গজগামিনীর অপেরা

গজগামিনীর অপেরা

আসাদুল্লা খাঁ গালিব, পপ্যুলার্লি মির্জা গালিব নামে মশহুর, বড় শায়ের উর্দু সাহিত্যের। সুরাঘ্রাণগভীর ও বেদনামদির তার জীবনঘটনা আমরা নানাভাবেই জানি, মিথ ও মনগড়া নানা উপাদান সত্ত্বেও আমরা কাহিনি ডিস্টিলেশন প্রোসেস তো যার যার মতো করে জানি এবং প্রোসেস ইনিশিয়েটও করতে পারি, মির্জাসাহাব সম্পর্কিত উপাখ্যান শুনে শুনে বড় হয়েছি এবং বড় হয়ে ইশকুল-কালেজের দুই-তিনকিলাশ বিদ্যা হাতে নিয়া গালিব সম্পর্কিত পুস্তকাদিও পড়েছি। আবু সায়ীদ আইয়ুব পড়ে জেনেছি কিছু, অনেক পরে আমাদের এখানকার জাফর আলম উর্দু থেকে বাংলায় কিছু-কিছু নিদর্শন নামাতে শুরু করেন, সুখপাঠ্য সেসব, সম্প্রতি তিনি ‘দাস্তাম্বু’ তর্জমা করেছেন এবং বই হিশেবে বাজারে অ্যাভেইলেবল সেইটা। ভালো কাজ। তবে এই বিখ্যাত শায়েরের জীবন ও যাপন ও তার ভাঙনের আওয়াজসম্বলিত চরিত্র-চারিত্র্য পূর্ণায়ত বুঝে উঠতে পেরেছি একটা টেলিভিশনসিরিয়াল দেখে। এবং বলা বাহুল্য, তখন এই সিরিয়ালটা দেখা হয়েছিল সবেধন নীলমণি বিটিভির বদৌলতে। সেইখানে সর্বেসর্বা ছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ, মির্জা গালিব নামটা মনে এলেই এরপর থেকে কেবল নাসিরজির মুখ ও ম্যানারিজম মনে পড়ে। এবং ভাইস-ভার্সা, নাসিরুদ্দিন শাহকে দেখা মাত্তর গালিবমুখ মনে পড়ে। ‘দেড়-ইশকিয়া’ ম্যুভি দেখতে যেয়ে বহুদিন বাদে মনে হলো, এই আরেকটা জায়গায় নাসিরুদ্দিন শাহ তার অননুকরণীয় অভিনয়কলা দেখানোর সুযোগ পেলেন। উর্দু জবান, নবাবি বোলচাল ও ভঙ্গিবিভোর এলিগ্যান্স ম্যুভিটিতে এক্সেলেন্টলি এসেছে।

যদিও ম্যুভি দেখতে লেগেছিলাম মাধুরিজির চন্দ্রিমাগাঢ় মুখ ও গহন নয়নসুরভি লভিবার আশে — নিরাশ তো হইতে হয় নাই স্বীকার্য — দেখতে যেয়ে দেখি নাসিরুদ্দিন শাহ ঔজ্জ্বল্যে বেড়ে দেখিয়েছেন। সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কোনটি, এইভাবে ঠিক বার করে এনে দেখানো মুশকিল, বিশেষত ম্যাসালাম্যুভি থেকে এইভাবে দৃশ্যবিচার দুষ্কর। এই সিনেমায় মাধুরিজির কথাবার্তা, তার বিলোল কটাক্ষ সমস্তকিছুতেই বয়সের একটা আলাদা ব্যাপার যুক্ত হয়েছে। এইটা অনেকটা অমিতাভের বয়সোচিত এলিগ্যান্ট অ্যাপিলের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে। এর আগে মাধুরির যে-একটা সিনেমা — ‘আজা নাচলে’ — তাতে তিনি ছিলেন অনেকটা ঘাগরাসুন্দরী ডিভ্যাস্ট্যাইটিং ডেজলিং বিউটি, সেইটাও মধুর, এই সিনেমায় তা না, পূর্ণ পার্সোন্যালিটি নিয়া মাধুরি এখানে ভাস্বর। মুশায়েরাগুলোর জমায়েতে তার প্রেজেন্স দিল-মে-চাক্কু হয়ে যেন জখমি আতর স্প্রে করে যায়। সেই দৃশ্যটা আমি মনে হয় বেশ অনেকদিন মনে রেখে যাব, যেই দৃশ্যে মে’মুদাবাদের নওয়াবের বিধবা বেগম পারা জান রূপী মাধুরি ও চান্দপুরের ফেইক তথা সাজানো নওয়াব ইফতেখার রূপী নাসিরুদ্দিন শাহ সোফায় ফোটো তুলছেন পাশাপাশি এবং মৌরি চিবাইতে চিবাইতে মহান মাধুরিজি পরপুরুষ তথা বেগানা মর্দ নাসিরজির সঙ্গে চাপাশ্বাস কথা বলছেন — এই দৃশ্যে মাধুরির নাসিকাপার্শ্ব-ওষ্ঠ-অধর-চিবুক-চোখ এত মৃত্যুমোহনীয় ম্যাচিউর প্রতিভাত হয়েছে যে, এই শতাব্দীতে আমি তা ভুলছি না কসম। প্রশংসনীয় ও মনে রাখবার মতো ম্যুভির ন্যারেশন ও গতি, মিউজিকও মনোহর, ‘হামারি আতারিয়া পে’ এবং ‘দিল-কি মিজাজ ইশকিয়া’ গান দুইটার লিরিক্যাল ইন্টেন্সিটি মনে থাকবে।

সিনেমার টাইটেলকার্ড দেখানোর সময় একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার মনে ঘাঁই দিলো। মাধুরির নাম লেখা হয়েছে মাধুরি দিক্ষিৎ-নেনে। শেষে খোঁজ নিয়া জানলাম, বিবাহপরবর্তী সর্বত্র মাধুরিজি সস্বামী পদবি ইন্ট্রোডিউস করিয়ে আসছেন। ব্যাপারটা আগে এভাবে খেয়াল করি নাই। কিন্তু খটকা লাগল। হোয়াটেভার। আমি তো আর ফেমিনিস্ট ম্যুভমেন্টে নাম লেখাইতে যাচ্ছি না, হাওয়াও উবে গেছে দেখতে পাই আজকাল রেডিক্যাল বা রেভোল্যুশন্যারি ফেমিনিজমের, হাওয়া থাকলে হাওয়ায় গা ভাসাইতাম বৈকি। কিন্তু ঘটনা তো গুরুতর। এহেন তরিকায় পিতা ও স্বামী উভয় তরফের টাইটেল মনুষ্যনাম-শেষে অ্যাটাচ করতে গেলে একটা কাণ্ড হবে বটে যা ভারতীয় সভ্যতায় একটু অভিনব। মন্দ না, মাধুরিজির দীক্ষা নিয়া পিতৃতন্ত্র মজবুত করা। যা-হোক, এইসব আন্দুধুন্দু আলাপ।

প্রিফেস প্যারাগ্রাফের অদূরে এবার এ-লেখাটার জঁর/ধরন সম্পর্কে একটা কৈফিয়ৎ, তলব করবার আগেই, পেশ করা যাক। কোন্-সা ধারার রচনা এইটা, আদৌ রচনাটা যাবেই-বা কতদূর জানা না-থাকলেও, কার ও কেমনতর ওজনদার পার্পাস সার্ভ করতে যাচ্ছে এটি ইত্যাদি বিষয়ে একটু বলা যায় কি না দেখা যাক। রম্য রচনা, আলবৎ, খানিক সুড়সুড়িবিক্রিয়াকারকও হয়তো। অতি রিসেন্টলি রিলিজড্ এক ম্যুভি দেখার সুবাদে এখানে এর প্রধানত নায়িকা আর এর পার্শ্বকুশীলব সম্পর্কিত কতিপয় দেখনোত্তর-প্রতিক্রিয়া এক্সপ্রেসিং এই রচনা। আর এরচেয়ে বেশি এক্সপেক্টেশন নিয়া পাঠে অংশগ্রাহীবৃন্দ অবশ্যই বীতরাগ হইবেন। উপায় নাই, ইনডিড, বীতরাগীদের নিকট করজোড় হওয়া ছাড়া। তাছাড়া কথাটা এ-ই যে, যেটাকে লোকে ম্যুভিরিভিয়্যু বলে কিংবা ম্যুভিক্রিটিক, এই রচনা তা না, তা হইতে পারছে না, তা হইতে চাইছে কি না সেই প্রশ্ন থাক। তবে এইটা একটা ভালো ব্যাপার দেখা যাচ্ছে আজকাল যে, একটা ম্যুভিসিনেমা দেখে সেই সিনেমায় স্থিত ও অনুপস্থিত বিভিন্ন ধর্তব্য নিয়ে স্পেক্টেটর্স ভিয়্যু উঠে আসছে লেখায়পত্রে। একটা সিনেমায় রিয়্যালিটি রিফ্লেক্টেড হচ্ছে কিংবা রিক্রিয়েটেড হচ্ছে, সে-হোক যেমনতর সিনেমাই, কিংবা অ্যানি ফর্ম অফ টেক্সটুয়্যাল প্রেজেন্টেশন তো তা-ই, রিপ্রেজেন্ট করে রিয়্যালিটিরে কোনো-না-কোনো ছুঁতোনাতায়। একটা কালে কেবল কথিত আর্টফিল্ম নিয়া আলাপ হইত লোকালয়ে, এখন ওইধারা একদেশদর্শা বাতচিত কমে এসেছে। এইটা ভারি স্বস্তিকর হয়েছে। এখন উপরন্তু কমার্শিয়ালি-প্রোডিউসড্ ম্যুভিচিত্র নিয়া যুগপৎ থিয়োরিটিক্যাল ও এম্পিরিক্যাল লেখাপত্র এসেনশিয়্যালিই হচ্ছে এবং উপভোগ্যরূপেই অব্যাহত এই ধারা এমনকি বৈচিত্র্যপ্রশ্নে লিমিটেড লেখারাজ্যের ভাষা বাংলাতেও! অনলাইন প্রকাশনাপাটাতনগুলোই মুখ্যত অমনধারা রচনার ধাত্রী। কিন্তু মূলধারা আমাদের গণমাধ্যম এখনও অত মুরদ অর্জন করে উঠতে পারে নাই বটে। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া আমাদের অপু-শাকিব-বর্ষা-জলিল এক্সিবিশনের জন্য পৃথক গ্যালারির ব্যবস্থা রেখেছে। মেইনস্ট্রিমের কারবারই তো ওইটা, ফ্র্যাগমেন্টেড্ দেখা আর কম্পার্টমেন্টালাইজড্ প্রচার-প্রকাশ-প্রোপ্যাগ্যান্ডা, স্ট্রিমের মেইন পেইজগুলোর কোনোটাতে বাংলা ছায়াছবি তথা দ্য গ্রেট ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ বা তোজাম্মেল হক বকুল নিয়া অ্যাপ্রিসিয়েশন পাব্লিশ করলে যেন ভদ্রগণমাধ্যমের/গণভদ্রমাধ্যমের মাথার ওপর আরশ ভেঙে পড়বে! অ্যানিওয়ে। রেস্পিরেটোরি সিস্টেম ক্রমে নর্ম্যাল হয়ে এসে একটা জায়গায় যেতে লেগেছে এখন আমাদের কালচার — সিনেমা সাহিত্য ফোটোগ্রাফি চিত্রকলা গানবাদ্য কবিতা আখ্যান কথামালা — আমাদের কালচারাল করাকরিকীর্তি।

চলচ্চিত্রকোবিদদের পছন্দশীর্ষ ম্যুভি নিশ্চয়ই খুব উমদা ব্যাপার। তবে পিপলের পাল্স বুঝবার জন্য সবচেয়ে ভালো ইন্ডিকেইটর হলো পপ্যুলার ম্যুভি, যেমন জনপ্রিয় সাহিত্য ও গানে সবচেয়ে জীবন্ত ফর্ম্যাটে ধরা থাকে জননাড়িস্পন্দ। ফলে এইসব ব্যাপারে যে-একটা সাড়া নানাভাবেই দৃশ্যগোচর আজকালকার অফবিটস্ট্রিমের মিডিয়ায়, এইটা হাতে ধরে দেখাবার মতো লক্ষণ একটা, এবং লক্ষণবিচারে এর ভ্যালু অপরিসীম। শৈল্পিক সচেতন অবস্থান থেকে নির্মিত ছবিচ্ছায়াতে ফ্রেমের পর ফ্রেমগুলো, মন্তাজ ও কোলাজগুলো, পদ্ধতিগতভাবে এনকোডেড থাকে। এর ভেতর হইতে বেরোনো রূপার্থ অথবা ভাবার্থগুলোতে কাজেই মিশে থাকে সফ্ট অথবা লাউডলি নির্মাতারও অভিপ্রায়। এইখানেই সুবিধা ও সম্ভাবনা হাজির থাকতে দেখি জনপ্রিয় ধারার সিনেমা পাঠান্তর ও প্রকাশগত উপস্থাপনায়। এর থেকে সিনেমাটির নেপথ্যে-থাকা নির্মাতার, গোটা একটা ক্লাসের, মনোজগৎ ধরার কাজটা সারা যায় ঢের অথেন্টিকেটেড ওয়েতে। একটা গোটা জাতির কিংবা তার মধ্যস্থিত গোষ্ঠীর/অংশের কন্টেম্পোরারি বিহেইভিয়্যর ও অ্যাটিট্যুডগুলো ধরা যায়, প্যাটার্ন ও টাইপগুলো সনাক্ত করা যায়, এবং সর্বোপরি যায় সিনেমা ও সোসাইটির মিসেলেনিয়াস টেক্নিক্যালিটি নিয়া নানামাত্রিক নোশন ধরে ধরে কথা বলা। আর পুনরুক্তি হচ্ছে যদিও, বলা বাহুল্য, বঙ্গখণ্ডে এমনধারা কাজ খুব জোরালো কব্জি ও করোটি বিনিয়োগপূর্বক শুরু হয়েছেও অধুনা। তাই বলে এই নিবন্ধপ্রতিম রচনা আদৌ ওইসব কোনোদিকেই যাচ্ছে না। খাঁটি অর্থেই এটি সফ্টকোর রমণীয় রচনা, ভারত রাষ্ট্রীয় রাজভাষায় নির্মিত ম্যুভি ‘দেড় ইশকিয়া’ উপভোগোত্তর নেহায়েতই রিয়্যাকশন এক। বড়জোর রেস্পোন্স মৌহূর্তিক, পপকর্ন সহযোগে ভক্ষ্য, সংক্ষিপ্ত ও অগোছালো।

রচনা সম্পর্কে দেড়িয়া বাতচিতে এইবার লাগাম টেনে একটামাত্র অনুচ্ছেদ রচিয়া রচনা শুরু তথা শেষ করিবার তোড়জোড় করা যাক। বলা বাহুল্য যে এই রচনাটা, খোদ বক্ষ্যমাণ ম্যুভিটাই, মাধুরি ফ্যাসিনেইটেড। ম্যায় বহোৎ বাড়া ফ্যান হু মাধুরিজি-কা, বাচপান-স্যে, তা তো অনেকেই ইনক্লুডিং এই সিনেমার ডিরেক্টর অভিষেক চৌবে। এই গোটা সাবকন্টিনেন্টে মধুবালা-সুচিত্রার পরে মাধুরির একটা এভারগ্রিন অ্যাপিলের পত্তনি হয়েছে বেশ অনেকদিন হলো, বলা বাহুল্য, সুস্থায়ী না-হইবার আশঙ্কা নাই আর। কাজেই এই রচনা মাধুমোহাব্বতেরই নমুনা বলতে গেলে। একটা সেল্ফ-ইনিশিয়েটেড প্রোমো অফ মাধুরি ডিকশিট। এবং এই সিনেমাও মনে হয়েছে তা-ই, ঠিক যতটা ‘দেড় ইশকিয়া’ ততটাই মাধুরিশকিয়া। মাধুরির আগমনী গীতে জমে উঠেছিল এই উষ্ণায়ন ও কলহপর্যুদস্ত পৃথিবীর অ্যাট্-লিস্ট একটি শীতকাল। কবি ভাস্কর চক্রবর্তী সশরীর বাঁচিয়া নাই, থাকলে বলতেন অনুমান হয় — এমন ভুবনস্নিগ্ধা শীতকাল কবে ফের আসিবে ফিরিয়া মাধুরি!

তিনি, মাধুরিজি, ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন চুরাশিতে। এরও কয়েক বছর বাদে ‘তেজাব’ থেকে আমরা তারে পেয়ে গুরুজনদের নিষেধ সত্ত্বেও পুরনো দিনের ভিসিআরে-দর্শিত মধুবালা ভুলতে শুরু করি। বিশেষ কোনো অঙ্গ নয়, এই এক নায়িকা পূর্ণাঙ্গ প্রিয়। বঙ্গীয় তথা বাংলাদেশজ কবি সিকদার আমিনুল হক একটা লেখায় শিল্পা শেঠির নিতম্বের প্রতি ফ্যাসিনেশন প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, সম্রাজ্ঞী শিল্পা শেঠি যেই সোফাসেটে তার ওই পৃথিবীনিঝুম নিতম্বখানা রাখেন, সেই সোফায় একটাবার কবি অঙ্গুলি বুলাইতে পারলে বেহতর সুখী হইতেন। কথাটা আমারও মনে ধরেছিল, অঙ্গবিশেষের প্রতি দুর্বলতা হেতু, যেমন দুর্বলতা আজও অপ্রতিরোধ্য সোনালি বেন্দ্রের পদযুগল তথা তার কদম-মুবারাক তরে, সুস্মিতার সুঠাম ফিজিক্যাল ফিচার, তবে শিল্পার ‘প্রতি অঙ্গ লাগি মম প্রতি অঙ্গ’ কান্দে না তাই বলে, লেকিন মাধুরিজির ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ’ আমার। তা, মাধুরি-রিডার হিশেবে এইটাই মিনিম্যাল স্টেইটমেন্ট আমার। ‘হাম আপ্কে হ্যায় কৌন’ ছবির সেই দিদির দেবরভুলানিয়া গানে গুলতি-লাগা ব্যাকলেস্ পিঠ ভুলতে পেরেছে কোনো মর্ত্যবাসী দিলওয়ালে পুরুষ! ওই জিনিশ কি ভুলিবার বাহে! দোষ তো দিবার কোনো স্কোপ নাই যখন মকবুল হুসেন বছরের পর বছর ফিদা রইলেন আর এই একটাই পিঠের বর্ণাবলেপে ভরে গেলেন ক্যানভাসের পর ক্যানভাস, বানাইলেন ‘গজগামিনী’, তা সেই সিনেমা চার্টবাস্টার না-হইলেও ফেলনা তো নয়, সেখানে মাধুরিজির গমন-চলন তো সভ্যতার আলোকদীপ্তি। ফিদা, আহা, মাধুরিফিদা! আনিল কপুরের সঙ্গেই কি মাধুরির কেমিস্ট্রিটা ফাটাফাটি জমেছিল? বলা মুশকিল। সোনমের বাপের সনেই মাধুরিজির বক্সঅফিস্ হিট অন্তত ডজনখানেক, তাই বলে অন্য কেউ রসায়নঘন মাধুরিনায়ক নন বলা যাবে না। মাধুরির সঙ্গে এমনকি মিস্টার পার্ফেকশনিস্ট বেঁটে আমির খানের যেমন স্যুপারহিট ‘দিল্’ রয়েছে হিস্ট্রিতে, তেমনি ‘কয়লা’ বা ‘হাম আপ্কে হ্যায় কৌন’ প্রভৃতি মনে রেখে সল্লু-শারুখের সঙ্গেও তো উনার রসায়ন শোভন-সুদর্শনীয় হয়েছে না-বলে পারা যাবে না। আর ওই সময়ের স্টারডাস্ট-সিনেব্লিৎস্ ম্যাগাজিনগুলোর রিউমারাস রিপোর্টাজ-ফিচার প্রভৃতি কানে রেখে বিবেচনা করলে, বলিউডি দীর্ঘশ্বাস সাঞ্জুবাবা-মাধুরি জোড়ের রিয়েল-লাইফ ইশকিয়া আর তাদের স্ক্রিন-কেমিস্ট্রি অ্যাট্-লিস্ট ‘খলনায়ক’ অথবা ‘সাজন’ মনে রাখলে তো অনস্বীকার্য। সাঞ্জয়-মাধুরি দিল্লাগি যদিও অমিতাভ-রেখা পুরাণের ন্যায় অত পোক্ত হইতে পারে নাই। জ্যাকি শ্রফ অথবা হালের রণবির কপুরের সঙ্গেও তো মাধুরি স্ক্রিনে মৎস্যকন্যাসাবলীল। ‘দেবদাস’ বাদই দিনু, যতই ইন্ডাস্ট্রিথ্রব প্রোডাকশন হউক, জমকালো জবরজং কস্ট্যুম-কোরিয়োগ্র্যাফির কারণে ব্যক্তিক অ্যালার্জি বিধায়। কিন্তু ‘পুকার’ সিনেমার সেই ‘ক্যাই স্যারা স্যারা’ গানে মাধুরিনৃত্য! বাপ রে বাপ! সেই প্রভুদেবার কোরিয়োগ্র্যাফিতে ড্যান্স! সেই শরীরের শঙ্খসুন্দর অ্যাক্রোব্যাটিক্স! চোখের ভ্রুকুটিনৃত্য ও কটাক্ষে-অপাঙ্গে সেই কসমিক একেকটা এক্সপ্রেশন! পান্ডিট বির্জু মহারাজ আর মাধুরিজি মিলে নাচের নতুন নন্দনই তৈয়ার করে নিলেন চোখের সামনে। সেই তেজাবের ‘এক দো তিন চার পাঁচ ছে’ থেকে এই মিশন শুরু হয়েছিল, অমলিন এখনও, আজও চমৎকার। ‘মেরা পিয়া ঘর আয়া’, ‘ধাক ধাক করনে লাগা’, বা ‘চোলি কা পিছে’ এইসকল নাচকাজ তো অনবদ্য চিরদিন। আইটেমের ইটিশপিটিশ দিয়া তো এই জিনিশ বিচার্য হবার নহে। নেভার এভার।

এবার একটু স্টোরিলাইন ও সিনেমার ন্যারেটিভ নজর করে দেখা যাক৷ নো-ডাউট যে ‘দেড়-ইশকিয়া’ প্রেমোপাখ্যান, প্রেমেরই সিনেমা। তা, বটে৷ এই প্রেমটা কিন্তু আদপেও বেগম পারা আর ইফতেখারের নয়৷ প্রেমটা পারা জান আর মুনিয়ার৷ ভিমরি খাওয়ার কিছু নাই কিন্তু। ভিমরি খেয়েছিল বাব্বন আর ইফতেখার৷ ছবির প্রথমেই এই ইঙ্গিত ছিল, যখন মুনিয়াকে বেগম পারার মাথায় চুমু খেয়ে সান্ত্বনা বা আশ্বাস ইত্যাদি দিতে দেখা যায়৷ কিন্তু ওই পর্যন্তই৷ বিষয়টা আরেকটু খোলাসা হয় যখন পারা জান আর মুনিয়া দোঁহে মিলিয়া বাব্বন আর ইফতেখারের হাত-পা বেঁধে একটা আউটহাউসে আটকায়া রাখে৷ পাশের ঘর থেকে তাদের ছায়ামিথুনমুরতি দেখা যায়৷ নাচতে নাচতে দুটো শরীরের এক হয়ে যাওয়া বা শঙ্খলাগা শিলিউট৷ ছায়ানাচ। এক্সটেইসি আর অর্গ্যাজমিক ইশারা। আর তখনই ইফতেখার ও বাব্বনের পৌরুষ আহত হবার মুখাভিব্যক্তি দেখে উঠি৷ কিন্তু ছবিতে মেলোড্রামা না-রেখে একটা সাংঘাতিক বিকল্পভাবিত অতিনাটকীয়তার প্রোজেকশন পরিকল্পিত হইবার কারণে কোনো অভিব্যক্তিই ঠিক বেশিক্ষণ স্টে করতে দেয়া হয় নাই বিধায় এর মিস্টেরি ও মিমিক্রি, এর ট্র্যাজিক কমেডি কিংবা এর কমিক ট্র্যাজেডি সঞ্চারক সিনগুলো অধিক খোলতাই হতে পেরেছে বৈকি। কিংবা আরও দুইটা প্রামাণ্য দৃশ্যের কথা ভাবা যাইতে পারে। যেমন পারা জানের রূপমোহিত পাণিপ্রার্থী ইফতেখার যখন পারা জানের একা-থাকা নাজুক মুহূর্তে প্লেস্ করতে যায় নিজের পরিচয় এবং সরাসরি নিবেদন করতে যায় প্রেম, গ্রহণে-অনিচ্ছ বেগম পারা কান্নাদ্য নয়নে ঠেলে বের করে দেয় বেচারা ইফতেখারকে এবং পরের দৃশ্যে অ্যাব্র্যাপ্টলি তীব্র আবেগে মুনিয়াকে আলিঙ্গন ও মুনিয়ার প্রকাশাভিব্যক্তিগত সূক্ষ্ম ইঙ্গিত। অথবা আরেকটা জায়গায় বাব্বনের সঙ্গে অভিসার সেরে ফেরা মুনিয়া পারা-জানকে পেছন দিক থেকে সহর্ষ জড়িয়ে ধরার পরক্ষণে পারা তার শরীরঘ্রাণ থেকে আঁচপূর্বক অপাঙ্গে মুনিয়াকে নেয়ে-ধুয়ে আসতে বলার সময় পারার মৌহূর্তিক ভাবান্তর। এইসব তো পরিস্কার ও জোরালো প্রমাণ। অথবা ক্লাইমেক্সপ্রতিম একটা জায়গায় বাব্বন যখন তার অভিসারিকা ও অলরেডি-সম্ভুক্ত মুনিয়ার সামনে অর্থী হয়ে পরিণয়প্রস্তাব পেশ করে, সেইসময় মুনিয়ার বিরাগ ও বিরক্তি প্রকাশক চূর্ণসংলাপ, খানিক পরেই মুনিয়াকে সক্রোধ ও সখেদ বলতে শোনা যায় যে, এখনকার ছেলেরা প্রেমের মানে একদম বুঝতেই পারে না৷ তারা রাত্রিকালীন চিলেকোঠার বা সিঁড়িঘরের ঘেমো-গন্ধকার্দ্র রতিক্রিয়াকেই প্রেম বলে ভেবে একাকার বসে থাকে! সেক্স আর প্রেম — দুইয়ের মধ্যে এরা ফারাক করতে জানে না৷ এই স্টেইটমেন্ট প্রকাশকালীন মুনিয়ার বাচনিক ও কায়িক অভিনয় থেকে এভিডেন্স পোক্ত করা যায়৷ এছাড়া শেষের দিকের সংলাপ, ভয়েসোভার, দুই নারীর হাত-ধরাধরি চিয়ার্স ম্যুডের মুক্তিদৌড় প্রভৃতি তো অন্ধকেও ঐরাবত সম্পর্কে একটা ধারণা দেবার পক্ষে এনাফ হইবার কথা৷ অ্যানিওয়ে। এই সিনেমা ‘ফায়ার’-এর কায়দাকে খানিকটা নিয়ে এবং অনেকটা পাশ কাটায়ে লেসবো তথা মানবীকাম ব্যাপারটা সামনে এনেছে, এবং অসম্ভব সুন্দরভাবেই এনেছে বিলক্ষণ। অবশ্যই৷ সিনেমাটা রিলিজের কিছুদিন আগেই ইন্ডিয়ার সর্বোচ্চ আদালত রায় দিয়েছে একটা, সমকাম বিষয়টাকে মানবিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে, সে-দেশের ৩৭৭ ধারার আন্ডারে এই রায় নিয়া আমরা খবর পড়েছি রিসেন্টলি পত্রপত্রিকায়৷ একটা গানও গেয়ে ফেলেছেন কবীর সুমন মশাই, এই থিম তথা সমকাম নিয়ে, ‘দেবাশীষ’ শিরোনামে সেই সমকাম-সমর্থক গান, যেমন হরহামেশা করছেন তিনি এই কাজটি, ঘটনা ঘটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রিয়্যাকশন জানিয়ে দেবার সঙ্গে একটা জাজমেন্টও দিয়ে ফেলছেন মহাকালের দরিয়ায় গানে-গানে, এই কাজটা সবসময় সমানভাবে ঝুঁকিহীন কাজের-কাজ হচ্ছে কি না কে বলবে। অ্যানিওয়ে অ্যাগেইন। এই ফিল্ম সমকাম-অধিকার সংরক্ষক ওই রায়ের অব্যবহিত পরেই রিলিজ পেল৷

তবে এমন নয় যে, ছেলেবুড়ো হুড়মুড়িয়ে ধরে ফেলবে এর এই আপাত নাজুক পরিস্থিতি তথা সামাজিক ট্যাবু বলে সাব্যস্ত সমকাম অনুষঙ্গ খুব উপরিতলের মশলা হিশেবে এসেছে সিনেমায় — এমন নয় একদম। পুরো ছবিতে কখনও সোচ্চার হয় না সমকাম৷ বিষয়টা লাউড হয়ে ওঠার ঝুঁকি ছিল, উতরে গেছে, একবিন্দু উঁচা তারের বাজনা ভাগ্যিস হয়নি। কিন্তু প্রেম তো লুকিয়ে রাখা যায় না৷ পারা জানের জন্য মুনিয়ার দুশ্চিন্তা বা জীবন-সংশয়াপন্ন মুনিয়াকে ছেড়ে যেতে না চাওয়া বেগম পারা, ভাইস্-ভার্সা সেইম টাইম — এই টুকরো ঘটনাগুলোর মধ্যেই ফুটে ওঠে পরস্পরের প্রতি গভীর প্রেম, গহন সহমর্মিতা৷ তা, আন্ডাউটেডলি, অবশ্যই,  ‘দেড় ইশকিয়া’ প্রেমকাহিনি৷ একটু অন্য ধাঁচের, অন্য-রকমের৷

এই সিনেমা নিয়া তো কৌতূহল ছিল অনেকের সঙ্গে আমারও, শুভমুক্তির আগে হেথা-হোথা নানান তরিকার ম্যুভিরিভিয়্যু নজরে এসে ঠেকছিল, অনলাইন সুবাদে পঠিত তেমন-একটা রিভিয়্যুর  সিলেক্টেড কয়েকাংশ স্বীয় উপভোগাভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়া যাওয়ায় এইখানে সেঁটে রাখিনু। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘গোলাব গ্যাং’ রিলিজ হয়েছে এই সিনেমার অব্যবহিত পরেই। কিন্তু প্রি-রিলিজ প্রোমোশন্যাল হিশেবে সর্বত্র একটা ব্যাপার খুব চোখে লেগেছে। সেইটা হলো, জুহি চাওলার কামব্যাক খুব একটা ওয়েলকাম না-করে সবাই যেন শুধু মাধুরিজি-কি-জয় চিৎকারধ্বনি তুলছে। এইটা পার্শিয়্যাল পক্ষপাত, এইটা ভারি অন্যায়, কেননা আমাদের সময়ের এই দুই নায়িকা দুই ভিন্ন জগতের অভিব্যক্তি দিয়েছেন আমাদেরে। দুজনেই ইকুয়্যালি প্রিয়দর্শিনী। একজন পূর্ণাঙ্গ নারী চিত্রায়নে বেহতর, অন্যজন রাইকিশোরী ইমেজে ইনোসেন্ট একটা আনপ্যারালাল অভিনয় দিয়ে গিয়েছেন আমাদেরে চিরদিন। জুহি ‘গোলাব গ্যাং’ ম্যুভিটায় অ্যান্টিহিরোয়িন রোলে কাস্ট হয়েছেন জেনেছি, নিশ্চয় এইটা কারণ হতে পারে না এহেন বৈমাতৃক আচরণের, কিন্তু ঘটনাটা তাহলে কোথায়, এই একজনকে নিয়া আতিরেক্য ও অন্যজনেরে আন্ডারডগ করে রেখে দেবার! হোয়াটেভার৷

“… এই ছবি একধরনের ক্লাসিক্যাল ইমেজারি নিয়ে এগোতে থাকে। ছবির সংলাপ একেবারেই চাঁচাছোলা। বিশেষ করে যে-যে জায়গায় মজা করে ‘অশ্লীল’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেই জায়গাগুলো আজকের নিউ এজ বাংলা ছবির পরিচালকদের মন দিয়ে দেখার জন্যে অনুরোধ করার স্পর্ধা করছি। কোথাও কোনও সংলাপ এই ছবিতে আরোপিত নয়। বরং উর্দুর গন্ধ আর গড়পরতা পথের হিন্দি সংলাপের রোশনাই খুব চমৎকারভাবে ছবিটির পুরনো সময়ের সঙ্গে নতুন শব্দকে মিলিয়ে দিয়েছে। … ‘দেড় ইশকিয়া’-র লাস্য, দার্ঢ্য, মায়া, মুগ্ধতা সবটাই মাধুরীকে ঘিরে আছে। ছবিতে প্রথম যখন তাকে দেখা গেল, মনে হল চন্দনের বন ছেড়ে বেরিয়ে এল পারা জান। মাধুরীর পাশে হুমা ক্যুরেশিও কিছু কম যান না। আজকের দিনের মেয়ে হুমা, ইচ্ছে হলে একেবারে আচমকাই অল্প চেনা পুরুষের ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে ফেলে আবার প্রয়োজনে নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় সখীর জীবনের জন্যে নিজের জীবন দিয়ে ফেলতে পিছ-পা হয় না। নরম, পেলব বি-টাউনের স্বল্পবাসের নায়িকার দৌড়ে তার সেক্সি টোন আর দাপুটে অভিনয় নিয়ে আশা করা যায় তিনি বলিউড মাতাবেন। বৃদ্ধ, প্রেমিক নাসিরুদ্দিন শাহ — যার চোখে চোরের চাতুরি আর হৃদয় প্রেমের শীর্ষে! — তার অভিনয় জানিয়ে দেয় প্রেমের কোনও বয়স লাগে না। যতরকমের হুল্লোড়ের কারসাজি অভিনয়ে ধরা থাকে আর্শাদ ওয়ার্সির মাদকতায়। ‘দেড় ইশকিয়া’-র উড়ুক্কু মেজাজ, হাসির ফোয়ারা, শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ের উন্মাদনা আর্শাদের চোখে-মুখে ফেরে। … ছবি যখন বিশাল ভরদ্বাজের, তখন গান নিয়ে তো আলাদা করেই বলার থাকে। রোশনাইয়ের আলো আর প্রেমের অন্ধকারের সুরে দর্শকদের ভরিয়ে তোলে রাহাত ফতে আলি আর রেখা ভরদ্বাজ। ছবিতে কিছু পুরনো ঠুংরি গান শোনানো হয়, ধুলোয় মোড়া গ্রামাফোনের ভেতর থেকে সেই সুর যখন আজকের মাল্টিপ্লেক্সের অন্দরে উপচে পড়ে তখন মনে হয়, এই ছবিকে বোধহয় আরও একবার শুনতে হবে। … ‘দেড় ইশকিয়া’ এমন এক ছবি যেখানে ইশক, মহব্বত পূর্ণতা পায় না, কিন্তু ফুরিয়েও যায় না। …”

‘আনন্দবাজার’ অনলাইন ভার্শনের ম্যুভিরিভিয়্যু বিভাগ থেকে উপর্যুক্ত কোটেশন কাট-পেইস্ট করা হইল তথা কাটপিস্ হিশেবে একটা আস্ত অনুচ্ছেদ এইখানে পয়দা করা যাইল৷ কয়েকটা হাল্কা চালের কথা আবারও বলা যাক৷ প্রথমত মেইনস্ট্রিম ব্রডকাস্টিং মিডিয়াগুলোতে — কি বাংলাদেশে কি ইন্ডিয়ান বাংলায় — এই সিনেমা রিলিজোত্তর যতগুলো রিভিয়্যুটাইপ রচনা ছাপা হয়েছে, কোথাও সমকাম প্রসঙ্গে একটা বাক্যও খর্চা করতে দেখা যাইল না, আফসোস! অথবা এমনও হইতে পারে কি যে, সেসব কথাবার্তা বিস্তর হয়েছে কিন্তু চোখে-ছানি বিদ্যমান থাকায় এই বান্দা তাহা ঠাহর করতে পারে নাই! কিন্তু ফলোআপে রেখেছি বিষয়টা, জ্ঞানত নজর সহি কিংবা পাক্কা না-হলেও অন্ধও তো নই, মাগার চোখে একবারও পড়ে নাই কেন-যে, এইটা এক রহস্য। শুধু বাংলা নয়, এই ইংলিশ সাইনবোর্ডবিধৌত দেশের একটাও ইংরেজি ডেইলির এন্টার্টেইনমেন্ট রিভিয়্যুপেইজে ব্যাপারটা আকারে-ইঙ্গিতেও বলা হয় নাই৷ বিষয়টা খানিক খটকা জাগালে একটু ঢুঁ মারতে গেলাম উইকিপিডিয়াপাতায়, কেইস সেইম অ্যাজ্ বিফোর, ফের পাড়ি জমাইলাম ইন্টার্নেট ম্যুভি ডাটাবেইজ তথা আইএমডিবিপৃষ্ঠায়, রেজাল্ট যেই-কে-সেই। শেষোক্ত ভূপৃষ্ঠে এই সিনেমাটাকে একটি ইন্ডিয়ান কমেডি থ্রিলার ফিল্ম আখ্যা দিয়ে এইটা খালুজানরূপী ইফতেখার আর তার ভাগ্নেপ্রতিম বাব্বনের রাজকীয় নেক্লেইস চুরি ও তৎপরবর্তী বিচিত্রিত ঘটনাঘটনের অভিযান বলে পরিচয় দেয়া হয়েছে, সেইসঙ্গে এ-ও বলা হয়েছে এইটা উত্তরপ্রদেশী এক নওয়াবের রাড়ি শ্রীযুক্তা পারা আর তার সার্বক্ষণিক সহচরী মুনিয়ার অভিযানও বটে। এবং মুনিয়া আর পারার পরিচয়ে বলা হয়েছে তারা ‘দি বিউটিফুল অ্যান্ড্ মোস্ট ডেইঞ্জারাস’ দুই চরিত্র। কথা না-হক নয়, কিন্তু কথা আলবৎ অসম্পূর্ণ ও খণ্ডিত। বলা হয়েছে, বেগম পারা হইলেন নওয়াবের উইডো এবং তারই ‘ক্যুইক-উইটেড অ্যান্ড্ মিস্টেরিয়াস ফ্রেন্ড অ্যান্ড্ অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হইলেন মুনিয়া। তা, এরা দুইজনে-যে লেসবো-কাপল — তথ্যটা আদৌ লুকানো হইল অথবা জ্ঞাপনযোগ্য নয় বিবেচনায় স্কিপ করা হইল, পরিস্কার নয়। তারপর তো রইল বাকি ফ্রি-এন্সাইক্লোপিডিয়া জ্ঞাপিত উইকিপৃষ্ঠার ওভার্ভিয়্যু ম্যুভিটা সম্পর্কে কেমন ওরিয়েন্টেশন দিচ্ছে সেইটে একটু বলা। তা, আইএমডিবি যথা, বা আর-সমস্ত পত্রপত্রিকা, কাহানি ওলমোস্ট সেইম। কোত্থাও মুনিয়া-পারা মানবজৈবিক প্রেমের স্বীকৃতি দিতে দেখি-তো-লাম-না! তাহলে, একসময় নিজে সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ি, এমন তো হতেই পারে যে আমিই ভুল দর্শিয়াছি। কিন্তু উইকি বলছে এইটা অভিষেক চৌবে পরিচালিত ইন্ডিয়ান ব্ল্যাক কমেডি থ্রিলার এবং উহা বিশাল ভরদ্বাজ ও রমন মারু প্রযোজিত পূর্ববর্তী ‘ইশকিয়া’ সিনেমার একটি সিক্যুয়েল। প্লট যেটুকু বর্ণনা করা হয়েছে, তা থেকে যেই-কে-সেই মনে হবে যে এইখানে বেগম পারা পেয়ার্ড উইথ খালুজান তথা চান্দপুরের নকল নওয়াবরূপী ইফতেখার এবং মুনিয়া পেয়ার্ড উইথ বাব্বন। অথচ মুনিয়া-পারা জোড়কে একবারের জন্যও জুধা হইতে দেখা তো যায় না সিনেমায়। এইটা ঠিক, মুনিয়া বাইসেক্সুয়াল বলে এন্তার নজির দেখাইলেও বেগম পারা জান হোমোনিষ্ঠ। তবে এই বিষয়াদি নিয়া মাতব্বর মিডিয়া কেন ও কোন মতলবে খামোশ, প্রশ্ন ভেজিনু জনগণের আরশে। দি অ্যান্সার, মাই ফ্রেন্ড, বব ডিলান যদি দিয়ে যেতেন গানে গানে ব্যাখ্যা করে!

এই লুকাছাপাটা বাংলাতেই সীমায়িত রইলে এহেন রম্য অবতারণার দরকার হতো না। কারণ বাংলা মেইনস্ট্রিম মিডিয়া তো উপরিতলে টেক্কা-মারা বাহাদুর, তবে এন্ড্-অফ-দ্য-ডে প্রথানুবর্তনের বাইরে যেতে খুব-একটা তারে দেখা যায় না। ন্যাশন্যাল ট্র্যাডিশন ও অন্যান্য কুশপুত্তলিকামার্কা ভ্যালু যতই-না কাষ্ঠখণ্ড-বংশদণ্ড হোক, ঐতিহ্য জেয়োপার্ডাইজ হবার আশঙ্কা আছে এমন কোনো সদকর্ম সমাধার হিম্মৎ মূলধারা বাংলা মিডিয়ার নাই এবং থাকলেও সে ডেয়ার-ডেভিল কোনো রোল প্লে করতে যাবে না। মাঝদরিয়ায় কেলিরত বিত্তওয়ালাদের দ্বারা ও তরে যেহেতু পত্তনি ও পরিচালনা তার, মূলধারা মিডিয়ার, কাজেই সে এহেন পুতুপুতু সত্যপুত্র হইবেই। কিন্তু বঙ্গবহির্ভূত বিহার-উড়িষ্যা-আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে হেন লুকোছাপা খানিক অ্যাটেনশন ড্র করে বৈকি।

ইনফর্মেশন হাইড করা এক জিনিশ, মানে আমি ফিমেইল ইশকিয়া চাপা দিয়া গেলাম, আর বানোয়াট তথ্যারোপ সম্পূর্ণ অন্য। যত ন্যাক্কারজনকই হোক-না-কেন কখনো কখনো তথ্য লুকানো অথবা পাশ-কাটানো দরকার হইতেও পারে মুনাফা খাওয়া বা রাষ্ট্রীয়-বিরাষ্ট্রীয় স্ট্র্যাটেজিক কারণে। কিন্তু যখন ফেব্রিকেটেড তথ্য ম্যানুফ্যাকচার করা হয় এবং একযোগে সেই তথ্য ব্রডকাস্ট করা হয়, ব্যাপারটা উৎকট হয়ে ওঠে, ব্যাপারটা ভাবায়। ‘দেড় ইশকিয়া’-তে কেবল নয়, এমনটা আমরা ঘটতে দেখব শ্যাম বেনেগাল কি মীরা নায়ার কি দীপা মেহতা বা ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রমুখের ম্যুভি যখন মেইনস্ট্রিমে রিভিয়্যু অথবা প্রোমোট করা হয়। এইটা ভারি ইন্টারেস্টিং যে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ঠিক কোথায় যেয়ে কোন কোন পয়েন্টে অস্বস্তি ফিল করছে, মুখ লুকাচ্ছে, ফণা উঁচাচ্ছে ফণা নামাচ্ছে, আন্দাজি তথ্য আমদানি ও আরোপ করছে — এই ব্যাপারগুলো নজর করে দেখা দরকারি। লিনিয়্যার কিছু নয় ব্যাপারটা, স্ট্যাটিকও নয়, ইভোল্ভিং ওভার টাইম। তবে এইটা আন্দাজি কিংবা খামাখা নয়, ইনফর্মেশন লুকানোচুরানো বা তথ্য গড়াপেটা করা হয় নিগূঢ় কোনো অভিসন্ধি থেকেই নিশ্চয়। ইনফর্মেশন টেম্পারিং, ফ্যাব্রিকেশন, ম্যানুফ্যাকচারিং প্রভৃতি প্রিমিটিভ টাইম থেকেই পৃথিবীতে বিরাজমান।

ইনফর্মেশন টেম্পারিঙের মধ্য দিয়ে, তথ্য তছরূপ অথবা জ্ঞাতব্য তথ্য ডাইভার্শনের মাধ্যমে, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া কেমনভাবে তার মকসুদ হাসিল করে, একটু দেখা যাক। অনেক লড়াই করে সেন্সরফাঁড়ি পারায়ে একটা সিনেমা বাজারে এল যার নাম, ধরা যাক, ‘ফায়ার’। অথবা ‘গাণ্ডু’, ধরা যাক। তো, মূলধারা মাধ্যমের গণবণিকেরা সেই সিনেমাটা নিয়া তাদের প্রচারপত্রে একটা সচিত্র ফিচার ছাপাইল। ভদ্রলোকেরা জানলেন, ওই মিডিয়ার রেগ্যুলার খদ্দের জেন্টল লোকেরা তাতে একিন স্থাপিলেন, সিনেমাটা তারা দেখবেন ও তাদের যার-যার গ্রিপে-থাকা সমাজে সেই সিনেমা সম্পর্কে বুঝদার স্তবকীর্তন গাইবেন মর্মে মনস্থ করিলেন। ঘটনাচক্করে দেখা গেল যে সেই সিনেমায় এমনকিছু প্রদর্শিত হইল যা তাদের, না-ঘর-কা না-ঘাট-কা রুচিবোধের সেই বেগুনবিলাসী ভদ্রলোকদের, প্রথাশাসিত পেটের জন্য অস্বস্তিকর। তখন উনারা খাপ্পা হইবেন ওই ইমাম পত্রিকার বিরুদ্ধে, এবং ফলত পত্রিকাটার সার্কুলেশনফ্লো ব্যাহত হইবার আশঙ্কা জোরদার হবে। এই রিস্ক এড়ানোর একটা মাঝামাঝি পথ, অতএব, পত্রিকাগুলো কর্তৃক অনুসৃত হয়ে আসছে। সেইটা চাক্ষুষ হয় সিনেমার প্রোমোশন্যাল ফিচার/রিপোর্টাজগুলো মন দিয়া পাঠ করিলে। দেখা যাবে একটা জায়গায় যেয়ে সেই ফিচার এলান করছে, এবং খুবই নিরীহ-নৈর্ব্যক্তিক সেই এলানের ভঙ্গি, সিনেমাটাতে ‘সমকাম’ দেখানো হয়েছে এবং অমুক-তমুক খুব খোলামেলা ও সাহসী অ্যাক্টিং করেছেন … ইত্যাদি। ব্বাস্! ভদ্রলোকদের লাগি ইশারাই কাফি হ্যায়। জেন্টল লোকসভা আর তাদের বউবাচ্চাস্বামীসন্তানেরা হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিলেন, যাক বাবা, পরিবারের আদালতে বিব্রত হইতে হইল না। আদারোয়াইজ ভদ্রলোকেরা বালবাচ্চা লইয়া বিপদে পড়িতেন, ম্যাসাকার হইয়া যাইত, ভদ্রলোকসমাজে জেনোসাইড সংঘটনা শুরু হইত। তবে কি তিনারা অবলোকিবেন না ওই সিনেমা? না, তা কেন, অবলোকিবেন জরুর, তবে নুকিয়ে-নুকিয়ে, যেনবা হার্ডকোর পর্নোগ্র্যাফিয়া উপভোগিছেন। চন্দ্রবিন্দুর একটা গান আছে ‘বাঙালি’ শিরোনামে, জেন্টল (মতান্তরে জেনিটাল) এই ভদ্রলোকেরে সেই গানে দেখা গেছে : “মোবাইলে ঝিঙ্কু ছবি আড়াল হলেই গিন্নি” … ইত্যাদি … আহা!

ভাবা যাক একবার, ‘এমন যদি হতো’ রূপকথাভাবনার আদলে ফ্যান্টাসাইজড্, যদি মিডিয়াগুলো ম্যুভিটি রিভিয়্যু/প্রোমোট করতে যেয়ে এমনধারা আলগা বিশেষণ প্রয়োগ ব্যতিরেকে স্রেফ যথাযোগ্য মুক্তম্মন্য প্রচারটুকু করিয়া যাইত, তো কেমন হইত? স্ট্রংলি রিকমেন্ড করার কথা বলছি না, পাঠক-দর্শককে ডিক্টেট করার বিজ্ঞাপনী ডিউটি মিডিয়া সারাক্ষণই করিয়া যাইছে যদিও, এই সিনেমা বা এমনধারার সিনেমা-যে মানুষের সম্পর্ক ও মানবিক মৌল বোধানুভূতিগুলো লইয়া নির্মিত — কেবল এই সত্য/তথ্য প্রচারিলেই তো হইত। যদি হইত এমন, ‘এমন যদি হতো’, ভদ্রলোকেরা এদ্দিনে এট্টু মানুষ হইলেও হইতে পারত মনে হয়। জেন্টলম্যানেরা জেনিটাল ছাড়াও বুদ্ধিবিবেচনায় একটু ম্যাচিউর হইত নিশ্চয়। অ্যানিওয়ে। ‘দেড় ইশকিয়া’ কেইসের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছে যে, চেপে যেয়ে একটা ভালো ও বিনোদনঋদ্ধ ম্যুভি সপরিবার দেখিতে পাইল উদ্ভট ভদ্রলোকদের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ-সহাবস্থানপ্রিয় সকলে। লেবেল সেঁটে এইটা রিভিয়্যুড্ হইলে পরে একটা প্রি-ডিটার্মাইন্ড ইম্প্রেশন লইয়া পাব্লিক দেখিতে বসিত আর সিনেমাটা তার টার্গেট-অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাইতে দেরি হইত।

এইবার নামকরণের সার্থকতা নিয়া চাইরটা লাইন লেখা যাক। ‘দোবারা ইশকিয়া’ নাম হইতে পারত, ‘ইশকিয়া ওয়ান্স অ্যাগেইন’ নামও হইতে পারত হয়তো-বা, তা না-হয়ে কেন ‘দেড় ইশকিয়া’ নাম হইতে গেল! এর পেছনে ডিরেক্টর মশাইয়ের কোনো ইন্টেনশন কাজ করেছে কি না, জানা না-গেলেও আন্দাজ তো করা যাইতেই পারে একভাবে। এইটাও কবুল করতে হয় যে, একজন ভদ্রলোকের কাজ নয় কারো গোপন অ্যাজেন্ডা বা ইন্টেনশন যা কিনা জনসমক্ষে গরহাজির তা নিয়া আলাপ তোলা। তা, বলিউডি ফিল্মের পোকা আমাদের ন্যায় স্পেক্টেটর্স খুব-যে আহামরি রইস আদমি — ইতিহাসে এর তো জোরালো যুক্তিচিত্তির নাই। কাজেই কিছুটা আন্দাজি চালানো যাইতেই পারে। একটা ব্যাপার তো ঠিক যে, একটা ম্যুভিনির্মাণকলার সঙ্গে বেশ বড়সড় বিনিয়োগ ও লোকবল জড়িত বিধায় এর নামকরণ থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি ইচ-অ্যান্ড্-এভ্রি ডিটেইল্স খুব ভেবেবুঝে করা হয়, এর নামকরণ রীতিমতো আকিকানুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই তো করা হয়ে থাকে। সেহেতু এর ভেতর দিয়ে একটা সামাজিক লোকমানস তো প্রচ্ছন্ন অথবা প্রকটভাবে আভাসিত হয়। এখন, ব্যাপারটা কি এমন যে, ফিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটির বিষয়টাকে এই সিনেমার টিমমেম্বাররা বা এককভাবে এর পরিচালক ভগ্নাংশ হিশেবে ভেবেছেন! পুরুষ-নারী বাইন্যারি রিলেশন ব্যতিরেকে প্রেম পূর্ণতা পায় না — এমন প্রত্যয় কি ডিরেক্টরের মনোজগতে খেলা করে যায় নাই! নাকি সৃজনকর্তা ব্যক্তিগতভাবে এই বিশ্বাসপ্রথার অনুবর্তী না-হয়েও লোকশিক্ষার মহান ডিউটি-বিয়ারার হইতে চাইলেন! সমাজ উচ্ছন্নে চলে যেতে পারে — হেন শঙ্কায় প্রেমে কলঙ্ক ঢালিলেন! প্রোডাকশন-রিপ্রোডাকশন ব্যাহত হইবার ভয়ে একটা মানবিক সম্পর্ক অস্বীকার করিয়া যাইলেন! স্বোয়ামি আর ইস্তিরি বানাইছে যেই মিস্তিরি — সেই মাইটি লর্ডের কোনো গোপন ইশারা পালন করিলেন! পরিচালক বড় পায়াস্ দেখি হে! এবং পরিচালকের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার তাবৎ মিডিয়াপাণ্ডবকুল নিজেদেরে সভ্যতা ও সন্তানধাত্রী রিলিজিয়াস বিলিভার প্রমাণিতে এত্ত তৎপর! মধ্যবিত্ত বেগুনবিলাসীদের কাছে এ-ই তো প্রত্যাশিত। অন্যদিকে শীত ও গ্রীষ্মকালীন দৈনিক আলু-মুলা-মার্তণ্ডপৃথুলা পত্রিকাগুলোর তো রয়েছে খতিবভীতি। খোশখবর, আইজ্ঞা, আমোদেরও বটে! এখন কথা হলো, অতটা আন্দাজি চিন্তাভাবনা সোসাইটি তো সইবে না। খামোশ!

পজিটিভলি কিছু নজর করা যায় না? তা যাবে না কেন, খুব যায়, চেষ্টায় কী না হয়! একের অধিক দেড় — অ্যাডাম আর ইভ মিলে যদি হয় এক তথা পূর্ণ, তো ইভ ও কাউন্টার-ইভ উমদা আরও অধিকতর তথা দেড় — এইভাবেও ভাবা যায়। সেইটা, মানে সেভাবে, ভাবার একটা এন্ট্রিপয়েন্ট তো রাখতে হবে টেক্সটের মধ্যেই। কিন্তু নাই, সিনেমার শেষাংশে যেয়ে ভয়েসোভারে ‘দেড় মাহিনে-কি বাদ’ উচ্চারণে ‘দেড়’ শব্দটা ছাড়া আর-কোথাও ওই শব্দটা কানে এসে তেমন ঠোক্কর তো মারিল না! দেড় অবশ্য দেড়িয়া বা অতিরিক্ত অর্থেও প্রযুক্ত হইতে পারে, এক্সট্রা লার্জের অর্থদ্যোতনা। তা, বাংলাদেশের গাওগেরামে একটা কমন কনোটেশন রয়েছে এর — দেড় অনুসর্গযুক্ত শব্দের। যেমন দেড়আংলা। সাধারণত পুরুষকে হেয় করার মোক্ষম অস্ত্র, সমাজসমক্ষে, পুরুষের মর্দামি নিয়া সন্দেহ প্রকাশ, রতিশক্তির কমজোরি নিয়া আন্দু কটাক্ষ করে বেচারা পুরুষেরে শায়েস্তা। যার জননাঙ্গ জুৎসই নয় এবং ফলত যে তার দয়িতারে বেশ-আচ্ছামতো সুখশান্তি দিতে অপারগ বলে সমাজ সাব্যস্ত করে, তারেই অলমাইটি সোসাইটি দেড়আংলা বলিয়া মাথা হেঁট করাইতে অ্যাকশনে যায় এবং নির্ব্যতিক্রম সফলকামও হয়। অ্যানিওয়ে। এইসব ভেবে তো ইশকিয়া হয় না, আর দেড়-ইশকিয়া  দেখার সময় এইসব ফায়্শা ভাবনা পাছপকেটে পুরে দেখতে বসা কল্যাণকর তথা কল্যাণ-অর্থনীতিকর। তাতে খেল খতম, পয়সা উসুল, পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর। তবু হায়! কেবলি চিন্তার জন্ম হয় দিদৃক্ষার ভিতর। দৃশ্যের ওপারে কেবলি দৃশ্য, মন্তাজ, যেমন ঘাসের ভেতরে ঘাস, বাতাসের ওপারে বাতাস, এঞ্জিনের ন্যায় ডানা ঝাপ্টায়ে উড়িয়া যায় জীবনদাশের বুনোহাঁস, আকাশে-আকাশে ছড়ানো অপার আকাশ।

লেখা : জাহেদ আহমদ ২০১৪


নিবন্ধটা  ‘লাল জীপের ডায়েরী’ ওয়েবম্যাগে ২০১৪ সনে  ‘দেড় ইশকিয়া’ রিলিজের অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়েছিল আগে। এইবার প্রকাশপ্রাক্কালে বেশকিছু টাইপো শোধরানো গেল। — লেখক

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you