যালবামগুলোর মাধ্যমে। এই মিক্সড অ্যালবামগুলো শ্রোতা সাধারণের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য হতে থাকে। এক-সময় জেমসের ‘মা’ গানটা এইভাবেই মিক্সড অ্যালবামের মাধ্যমে দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়ে। এই গানের কথা এবং সুর প্রিন্স মাহমুদের এবং জেমস্ এইটাকে তার কণ্ঠের মাধ্যমে অন্যমাত্রিক উচ্চতায় নিয়ে তুলেছেন প্রকাশের সাথে সাথেই। এই গানের দেশজোড়া আলোড়ন অবিস্মরণীয়। স্টুডিয়োরেকর্ডেড অ্যালবামটি রিলিজের সঙ্গে সঙ্গেই হিট হয় বিভিন্ন শিল্পীর সমবায়ে এই মিক্সড অ্যালবাম। এর মধ্যে ব্যাপক হিট হয় জেমসের গাওয়া ‘মা’ গানটি। এককথায় স্যুপারহিট হয় জেমসের ‘মা’ গানসম্বলিত মিক্সড অ্যালবামটি। জেমসকে পছন্দ করতেন না এমন অনেকেও তার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তার ‘মা’ গানটি রিলিজের পরে। আমার মতে জেমসের অন্যান্য গানের চেয়ে ‘মা’ গানটির বিস্তৃতি অনেক বেশি এবং শ্রুতিমধুর।
জেমস্ অন্য সবার চেয়ে আলাদা। কি গানে, কি পোশাকপরিচ্ছেদে জেমস্ অনন্য। মঞ্চে, টিভিতে, ফিল্মে সবকিছুতে সবখানে তার উত্তরণ ঘটুক এবং দীর্ঘায়ু হোক, এটা আমার এবং জেমসভক্তদের একান্ত কামনা।
লেখকতথ্য
ফারহানা জাহান পাপিয়া
প্রযত্নে / আমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রধান শিক্ষক, খান আব্দুল্লাহ মডেল হাইস্কুল
সেক্টর ৯, রোড ৬, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা ১২১৬
প্রথম-প্রকাশতথ্য
ঈদসংখ্যা আনন্দভুবন ২০০০ ।। বর্ষ ৪ সংখ্যা ১৬ ।। জানুয়ারি ২০০০ ঢাকা
গানপারে প্রকাশকালে লেখাটা অনেকাংশ সম্পাদিত ও সংক্ষেপিত আকারে এইখানে ছাপা — গানপার
COMMENTS