আমাদের প্রজন্মের একটা অংশের গানের রুচি তৈরি হয়ে গেছিল আশিতে। সেটা আবার, ঘটনাচক্রে, রাগাশ্রয়ী এবং (ভারতীয়) বাংলা গানের সিলসিলা দিয়ে। ফলে, আশি ও নব্বইয়ের ব্যান্ডসংগীতের উত্থান খানিকটা দূর থেকে খেয়াল করেছি।
তারুণ্যে রক-এন্-রোল ভালো লাগার কথা। সেটা যখন লাগতে শুরু করল, তখন আমাদের কৈশোর পেরিয়ে গেছে। সতর্ক হয়ে গেছি, প্যাশন তৈরি হচ্ছে পরিবেশনার মাধুরী দিয়ে যত, অর্থের গভীরতা দিয়ে তার চেয়ে বেশি।
সমাজতন্ত্র তখনো মরে নাই, ফলে মতাদর্শ দাপিয়ে বেড়াত নন্দনতত্ত্বের মাঠ। ফ্যাশনও তথৈবচ। রক শুনব তো পিঙ্ক ফ্লয়েড, পপ শুনব তো ভূপেন — এ-রকম আর কি। ততদিনে আবার বাংলা গানে সুমন-অঞ্জন-চন্দ্রবিন্দু মিলে আরেকটি সিলসিলা তৈরি হয়ে গিয়েছে। ফলে, আফসোস, আইয়ুব বাচ্চু সহ বাংলা ব্যান্ডগান আমার প্যাশনের বাইরেই থেকে গেল।
তবু, খানিক পরিণত বয়সে, আইয়ুব বাচ্চুকে মন দিয়ে শুনেছি। যখন বিখ্যাত গিটারের পাশাপাশি একটি বেহালা তার সংগীতপরিকল্পনার মধ্যে দারুণভাবে বাখোয়াজ হতে শুরু করল, তখন থেকে।
বাংলা রকের স্বকীয়তা হৃদয়ে না হোক, মাথায় অনুভব করেছি। আফসোস লেগেছে তখন। আহা, আমার কানের ডিএনএ কেন যে বাংলা রক দিয়ে তৈরি হয় নাই!
দিনশেষে সবাই যার যার সময়-বলয়ের উপগ্রহ। আমার শৈশব আর কৈশোর আইয়ুব বাচ্চু তথা বাংলা রক থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ব্যান্ডের গানেই স্বাধীন বাংলাদেশের সুরটুকু প্রথম ধরা পড়ে। সেটা আনাড়ি ছিল, কিন্তু বাংলাদেশের ছিল। আজম খান থেকে শুরু করে আইয়ুব বাচ্চু আর জেমস্ — এদের গানেই বাংলাদেশের হৃৎস্পন্দন টের পাওয়া গেছিল। আমরা যারা ‘উচ্চমার্গীয়’ সংগীত শুনতাম, আমরা সংগীত শুনতাম হয়তো, কিন্তু বাংলাদেশ শুনি নাই। গানের ভেতর খুব দুঃখী, আনাড়ি, সাহসী, ধ্বংসস্তূপ থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়ানো বাংলাদেশের পাল্স টের পাই নাই।
… …
- শক্তি || সুমন রহমান - August 12, 2021
- বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত : তূণের তির || সুমন রহমান - July 3, 2021
- ‘কোলাভেরি ডি’ কিংবা ‘বুকটা ফাইট্টা যায়’ : শুধুই কি হুজুগ? || সুমন রহমান - May 4, 2021
COMMENTS