বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে ব্যবহৃত কথাবার্তালাপের চাবিশব্দগুচ্ছ/শব্দসমূহ : হোক কলরব, ওয়েস্ট বেঙ্গল, ধর্ষণের প্রতিবাদ ও জনসমাবেশন, দীপিকার ক্লিভেইজ, বাংলাদেশের বিজয়কেতন, অর্ণব, রাজীব আশরাফ, রেনেসাঁ, মাইলস, ফিডব্যাক, কবীর সুমন, নচিকেতা, যাদবপুর য়্যুনিভার্সিটি, ম্যাসিভ ম্যুভমেন্ট অন ভায়োলেন্স অ্যাগেইন্সট উয়োমেন, ইন্ডিয়ানবাংলা গানকবিতা, বাংলাদেশজ মনোজাগতিক দারিদ্য … প্রভৃতি
_____
নিশ্চয় ইয়াদ আছে অনেকেরই যে একটা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল ভারতের অঙ্গরাজ্য ওয়েস্ট বেঙ্গলে, কম্ব্যাটিং দ্য ভায়োলেন্স অ্যাগেইন্সট উয়োমেন, অ্যাগেইন্সট রেইপ, সেই পুরাকালের ঘটনাটা সংঘটনকালীন কিছু উদ্ভট করিৎকর্ম স্মরণ করিয়ে এই নিবন্ধ অবতীর্ণ হতেছে। এর সঙ্গে একটা বাংলাদেশী গানের মুখড়া প্রাসঙ্গিক রয়েছে।
এমনিতে সেকেন্ডে একযোগে একলক্ষ খবর সম্প্রচারিত হয় এমন শক্তিশালী মিডিয়া আমাদের হাতে এসেছে এরই মধ্যে, একাগ্র উল্লাসে এস্তেমালও করছি মিডিয়াটা আমরা, ফেসবুক সেই মিডিয়ার নাম। এই নিবন্ধনোটের প্রতিবেদক বটে একই-সেই মিডিয়ারই কর্মী, বিনে বেতনের, টোয়েন্টিফোরাওয়ার্স লড়কে-লেঙ্গে প্যাট্রিয়ট ও সংস্কৃতিশকুন, বাংলায় যারে কয় কাল্চার ভাল্চার, বাছবিচারহারা খাদক তথা খাদ্যভক্ত, কোটি কোটি ক্রিটিকের গড্ডালিকায় ক্যালানো গর্বিত জনৈক। ফলে একটা করে ঘটনা ঘটবে রোজ, অনবচ্ছিন্ন প্রহর জুড়ে সেইসব ঘটনার লেজে ঝুলে একটা করে রেভোল্যুশনারি রিমার্ক জুড়ব, ফোড়ন কাটব গুচ্ছগুচ্ছ, মনের সুখে একদিন দুম করিয়া মরিয়া যাইব। সংক্ষেপে এ-ই আমাদের সানন্দা জীবন। আমাদের স্বাগতা জীবন। শ্যামশ্রী জীবন আমাদের। জয়ের পাগলি জীবন। হাসানের জয়শ্রী জীবন। এ-ই আমাদের ফেসবুকফ্যুলের সারাজীবন। এ-ই সাহিত্য, এ-ই সিনেমা, গানে গালিগালাজে গলাগলিতে, এ-ই মিডিয়াক্রিটিক। মিডিয়োকারবৃত্তি। ইডিয়োসিনক্রেইসি। নিন্দুকেরা যা-ইচ্ছা বলুক। এ-ই আমি। এবং, মামায় ফের জিগায়, আমিই শ্রেষ্ঠ, আ’য়্যাম দ্য বেস্ট। কোনো সন্দেহ? মরো গে, যাও!
প্রত্যেকে একেকজন সংবাদজীবী আমরা। গুটিকয় সবেতন, ভুবনময় নির্বেতন। ব্যোম বাবা ভোলানাথ। সংবাদেই জীবন আমাদের, সংবাদেই ইন্তিকাল্ ফর্মাই। সংবাদ খাই, সংবাদ হাগি, সংবাদ বানাই। নিঃসংবাদ রইতে যে চায়, এমনকি একটা লাইক দিয়াও সংবাদ তৈয়ার করে না যে-হালায়, হ্যার ফাদারেরে মাদার, হ্যার গ্র্যানিরে গ্র্যানপা। দাও আনফ্রেন্ড করে হ্যারে। এমনি-এমনি নিঃশব্দ অবন্ধুকরণ নয়কো, সংবাদ প্রচারিয়া তামাম জাহানময়, লে হালা হালুয়া সমঝিয়া, দিলাম তোরে তালাক। হইল, বাইন তালাক পাল্টাপাল্টি, এবে শান্তি। হোলি শিট, হোলি ওয়াটার। হোলি চিতা, ছাগ, গিদ্ধর, গণ্ডার, হিপ হিপ হুররে, হোলি কাউ!
সম্ভবত ২০১৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনাপুঞ্জ। সংবাদে প্রকাশ, ওয়েস্টে একটা প্রোটেস্ট অর্গ্যানাইজ হয়েছে সে-সময়কার/তৎসাম্প্রতিক ধর্ষণকাণ্ডের বিরুদ্ধে, যাদবপুর য়্যুনিভার্সিটিতে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে কলকাতায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ‘হোক কলরব’ শিরোনামে একটা র্যালির ডাক দেন। র্যালিতে যাদবপুর ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন য়্যুনিভার্সিটির স্টুডেন্ট, গার্ডিয়ান, লেখক-বুদ্ধিজীবী, ফিল্মমেইকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী, চিত্রশিল্পী-সংগীতজ্ঞ সহ সাধারণ জনতা অংশ নেন। উজ্জীবিত-উদ্দীপিত হবার মতো সংবাদ অবশ্যই, নিঃশর্ত সমর্থন জানানোর যোগ্য দুইয়েকটা কাজের মধ্যে একটা, নিঃশঙ্ক-নিঃসন্দেহ পাশে দাঁড়ানোর মতো উদ্যোগ। তবে এই নিবন্ধের অবতারণা আদৌ সমর্থন-অসমর্থনের লক্ষ্যে নয়, অ্যাক্টিভিজম নিয়া আলাদা পরিসরে বার্তালাপ-বাগবিনিময় হতে পারে, এই নিবন্ধ অন্যত্র ফোকাস করতে চাইছে। এর সঙ্গে একটুখানি মিউজিক জড়িত, অনেকটুখানি কালেক্টিভ খাসলত, অনেকটা ভাষাঘেঁষা আচরণিক ব্যাকরণও জড়ায়েমুড়ায়ে আছে। এই থিয়েট্রিক্যাল সোশিয়োকাল্চারাল মেলোড্রামাটা সাধিত হয়েছে ইন্ডিয়ার একটা রাজ্যে, এর সঙ্গে বেয়াক্কল বাংলাদেশ অথবা বাংলাদেশজ বেয়াক্কলিও জড়িত রয়েছে, ব্যাপারটা খুলে বলতেই কিবোর্ড ঠুকছি।
ইস্ট বঙ্গ তথা বাংলাদেশখণ্ড উদ্বেলিত দেখা যাচ্ছে একটা আলাদা কারণে। সেই উদ্বেলনও মন্দ নয়, কিন্তু খটকা আছে এখানে কয়েকটা। মানে আমরা, বাংলাদেশজ সংস্কৃতিধম্মকম্মকরিয়েরা, আচমকা এক সুপ্রভাতে দেখিনু সহসা আশ্চর্য উল্লসিত হইয়া, আমাদের একটা গান নাকি তিনশ বছরের পুরনো নগর কলকাতার গ্র্যামি জিতে ফেলেছে! এইটা ফ্যাক্ট, হ্যাঁ, “রেডিওতে খবর দিসে / দেশে কোনো অভাব নাই / হাইল্যার মা আর কাইল্যার মায়ের / আনন্দের আর সীমা নাই।” ঠিকই কিন্তু খবরে প্রকাশ, ফেসবুকে, অন্য দুইয়েকটা জায়গায়ও। এ-ই ইন্ট্রো, সংবাদের, এবারে সবিস্তার বিবরণ।
পশ্চিমারা বাংলা ভাষা ব্যবহারকরণ ভুলে যাচ্ছে, এইটা তাদের নতুন শতকের বিদ্যমান দুইটা দশকের কবিদের কবিতা পাঠপুট করিলে মেহসুস হয়, এইটা জয়োত্তর ইন্ডিয়ান বাংলা কবিতার সাধারণ দশা। তা, বটে, এইটা ফ্যাক্ট কি না জানি না, অ্যাট-লিস্ট কবীর সুমনের গানবাহিত হয়ে যে-চিত্র গোচর হয় আমাদের আঁখিপটে, সেই চিত্রানুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বাংলাহাল অতিশয় শোচনীয় না-হলেও উদ্বেগজনক। বছর-কয়েক আগে স্বীয় ওয়েবসাইটে আপ্লোড-করা একটা গানেও সুমন এই নিয়া চিল্লায়েছেন। ওইটা পাওয়া যাবে বাগগেয়কারের কবীরসুমনঅনলাইনডটকম ওয়েবসাইটে যেয়ে। সেই লিরিকের একাংশ : “যো নাম্বার আপনি ডায়াল কিয়া হ্যায় / উস্-কা উত্তার নেহি মিল রাহা হ্যায় — / এই বাংলায় এই ভাষা শুনছি / আর বদল হওয়ার দিন গুনছি / … / এই রাজ্যের নাম হলো বাংলা / আর বাঙালির নাম বুড়ো-আংলা” … ইত্যাদি লিরিক্যাল খেদের সঙ্গে সুমন স্যাটায়ার করছেন দেখা যাবে সেই গানে। অ্যানিওয়ে। এইবার কাজের কথায় আসা যাক। আসতেছি, রোসো! পয়েন্ট বলো সোনা, কাম্ টু দ্য পয়েন্ট বাবা, পাঠকেরে ডিস্যাপোয়েন্ট কোরো না খামাখা। আচ্ছা। বাংলা ভাষার স্থানকালপাত্রবৈচারিক প্রয়োগবিধি হয় পশ্চিমবঙ্গ ভুলিয়া যাইছে, নতুবা বক্ষ্যমাণ অবৈতনিক নিবন্ধনোটকার অলরেডি গিয়াছে ভুলিয়া। দুইটার একটা, নিশ্চয়ই, ধারণা করি দ্বিতীয়টা গ্রাহ্য অধিকতর।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, প্রোক্ত প্রোটেস্ট ক্যাম্পেইনের থিম্যাটিক স্লোগ্যান হিশেবে ডেমোন্সট্রেশনওয়ালারা ‘হোক কলরব’ কথাটা বাছিয়া ব্যানার বানাইয়া প্ল্যাকার্ড হাতে লইয়া ফেস্টুন ঝুলাইয়া ট্রামে-ট্রেনে স্প্রে রাঙাইয়া অ্যাভেন্যুগুলো প্রকম্পিত করিয়া পাখির ন্যায় সুরেলা কলরবিয়া আগুয়ান প্রতিবাদাভিযানে। এই দৃশ্য ঘটনাকালীন, ২০১৪ সেপ্টেম্বরে সম্ভবত, কয়েকটা সাইটে যেয়ে এ-প্রতিবেদক স্বয়ং পরখিয়াছে। সেই সাইটগুলোর মধ্যে যেমন দেশী তেমন বিদেশী তথা ভারতীয়া বাংলা সাইটও রয়েছে। এখন, কথা হলো, ‘হোক কলরব’ কথাটার বা কথাবাক্যাংশের ভেতর নিহিত অর্থটুকু খটকা-জাগানিয়া। মানে, এহেন ঘটনার সনে রটিত কথাটার আর্থসাংগঠনিক/বাক্যিক/যৌক্তিক গ্রাউন্ড তৈয়ার করা যাচ্ছে না। মানে, গিভেন কন্টেক্সটের সঙ্গে স্লোগ্যানটা যাচ্ছে না। বা, বক্ষ্যমাণ নোটকের মোটামাথা জ্ঞানবুদ্ধিতে এ-দুয়ের রেলেভেন্স-বিটুয়্যিন কোনোমতেই উদ্ধারণ সম্ভবপর হচ্ছে না।
‘হোক কলরব’ কথাটার মানে কি? ঠিক কোন/কোন-কোন অর্থ/দ্যোতনা দোহন করা যায় এই কথাটায়? এইটেকে একটি ইডিয়ম তো মনে করা যায়, যায় না? বাংলায় এইটা দিয়া আমরা তো খুব-একটা আর্থিক-অনার্থিক বৈষয়িকতা এক্সপ্রেস করি না, একটা ম্যুড শুধু প্রকাশ করি। ইন শর্ট, ইন অল কনোটেইশন্স, ‘হোক কলরব’ ফ্রেইজটার মানে ‘হোক ফুর্তি’। কিংবা হোক শোরগোল, হোক হট্টগোল, হোক উল্টাপাল্টা বাদ্যিবাজনা, হোক আনন্দভৈরবী, হোক ধৈবত, হোক তা-তা-থৈ তেহাই। ইত্যাদি। কিংবা হিন্দিতে ধুম মাচালে, তুম লোগ, হেই গাইজ, শোর মাচাও। লেট্’স্ মেইক ফান। লেট্’স্ হ্যাভ অ্যা কার্নিভ্যাল। লেট্’স্ রক্ অন্। রক্ ন্ রল্ ইট ড্যুড! দ্য শো মাস্ট গ্য অন্, সাচ অ্যা বিগ ধামাকা, ম্যান! কাম্-অন্! ওই তো হলো, মেসোমশাই, মিনিং তো ওই একটাই। ইনভ্যারিয়েব্লি দি সেইম কনোটেইশন। শিশুদের বোল-তোলা মাজাক-মজারু। হোক-যা-কিছু, কলরবে প্রতিবাদ নৈব চ। ঝুলনে প্রেম হয়, মিঠা কানাকানি হয় দেবদারুময়দানে প্রেমিকে-প্রেমিকায়, সেই মিষ্টি সাউন্ড থেকে প্রোডিউস হয় যেই অর্কেস্ট্রা তার নাম কলরব। জবান তো মম বাংলাই, ইংরিজি-হিব্রু যতই ফটফটাই-না, বাংলায় ‘কল’ উপসর্গযোগে গঠিত সমগোত্রস্থ শব্দগুলো সব সফ্টকোর্ খুশ্যহাস্য-তামাশা-লাস্য-ইয়ার্কির দ্যোতক। কলতান, কলহাস্য, কলকাকলি, কলস্বর, কলকল্লোল, কলকণ্ঠ, কলগুঞ্জন, কলকল প্রভৃতি। ভিনগোত্রস্থ শব্দও গঠিত হয় বটে একই উপসর্গযোগে, সেইটা আলাদা বাত।
ঘটনা সেইখানেও নয়। অথবা সেইখানে তো জরুর বটে এবং আরেকটা জায়গায়। এইটা, ‘হোক কলরব’, ভারতমাতা নিয়াছেন বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনাআপনি, কী অপরূপ রূপে, আহা, খাসা! মা কল্পতরু মুখ তুলিয়া চাইলেন, পোষা গাইগোরু আমরা ভুষিসুখে ফ্ল্যাট। এইটা অ্যাচিভমেন্ট, অনেক প্রকাণ্ড অর্জন, উরিব্বাবা! তা-সব সর্বৈব খবরে প্রকাশ, মাইরি বলছি দাদা, আমরা বলি নাই, খবর বলিছে। কে পুকারিল খবর হেন, সংবাদদাতা কে, এবং কোন মাধ্যমে? ফেসবুকে, আবার জিগায়, টেলিকম সার্ভিসযোগে বড়জোর। ওমা, কাদের কুলের বউ গো তুমি, ছি ছি, জিগায়ো না। আরে বুদ্ধু, বন্ধু, পরানবন্ধু, ফেবুফ্রেন্ড, বুঝলা না? বা, সাহানা। যা-হোক, পার্সোন্যাল অ্যাফেয়ার, ওই-আর-কি। ইয়ে, হ্যাঁ, আচ্ছা। গ্র্যামি জিতিয়ালছি! কিন্তু অন্তরালের খবর কার গাঁটে, কে ঘাঁটে হার্ট ওপেন করে, কে জানে। দৃশ্যত ‘হোক কলরব’ ব্যানার দেখিলুম বটে, হেথায় হোথায়, লেকিন বাংলাদেশোল্লেখ দেখিলুম বলিয়া মনে হইল না — না ব্যানারে, না রিপোর্টের ন্যারেটিভে। এদিকে ধেই ধেই খুশির ঝড়জলোচ্ছ্বাস, খুশিয়া-ক়া-তুফান, আনন্দের কাছাখোলা বান। স্বীকৃতি। অ্যাওয়ার্ড। অস্কার। নোবেল। গ্র্যামি। অ্যামি। গ্রাঁ পি। লিজিয়ঁ দ্য ফ্রঁস্। বাব্বাহ! পদ্মভূষণ প্রভৃতি বাদ যাবে কেন? ওই ‘পিপলি লাইভ’ ম্যুভিতে দেখেছিনু, মনে পড়ে, লাল বাহাদুর … ছাগল বস্তুত … ওইটাও … বলছিলাম, কদলীবৃক্ষ ও কাঁঠালপাতার অভাব আমাদিগের নাই।
ইট ইজ ট্রু দ্যাট ‘হোক কলরব’ অর্ণবের একটা দারুণ সুন্দর কম্পোজিশন। এই নামের একটা আস্ত অ্যালবাম এবং ‘চাই না ভাবিস’ বা ‘ডুব’ প্রভৃতি শীর্ষক সমস্তই অর্ণবের সংগীতসৃজনশক্তিমত্তার সিগ্নেচার। দুর্ধর্ষ প্রোজেক্টগুলো। কলকাতাব্যানারে উত্তোলনের আগ পর্যন্ত এহেন সত্যে এ-প্রতিবেদক বলীয়ান ছিল, রয়েছে এখনও বলীয়ান, রইবে ভবিষ্যতেও। সঙ্গে ধেই-ধেই শুধু যুক্ত হয়েছে এখন। উল্লাস। ত্রয়ী। থ্রি চিয়ার্স। হুররে হিপ হিপ। হোক কলরব। কলরব হচ্ছে। লেট্’স্ সেলেব্রেইট। তো, অর্ণবের অনেক উজ্জ্বল কম্পোজিশনের মধ্যে এই একটা — “হোক কলরব ফুলগুলো সব / লাল না-হয়ে নীল হলো ক্যান” — বা আরেকটা যেমন : “কাঠগোলাপের শাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবি / আবছা নীল তোমার লাগে ভালো / … / ভাবনা আমার শিমুলডালে লালচে আগুন জ্বালে / মহুয়াবনে মাতাল হাওয়া খেলে” ইত্যাদি, এবং এর সঙ্গে অর্ণবের এস্রাজবাদন — আধুনিক বাংলা গানে এস্রাজ — অভাবিত! অবিস্মরণীয়! অম্লান! তোফা! কাজেই অর্ণবগান নিয়া, বা আলোচ্য স্লোগ্যানের অন্তরালস্থ গানের কথাকার নিয়া, আপত্তি নাই। আপত্তি ইন্ডিয়ার ব্যানারে উঠিয়া জাতে-ওঠা টাইপের উল্লাসে। আপত্তি পরমুখে-শোনা প্রাপ্তিযোগের শুকরিয়া-আলহামদুলিল্লায়। ধেই-ধেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না খারাপ তা আপনার ডাক্তার জানে, এমনকি ইঞ্জিনিয়ারও বলতে পারে এইটা বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানি-বালির লেয়ার ধসায়ে দেবে কি না, বাংলাদেশের গণকবিতা বা গানসাহিত্যের জন্যে এইটে-যে এত গর্বের কিছু নয় বরঞ্চ অত্যুচ্ছ্বাস লজ্জাকর ও রিডিক্যুলাস, অত্র প্রতিবেদকের বহরে-গতরে মোটা আবেগে এইটা ঝাপ্টানি দিলো।
ধরুন, ১৯৯২ থেকে এতাবধি কবীর সুমনের গানের হাজারেবিজারে লাইনঘাট আমরা আমাদিগের কালেজে-ইশকুলে কাল্চারাল ফাংশানে-তৎপরতায় পরীক্ষাখাতার রচনায় কিংবা প্রকাশ্য সমাবেশে-সভায় কাজে লাগায়েছি, বা সলিলের, ভূপেনের, প্রতুলের, নচিকেতা প্রমুখের কত-কত গান আমরা কাজে লাগাই প্রকাশ্যে, দিবালোকে ও অমাবস্যা-পূর্ণিমায়, এমনকি চুরিচামারি-রাহাজানিও তো করি কপোতাক্ষজল তথা মাতৃস্তন্যের ন্যায়; কই, তাদিগেরে ধেই-ধেই করিতে তো দেখি না! গাছে ধরে না তাইলে, দেখা যাচ্ছে, হীনম্মন্য/ইনফেরিয়র লোক! ওরাও তো ধোয়া-সাফসুতরা শাকাহারী না। আমাদের গান ওদের ভোগে আজ তো নতুন লাগছে না। আগেও লেগেছে, হামেশা-হামেশাই লেগেছে সুরগুলো আমাদের ব্যান্ডের, রেশিয়ো খুবই মেরুদূরবর্তী স্বীকার্য যদিও। অথবা কাছাকাছি হলেও আমরা আমাদের খাসলতের দোষে সেসব খবরপাত্তা রাখি অল্প।
দুইটা টাটকা ঘটনা তো মনে এখনই পড়ছে : রেনেসাঁ-র গোটা অ্যালবামটা, ‘তৃতীয় বিশ্ব’ সম্ভবত, ‘উজান’ নামে একটা ব্যান্ড গাপ করে দিয়েছিল আস্ত এবং সেই অ্যালবামটা স্বাভাবিক নির্বিকার বাজারথালায় এসেছে বাংলাদেশে, এবং মাইলস তো মামলাও করতে চেয়েছিল কপিরাইট কোর্টে, নেগোসিয়েশন পরে কেমন করে হয়েছিল ফলোআপ রাখি নাই। ফিডব্যাক থেকেও উদাহরণ ধরা যায়। “দিন যায় দিন চলে যায় / রাত যায় রাত চলে যায় / সময় তো বাধা মানে না / এই মনকে বোঝানো-যে গেল না” — এই গানের সুর ভর করে নচির সিগ্নেচার-স্যং ‘নীলাঞ্জনা’ সিরিজের মোস্ট পপ্যুলার নাম্বারটা : “হাজার কবিতা, বেকার সবই তা / তার কথা কেউ বলে না / সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা” — নচি ইন্টার্ভিয়্যু দিতে যেয়ে এ অস্বীকারও করেননি, ফিডব্যাকমুগ্ধতা জানিয়েছেন অকুণ্ঠ। তো, অত আহ্লাদে আটখানাইবার তো কিছু নাই তাতে। স্রেফ একটা নিউজ হতে পারে, নেভার ভিউজ, এত অল্পে লেজঝোলা ফিঙে হলে কেমনে কী, কন দিকি!
নবীন হোক বা প্রাচীন, যারা কাজে লাগাচ্ছে, ধেই-ধেই নাচবে বা সাঁতরাবে দরকারমতো তারা, আমরা মাছি-বিচ্ছু-মশার মতো ফর্ফর উড়িব কেন গগনে গগনে? এইটা হাস্যকর বাপু, বড় পরিসরে লোক-হাসানো, পশ্চিমারা হাসিছে দেখো মিকিমিকি। কিন্তু শুধু অচৈতন বাংলা গানগীতিকারই তো নয়, এহেন সুকীর্তি আমাদের বাড়ির কবিসাহিত্যিকেরা আরও ঘন ঘন ঘটান, ঘটিয়েছেন ইতিহাসে, ঘটিয়ে চলেছেন হররোজ। অন্তত প্রতি হপ্তান্তিক শুক্রবারগুলো সুকৃতিকর্মের নজিরে ১৬-পৃষ্ঠা-উপ্চানো দৈনিকীর উইকেন্ডসাপ্লিমেন্ট আমাদিগের। ইন্ডিয়ান বাংলা সাহিত্যসমৃদ্ধ আমাদের জাতীয় দৈনিকের সপ্তাহান্তিম পৃষ্ঠার-পর-পৃষ্ঠা। ঠাসা বাংলাদেশা সাহিত্যে ইন্ডিয়া। খাসা। আমরা মহান। অখণ্ডা ভারতবর্ষীয় সংস্কৃতিনিত্যানন্দ। অপমানবোধ নাই আমাদের, হায়া নাই, এত এত মহানুভব। জোকার আমরা। ভাঁড় কাঁহিকা। বাংলাদেশের লাগিয়া আমরা আনিব রাঙা রাত্তির, পূর্ণিমা আলোকসজ্জিতা, আনন্দ পুরস্কার। একদিন, কয়া রাখিনু, তুমি দেইখি নিও নাদেরালি!
এককাৎরা পানি ইঁদারা থেকে নিয়ে একজন তার গাত্র প্রক্ষালনে লাগায়েছে, তা-ও অস্থানে, ব্যবহারবিধি না-জেনে, এই নিয়া আপনারামার খুশিয়া দেখে একটা ব্যাপারই প্রমাণ হয় হাতেনাতে, সেইটা আর-কিছুই তো না, আমাদের জাতীয় মনোজাগতিক দারিদ্র্য। ডক্টর নোবেল ইউনূসের পোভার্টি মিউজিয়ামে এই জিনিশের এন্ট্রি মিলবে কি? মনে হয় না। আর্টকাল্চারকাঙাল বাংলাদেশী, রে হতচ্ছাড়া, তুই ভূসুকু ভইলি না ভাই!
‘হোক কলরব’ অর্ণবের দ্বিতীয় সংকলনের নামগান। পরে একই শিরোনামে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় ব্যান্ড ফসিলসের রূপম ইসলাম গান বাঁধেন, ম্যুভমেন্টের অব্যবহিত পরেই রিলিজ পায়, যে-গানে এই আন্দোলনের মেনিফেস্টেশন স্পষ্ট : “আমরা নই গেরুয়া লাল সবুজ কিংবা শাদা নীল / জেনেবুঝে বৃষ্টি ভিজে এই মিছিলে হও শামিল / পেটে পেটে কূট বুদ্ধি এঁটে মিশতে এলে যাও তফাৎ / আন্দোলনের শেষ থাকে না থাকে শুধু শুরুয়াৎ / গানে গানেই রাত্রিদিন আর হারমোনিকা আর গিটার / ভীষণ অস্ত্র শিরদাঁড়া আর মারণ অস্ত্র অহংকার / অধিকার নিজেকে চেনা আর বুঝতে শেখা রাইট-রং / ভোটের খেলা সাঙ্গ হলে গিটারটাই শিখো বরং / কলরব হোক কলরব হোক কলরব হোক কলরব / জব্দ হোক নিঃশব্দ হোক স্তব্ধ হোক শত্রু সব / ঐতিহাসিক প্রায়শ্চিত্তে নিজেই টানছ নিজের শব / নিজেই খুঁড়ছ নিজের কবর সম্মানিত বেয়াদব / একটা মেয়ে নির্যাতিত মদে ভেজা ওর শরীর / তার জবাবে কদর্য হাত ছিঁড়ল জামা বান্ধবীর / পুলিশ ছুঁলে কত ঘা প্রকাশ্যে বলা বারণ / পাওয়ার মানেই কোরাপশন্ আর সিংহাসন মানেই রাবণ / জানতে চাইছি ওদের নাম যাদের নামে এফআইআর / অপদার্থ কতৃপক্ষের বলো তদন্তের কি দরকার / তদন্ত হোক নিজের তালে ঢিমেতে তাল ধ্রুপদী / গদি ছাড়ো রাজা তুমি অনাচার করো যদি / কলরব হোক কলরব হোক কলরব হোক কলরব / জব্দ হোক নিঃশব্দ হোক স্তব্ধ হোক শত্রু সব / ঐতিহাসিক প্রায়শ্চিত্তে নিজেই টানছ নিজের শব / নিজেই খুঁড়ছ নিজের কবর সম্মানিত বেয়াদব / ছোট্ট শিশু রেপ হলে কি স্বভাব পোশাক জানতে চাস / পুরুষতন্ত্র ঝোপ বুঝে কোপ হচ্ছে কালো তোর আকাশ / ড্রেসের দোহাই মদের দোহাই দোহাই বলছি বন্ধ কর্ / শরীর থেকে মুক্তি চাইছে বন্দী মেয়ের একলা ঘর / কলরব হোক কলরব হোক কলরব হোক কলরব / জব্দ হোক নিঃশব্দ হোক স্তব্ধ হোক শত্রু সব / ঐতিহাসিক প্রায়শ্চিত্তে নিজেই টানছ নিজের শব / নিজেই খুঁড়ছ নিজের কবর সম্মানিত বেয়াদব।” লক্ষণীয় যে-জিনিশটা তা এ-ই যে এখানেও ‘কলরব’ করা হচ্ছে, যদিও পুরা গানটা বিদ্রোহেরই উস্কানি দিতেছে বলে মনে হলেও কলরব শব্দটার ব্যবহার স্রেফ অজ্ঞ অভ্যাসেরই বশে বোঝা যায়। রূপমের লিরিকে একতলীয় অর্থ ও দ্যোতনা প্রায় আবদ্ধ সীমায়িত। অর্ণবের গানের লিরিক অনেকার্থবহ, বহুদ্যোতনাময়। রূপমের গানে যেমন কলরব শব্দটা ভুল জায়গায় প্রযুক্ত, অর্ণবে তা নয়, অর্ণবের গানের পুরা বাতাবরণই কলরবের, পরাপৃথিবীর স্পর্শদৃশ্যস্ফুরিত। অর্ণবের সুরারোপিত ও সংগীতায়োজিত গানটার লিরিক, লিখেছেন রাজীব আশরাফ, এমতো : “হোক কলরব ফুলগুলো সব / লাল না হয়ে নীল হলো ক্যান / অসম্ভবে কখন কবে / মেঘের সাথে মিল হলো ক্যান / হোক অযথা এসব কথা / তাল না হয়ে তিল হলো ক্যান / কুয়োর তলে ভীষণ জলে / খাল না হয়ে ঝিল হলো ক্যান / ধুত্তরি ছাই মাছগুলো তাই / ফুল না হয়ে চিল হলো ক্যান / হোক কলরব ফুলগুলো সব / লাল না হয়ে নীল হলো ক্যান।” লিরিকে একটা হাল্কা অ্যাবসার্ডিটি বিউটি বাড়িয়েছে গানটার, সুরের আর গায়কী ও সার্বিক আয়োজনের মদতটাও অনস্বীকার্য। মোদ্দা কথা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের সেই ২০১৪ দিনগুলোয় এই বিটকেলে বাংলাবিভ্রান্তি পীড়া দিয়েছে ভীষণ; হতবাক হয়ে কেবল ভাবি যে কেউই কি খেয়াল করে নাই বিদঘুটেপনাটা? হাতের কাছে, চোখের কাছে, একটাও নজির যদি থাকত!
https://www.youtube.com/watch?v=EiCFxdgGuvc
ডিসক্লেইমার, জরুরি, পরপর কয়েকটা। যাদবপুর য়্যুনিভার্সিটির ম্যুভ সমর্থন করি আমরা সর্বান্তকরণে। এরচেয়েও অনেক বেশি তীব্রতা আনয়ন দরকার মনে করি এ-ধরনের আন্দোলনে, ওখানকার সচল ম্যুভমেন্ট তো বটেই, এখানে আমাদের দেশেও এই ইশ্যুতে সবসময় সজাগ-সোচ্চার থাকা আবশ্যক জ্ঞান করি। অর্ণবের গান প্রসঙ্গে একটা বাক্যই বলি : অতি অল্প বয়সেই এই মিউজিশিয়্যান বাংলাদেশের গানমণ্ডলে অসামান্য অবদান রেখেছেন বলিয়া আমরা মনে করি। এ-যাবৎ অর্ণবকৃত অবদান নিয়া, বাংলাদেশের আধুনিক গানে তার মৌলিক মর্মান্বেষী সৃজন-সুরারোপন-সংগীতযোজন নিয়া, দায়িত্বসমেত সপ্রেম কথালাপ শুরু করবেন কেউ-না-কেউ অচিরে — এইটা চাইব মনেপ্রাণে। এবং বলা বাহুল্য, অর্ণব নিয়া আলাপকালে তার স্বরচিত লিরিক্সের পাশাপাশি গৃহীত অন্যান্য মেধাদীপ্ত স্যংরাইটারদের লিরিক্সগুলোও মূল্যাঙ্কিত হবে যথাযথ মর্যাদায়। এবং তখন রাজীব আশরাফ প্রমুখ স্যংরাইটার, যিনি আলোচ্য ‘হোক কলরব’ গানখানা ছাড়াও কতিপয় ভীষণ সুন্দর গানের লিরিক লিখেছেন, সসম্মান স্মরণীয় হবেন নো-ডাউট। শুধু ইন্ডিয়ায় এমন ভোঁতাভাবে একটা লাইনাংশের আখাম্বা আবোলতাবোল য়্যুটিলাইজেশন দেখে এতটা আনন্দ প্রকাশিলে সেইটা আমাদিগের জাতীয় কাঙালপনাকেই সামনে আনে।
যে-লাইনটা কালেজের র্যাগ-ডে বা অ্যানুয়্যাল য়্যুনিয়ন বা ভ্যালেন্টাইন-ডে প্রভৃতি দিবসোদযাপনে উদ্ধৃত হবার জন্য পার্ফেক্ট, সেই লাইনটা মানবাধিকার সমুন্নয়নের আন্দোলনে উচ্চারিত হইতে দেখলে অস্বস্তি হয়। এই জনগুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের জন্য দরকার ছিল এমন একটা স্লোগ্যান বেছে নেয়া, যাতে গোটা ব্যবস্থাটা নিয়া পায়ের তলায় মৃত্তিকাশূন্যতা অনুভূত হতো সকলের মধ্যে। ব্যবস্থাটাই নিকেশ করতে সেই স্লোগ্যানটা মানুষেরে মোটিভেইট করত। টলে উঠত যুগপৎ ওই নিপীড়নকারী ও নিপীড়ক-সুরক্ষাকারী সিস্টেম। পাখির কিচিরমিচির-সুরেলা লাইন দিয়া আপনি বিকট অসুর বধিবেন, হে বাংলাভোলা কলকাত্তাইয়াবাসীগণ, ক্যামনে আশা করেন? বরং সুন্দর একটা বাংলা ভুল ব্যবহারের ফার্স ক্রিয়েট করলেন। অথবা নান্দনিক ফার্স মঞ্চস্থ করিলেন বাংলাপ্রেমের। নজির স্থাপিত হলো, দুইশ-বছর-পূর্ব-হইতে ব্যবহারের গরমে গরবিত পশ্চিমবঙ্গজ ইন্ডিয়ান বাংলা পণ্ডিতম্মণ্যবর্গ, ভুলছিনে এ-জনমে। ভাষা ভুলে গেলে একটা জাতির-যে কেমন হতমান দশা হয়, এইটা চাক্ষুষ হলো। তো, গগনফাটা আওয়াজ তুলুন এখন : গোটা ব্যবস্থাটার গাঁড় মারতে এসেছি, নিশানে রেখেছি নবারুণ ভটের দুর্ধর্ষ গদ্যভল্ল, বুনো মোষ আর বাফালো সোলজার আমরা, পারাবত-কপোতকপোতীর ন্যায় মিষ্টু কুবুকুবু কুজন-কলরব করিবারে আসিনি হে! পারো তো কোঁৎ করে গিলে ফ্যালো অথবা দাও উগরিয়া অনতিবিলম্ব।
রইল বাকি এক। দীপিকার ক্লিভেইজ। তলোয়ার খাপের ভেতর পোরা থাকলে ভালো, না কোষমুক্ত তরবারি — এই নিয়া বাদ-ম্যে ভাবা যায়েগা। আপাতত কথা এইটাই যে, একাধটু ঝলকিয়া না-উঠিলে সেইটা আসল সোর্ড না আর্টিফিশিয়্যাল, সমুজদারে কেমন করে বোঝে? এই কথাটা তলোয়ারবাহিকারে বুঝতে তো হবে। যেথাকার তরবারি সেথাকায় থাকুক, তবে একটু রৌদ্রবাতাসা না-খাওয়ালে তো মরচে ধরবে তরবারিগাত্রে অচিরে! তাছাড়া ডাঁটের সঙ্গে যে-জবাব ছুঁড়েছে ব্যাটা পত্রিকাওয়ালা, এলায় কেঙ্কা করে দীপিকার ফেব্যরে দাঁড়াই, মামলা তো সমুদ্রস্বচ্ছ না। তা-ও কড়া নজর রেখে চলেছি আমরা, ক্লিভেইজ সাপোর্ট করি তো, আর দীপিকার ক্লিভেইজ বলে কথা! রাস্তাপার্শ্বে কেইক-টি পিঠেপুলিবিক্রেতা ঘামশ্রমক্লিষ্ট কর্মঠ নারীর ক্লিভেইজ দেখাইলেই কি আর দেখিলেই-বা কি, বাঁচামরা নিয়া কারবার তার। দীপিকার ক্লিভেইজকাণ্ড তথা তার বক্ষসাঁকো প্রদর্শন চুক্তিবহির্ভূত হওয়ায় মালকিন গোস্বা করেছেন, চুক্তিগত হইলে এতটা রিয়্যাক্ট করতেন মনে হয় না, পত্রিকাপক্ষ যদিও ক্লেইম করেছে তাদের হাতে চুক্তিপ্রমাণ রয়েছে। এই ফিন্যানশিয়্যাল মামলাটাকে আমরা আমভোক্তারা খামাখা সামাজিক ফেনোমেনা ভাবিয়া নিয়া ব্লান্ডারটা করছি। নিশ্চয় এর নিষ্পত্তি আর-দশটা ছায়াছবিহিরোইনের ন্যায় মিডিয়াবাইট পর্যাপ্ত খেয়ে নিশ্চুপে হয়ে যাবে।
শেষ রিল। সখি, মিডিয়োকার কারে কয়? কিংবা ইডিয়োসিনক্রেইসি? নিজেরে একটা কাজকম্ম যোগাতে যে পারে না নিজের হাতেই, নিজের একটা সার্চ নাই যার ভেতরে-ভেতরে, এদিকে যায় মাঝবয়স পারাইয়া, লাফায় দুনিয়ার অলিগলি বেবাক-কিছু লইয়া, তারেই বলে মিডিয়োকার। মানে এঁড়ে বাছুর। বকনাও। উহাই ইডিয়োসিনক্রেইসি। টু বি স্পেসিফিক, এইসব লইয়া নোটপাট/চোটপাট তথা এই নিবন্ধ পয়দানো হইল ইডিয়োসিনক্রেইসি। বেভোঁতামি। দিয়া দিনু সংজ্ঞা। এইবার আকাশ ভাঙিয়া খিস্তি নামুক। হোক কলরব। হৈচৈ-হুল্লোড়। ফুর্তিফার্তা। নন্টে-ফন্টে। দে গরুর গা ধুইয়ে। সমবেত অট্টহাস্য।
হোক কলরব ফেসবোকা সব / সংস্কৃতি নিয়ে এত ফিদা ক্যান / হোক কলরব ফেসবোকা সব / দুগ্ধ ফেলিয়া খাও অহিফেন … নয়া জামানার কোনো অর্ণব এসে এই লিরিকটি নিশ্চয় গাইতে ইতস্তত হবেন না। “কালের ঠাকুর কালেই ভেসে যায়” — রামকৃষ্ণ পরমহংসপত্নী শ্রীমা সারদা উক্তিটা করেছিলেন কোনো-একটা প্রাসঙ্গিকতার ছুঁতোয়। কালে এসে শেরিফ হয়ে প্লে করে ফের কালেই গিয়াছে ভেসে কত-না কালতোলপাড় কুতুব! কই তারা আজ? কোথায় তাদের দৌলৎ-শোহরৎ? ফেসবোকা পাণ্ডিত্যে, ফেসবোকা অ্যাক্টিভিজম দিয়ে, এই ভবী নয় ভোলাবার। যদিও বর্তমান নিবন্ধকার সেই বৃথা কাণ্ড করে গেছে এতক্ষণ। অলমিতি বিস্তরেণ।
প্রতিবেদনপ্রাসঙ্গিক দুইটা নমুনালিঙ্ক
অর্ণবের ‘হোক কলরব’ পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদের অস্ত্র
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হোক কলরব’
লেখা : জাহেদ আহমদ
[সেপ্টেম্বর ২০১৪ সনে পয়লা আপ্লোডকালে ফেসবুকনোটে এই নিবন্ধের শিরোনাম ছিল : হোক কলরব, ওয়েস্ট বেঙ্গল, ধর্ষণের প্রতিবাদ ও জনসমাবেশন, দীপিকার ক্লিভেইজ, বাংলাদেশের বিজয়কেতন … ব্লা ব্লা … আমরা — আবহমান বুড়ো-আংলারা — আমাদের জাতীয় গরব … । বর্তমান সংস্করণে বেশকিছু যোজন, বর্জন ও মার্জন করে পুনর্প্রকাশের আদলে আনা হয়েছে। — লেখক]
…
- লাল, চিরকাল ৩ - August 31, 2024
- লাল, চিরকাল - August 6, 2024
- গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ৩২ - July 6, 2024
COMMENTS