স্বাধীনতার পর থেকেই জয়নগর বাজারে হোমিও চিকিৎসা দিয়ে কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছান মতিকাকা — মতিলাল দাশ। আমাদের এলাকার এমন কোনো পরিবার নেই যারা তার হাতের দাওয়াই খায়নি। ছোটখাটো অসুখবিসুখ মানেই মতিকাকার হোমিও-বড়িপাউডার।
জয়নগর বাজার হাইস্কুলের প্রবেশপথে তার মাটির ঘরের নিজস্ব চেম্বার ছিল। ১৫-২০ বছর আগে অর্ধপাকা করেন। তার ধ্যানজ্ঞান ছিল হোমিওচর্চা। তাই বড় সন্তান মোহনকেও হোমিও কলেজে পড়িয়ে চিকিৎসক করেন।
সবসময় লোকে ভরা থাকত তার ছোট চেম্বার। ছোটবেলা থেকে দেখতাম একহারা দীর্ঘদেহী মতিকাকাকে ছাতা হাতে পৈন্দা থেকে আমাদের গ্রাম হয়ে জয়নগর বাজারে হেঁটে আসতে। একজন নির্বিরোধ ও সৎ মানুষ হিসেবে তিনি সর্বজনের শ্রদ্ধা আদায় করতে পেরেছিলেন।
শূন্য দশকের শুরুতে পড়ালেখার স্বার্থে এলাকা ছেড়ে চলে আসার পর তার সঙ্গে আমার ছেদ ঘটে। তবে বাজারে গেলে তার চেম্বারে উঁকি দিয়ে আদাব দিতাম। মাঝেমধ্যে টুকটাক কথাও হতো। কাছে ডেকে নিয়ে আমার কিছু কাজের প্রশংসা করতেন। এগিয়ে যাওয়ার আশীর্বাদ করতেন।
নিভৃতচারী প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন তিনি। তার বস্তুবাদী চিন্তাধারা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করতেন। তাই সবসময় কেতাদুরস্ত দেখাত তাকে। হাস্যরসে রোগীদের সঙ্গে সময় কাটাতেন তিনি। ছিলেন সঙ্গপ্রিয়, তবে সংঘে বিশ্বাসী না! তাই এলাকায় কখনো আঙ্গুলিং করতে দেখা যায়নি তাকে।
তিনি শুধু চিকিৎসাসেবাই দেননি, গ্রামীণ বুদ্ধিজীবীও ছিলেন। এলাকার ক্রাইসিসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন।
জন্মসূত্রে তিনি আমাদের গ্রাম মোহনপুরের বাসিন্দা। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে পাশের গ্রাম পৈন্দায় গিয়ে স্থায়ী হন। তাই আমাদের গ্রামের প্রতি তার আলাদা টান ছিল।
শৈশব থেকে দেখে আসা একজন ভালোমানুষ আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। আকাশতারা হয়ে তিনি উর্ধ্বলোক থেকে আমাদের আলো দিয়ে যাবেন। তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
সুনামগঞ্জ, জুলাই ২০২১
- নভেম্বর হাহাকার || শামস শামীম - November 20, 2021
- ধামাইলের প্রতাপ || শামস শামীম - October 10, 2021
- জয়নগরের জীবনবন্ধু || শামস শামীম - August 11, 2021
COMMENTS