ক্যানাডায় সিলেট ফেস্টে একটি স্থিরচিত্রপ্রদর্শনী

ক্যানাডায় সিলেট ফেস্টে একটি স্থিরচিত্রপ্রদর্শনী

আলোকচিত্রভ্রমণের মাধ্যমে একটি বিশেষ ভূনৈসর্গিক জনপদের বিবর্তন দেখতে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল ক্যানাডার টরন্টো শহরে। যে-জনপদটিকে ক্যামেরাল্যান্সের ভিতর দিয়ে অবলোকনের সুযোগ নিয়ে এসেছিল প্রদর্শনীটি, সিলেট সেই জনপদের নাম। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী টিলা আর হাওরবেষ্টিত জলঝর্ণার লোকায়ত ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এই জনপদের জীবনযাত্রা আলোকচিত্রে ধরে রেখেছেন দুই ভিন্ন সময়ের দুইজন আলোকচিত্রশিল্পী রজার গোয়েন এবং আনিস মাহমুদ। এই দুই কম্পোজারের সিলেক্টেড কিছু কাজের একটি বিন্যাস হাজির করা হয়েছিল প্রদর্শনীতে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধলগ্না আলোকচিত্রকেন্দ্রী ইতিহাসানুসন্ধিৎসু সংগঠন ‘ট্রেজার ১৯৭১’-এর উদ্যোক্তা-সমন্বয়ক উজ্জ্বল দাশ প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন। প্রদর্শনীর প্রত্যেকটা ক্যানভাসে, ফ্রেমে, টেক্সটুয়াল প্রেজেন্টেশনে এবং ইমেইজগুলি ইন্টারেক্টিভ ওয়েতে স্পেক্টেটরফ্রেন্ডলি ইনস্টলেশনের সর্বত্রই ছিল সুচয়নী কিউরেশনের ছাপ।

রজার গোয়েনের ছবিকাজগুলো গত শতকের মধ্যসত্তর দশকের শহর ও প্রত্যন্ত সিলেট চিত্রায়িত করেছে, এবং আনিস মাহমুদের কাজে একদম সাম্প্রতিক সিলেট ধরা রয়েছে পূর্ণায়ত প্রকৃতি ও প্রাণ নিয়ে। একটি মায়াবী জনপদের দুই দূরবর্তী সময়ের চিত্রকর্মসমূহ দর্শকের চোখে যেন সচলায়ত চিরসময়ের সিলেট জনপদটিকে ফুটিয়ে তুলতে পারে, এই বিবেচনায় চিত্রনির্বাচন ও প্রদর্শনীযোগ্য গ্রন্থনাকালে এর কিউরেটর উজ্জ্বল দাশ সচেষ্ট থেকেছেন। প্রদর্শনীটি ‘সিলেট আমার অহংকার’ শিরোনামে ২০১৮ সনের সেপ্টেম্বর ১-২ তারিখ দুইদিনব্যাপী টরন্টোর গ্র্যান্ড প্যালেস কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত চতুর্থবারের বিশ্ব সিলেট উৎসবের আসরে একটি বিশেষ কলেবর জুড়ে রেখেছিল। এক্সিবিশনটি নিয়ে ক্যানাডার বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা গিয়েছিল।

দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই শ্রীময়ী জনপদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বর্ণিল আয়োজনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাগতিক দেশ ক্যানাডার আয়োজক সংস্থা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অফ টরন্টো। আয়োজনের সহযোগী হিশেবে ছিল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অফ ঢাকা। সম্মেলনটি উৎসর্গ করা ছিল মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি, সিলেটের কৃতী সন্তান, জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর স্মৃতির প্রতি। বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, পর্যটন, পরিবেশ, মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের অবদান, বাংলাদেশের উন্নয়নে সিলেটি প্রবাসীদের ভূমিকা সহ বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছিল দফায় দফায় বিভিন্ন অধিবেশনের আওতায়। সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং একইসাথে দেশের পাশাপাশি সিলেটের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের ২০১৮ সনের আয়োজনটি ছিল অত্যন্ত বর্ণাঢ্য।

দুইদিনের আওতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান জুড়ে রেখেছিল এই ‘স্মৃতিচিত্রে সিলেট : এক্সিবিশন থ্রু দ্য লেন্সেস অব রজার গোয়েন অ্যান্ড আনিস মাহমুদ’ শীর্ষক প্রদর্শনী। আলোকচিত্রী দুইজনের মধ্যে রজার গোয়েন বয়সে প্রবীণ এবং মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে সরাসরি ফিল্ডফোটোগ্র্যাফি করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের আনাচেকানাচে। এই চিরকালীন বাংলাদেশবান্ধব মুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তিটি ব্রিটিশ হলেও মনেপ্রাণে এবং আচারে-আচরণে আশ্চর্য বাঙালিয়ানার এক প্রতিমূর্তি। পুরো নাম এডওয়ার্ড রজার গোয়েন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বিলেতের বিভিন্ন শহরে ক্যামেরা নিয়ে জনপ্রতিবাদ ও মিছিল-সমাবেশের চিত্র ধরে রেখেছেন তাঁর ক্যামেরায়। সেই ছবিগুলো দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের আবহমান লড়াইয়ের ইতিহাসে একটি বিশেষ দলিলায়ন।

রজার গোয়েন বিলেতে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে-পড়া ভিনদেশি এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও চিরায়ত সংস্কৃতি নিয়ে প্রবাসে কর্মতৎপর বাঙালিদের কাছে ‘রজার মাস্টার’ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহ্যাম এলাকায় তাঁর নিবাস। মনেপ্রাণে বাঙালি এক ব্রিটিশ মানবতাবাদী ও সমাজকর্মী তিনি। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে পরিচয়ের শুরু থেকেই ইমেইলে-খুদেবার্তায় যোগাযোগের ভাষা হিশেবে রজারের ব্যবহৃত সম্পন্নমানের বাংলা চমৎকৃত হবার মতো। রজারের বাংলাভাষিক দক্ষতা আলাদাভাবেই উল্লেখের যোগ্যতা রাখে। একজন ভিনদেশি গুণী প্রবীণ শিল্পীর কাছে বাংলাদেশ ও বাংলাভাষার এমন কদর দেখে যে-কেউ অভিভূত হবেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৬৪ সালে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কর্মী হিসেবে প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন রজার। সেই থেকে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসার শুরু। নিজে বাংলা শিখেছেন, পারেন সাবলীল বাংলা পড়তে-লিখতে এবং বলতে তো বটেই, বিলেতে ফিরে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও জীবনধারা জানতে আগ্রহী বিদেশিদের মধ্যে বাংলা শেখানোর কাজটিও করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গেই। বিলেতে স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থনে মুক্তিকামী বাঙালির সাথে দৃঢ়চিত্তে তিনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহ্যাম অ্যাকশন কমিটির দপ্তরসম্পাদক ছিলেন। তাঁর ক্যামেরায় তোলা আছে বিলেতের রাজপথে তুমুল আন্দোলনের অনন্য সব ছবি। মিছিলের ফেস্টুন, সংগঠনের লোগো, প্রেসরিলিজ তৈরি থেকে শুরু করে তহবিল সংগ্রহ সহ অজস্র তৎপরতার সঙ্গেই লিপ্ত ছিলেন রজার। অক্টোবর ১৯৭১-এর দিকে লন্ডনের গ্রানাডা টেলিভিশনের হয়ে সত্তরের বন্যা-পরবর্তী খাদ্যঘাটতির উপর তথ্যচিত্র বানানোর কাজে যুদ্ধরত বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন রজার। তখন তাঁর কাজ ছিল দোভাষীর। বন্যা-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির চিত্রায়ণ বাদ দিয়ে রজার তাদের সেই সফররত পুরো দলকে বুঝিয়েসুঝিয়ে রাজি করিয়ে ক্যামেরায় তুলে এনেছিলেন গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র। ‘দ্য ইয়ার অব কিলিং’ নামে ধারণকৃত তথ্যচিত্রটি সেই বছরই প্রচারিত হয়েছিল গ্রানাডা টেলিভিশনে। ১৯৭২ সালের শেষদিকে একটি আর্ন্তজাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে গবেষণার কাজে প্রথম সিলেটে গিয়েছিলেন রজার। সত্তরের দশকে রজার গোয়েনের ক্যামেরায় তোলা সিলেটের সেই ছবিগুলো ইতিহাসের অনন্য দলিল।

প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রজার গোয়েন বলেন, মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, জীবনমান উন্নয়নের কাজে নবীগঞ্জে গিয়েছিলাম। সদর সিলেট, নবীগঞ্জ, বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুর, গোলাপগঞ্জ সহ অনেক জায়গায় গিয়েছি। বিলেতপ্রবাসী সিলেটি বন্ধুদের বাড়িতে থেকেছি। নানা জায়গায় ছবি তুলেছি। দ্বিতীয়বার সিলেট যাই ১৯৭৮ সালে। সেইবার অনেক বেশি ছবি তোলার পাশাপাশি আরও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা হয়েছে স্থানীয়জনের সঙ্গে। প্রায় পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি সিলেটস্মৃতি আমার। সেইসময়ে তোলা ছবিগুলো দেখলে এখনও স্মৃতিকাতর হয়ে উঠি। সেই কিনব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি, সেই সিলেট তো আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিলেটের প্রতি আমার ভালোবাসা, আত্মার টান আজও অটুট।

প্রদর্শনীর অন্য রচয়িতা আনিস মাহমুদ বয়সে নবীন, তরুণ উদ্যমী, ফোটোজার্নালিজমে ব্যাপৃত রয়েছেন। এরই মধ্যে দেশের ভিতরে এবং দেশগণ্ডি পেরিয়ে পেয়েছেন আলোকচিত্রামোদীদের সমাদর। তার তোলা ক্যামেরাকাজগুলো দেশের শীর্ষসারির দৈনিকের শিরোনামচিত্র হয়ে জাতীয়ভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। সেই ছবিগুলোর মধ্যে যেমন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, ইলিয়াস আলী অন্তর্ধান ইশ্যু নিয়ে আলোকছবি, এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজির ছবি, সিলেট সরকারি কলেজে মাস্তানিরত ছাত্রশিবির-ছাত্রলীগের ছবি, দক্ষিণ সুরমায় বাসপোড়ানোর ছবি ইত্যাদি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। মানুষ জানতে শুরু করে আনিস মাহমুদ নামে একজন গুণী চিত্রসাংবাদিকের নাম। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে এই তরুণ চিত্রসংবাদজীবী জানান, কর্মস্থল ‘প্রথম আলো’ থেকে প্রায় পঞ্চাশটিরও অধিক অভিনন্দনপত্র পেয়েছেন এখন পর্যন্ত। আনিস মাহমুদ ২০১২ সালে প্রথম আলোর সেরা আলোকচিত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন এবং পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৪ সালে প্রথম আলোর সেরা কর্মীর পুরস্কার হিশেবে ফটোসাংবাদিক বিভাগে তিনি পুরস্কার পান। তার তোলা একাধিক ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সিলেটকে নতুন করে পরিচিত করে তুলেছে।

টরন্টোতে বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আহ্বায়ক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী চারদশকের সিলেটের আলোকচিত্র নিয়ে এই প্রদর্শনী সম্পর্কে বলেন, এটি একটি অনন্য ও প্রশংসনীয় প্রয়াস। ছবিগুলো থেকে বর্তমানের সিলেট এবং পুরনো সিলেটের বৈচিত্র্যময় ইতিহাসের খোঁজ মিলবে। এবং শুধু স্মৃতিকাতরতা নয়, এই প্রদর্শনী বিশ্বের সংস্কৃতিঋদ্ধ জনপদগুলোকে দুনিয়ার সামনে উন্মোচন ও সংরক্ষণের একটি তাগিদ জোগাবে ভবিষ্যতের বিশ্বকর্ণধারদের কাছে। এই উৎসবেরও মূল বক্তব্য আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। দুনিয়ার সংস্কৃতিনিসর্গ কোনো দেশের বা ভূখণ্ডের একলার নয়, পৃথিবীর সবারই রয়েছে এর উত্তরাধিকার; উৎসবের মূল বক্তব্য এইটা। বাংলাদেশের একটি ছোট্ট জনপদ দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে-থাকা উত্তরাধিকারীদের হাতে তুলে দেয়ার লক্ষ্যেই বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আসরগুলো বসছে একাধারে বিভিন্ন দেশে। ক্যানাডায় এই উৎসবপ্রাক্কালে সফরকারী দলের মুখপাত্র হিশেবে রাশেদা কে চৌধুরী কথাগুলো বলেন। প্রদর্শনীটি উৎসব চলাকালীন দুইদিন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল এবং জনসমাগমও হয়েছিল প্রচুর।

প্রদর্শনীটির একটি বিশেষ দিক ছিল এর ছবিগুলোতে লেগে থাকা নির্জনতার বিভা। মানুষের উপস্থিতি ছিল প্রত্যেকটা ক্যানভাসেই, কিন্তু তারপরেও অদ্ভুত শান্তিনির্জনতা ক্যানভাসগুলোকে মুড়িয়ে রেখেছিল। মুখর প্রকৃতিস্নিগ্ধ দুনিয়ার এক অন্যমাত্রিক উপস্থাপন ছিল প্রত্যেকটা ফোটোগ্র্যাফকর্মের বৈশিষ্ট্য। রজার গোয়েনের ছবিগুলো পুরানা আমলের আলোবাতাস ছড়িয়ে দিয়েছে দর্শক-চিত্রামোদীদের চোখেমুখে। সেই ছবিগুলোর প্রত্যেকটা শাদাকালো হওয়ায় ডেপ্থ, ডেন্সিটি এবং সলিচ্যুড সবকিছু মিলে একটা অ্যাম্বিয়্যান্স তৈরি করেছিল যা টাইমট্র্যাভেলে হেল্পফ্যুল হয়েছে বিশেষভাবেই বয়স্ক দর্শকদের দিক থেকে। এছাড়া আনিস মাহমুদের কাজগুলো গত একদশকের টাইমস্প্যানে কম্পোজড হওয়ার কারণে তিরিশ-বছরের দূরবর্তী দুই ভিন্ন সময়ের মধ্যে একটা কম্পারেটিভ স্টাডির সুযোগ পেয়েছেন সমবেত দর্শকেরা। আনিসের ছবিগুলো রঙিন হওয়ার কারণে একটা প্রগলভ ফুর্তির বাতাস ছিল সর্বত্র। কম্পোজিশনগুলো থিম্যাটিক্যালি ছিল ডাইভার্সিফায়েড, প্রোপোর্শোনেইটলি রিদমসঞ্চারী। সিলেটের গাছবিরিখ, জলজঙ্গল, হাওরবাঁওড়, নিসর্গলাবণ্য, লুপ্তপ্রায় ক্রীড়াচাঞ্চল্য, মুখ ও মুখরতা মানুষের, অপস্রিয়মাণ মায়ার গোধূলি আর নিঝুম দুপুরের বিরল মুহূর্তগুলো আনিস মাহমুদের কম্পোজিশনে প্রায় বিমূর্ত পেইন্টিঙের ব্যঞ্জনায় হাজির হয়েছে।

ক্যানাডায় সিলেট ফেস্টে ইনস্টলড প্রদর্শনী স্পেইসটি ছিল সবসময় দর্শকপূর্ণ। বয়স্ক সিলেটি সিনিয়রদের চেয়েও উপচে-পড়া আনাগোনা ছিল কারেন্ট স্টুডেন্টদের। ইয়াং অ্যাডাল্টদের সপ্রশ্ন কৌতূহলের নিবৃত্তিতে আয়োজক অ্যাটেন্ডেন্টদেরে হিমশিম খেতে দেখা যায়। এই আদলের ভিন্ন ভিন্ন থিমের প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে বেঙ্গলি ডায়াস্পোরা মানুষগোষ্ঠীর মধ্যে দেশহিতৈষী ইতিহাস-ঐতিহ্য সন্ধান, খনন, অনুবর্তন, অভিযোজন, সঞ্চরণ ও প্রসারণের কাজ অব্যাহত রাখা যায় বলিয়া আগত দর্শকদের অনেকেই মন্তব্যখাতায় রিমার্কস্ করে রেখেছেন।

ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ বা আয়োজনপ্ল্যান রয়েছে কি না জানতে চাইলে এই প্রদর্শনীর কিউরেটর উজ্জ্বল দাশ বলেন, ইচ্ছা থাকলেও উপায় দেখছি বিশেষ-একটা নাই। কমিউনিটি ফান্ডিং দিয়ে এই ধরনের প্রোগ্র্যাম বছরে একটা আয়োজন করাও মুশকিল। দরকার স্পন্সর। দরকার অন্যান্য শহরে নেটওয়ার্ক এবং ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য ভর করে গ্রন্থন ও গবেষণার পরে সেসবের ভিয়্যুয়ারফ্রেন্ডলি প্রেজেন্টেশন নিয়া ভাবনা। দরকার অর্থবলের পাশাপাশি জনবল। সবকিছু জুটে গেলে প্ল্যান বাস্তবায়নে স্টেপ ফরোয়ার্ড করা যায়।

‘স্মৃতিচিত্রে সিলেট : এক্সিবিশন থ্রু দ্য লেন্সেস অব রজার গোয়েন অ্যান্ড আনিস মাহমুদ’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির মিডিয়া ক্যাম্পেইনের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় সকল সংগঠক ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা। বাংলাদেশে এবং বিদেশে সর্বত্র অফলাইন-অনলাইন উভয় মাধ্যমের পত্রিকায়-টেলিভিশনে এই প্রদর্শনীর সচিত্র-সচল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এবং এর ফলে আশা করা যাচ্ছে যে এমন উদ্যোগের অনুরূপায়ণ ভবিষ্যতেও হবে।

প্রতিবেদন : টরন্টো কন্ট্রিবিউটর

… …

 

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you