২০১২ সালে দেশে এক নতুন জিনিশের আবির্ভাব হইল। ঢাকার এক ময়দানে মুফতে আমরা বইসা গেলাম ক্লাসিক মিউজিক শুনতে। নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের ধর্মীয় আসরের মতো মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত সমাজের একটা বড় অংশকে চুম্বকের মতো টানলো এই উৎসব। দেশী (নামমাত্র) উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী আর বিশ্বসেরারা একই মঞ্চে গাইলেন। বুঝলেও না-বুঝলেও কেবল সুর আর অনুভবের টানে আমরা সেই উৎসবে ভিড় করতাম।
দেখা গেল বিজ্ঞাপনী বাজারেও এই পণ্য মানে কন্সার্টের মতো একটাকিছু ভালো খাইতেছে পাব্লিক। তো একমেবাদ্বিতীয়ম উৎসবটার পাশাপাশি ২০১৫ সালে দাঁড়াইল আরেকটা উৎসব, নাম ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্ট। ভাবলাম ক্লাসিক তো খুব-একটা বুঝি না, যা-ই-হোক এবার আরও একটু বেশি স্বাদ নেয়া যাবে এই উৎসব থেকে। এবারও তাই দলেবলে আমরা হাজির হইলাম। দেখলাম একশ্রেণির এলিটিস্ট দর্শক-শ্রোতা শুরু থেকেই এই উৎসবে গরহাজির।
প্রথম বর্ষে (২০১৫) ভয়ানক এলোমেলো একটা উৎসবকে আমরা ভুলে গেলাম, পরের বছর আরও ভালো হবে আশায়। দ্বিতীয় বছরও এলোমেলো একটা জগাখিচুড়ি ফোকউৎসব দেখে রীতিমতো কান মুচড়েছিলাম যে আর যাব না।
চলতি বছর নানাবিধ জটিলতায় ক্লাসিক ফেস্ট অনুমতি না পাওয়ায় বিগত কয়েক বছরের অভ্যস্ততাকে না এড়াতে পেরে হাজির হইছিলাম আর্মি স্টেডিয়ামে। গিয়া মনে হইল গতবারের সাউন্ডসিস্টেমটার জায়গায় একটু উন্নতি আসছে। গেইটগুলোতে এন্ট্রির সিস্টেমটাও একটু উন্নত হইছে। কিন্তু মূল যে জায়গা যেইটা, সেইটা হইল ফোক (মানে লোকউৎসব) ফেস্ট হইতেছে কি না।
প্রথম দিনে ঢুকতে একটু দেরি হয়ে যাওয়ার পর গিয়ে দেখি তিব্বতি শিল্পী তেনজিং চোয়েগাল-এর গান চলতেছে। মন্দ না। দুই-তিনটা গানের সুর মজা লাগছে। এত কেওয়াজের মধ্যে এইটুক ঢের প্রাপ্তি। তবে উনি ফোক গান গাইলেও তার অধিকাংশ ইনস্ট্রুমেন্টই ছিল মডার্ন। এর আগেরগুলো মিস করায় বাকি ছিল অসমিয়া শিল্পী পাপনের গান।
পাপন আদতে ফোকশিল্পী না। সে কিছু ফোকগানের ফিউশন করছে। আমগো হাবিবও যেমন করছে, অবশ্য এরচে ভালো উদাহরণ কায়ারে দিলে হয়। যিনি মূলত একজন সংগীত-আয়োজক ও পরিচালক। কিন্তু ফোকশিল্পী না। পাপনও তেমনই। বাংলাদেশে পাপনের ভক্তদের মধ্যে মাত্র দুইটা ফোকগান আর দুইটা সিনেমার গানের জন্য তিনি জনপ্রিয়। আদতে তিনি এখন পুরোদস্তর প্লেব্যাক সিঙ্গার। এইখানেও একটানা কয়েকটা সিনেমার গান গাইলো।
গতবারের তুলনায় কিছুটা গোছানো হইলেও মূল যেইটা বিষয়, সেইখানেই মনোযোগ কম। মানে এইটা যে ফোকউৎসব এইটা বোধহয় তাদের বোধে নাই। তারা আসলে কি চায় এইটা মনে হয় তাদের কাছেও স্পষ্ট না! এইসব দেখেশুনে রাইত বারোটার কয়েক মিনিট আগে বের হয়ে আসছি। আসার সময় বনানী পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে মনে হইছে, কেবল নানা দেশের ফোক শিল্পীদের আনলেই সেটা ফোকউৎসব হয়ে যায় না। বরং একটা ভালো বড় ইভেন্ট হইতে পারে, যা ভালো দামে বিক্রয়যোগ্য।
[metaslider id=2839]
… …
- বাতাসের মতো মোহময় || ইলিয়াস কমল - November 25, 2024
- বন্ধুর বই || ইলিয়াস কমল - November 22, 2024
- কেন কমার্শিয়াল ছবি নিয়মিত দেখি - October 8, 2024
COMMENTS