গানপার ইস্তেহার

গানপার ইস্তেহার

যদি ইশকুল-কলেজে একটা অ্যাকশনরিসার্চ এই মুহূর্তে, এই ২০১৭ সনে, ব্যক্তিগত কৌতূহল থেকে কেউ কন্ডাক্ট করেন তো অবাক হয়ে একটা ব্যাপার লক্ষ করবেন যে স্কুলইয়ার্ডে গানবাজনাটাকে ম্যানেজিং কমিটি কিংবা মাশ্টার মশাইরা আয়োজিত হতে দিতে সেভাবে রাজি হচ্ছেন না। কারণ কি? ইন ওয়ান বাক্য সমীক্ষাফাইন্ডিংস্ প্রকাশ করা যাবে না। কারণের উপরিভাগে যে-উত্তরগুলো উড়িয়া আসে বিভিন্ন মুখবাহিত হয়ে, সেসবের একটা ট্যালি করে এমন কয়েকটা অ্যান্সার সামনে আনা যায় : নিরাপত্তার অজুহাত, স্টুডেন্টদের পড়াশোনা ব্যাহত হয় মিউজিকের লাগি প্রিপেয়ারকালে, দিনকাল ভালো না গানটানের অনুষ্ঠানের জন্য, কর্তৃপক্ষ সর্বোপরি রিলাক্ট্যান্ট এবং রিজিড কোমলমতি শিশুদের গানশিক্ষার ব্যাপারে। এইসব হ্যাপা গার্জিয়ানরা নিজেরাই সামলাবেন, শখ থাকে যদি, ইশকুল কোনো দোষের দায়ভার নিতে চায় না। গানবাজনা ব্যাপারটা ঝামেলার। বিশেষভাবে অ্যাফ্লুয়েন্ট আর্বান ব্যাকগ্রাউন্ডের ইশকুলগুলোর অভিভাবকেরা গানবাজনাটাকে বেশ গর্হিতই ইঙ্গিত করিয়া থাকেন, এই ইঙ্গিতকারী অংশের সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না। হ্যাঁ, কালচারাল অনুষ্ঠানে ট্যাগোর পর্যন্ত উনারা অ্যাপ্রুভ করেন। পঞ্চকবি-রবি-কাজী জিনিশগুলো বর্তমানে এমনকি মিউজিকবৈরী রিলিজিয়াস উলামা-মাশায়েখদে­­­রও ­­­অনুমোদন পেয়ে যায় যেন। কথাটা আক্ষরিক অর্থে ব্যক্ত হয়নি যদিও, প্রথা বা ট্র্যাডিশন হয়ে গেলে একটা গান তা যত উন্নতই হোক এস্ট্যাব্লিশমেন্টের পার্পাস-সার্ভিং অ্যাজেন্ট হিশেবেই ধর্তব্য।

লক্ষণীয়, আরেকটা গানধারা বাংলাদেশে বেশ তেল্লাই পায় লিটারেইটদের মুখে এবং কলমে-কিবোর্ডে। সেইটা মাটির গান। ফোকলোর এই ধারার এক বড় উৎস। অক্ষরগর্বী মিডলক্লাসের মুখে কেবল মাটির রসের গান তারিফ পায়। যা-কিছু বইপাতাপত্রালি আছে বাংলায় গানকেন্দ্রী তা-সবে কেবল এই জিনিশ নিয়া আলাপ সঞ্চালিত হতে দেখব। অনেকে একে শেকড়ের গান বলিয়া থাকেন। বাংলাদেশ শেকড়েই দিনগুজরান করে চলেছে, শিখরে কেমন করে যাবে সে, কে তারে নিয়া যাবে কেল্লার চূড়ায়? গানপার চায় শেকড়ের আলাপে সাময়িক বিরতি দিয়া শাখাপ্রশাখায় বিচরণ। মাটির রসে, মাটির ঘ্রাণে, মাটির অলস সৌরভে মেতে-থাকা বাংলা গানের বিকাশ প্রায় মাটি হইবার পথে। কেউ ভ্রুক্ষেপ করছে না মাটিমিছিলের ফাঁকতালে নেপোয় খেয়ে যেতেছে যাবতীয় দই-মিষ্টান্ন। কঙ্ক্রিটে ছেয়ে গেল উপজেলা আর ইউনিয়ন রোডঘাট, ধেনো জমিন হাপিশ সিমেন্টের ইমারতে, ডিজেলে-পেট্রোলে সয়লাব দূর গেরামের পথপ্রান্তর। গানে এর আবহ ফুটবে কবে? যে-চেষ্টা হাজির রয়েছে, সেইটা আজকে যদি মৃত্তিকাবাদী মিউজিকসমুজদারদের মজমায় কোণঠাসা থাকিয়া যায় তাইলে বাংলা গানের ডেভেল্যপমেন্ট আরও দূরে যেতে থাকবে। এই দিকটায় গানপার সজাগ থাকতে চায়।

ব্যান্ডসংগীত বলি কিংবা বাংলা রক, বাংলাদেশজ নগুরে গানবাজনা, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নতুনধারা গানবাজনায় একটা ঘটনা। ব্যান্ডমিউজিকের চারদশকদীর্ঘ পথপরিক্রমায় ভাঙাগড়া আর উত্থান-পতনের বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা বাংলাদেশের মিউজিকের লিখিত নথিতে নেই। এই সাইটে একটা অংশে ব্যান্ডসংগীতে এখানকার তৎপরতা আগে কেমন ছিল এবং বর্তমানে কেমন চলছে এইসব নিয়া নানাবিধ প্রতিবেদন পত্রস্থ হবে। এমন নয় যে একগাদা গাব্দাগোব্দা লেখাপত্র ফোল্ডারভুক্ত করে এক ব্রেকফাস্ট-উত্তর শুভ সকালবেলায় এলান করে ফেলা হবে ‘এই নাও সমগ্র বঙ্গরকের ইতিহাস’, নো, মোটেও অমন সোজাসাপ্টা না ব্যাপারটা। ব্যান্ডসংগীত বলি কিংবা আর-সব দুনিয়াবি ইতিহাস কখনো ডোর-লক পরিবহনের প্রশান্তিবিলাস নয়, দ্বারবন্ধ ঐতিহাসিকতায় আর নয়নান্ধ ঐতিহ্যগরবে গানপার আস্থা রাখে না। গানপারের রাস্তা চিরচলিষ্ণু। চরৈবেতি মন্ত্রে গানপার মদদপুষ্ট। চলো, অথবা হাঁকডাকহীন চুপচাপ মরো। মরে যাও, তবু উচ্ছিষ্টে আর উদ্গারদুর্গন্ধে ছেয়ে ফেলিও না চারপাশ। চলো, অথবা রাস্তা ছাড়ো, তুমি ছাড়াও রয়েছে ঢের লোক যারা আরদ্ধ কাজটা তোমার চেয়েও অনেক এফিশিয়েন্ট ওয়েতে ডেলিভারি দিতে পারবে। এই বিশ্বাস নিয়া গানপার জুড়ে বসেছে তার স্বপ্নসংসার।

বাংলাদেশের ব্যান্ডধারা (বা বলা ভালো রকধারা) গানের গীতিভাগ সবসময় যেন পাঠকের অবহেলা পেয়ে এসেছে, হেলায়ফেলায় দেখা হয়েছে এই গীতাখ্য, কেবল পাঠকের উপেক্ষা হলে তেমন দুশ্চিন্তার কিছুই ছিল না, এমন বোধহয় ভাবলে বেশি হবে না যে এইধারা গানের গীতিকারেরাও বেখেয়ালে গান বেঁধে গেছেন বহুকাল। ফলে ব্যান্ডের গান সুরের পাখনা ছেঁটে কেবল পাঠবস্তু হিশেবে পড়তে যেয়ে হোঁচট খেতে হয় পদে পদে। একই গীতিভাগের কথা সাংগীতিক আবহে শুনতে কিন্তু কোথাও আটকায় না, বরং উৎরেই যায় বেশিরভাগ সময়। বেখেয়াল যারই হোক, গানলেখকের তরফে কিংবা গানপাঠকের তরফে, বহুদিন ধরে ব্যান্ডগানে এই দুর্ঘট লক্ষ করা যায় বিরাজ করছে। এর কিছু নগদ ফলও অবশ্য লভেছি আমরা, কাব্যিকতা হাজির রেখেও কবিতা-আঁটোসাঁটো কনভেনশন ভেঙে এক্সপ্রেসিভ একটা গানকাণ্ড সহস্রবর্ষ প্রথাঋদ্ধ/প্রথাজীর্ণ বঙ্গে ব্যান্ডগানের দৌলতে এসেছে, এখনও অনেকেই যা আমলে নিচ্ছেন না, প্রাকরণিক আপোসের পাশাপাশি কিছু মুক্তডানা ব্যঞ্জনাও জন্ম নিয়েছে এই লিরিকের মধ্যস্থতায়। এইসব নিয়া আমরা ‘গানপার’ থেকে সম্ভাব্য সমস্ত কৌণিক বোঝাপড়া চালাতে চাই। দেখতে চাই, এবং দেখাতেও চাই তো বটে, পদ্য বা পোয়েট্রি আর গান বা গীতি ঠিক কোন পয়েন্টে যেয়ে লেনাদেনা-মেলামেশা চালাতে পারে; এও বলতে চাই জোরেশোরে যে কবিতাসাদৃশ্য কম হবার বরাতে ব্যান্ডগানে আপনাআপনি কিছু অভাবিত অর্জন জুটেছে। সেসব ক্রমে দেখব এবং লিখব আমরা সবাই মিলেই, এই গানপারে, ডিমেরিট এবং মেরিট দুইদিকেই যথাসাধ্য নজর রেখে। এই দীর্ঘপ্রসারী নিশানার দেখাশোনাজানাবোঝার ক্ষেত্র তৈয়ারে আমরা ব্যান্ডগানের গীতিভাগ চোখের সামনে রাখতে চাই। এবং চাই ইনফ্লুয়েনশিয়্যাল ব্যান্ডগুলোর গানকথা ধারাবাহিক যত্নে এইখানে ছেপে রেখে যেতে। পড়ার জন্য। শুধুই পড়ার জন্য, সুর ও সংগীতের আয়োজন ভুলে কেবল মনোলীন উচ্চারণে ব্যান্ডগানের লিরিকপুঞ্জ গুঞ্জরিয়া যাওয়াই এক্ষণে অভিপ্রেত, নতুন দিনের বাংলা গানে ব্রেক-থ্রু উদবোধনের পথঘাট সুগম হবে এইধারার যাবতীয় কথাগীতি নিরীক্ষণ করে যেতে পারলে; এছাড়া নিদান নাই, মুক্তি নাই, বিশল্যকরণী ডিটেক্ট করতে গেলে এই আবহমানের গন্ধমাদনে এ-সময়ের বিপুল জনতারাশির হৃদয়োৎসারিত সুর-বেসুরগুলো সযত্ন-সসম্মান করপুটে নিতেই হবে। এরপর যথেচ্ছ তর্কাতর্ক হোক, তুলোধোনা তারিফি-খারিজি তুল্যমূল্যাঙ্কন, তবে এসবের আগে চাই নিজের ভাব ও আবেগের স্বতঃস্ফুরণের সর্বশেষ তথা সাম্প্রতিক প্রকাশধরনটাকে একবাক্যে স্বীকৃতি। আমরা ‘গানপার’ থেকে এই কাজটাই করে যেতে চেষ্টাশীল অন্য শতেক চেষ্টার ফোকরে। উদ্দেশ্য শুধু কথাগুলোর দিকে মনোনিবিষ্ট হওয়া। বা, আদৌ কথাগুলোও উদ্দিষ্ট নয়, ‘গানপার’ থেকে আমরা চাইছি মিউজিকের পাশাপাশি লিরিক্স নেড়েচেড়ে দেখতে। যেমনই হোক, ভালো অথবা মন্দ, গত কয়েক দশক ধরে বিপুলসংখ্যক তারুণ্যের উদ্দীপনাময় সৃজনোদযোগ ধারণ করছে যে-সংগীতধারা, সেই ধারার প্রতি পিঠ ফিরাইয়া থাকার সাংস্কৃতিক বোকামো অনেক হয়েছে। এইবার চাই নিঃশর্ত উদযাপন প্রথমত, ক্রমশ পর্যালোচনা, পরে এক-সময় এসবের খামতি-ঘাটতি-ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়াও কথা পাড়ব আমরা। গানপাঠ করতে চাইছি যেহেতু, শুধু কথায় বা কবিতায় আটকে থাকলে তো পূর্ণাঙ্গ পঠনপাঠন সম্পন্ন হয় না গানের। তা মানছি। কিন্তু এই পরিকল্পনাপ্রবাহের আওতায় আমরা সাংগীতিক অন্য-সমস্ত চিহ্ন খসিয়ে কেবল বর্ণধৃত কথার দিকেই নিরিখ করব নজর আমাদের। যে-গানধারাগুলোর দিকে আমরা নানা ব্রাহ্মণ্য বদখাসলতের কারণে ফিরিয়া তাকাই না, আদৌ অভিনিবেশে দেখি নাই ফিরে যে-জিনিশগুলো পঞ্চাশবছরের সাংস্কৃতিক উন্নাসিকতায়, আলোকপাত করতে চাই আমরা গানবাজনার সেইসব দিকে-দিগন্তরে। ব্যান্ডসংগীত সেই লক্ষ্যে এগোনোর পথে একটামাত্র প্রবাহ, একমাত্র প্রবাহ নয়। আমরা চাইছি, আবারও বলি, মিউজিকের পশম ছাড়িয়ে স্রেফ শব্দনির্মিত কথাখ্যানটির দিকে মনোনিবদ্ধ হতে। ব্যান্ডের গানের একটা গুণ বলি কিংবা দোষ তা এ-ই যে সেগুলো সুর ও সংগীত ব্যতিরেকে তেমন অর্থপ্রকাশক বা ব্যঞ্জনাবাহক বলে মনে হয় না। আদৌ অসত্য নয় এই কথাটা। তারপরও বলতে হয় যে ব্যান্ডের গীতিভাগের দিকে সেভাবে আমরা নজর ফেরাইনি কোনোদিনই। ‘গানপার’ থেকে আমরা এই কাজটা চাইছি নিষ্ঠার সঙ্গে করে যেতে। একটা সার্টেইন পিরিয়ড অফ টাইম পেরোলে পরে ‘গানপার’ তার অভিপ্রায়ের কাছাকাছি কিছু বোঝাপড়ার কাজ শুরু করতে পারবে বলিয়া আশা ব্যক্ত করে রাখছে আগেভাগে।

শিল্পী হিশেবে ব্যান্ডমিউজিশিয়্যানদেরে এবং শিল্প হিশেবে ব্যান্ডমিউজিকটাকে যেভাবে একটা হাল্কাচালে দেখার প্রবণতা আমাদের মেইনস্ট্রিম প্রচারযন্ত্রে দেখতে পাই হামেশা, গানপার চায় এই জায়গা থেকে বেরোতে। ব্যান্ডসংগীতে যেন ভাববার এবং ভাবাবার কোনো মোকদ্দমা নাই বিনোদনরঙঢঙ ছাড়া, এই মিথ্যাচার আমরা মুছে দিতে চাই; ব্যান্ডসংগীতের ধারার সঙ্গে অন্যান্য শিল্পপ্রকাশমাধ্যম যেমন কবিতা ইত্যাদির সংশ্রব এড়িয়ে ডেইলি নিউজপেপারের ফরমায়েশি ফিচার্ড ফোটোশ্যুটমার্কা সাক্ষাৎকারগুলো অবিরত হপ্তায়-হপ্তায় যেভাবে ব্যান্ডকর্মকাণ্ড হাজির করে থাকে সংগীতসমুজদারদের সামনে, এর ফলে যে ব্যান্ডসংগীতপ্রশ্নে এক চটুল অশ্রদ্ধা দানাদার হয়েছে দিনে দিনে, সেই স্বেচ্ছাচারের বাইরে একটা আলাপট্রেন্ড গড়ে উঠবে এইভাবে একটু একটু সম্মিলিত সক্কলের সহযোগে।

মিউজিকের ইতিহাসে ব্যান্ডের, দেশী-বিদেশী সমস্ত রক ও নন-রক সংগীতধারার, তরফদারি ‘গানপার’ নিত্য করে যেতে চায়। আর্কাইভিং করতে চায় পাঁচদশকের বাংলাদেশজ সংগীতনিশানা এবং অনাগত ভবিষ্যতের বাংলা গানের ইশারাগুলোও টুকে যেতে চায় হামেশা। বিগত পঞ্চাশবছরের বাংলাদেশে আধুনিক সংগীত সৃজনের ও প্রোমোশনের যা-কিছু তৎপরতা, চেষ্টাচরিত্তির, তার যথাসম্ভব আর্কাইভ রাখতে চায় ‘গানপার’ পর্যালোচনামূলক নতুন রচনা আবাহন ও প্রচারের পাশাপাশি।

মিউজিক নিয়া আলাপ মানে যে এসেনশিয়্যালিই হিস্ট্রি টানা কথায় কথায়, তা নয়, একটা গান ধরেও রচনা আবর্তিত হতে পারে। একটা গান ধরে মানে সেই গানের রেন্ডিশন ধরে। এইভাবে একটা গানকে দেখার ভঙ্গিটা, সেই দেখাটাকে লেখায় দেখানোর ভঙ্গিটা, আমাদের গানকেন্দ্রী গড়পরতা লেখালেখির এলাকাটাকে সম্প্রসারিত করবে বলেই বিশ্বাস আমাদের। যে-গানটা আলাপের উপলক্ষ্য হবে, সেইটার অডিয়োভিশ্যুয়াল রচনার শুরুতে দেয়া থাকবে, যেন সংগীতপাঠক শুনে শুনে পড়তে পারেন ভাবতে পারেন। কৌতূহল-উদ্রেকী বিভিন্ন ধরনের লেখাজোখা ‘গানপার’ সবসময় সামনে আনতে চায়। আগামী দিনগুলোতে দেশী-বিদেশী গানের বিচিত্রভঙ্গিম পর্যালোচনা ‘গানপার’ উপস্থাপন করে যেতে চায়। লেখকেরা সাধপূরণে এগিয়ে এলেই ‘গানপার’ সফল হতে পারে। যেন গানটা নয়, গাওয়াটাও নয়, শেষমেশ উপলক্ষ্য উজিয়ে একটা গানকেন্দ্রী লেখা তার প্রস্তাবিত ‘দেখা’ অনেকদূর পর্যন্ত প্রসার করতে পারে। একটা গান শোনা আবশ্যক তো বটে, এবং অনাবশ্যক নয় গানটা দেখা। হ্যাঁ, দেখাটাকেও জোর দিতে চাইছি আমরা। গান শোনা, গান গাওয়া, গান দেখা।

গানের শুধু চিত্ত নয়, বিত্তের খবরটাও দরকার রাখা। আজকের দুনিয়ায় বিত্তনিরপেক্ষ কোনোই চিত্তবৃত্তি খুঁজিয়া পাওয়া যাবে না তা হয়তো নয়, যাবে; বেসাতিবিত্তের এই বাজারে আমরা খবর রাখি বা না রাখি যে-কোনো সুরের সংগীতের পাখা উড়ালের সঙ্গে সঙ্গেই সেইটা বাণিজ্যবাতাসের তোড়ে যেয়ে পড়ে এবং খাবি খায় কিংবা বাণিজ্যটা ভালোমতো করে। উপেক্ষা না করে ব্যাপারটা সামলানো দরকার। সুরকার বা গানস্রষ্টা ব্যাবসাটা না করলেও বাজার ঠিকই ব্যবসাটা করে নেয় বা করিয়ে নেয়। বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী কথাটা তো আর এমনি-এমনিই বলা হয় না। কাজেই উদাসীন থাকার সুযোগ নাই। আমরা ‘গানপার’ থেকে দেশবিদেশের গানের ব্যবসাবাতাসের পূর্বাভাস ও সফলতা-ব্যর্থতার সংবাদটা রাখতে চাই। চিত্তসম্বাদী-বিত্তসম্বাদী ছাড়াও হরেক কিসিমের রচনা আমরা ছাপতে চাই, লিখতে চাই, পড়তে চাই, ভাবতে চাই, চেনা-আধাচেনা-অচেনা বাংলা ও দুনিয়ার সমস্ত ভাষার গানের জীবনী ও যন্ত্রণা আমরা গানপারে দেখতে চাই। লিখতে চাই নতুন দিনের গানের ব্যবসাসাফল্য অথবা ব্যর্থতার আখ্যান, আর্কাইভে রাখতে চাই দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ রচনাটাও।

গানের মার্কেট আপডেট নিয়াও উদাসীন থাকতে চাই না আমরা। নানাবিধ জরিপের পাশাপাশি মিউজিকের বাজারজরিপও সমাজের হালফিল নিয়া প্ল্যানপ্রোগ্র্যাম উপস্থাপনে হেল্পফ্যুল হতে পারে। এবং প্রধানত সমকালীন সংগীতবাজার মাথায় রেখে এইসব জরিপ/সার্ভে কন্ডাক্ট করার জন্য গানপারের উদ্যোগোন্নয়নের চেষ্টা হাজির রয়েছে।

যন্ত্রশিল্পীদের বাদন আমরা নিশ্চয় খেয়াল করি, গীতিনির্ভর গানেও ‘কনচ্যার্টো’ তথা বাজনা বা মিউজিক কেমন হলো বলাবলি করি গান শুনে, ক্ল্যাসিক্যালের ক্ষেত্রে তো যন্ত্রানুষঙ্গের মাধ্যমে তৈয়ার-হওয়া অ্যাম্বিয়্যান্স বা বাতাবরণ নিয়াই আমরা আড্ডায়-আলাপে মুখর হই। কিন্তু লক্ষ করব যে একেক যন্ত্রশিল্পীর বাদ্যবিতরিত সুর অন্তর্গতভাবে যেমন আলাদা তেমনি বাহ্যিক দিক থেকেও একেকজনের বাজনাস্টাইল আলাদা। তারা যখন শ্রোতার সামনে মঞ্চে বা ঘরোয়া আসরে বাজিয়ে থাকেন সরাসরি, কিংবা আমরা যখন দেখি টিভি ইত্যাদিতে, তখন তাদের বাদ্যযন্ত্র ধরার ধরন থেকে শুরু করে জেশ্চার ও শরীরভাষা সবকিছুতেই প্রতিভাত হয় তাদের শৈলীগত স্বাতন্ত্র্য। অনেকে ক্রেজ্ তৈয়ার করেন ভক্তশ্রোতাদের মধ্যে তাদের বাদ্যযন্ত্র বাজাবার বাহ্যিক স্টাইল দিয়ে। এইটা তানপুরা-সরোদ-তবলা থেকে গিটার-কিবোর্ডস্-ড্রামসের শিল্পী সকলের ক্ষেত্রেই সত্য। যদিও সবই গিমিক বা দেখানোপনা বলে ব্যাপারটা আমরা অনেকেই হেসে উড়িয়ে দিতে চাই, কিন্তু উপভোগও করি; মুখে মুখে সেইসব নিয়া আলাপ করি যতটা, আমাদের লেখায় তা আদৌ প্রকাশ থাকে না। ‘গানপার’ এই দিকটা নিয়া হামেশা লেখার খোঁজ করে।

আজি এ প্রভাতে রেডিয়োর স্বর কেমনে পশিল প্রাণের ’পর … না, এমন পঙক্তি রবীন্দ্রনাথ রচেন নাই; কিন্তু একদা আমাদের সকাল শুরু হতো রেডিয়োর সংগীতে – এই কথাটা তো মিথ্যে নয়, – একদা আমাদের দিন শেষ হতো রেডিয়োর গানে ও বাজনায়, একদা আমাদেরে ঘুম পাড়াত রেডিয়োর সংগীতাসর। আর এখন, ইদানীং, এই ২০১৭ সনে এসে কেমন চলছে বেতার বাংলাদেশ? কেমন চলছে বেতারের সংগীত বিভাগ? চলছে সে, যেভাবেই হোক, এই পরিবর্তিত জমানায় রেডিয়োশ্রোতা কারা বা আদৌ শ্রোতা আছে কি না এবং কি তাদের চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের নাগালে কোনো সমীক্ষা হালনাগাদ নাই। বিশেষভাবেই মিউজিক তথা গানবাজনা সম্প্রচারে এফএম রেডিয়ো সম্প্রতি নতুন সময়ের নবীন শ্রোতাদেরে টানতে পেরেছে আমরা দেখতে পাই। কিন্তু এফএমের এই লিস্নারদেরও মনোযোগ দিয়ে এখনও জরিপ করছি না আমরা, তারা কি শুনছে বা কিসে তারা সাড়া দিচ্ছে – এইসব লক্ষ করে গেলে আমরা আমাদের যাপিত সময়ের আদলটুকু ধরতে পারব। যখন-যেভাবে এবং সম্ভাব্য যত মাধ্যম আছে সেসব থেকে ইঙ্গিত গ্রহণ করেই চিনতে পারব আমরা আমাদের সময়টাকে এবং সেই চিনপরিচয় মোতাবেক আগাবে আমাদের মনন আমাদের যাবতীয় সৃজন। এহেন প্রত্যয়ের ভিত্তিতে আমরা খোঁজ নিতে চাই রেডিয়োর, টেলিভিশনের, এফএমের এবং অন্যান্য সমস্ত গণসংশ্লিষ্ট সম্প্রচারমাধ্যমের; খোঁজ নিতে চাই সেসব জায়গায় গানের দিনকাল চলছে কেমন এবং শ্রোতাসাড়া তাতে পাওয়া যাচ্ছে কি না। ‘গানপার’ এই দিকগুলো নিয়া ভাবতে চায় এবং এই লক্ষ্যে লেখক-প্রতিবেদক-পাঠক সকলের অনুসন্ধানজাত রচনা আহ্বান করে।

সংগীতে এমন অনেককিছুই বিদ্যমান যা নিয়া বাংলায় আলাপসালাপ হলেও, মৌখিক আলাপে এলেও, লেখাপত্রে সেভাবে আসতে দেখা যাচ্ছে না। যেমন ঘরানা। একই রক্তের বংশোদ্ভুত সংগীতশিল্পী হলেই যে একজন গাইয়ে-বাজিয়ে ঘরানাদার হয়ে যাবেন এমন কোনো কথা নাই। কিন্তু ঘরানা আছে, এখনও, এবং গানে ঘরানার অবদান আজো অস্বীকার করার নয়। এমনিতে এটিমোলোজি দিয়া ভাবলে দেখা যাবে যে ঠিকই আছে। কেননা ঘর থেকেই তো ঘরানা, আর ঘরানা থেকেই ঘরানাদার। কিন্তু শব্দগুলো/টার্মগুলো মুখ্যত প্রয়োগ হয় ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকে, যেইটাকে আমরা সাধারণত ধ্রুপদ বলি বা বলি হিন্দুস্তানী ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক, সেইখানেই ঘর-ঘরানা-ঘরানাদার কথাগুলো আকছার ব্যবহৃত হতে দেখব। লক্ষ করব যে সেখানে পিতার/মাতার/প্রপিতামহের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদের পারিবারিক পরম্পরার বিশেষ একটা গায়ন/বাদন বহন করে নিয়ে চলেছেন সন্তানসন্ততি; যেমন আমরা বলি ‘গোয়ালিয়র ঘরানা’, ‘পাতিয়ালা ঘরানা’ … ইত্যাদি। কিন্তু ঘরের ভিতর সুরের/বাদনের সুদীর্ঘ পরম্পরা রেখেও অন্য ঘরের পানে আকৃষ্ট হয়েছেন এবং অন্য ঘরানাদার গুরুর কাছে যেয়ে নাড়া/গান্ডা বেঁধে ট্রেইন্ড-আপ্ হয়েছেন বা তালিম নিয়েছেন ও অন্তিমে সেই নিজগৃহবহির্ভূত ঘরানার নিশানবর্দার হয়েছেন এমন উদাহরণও দুর্নিরীক্ষ্য নয়। কাজেই ‘ঘর’ শব্দ হইতে উৎপন্ন হলেও ‘ঘরানা’ শব্দটা ঘরছাড়ানোও বটে; অরিজিন থেকে প্রতিসরিত হয়ে সে ভিন্ন অর্থচিত্রই দ্যোতিত করে চলেছে প্র্যাক্টিক্যালি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় লিখিয়েরা তাদের লেখাজোখায় একেবারেই নায়্যিভ কনোটেশনে টার্মটা ব্যবহার করেছেন। ফলে একটা মারাত্মক ভ্রান্তি ঘটবার আশঙ্কা থাকিয়া যায় আরেকটা জায়গায়, সেইটে এ-ই যে, – ঘরানা ব্যাপারটার সঙ্গে রক্তসূত্র যতটা তারচেয়ে বেশি ডিসাইপ্যলসূত্র জড়িত; ঘর ও ঘরানা, গানে-বাদনে অন্তত, গুরু-শিষ্য সম্পর্কসংলগ্ন। পরিবারের পরম্পরা ব্যাপারটা ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকে বেহতর রয়েছে স্বীকার্য, তবে আক্ষরিক অর্থে ব্যাপারটা আগলবন্দি স্থিতাবস্থা ভাবলেই মুসিবত। অথচ বিনোদনবাণিজ্যের গানাবাজানায় স্ট্যাটাস-ক্যু প্রকট হয়ে থাকতে দেখেছি আমরা দশক-কাল আগেও, সমস্ত সেলিব্রেটিদের ছেলেমেয়ে-নাতিপুতি-ইয়ারবখশিই শিল্পীকলাকুশলী, বর্তমানের পরিস্থিতি রিপোর্টেড হয় নাই এখনও পর্যন্ত কোথাও। তবে স্রেফ বাংলাদেশের একটা-সময়-পর্যন্ত সংগীত (‘লঘু সংগীত’ টার্মটা ব্যবহার করেন অনেকেই এহেন ক্ষেত্রে, এই ব্যবহারের ভিতর দিয়া তারা তাদের আখাম্বা উচ্চম্মন্যতা জানান দেন শুধু) কয়েকটা পারিবারিক বলয়ের সেলিব্রেশন্যাল কার্নিভ্যাল ছিল কি না, আমাদের নিজেদের স্মৃতি নিযুক্ত করে ব্যাপারটা আরেকটু সম্প্রসারিতভাবে এক-সময় হাজির করব। এবং এখনকার গানবাজনা, ব্যান্ডসংগীত যদিও গোড়া থেকেই, বাংলাদেশজ রাজনীতির পরিবারতান্ত্রিক (অপ)অনুশীলনচক্রের বাইরে বেরোতে পেরেছে যে, এবং/বা আদৌ কতটুকু পেরেছে, এইসব হিসাবপত্রাদি কিতাবের পাতায় দেখবার সময় এসেছে বোধহয়। সেইসঙ্গে এ-ও বলিয়া রাখা যাক যে বাংলাদেশের ও বাংলাবহির্ভূত দুনিয়ার গানবাজনার বিচিত্র ঘরানা নিয়া সুলুকসন্ধানী রচনার তালাশে ‘গানপার’ তার চিরুনি চালিয়ে চলেছে নিত্য। রক মিউজিকের হাজারেবিজারে ঘরানা, বাউলের এবং ফকির-ত্রুবাদুর-ডোমচাঁড়ালের গানঘরানা, ক্ল্যাসিক্যালের এবং ননক্ল্যাসিক্যালের বেশুমার ঘরানা নিয়া ‘গানপার’ ভালো/মন্দ উল্টাপাল্টা ঝাঁকানি-দেয়া লেখাপত্র সন্ধান করে চলেছে। পেসিমিস্টিক হবার কারণ নাই কোনো। যদি বাংলাদেশের গানের গতি কিছু হয় ইন-ফিউচার তো গানপারেরও হবে। একটু মন্থর হলেও গতি তো বস্তু মাত্রেই বিরাজে। লেখকদের সাড়া পেলে (এবং লেখাপ্রাপ্তির আশ্বাস সাপেক্ষে) ‘গানপার’ বিশ্বজোড়া বাংলা গানের গতি নিয়া আশায় তাঁবু গাড়তে গররাজি নয়।

কথা আজকের নয়, এখনকার নয়, এখন তো সংগীত শোনা বা গানবাজনা করবার-শুনবার রাস্তা হাজার। এখন নিশ্চয় জেবের ভিতরে একপৃথিবী মিউজিক নিয়া পাথারে বা পাহাড়ে জনমনিষ্যিবিরল সুরের ঘোরে একলাফে বছর পার করে দেয়া যায়। কিন্তু অন্তহীন সুরের সংযোগপ্রবাহ অনবচ্ছিন্নই রয়ে যায় যদি নির্বাসিতজনের জেবের ভিতরকার যন্ত্রখানা হয় দশাসই। নিতান্ত ছোট্ট একটা সেলফোনে নেটসংযোগ থাকলেই দিবারাত্রি খোলা গানবাজনার অশেষ স্টেশন। যখন ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা যা ইচ্ছা যেমন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা গান শোনা যায় একটিপে। এখন আছে ইউটিউব ছাড়াও গান শ্রবণের গান পরিবেশনের বেশুমার রাস্তা। আছে এফএম, আছে টেরিস্ট্রিয়্যাল চ্যানেল কাতারে কাতার, আছে ব্যাপক সংখ্যায় গানবাদ্যিবাদনের প্রোগ্র্যাম। তবে এই কিছুদিন আগে, বেশি দূরে যেতে হবে না, গেল শতকের নব্বইয়ের দশক অন্তিম অব্দি লিমিটেড ছিল সংগীত শ্রবণের উৎস। বাংলাদেশ বেতার ছাড়া, আর অডিয়োপ্লেয়ারে ক্যাসেট মাধ্যম ছাড়া, গান শোনার কথা ভাবনাতেও ছিল না কারো। সর্বোপরি প্রোক্ত সময়টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন, সংক্ষেপে বিটিভি, প্রভূত অবদান রেখেছে গানপেটুক শ্রোতাভাইবোনবন্ধুদের সংগীতক্ষুধা নিবৃত্তিতে। পাক্ষিক আর সাপ্তাহিক গোটা-দুই টিভিনাটক ও মাসে একটা বাংলা ছায়াছবি প্রচারের বাইরে রোজকার সংবাদ প্রচার নির্ধারিত প্রহরে এবং রোজকার একাধিক সংগীতানুষ্ঠান দর্শকশ্রোতাদেরে একটা বড়সড় সময় জুড়ে সঙ্গ দিয়ে গেছে। একমাত্র সংগীতশ্রবণদর্শন তথা গানদেখাশোনার মাধ্যম ছিল তখন সবেধন নীলমণি বিটিভি। বিকাল চারটে থেকে রাত বারো অব্দি বিটিভি অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করত তখন। পরে অবশ্য সম্প্রচারসময় বৃদ্ধি পেয়েছে। এরই মধ্যে পল্লিগীতি থেকে শুরু করে ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালী কিংবা পাঁচকবির গান বা রাগলহরী কি সীমিত পরিসরে ব্যান্ডসংগীত এমনকি ইংরেজি প্যপ থেকে শুরু করে মোৎসার্ট-বাখ-চাইকোফোস্কিও শোনানো হয়েছে। এইখানে এই গানপারে সেই সময়ের খতিয়ান আমরা ড্রাফ্‌টেড রাখতে চাই। এইভাবে একটা আস্ত ছবি নিশ্চয় ফোটানো সম্ভব হবে এই পরিবর্তিত সংগীত-সম্প্রচারবিশ্বের আদি পথপরিক্রমের।

গানপারে অ্যালবামরিভিয়্যু প্রকাশ করতে চাইছি নিয়মিতভাবে। লেখাপত্র জোগাড় করে উঠতে পারছি না, বা পারছি না নিজেদের প্রতিবেদক দিয়ে লিখিয়ে নিতে, ব্যাপারটা প্ল্যানপরিকল্পনা থেকে ছেঁটে ফেলতেও পারছি না। আশা আছে একটা সময়ে রেগ্যুলার বেইসিসে অ্যালবামরিভিয়্যু প্রকাশে কামিয়াব হব আমরা। আশাতেই বসতি আপাতত। তরুণ গানশ্রোতাদের কোঅপারেশনের দিকেই মুখিয়ে আছি। কিন্তু রচনাপত্র পাওয়া, বিশেষভাবেই নিউলি রিলিজড অ্যালবামের রিভিয়্যুয়িং রচনাপত্রাদি, ভারি বিরল এক ব্যাপার। ন-মাসে ছ-মাসে অ্যালবাম একআধখানাও বের হয় না আজিকালি, ইট’স্ ট্রু, কিন্তু পরিবর্তিত ট্রেন্ডে এখন সিঙ্গেলস্ বের হয় এবং ননস্টুডিয়ো সংকলন তো বহুবিচিত্র রয়েছেই। সেসবের রিভিয়্যু অভিপ্রেত। অথচ হচ্ছে না। ব্যান্ড বা মোটা দাগে আমরা যাকে রকমিউজিক বলি, রিভিয়্যু করতে চাইছি আমরা এই বিশেষ জঁরটা মাথায় রেখে। এম্ফ্যাসিস্ দিতে চাইছি এই দিকটায়। লেখা ও লেখকের সঙ্কট আছে কি না তা আজও হলফ করে বলতে পারব না। আমরা পাচ্ছি না, এইটুকু শুধু বলতে পারি। কীভাবে অ্যালবামরিভিয়্যু হবে বা সম্ভাব্য রকসংগীতসমালোচনা কেমন হতে পারে, এর একটা মিনিম্যাল অ্যাপ্রোচ কেমন হতে পারে, এই বিষয়ে একটা আন্দাজ আমাদের সম্ভাব্য অবদায়কদেরে দিতে যেয়ে এক/দুইটা আর্টিক্যল্ আমরা ড্রাফ্‌ট করে রেখেছি ইতোমধ্যে যা আশু প্রকাশ্য।

সবকিছু মিলিয়ে একটা সামগ্রিক গানবাজনাসাংস্কৃতিক পর্যালোচনা গানপার সচল রাখতে চায়। কিছুই বাদ দিয়া যাইতে চায় না গানপার। আবহমান বাংলা গান থেকে শুরু করে ‘নিন্দনীয়’ আইটেমগানের রসাস্বাদন-পর্যালোচনও গানপার উপেক্ষা করতে চায় না। বাংলা-অবাংলা ছায়াছবিরিভিয়্যু যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে বিনোদনের ভালোমন্দ নিয়াও কথাবার্তা। সাময়িক মনে হতে পারে বিশেষ এক/দুই দিকে এর ঝোঁক বেশি, পক্ষপাত অধিক, বিশেষ কয়েকটি চিহ্নঝোঁকা গানপারের বেসাতি। কিন্তু পোজিটিভ ডিস্ক্রিমিনেশনের ব্যাপারটা মাথায় রেখে সহৃদয় রিডার-ভিয়্যুয়ারদেরে গানপারের প্রতি সতর্ক ভরসা স্থাপিতে রিকোয়েস্ট করি। ভিয়্যুয়ার মাত্রই গানপারের বরেণ্য অবদায়ক ও ব্র্যান্ড-অ্যাম্ব্যাসেডার। কথাগুলো অবশ্যই ইয়াদ রাখবেন।

এবং এইধারা গানপার ইস্তেহার আমরা আবশ্যিক মুহূর্তে রেগ্যুলার প্রকাশিব ভবিষ্যতেও। ২০১৭ এপ্রিলের পয়লা হফতায় গানপার শুরু করেছিল ওয়ার্ডপ্রেসে একটা মাগ্না পাতায় টেস্টিং যাত্রা। তারপর গড়িয়েছে মাস-পাঁচেক, এরই ফাঁকে গোছগাছ চলেছে সাইটের নিজস্ব পরিসর, সেপ্টেম্বরে এসে gaanpaar.com অবমুক্ত করা হচ্ছে। এরপর থেকে পূর্ববর্তী ঠিকানা gaanpaar.wordpress.com শুধু মোহাফেজখানা হিশেবে ব্যবহৃত হবে। এই মোহাফেজখানা বা আর্কাইভে নিজস্ব সাইটে নিত্য সম্প্রচারিত রচনারাশি নিয়মিত অবসরবিরতিতে প্রিজার্ভ করিয়া রাখা যাবে, যেন কোনো-কারণে নিজস্ব হোস্টিং ব্যাহত হলে ভিয়্যুয়ার/কন্ট্রিবিউটররা তাদের পছন্দের লেখাটা বিকল্প স্পেসে পেয়ে যেতে পারেন সহজে।

গানপারের নবযাত্রায় ভিয়্যুয়ার-উইশার সবাইকে স্যাল্যুট জানাই। দিন কাটুক গানে, বেহালা-ড্রামস্-গিটারে, এবং চিরসুন্দর শান্তিমন্ত্রে।

গানপার সঞ্চালনা পর্ষদ

COMMENTS

error: