অস্ট্রেলিয়ায় এসেছি শো করতে ব্যান্ড নিয়ে এর আগেও। তখন সিডনি-ক্যানবোরা ইত্যাদি সিটিগুলোতে শো করেছি। কিন্তু এইবারকার ট্যুরে একটা আলাদা ব্যাপার এ-ই যে অ্যাডলেইডে আমাদের সিরিজ অফ কন্সার্টস্ শুরু হয়, দ্যেন উই ওয়েন্ট টু সিডনি, এরপরে মেলবোর্নে। অ্যাডলেইডে এইবারই প্রথম গেছি, অনেক মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, অনেক ভালো হয়েছে শো, সিডনিতেও একই। বাংলা ভাষাভাষী এত মানুষের ভালোবাসা, মেলবোর্নে এসেও একই মানুষের — বাঙালি মানুষের — আমাদের প্রতি ভালোবাসা — আমরা যারা গান করি তাদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার দাবিতে কত কী যে তারা করছে! এর ভিতরে এই আইয়ুব বাচ্চু — মেলবোর্নে আমাদের শোয়ের আগের দিনে — সে হঠাৎ করেই কাজটা করে বসল। সে চলে গেল।
আমার প্রথম রিয়্যাকশন ছিল — আমার খুব রাগ উঠেছিল তার উপরে। সারাজীবন ওর সাথে আমার বন্ধু এবং শত্রুর সম্পর্ক। মানে, যেইটা আমি সবখানে সব-জায়গায় বলেছি — আমি ওর শত্রু, ও আমার বন্ধু। বিষয়টা ছিল এমন যে ওর ছোটবেলার থেকেই ওকে আমি চিনি। আমার থেকে সে বয়সে অনেক ছোট, সেইজন্যে সে সংগীতও করতে এসছে আমার থেকে অনেক পরে। একটি ছেলে এত কষ্ট করে সেই চিটাগং থেকে এসে ঢাকা শহরে স্ট্রাগল করছে — আমি এতে মুগ্ধ হতাম। সেই থেকে ওর সাথে যে কেমন একটা সম্পর্ক — ও মোটামুটি আমাকে একটু অভিভাবকতুল্য সম্মানটা করত; মানে, বড়ভাই-ফ্রেন্ড তো আছেই, ম্যাকই ডাকত, তো সেটা তো আছেই, কিন্তু অন্তর থেকে সে যেটা আমাকে করত সেটা হলো ওই বললাম যে অভিভাবক — মানে একটা ভয় কাজ করত ওর ভিতরে আমাকে নিয়ে। তো, ওকে বকাঝকা অনেক দিতাম, তর্ক করত সে আমার সাথে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সে-ও আমাকে বকা দিত : মাকসুদভাই এটা আপনি করবেন না। এখন ছোটভাইয়ের দাবিতে সেটা সে করতে পারে। এই-রকম।
কিন্তু মানুষ তো জানে না আসলে আমাদের সম্পর্কটা কি ছিল। বাইরে থেকে যা দেখবে যে আমরা সবাই একেকজনের বন্ধু, সেটাই স্বাভাবিক। তারপরও তুচ্ছ কিছু ঘটনা হয়, সেগুলো মিডিয়া না-জেনে হয়তো প্রচার করে। আমার সাথে বাচ্চুর কোনো মেজর ইন্সিডেন্ট হয়েছে বা পাব্লিক বিতর্ক হয়েছে এই-রকম কোনো ঘটনা কিন্তু নাই। কিন্তু যেটা সত্যি কথা, ওকে আমি অনেক বকাঝকা করতাম। রাগারাগি করতাম। এবং রাগারাগি করার যেই বিষয়টাই ছিল — যেই কারণটা — এক্সেসিভ তার যে — মানে, সবকিছুর তো একটা সীমা আছে। এখন, আমার যদি শরীরটাই না-পোষায়, আমি তো গান করব কেন, বাসায় ঘুমানো ছাড়া আমি কিছু করবই না, মানুষের সাথে কথাও বলব না। আমার শরীর তো সঙ্গে থাকতে হবে, সাপোর্ট দিতে হবে। একটা প্রেজার্ভেশনের বিষয়ও তো আছে। আমি শুধু দিয়েই যাব … দিয়েই যাব … মানে, নিজের দিকে একটু দেখব না? নিজের শরীরের খেয়াল রাখব না? আমি দশটা সিগ্রেট খাচ্ছি, চারটা কমানো যায় না? হ্যাঁ, আরও ভিন্ন বিষয় তো আছেই, কিন্তু এইগুলোই তো হলো মেইন বিষয়। আমাদেরকে নিয়ে এমনিতেই বদনাম, যে — শিল্পীরা, বাংলাদেশের শিল্পীরা, আইদার দ্যে পার্ফোর্ম অর দ্যে পেরিশ। মাঝামাঝি কিছু নাই। আমরা পার্ফোর্ম করলাম — দিস্ ইজ্ রক্ — ইয়্যু হ্যাভ টু পার্ফোর্ম টিল্ ইয়্যু ড্রপ ডেড। মানে, এইটার থেকেই — আমাদের যাদেরই হয়েছে — আমরা যারাই অসুস্থ হয়েছি … ঠিকাসে? আরে, আমার নামেও অনেক বদনাম — যে, মাকসুদভাই নিজের কোনো যত্ন নেয় না, তারপরও আমি একটা চেষ্টা করি, সত্যি বললাম। আই রিয়্যালি ট্রাই। আই ওয়ান্ট টু অ্যাশিওর এভৃবডি ইন মেলবোর্ন অ্যাবাউট দ্যাট।
ল্যুক, আমি তো আইয়ুব বাচ্চুর থেকে অন্তত পাঁচ বছরের বড়। তো, আমার অভিজ্ঞতাও তার থেকে পাঁচ বছরের বড়। খারাপ অভিজ্ঞতাও তার থেকে পাঁচ বছরের বড়। তো, আমি যেইগুলো মিউজিকে ফেইস করেছি, তাকে যেন সেইটা ফেইস করতে না-হয়, যেখানেই তাকে দেখেছি আমি বলেছি, খারাপভাবেই বলেছি — তুই এইটা করিস না, তোর ক্ষতি হবে, তোর দেহের ক্ষতি হবে, তোর ফ্যামিলির ক্ষতি হবে, এবং সবচেয়ে বড় কথা আমারও ক্ষতি হবে। বিকজ্, সামথিং হ্যাপেন টু ইয়্যু — আমি নিতে পারব না।
২০১২-তে ওই আমি আসাম থেকে কন্সার্ট করে ফিরছি। আমাদের এরপরের শো সম্ভবত খুলনায়। বামবা-র শো। আরে, বর্ডার ক্রস করে মাত্র আমি ফোনটা অন করলাম, বামবা-র জেনারেল সেক্রেটারি টিপু — ওয়ারফেজের — ফোন করে বলে : মাকসুদভাই, এই এই ঘটনা, প্যানিক ইত্যাদি। পরে কি হইসে যে আমাদের পুরা শিডিউলটা … হামিনভাই গেছে অ্যামেরিকাতে, বাচ্চুভাই অসুস্থ … হস্পিটালাইজড। মানে, মোটকথা, তার বলার কথাটা হচ্ছে যে সিনিয়র ব্যান্ডদের মধ্যে খালি আপনি (মাকসুদ ও ঢাকা), ফিডব্যাক আর জেমসভাই (নগরবাউল)। আর কেউ নাই। আমি বলি, সেটা বড় কথা না, বাচ্চুর কথা বল্, কি হইসে বাচ্চুর? তা, টিপু বলে, বাচ্চুভাই তো হাসপাতালে আছে মাকসুদভাই! জিগাই, কি অবস্থায় আছে? আমি এত অস্থির হয়ে গেছি যে ঢাকায় ফিরেই বাচ্চুর সঙ্গে দেখা করলাম হস্পিটালে। সেই অঝোরে কান্না। অঝোরে কান্না। আমি বলি, কানতাছিস ক্যান? তুই তো ভালো হয়ে যাবি। তুই তো ট্রিটমেন্টে আছিস। তুই সিঙ্গাপুরে যাবি — এখানে না-হলে তুই সিঙ্গাপুরে যাবি। এসব নিয়ে তো তোর সমস্যা নাই। তো কান্দাকাটি করছিস ক্যান! ওই ঘুরিয়েফিরিয়ে-না কেমন জানি … এত দুর্বল হয়ে গেসে যে, মানে, ওই ক্ষমা করে দিয়েন … হ্যানত্যান … আরে! তুই কীসব বাজে কথা বলছিস! এক্স্যাক্টলি আমি ওইভাবেই কথা বললাম। বাচ্চু, স্টপ টকিং ননসেন্স! আর ইয়্যু থিঙ্কিং ইয়্যু’য়ার গ্যনা ডাই? ইয়্যু’য়ার নট গ্যয়িং টু ডাই। তোর কি হইসে? আমি তার একটা হাত ধরলাম। ওই একটু … বাঁ হাতটা নাকি ডান হাতটা — না, বাঁ হাতটা, যেই হাতে কর্ড ধরে সেইটা। পাল্স্ দেখার জন্য। জিজ্ঞেশ করলাম, বাচ্চু, এইখানে কতদিন থাকতে হবে বলেছে? বলে যে মিনিমাম মে পর্যন্ত। আমি বললাম যে না, তুই যদি কেয়ার করিস নিজের, আর ডাক্তারের কথা শুনিস, দ্যেন আই থিঙ্ক, হয়তো, হোয়াট, এপ্রিলের ভিতর তোকে ছেড়ে দেবে। সে খুব খুশি, — বস্, আপনি এসছেন, খুব … এই-সেই বলল। দায়দোষ হলে ক্ষমা করবেন। এই বিষয়টা কিন্তু ওর সবসময় ছিল; — যদি ভুল করে থাকি ক্ষমা করে দিয়েন। আমি বলি, তুই আমার সাথে আবার কি ভুল করবি? তখন আমি আবার তাকে একটা বকা দিই। তুই কী আমার কাছে এমন দায়দোষ করেছিস যেটা আমার খুব গায়ে লাগসে! হ্যাঁ? বা আমি তোকে এমন কি বকা দিসি যে আমার সাথে তোর সম্পর্ক নষ্ট হইসে? এইগুলো বলেটলে … ইউজুয়্যাল আর-কি। এইগুলো বলে আমি চলে আসলাম। সেইটা ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। ওমা! মার্চ মাসের শেষে শুনি কি, সে কলকাতায় কন্সার্ট করতে গেসে! এই যে শুরু হলো আমার রাগ। এখন, হার্টের পাম্প করার ক্যাপাসিটি হচ্ছে তার থার্টি পার্সেন্ট; যেখানে আমাদের, একটা নর্ম্যাল মানুষের, বেঁচে থাকতে হলে সত্তরটা — সেভেন্টি পার্সেন্ট অফ দি লাংস্ অ্যান্ড হার্ট হ্যাজ টু বি পাম্পড। নর্ম্যাল মানুষের থেকে হার্টবিট এমনকি তার ব্লাডপ্রেশারও ল্যো। এই লোক কি করে দেড়ঘণ্টা/দুইঘণ্টা/তিনঘণ্টা কন্সার্ট করে! আমরা কি বলব?
এখন, মানে, আমার রাগটা ওই জায়গায়। আর, তোমার ভাবীর সাথে এই কিছুদিন আগেও ওর যখন দেখা হলো, ও বলে যে, ভাবী, ভাইয়ার আরেকটু দেখাশোনা কইরেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এই তো ফেসবুকে ছবি — এই গত দুই-তিন মাস আগে — ফিরছি আমরা একসাথে — ও, না না — সে যাচ্ছিল চিটাগং, তোমার ভাবীও ছিল, ফেরার সময় বাচ্চুকে পাইসে ফ্লাইটে, একসাথে সেল্ফিও তুলসে, জাস্ট তিনমাস আগে। তোমার ভাবীকে হাতে ধরে — ভাবী, ভাইয়ার একটু টেইক-কেয়ার কইরেন … অনেক সিগ্রেট খায়, হ্যান খায় ত্যান খায়, আপনি একটু চোখে চোখে রাখবেন …। আরে ব্যাটা, তোর ভাবীকে এইসব বলে, কি হইল? তুই মরে গেলি! তা, এখন আমার রাগ উঠবে না? আই হ্যাভ এভৃ রাইট টু বি অ্যাংরি … অ্যান্ড আ’য়্যাম ভ্যেরি অ্যাংরি উইথ হিম, আ’য়্যাম ভ্যেরি অ্যাংরি উইথ আইয়ুব বাচ্চু। হি ক্যান’ট ডু দিস্ টু আস্। এইটা আমাদের সাথে সে করতে পারে না। আমি তাকে শাসাচ্ছি এখন, সে যেখানেই থাকুক থাক, আমি এই মেলবোর্ন রেডিওতে বসে আইয়ুব বাচ্চুকে বলছি, আইয়ুব বাচ্চু তুই অন্যায় করলি! অন্যায় করলি আবার!!
শিল্পীর নিজেকে নিজে টেইক-কেয়ার করা ল্যুক-আফটার করার কথা বলছিলাম। এইটা শুধুমাত্র-যে শিল্পীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু না। আমাদের পুরা সামাজিক সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে যে কেউ কাউকে টেইক-কেয়ার করে না। আনফর্চুনেইটলি। এবং ইদানীং ডিজিটালাইজেশনের যুগে ফ্যানবেইসের অতিমাত্রায় চাপ একটা বাস্তবিক রূঢ় সত্য। এখন, দ্য শো মাস্ট গ্য অন, যদি তুমি বলো, তবে শোনো, স্থানকালপাত্র বলে একটা বিষয় তো আছে। কে মারা গেছে, সেটা তো দেখতে হবে। শিল্পীর শারীরিক অবস্থা দেখতে হবে। এখন আমরা যদি বব মার্লের কথায় আসি, বব মার্লেকে তো ক্যান্সার মারেনি, বব মার্লের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তার শোয়ের যারা ইভেন্ট-ম্যানেজার্স ছিল তারাই মেরে ফেলসিল তাকে। টু দ্য এক্সটেন্ট যে তার প্রথম কল্যাপ্সটা হয়, ক্যান্সার-ধরা শরীরের থেকে তার একটা পা কেটে ফেলা হয়েছে, সেইখানে সে নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্কে গান করতে করতে কল্যাপ্স করে। তারপর তাকে আর পাওয়া গেল না। তো, এইখানে তো দেখা যাচ্ছে যে ইভেন্ট-ম্যানেজাররা মারসে।
আর বাচ্চুকে? আই ক্যান’ট ব্লেইম হিম, হি ওয়্যজ সো প্যপুলার! ওর থেকে বেশি শো আমরা বাংলাদেশে কেউ করেছি আমার মনে হয় না। হি উইল টেইক অ্যানি শো হি ওয়ান্টস্। ও বাংলাদেশের যেইসব জায়গায় গিয়া পার্ফোর্ম করসে সেইটা … আমাদের অনেক ব্যান্ড ওইসব জায়গার নামও জানে না। সারা বাংলাদেশটা একেবারে চষে খাইসে সে। মানে কোথাও বাদ নাই। যদি বলো কোন কোন মহল্লা — বাংলাদেশে এমন কোনো মহল্লা বা পাড়া নাই যেইখানে আইয়ুব বাচ্চু শো করে নাই। এবং সবই লম্বা লম্বা কন্সার্ট।
তো, ওর ভিতরে একটা — ওই যে রক্ … রকার্স পার্ফোর্ম অর পেরিশ — ওই জিনিশটা বাচ্চু খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছে। হি ওয়্যজ অ্যা ফ্যুলটাইম রকার। ইট’স্ নট অ্যা জোক। কামঅন! এইখানে জোক করার কিসু নাই। হি ওয়্যজ অ্যা রক্-আইকন। এর বাইরে কোনোকিসু নাই। এবং রক্ মানে হলো যে আমি শেষ পর্যন্ত এক্কেবারে পুড়ে ছাই হয়ে আউট হয়ে যাব, বেরিয়ে যাব। মানে, লাইক অ্যা শ্যুটিং স্টার। ধ্রুবতারার মতো শ্যাট করে জ্বলব, শ্যাট করে একদম উজ্জ্বল হয়ে শ্যাট করে হারিয়ে যাব।
এটা যদি বলো তাইলে ধরো বিভিন্ন বিষয় চলে আসে। মানে, আমি এখন বাংলাদেশে কাকে ব্লেইম করব? ব্লেইম করার আসলে কেউ নাই। আমার ওই যে ঘুরেফিরে একজায়গায় রাগ যায়, আইয়ুব বাচ্চুকেই আমি ব্লেইম করব। এত শো করার তোর দরকারটা কি? দুইটা কম করলি না-হয়। কেন? কারণ আমরা সবাই প্রোফেশন্যাল মিউজিশিয়্যান, তাই তো? আর এইখানে তিনটা জিনিশ আমাদের হাতে নাই — হায়াত, মউত আর রিজিক। আমি কোনদিন আসব, কোনদিন যাব আর কীভাবে খাব। আমি ওইটাও তারে বলসি, বাচ্চু তুই দুইটা কম শো কর্! রিজিকের মালিক আল্লা। তোরে এত পাগলের মতো কাজ করতে হবে না। মাসে তিরিশ দিনের মধ্যে ছাব্বিশ দিনই সে ব্যস্ত। এবং এই শরীর নিয়ে! আগে তো করছিস ঠিকাসে, তখন আরও বেশিই করসে হয়তো। এই শরীর নিয়েও কিন্তু একই র্যুটিনেই সে চলসে। বাট ইফ ইয়্যু টেল মি দ্য শো মাস্ট গ্য অন, তাইলে বলি আমার জীবনের একটা কঠিন বাস্তবতা — আমার বাবা যেদিন মারা গেল — সাতাশির বারো এপ্রিলে — আমি তখন কিন্তু ইন্টারকন্টিনেন্টালে শো করি। এবং বাবাকে দাফন দেওয়া হলো। আসর-নামাজের পরে। আর মাগ্রেবের পরে সন্ধেবেলায় আমি কিন্তু হোটেলে গান করতে গেসিলাম, যদিও আমাকে চারটা গান গাইবার পরে বাবুভাইরা বলে যে, না তুমি চলে যাও। আমি এই শকটা ওভারকাম করে মানুষের জন্য গান করতে পারি — এইটাই প্রমাণ করার জন্য আমি কিন্তু গিয়েছিলাম, আমি চেষ্টা করেছিলাম, আমি পেরেছিও। কেউ জানে না আমার বাপ মারা গেছে, কিন্তু আমার ব্যান্ডের সবাই জানত তো, ওরা আমাকে চারটা গানের পরে বলে যে তুমি চলে যাও। বাবুভাইই বলল।
সো, আই থিঙ্ক, দ্য শো মাস্ট গ্য অন — এই কন্সেপ্টটায় তুমি যদি আসো, তো, আমরা আর কি করতে পারি? আমাদের কাজ হলো টু এন্টার্টেইন পিওপল। আর, তোমাদের বা শ্রোতাদর্শকদের কাজ হলো টু বি এন্টার্টেইন্ড। কেননা এই সময়ে এই আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুতে আমরা কি মিস্ করতেসি? হি এন্টার্টেইন্ড আস্। অ্যান্ড হোয়াট ইজ হিজ এন্টার্টেইনমেন্ট? সে পাঁচটা মিনিটের একটা গান গেয়েছে — এই পাঁচটা মিনিটেই তার টোট্যাল ইমোশন এবং সেন্টিমেন্ট পুরে দিয়েছে। তো, ওর মাধ্যমে এইভাবে হাজার হাজার মানুষের ভিতরে সে তার সেন্টিমেন্ট-ইমোশন বিতরণ করে দিলো। প্রায়ই আমার কবিসাহিত্যিক বন্ধুদের সাথে এই জিনিশটা নিয়ে কথা হয় এবং ওরা আমায় বলে যে, ভাই, তোরা গানের লোকেরা পাঁচ মিনিটের একটা গানের ভিতরে ফুটফাট যে-কথাবার্তাগুলো বলে যেই জিনিশটা তোমরা পার করতে পারো, আমরা মোটা-মোটা উপন্যাস লিখেও করতে পারি না।
তো, আমাদেরে এই পাঁচ মিনিটের ভিতরে একটা উপন্যাস পার করতে হচ্ছে, মাইন্ড ইয়্যু! তো, দিজ্ আর স্মল সাউন্ডক্যাপ্সুল্স। এগুলো ছোট ছোট একেকটা সাউন্ডক্যাপ্সুল, যেগুলো মানুষের মাথার ভিতরে গেঁথে যায়। ওই বই পড়ে, সিনেমা দেখে, এইগুলো অনেকসময় না-ও হইতে পারে। ওই কথাগুলো মগজে মনে গেঁথে যাবে। সংগীতের হলো এইটাই পাওয়ার। আমরা যেইটা কথায় বলব সেইটা মাথায় গেঁথে যাবে কারণ ওইটার সাথে সুর আছে। সুর থাকলে এইটা তুমি মনে করবা, মনে করলেই চোখের সামনে একটা চিত্র আসবে, ভাবতে পারবা কোনসময় কি হয়েছিল তোমার জীবনে — এই যে নস্ট্যালজিয়াটা, এই নস্ট্যালজিয়াটা বাচ্চু ঠিকই মিলিয়ন-মিলিয়ন শ্রোতার মধ্যে দিয়ে গেছে।
এখন আইয়ুব বাচ্চু দেহত্যাগ করেছে। কিন্তু তার গান কত বিলিয়ন-বিলিয়ন শ্রোতা শুনবে সেইটা একমাত্র আল্লা জানে আর আইয়ুব বাচ্চু যেইখানেই গেছে সেইখানে সে-ই শুধু জানে। আমরা জানি না। হি ম্যে বি হ্যাভিং অ্যানাদার মাস্টার প্ল্যান। হি ওয়্যজ অ্যা গ্রেইট মাস্টার। মায়েস্ট্রো যেটাকে বলে। হি ওয়্যজ অ্যা মায়েস্ট্রো। সো, লেট’স্ সি, আইয়ুব বাচ্চুর লিগ্যাসিটা কোথায় যাবে, আমি সেইটাই ভাবি, উই হ্যাভ অ্যাবস্যলিউটলি নো আইডিয়া। বাট আই নো হোয়্যার হি ইজ্ গ্যয়িং, আই নো হোয়্যার আইয়ুব বাচ্চু’স্ মিউজিক ইজ্ গ্যয়িং নেক্সট। ওয়েইট। জাস্ট ওয়েইট অ্যান্ড সি।
সো, ইভেন হোয়েন হি ইজ্ নট হিয়ার, এভৃটাইম উই হিয়ার হিজ্ স্যং। এই যে ঢুকলাম যখন, তোমাদের রেডিওস্টেশনে, দেখলাম জুঁই গানটা বাজাইতেসে, ‘সেই তুমি’ তারপরে ‘রূপালি গিটার’, সে গানটা শুনতেসে। তো, ইট’স্ জাস্ট নট অ্যাবাউট আইয়ুব বাচ্চু। ইট’স্ অ্যাবাউট হোয়াট হি গেইভ আস্। আমাদেরে কী দিয়ে গেছে সে এই ছোট ছোট ক্যাপ্সুলগুলোতে!
গানপারটীকা
আইয়ুব বাচ্চু প্রয়াণের সময়টায় মাকসুদুল হক অবস্থান করছিলেন দেশের বাইরে। ব্যান্ড নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে একের-পরে-এক শো করে বেড়াচ্ছিলেন তিনি আর তার ব্যান্ড। শোকের সংবাদটা মাকসুদ পেয়েছেন তাদের মেলবোর্ন শোয়ের ঠিক আগের দিনটায়। একজীবনের সম্পর্কসুতা ছিঁড়ে এবি চলে গেছেন অলঙ্ঘনীয় দূরে। ম্যাক বয়সে এবির চেয়ে বছর-পাঁচেকের বড়। অস্ট্রেলিয়ায় মেলবোর্ন শহরে একটা বাংলা বেতারকেন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ম্যাক তার অকালপ্রয়াত সতীর্থটিকে নিয়ে যে-কথাগুলো বলেন, শুধু সেই এবিপ্রাসঙ্গিক অংশটুকু ট্র্যান্সক্রাইব করা হয়েছে এই রচনায়। মাকসুদুল হকের অনুমোদন ও সম্মতি নিয়ে বেতারসাক্ষাৎকারের এই লিখিত রূপটা গানপার কর্তৃক পাব্লিশ করা হলো। — গানপার
… …
- Take a break folks and read this book - April 7, 2025
- Muchkund Dubey and Hindi translation of Fakir Lalon Shah’s work || Mac Haque - March 30, 2025
- Are we ready for Khilafa E Bangal? || Mac Haque - September 5, 2024
COMMENTS