সুগন্ধের রাজা বলেই নাম ‘গন্ধরাজ’। বসন্ত ও গ্রীষ্মে এই সচন্দন ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভে চারিদিক আমোদিত হয়ে ওঠে।
গন্ধরাজ ও বেলি — দুটি ফুলই আমাদের দেশে অতি পরিচিত। গন্ধরাজ রুবিয়েসি গোত্রের গুল্ম এবং বেলি ওলিয়েসি গোত্রের গুল্ম বা ব্রততি (vine)। তবে উভয়ই চিরহরিৎ ও বহুবর্ষজীবী।
দুই পরিবারের সদস্য হলেও এই গন্ধপুষ্প দুটির মধ্যে রয়েছে কিছু মিল। আকার-আকৃতিগত পার্থক্য থাকলেও উভয়ের ফুলের বর্ণই দুধসাদা। কিন্তু তারচেয়েও গভীর মিল তাদের সুবাসে। ফুলদ্বয়ের সৌরভে তেমন কোনো ইতরবিশেষ নেই। আর এ-কারণেই সম্ভবত গন্ধরাজের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামের প্রাজাতিক পদের নাম jasminoides; ল্যাটিন অনুসর্গ ~oides~ অর্থ — সদৃশ; অনুরূপ। সুতরাং jasminoides মানে জেসমিনসদৃশ (Jasmine-like)।
গন্ধরাজের দ্বিপদনাম — Gardenia jasminoides; প্রজাতিটির গণনাম ও ইংরেজি নাম যেহেতু ‘গার্ডেনিয়া’, তাই আগে ভাবতাম, সম্ভবত এটি বাগানের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনোকিছু। কিন্তু না; পরে জানলাম, নামটি উপনিবেশিক আমলের স্কটিশ নিসর্গী আলেকজান্ডার গার্ডেনের (Alexander Garden, ১৭৩০–১৭৯১) স্মরণিক।
সংস্কৃত মল্লিকা শব্দটি রূপান্তরিত হয়ে উদ্ভূত হয়েছে বাংলা নাম বেলি । এর বৈজ্ঞানিক নাম Jasminum sambac; যদিও ইংরেজিতে একে বলে অ্যারাবিয়ান জেসমিন । কিন্তু এর জন্মস্থান আসলে ওই অঞ্চল নয়। বরং বেলি মূলত দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে প্রথমোৎপন্ন। কিন্তু উদ্ভিদবিজ্ঞানী William Aiton ভেবেছিলেন উদ্ভিদটির ‘সেন্টার অব অরিজিন’ হলো আরব। এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ১৭৮৯ সালে তিনি প্রজাতিটির ইংরেজি নাম রাখেন Arabian jasmine; কালক্রমে তাঁর প্রবর্তিত নামটি চালু হয়ে যায়। উল্লেখ্য, বেলি ফিলিপাইনের জাতীয় ফুল।
বিভিন্ন প্রকার সুগন্ধি উৎপাদনে উভয় ফুলেরই রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এই ক্রান্তিলগ্নে গন্ধরাজ, বেলি প্রভৃতি গন্ধপুষ্পের সুবাস নিন, — কিছুটা হলেও মন প্রফুল্ল হবে।
গানপারে লেখকের লেখাগুলা চাইলে এই লিঙ্ক দ্রষ্টব্য : কল্লোল তালুকদার গানপারভুক্তিমালা
… …
- সুধাংশু কুমার শর্মা : স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদ || কল্লোল তালুকদার - October 1, 2021
- বানপ্রস্থ থেকে ফিরে || কল্লোল তালুকদার - August 12, 2021
- একবিংশে বেতাল হাওর || কল্লোল তালুকদার - July 2, 2021
COMMENTS