নতুন দিনের সিনেমা ও পাখিপ্রেমিকের মামলামোকদ্দমা || কাজী ইব্রাহিম পিয়াস

নতুন দিনের সিনেমা ও পাখিপ্রেমিকের মামলামোকদ্দমা || কাজী ইব্রাহিম পিয়াস

স্বজাতির ভেতর কেউ ভালো কিছু করবে আর তা আমরা টেনে ধরে নামাব না? কলঙ্কিত করব না? দুইভাগ হব না? অসম্ভব, এ হতেই পারে না!

একে তো ভালো সিনেমা বানাবার মতো গাটসওয়ালা নির্মাতা আমাদের কম; মার্কেট চিন্তা করে ভালো সিনেমা চাইলেও বানানো সম্ভব হয় না! এরপরেও যারা এফডিসির ফর্মুলা সিনেমার বাইরে ভালো সিনেমা বানাতে চায় — দর্শক রেডি নাই, ভালো হল নাই, লগ্নি ওঠে না বলে প্রযোজক ইনভেস্টমেন্টও করে না।

তারপরেও বিশেষ করে স্বাধীন ধারার পরিচালকেরা যুদ্ধ করে কালেভদ্রে দুয়েকটা ভালো সিনেমা বানাতে পারে বলে তা নিয়ে কথা হয়, আলোচনা-সমালোচনা হয়।

সুনির্মিত, ভালো সিনেমা জনপ্রিয় হওয়া দুটোই একসাথে হবার ঘটনা আমাদের দেশে সিনেমার ইতিহাসে বিরল! হাতে গোনা এ-রকম কয়েকটি সিনেমার মধ্যে সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত মেজবাউর রহমান সুমন (Mejbaur Rahman Sumon) নির্মিত ‘হাওয়া’ সিনেমাটি অনেকদিন পর সকল শ্রেণির দর্শককে কানেক্ট করেছে! মানুষ দলেবলে হলে গিয়ে হাওয়া  সিনেমার গল্প, অভিনয়, চিত্রগ্রহণ, সাউন্ড উপভোগ করছে, মোটাদাগে ছবিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে!

এখনো সিনেমাটি হাউজফুল চলছে দেশের বিভিন্ন হলগুলোতে! সিনেপ্লেক্সগুলোতে ২-৩ দিন আগে খুঁজেও টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না! বাংলা সিনেমার এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রথমে ইন্ডাস্ট্রির তামিল ছবির কাটকপিমেকারেরা ছবিটিকে একটি কোরিয়ান (Sea Fog) ছবির নকল বলে হাইপ তোলার চেষ্টা করল, পরে কথিত ‘পরিবেশবাদী-সাংবাদিক’ সিনেমায় শালিক পাখির দৃশ্যে ব্যথিত হওয়া, নির্মাতার বিরুদ্ধে বনবিভাগের মামলা ও ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া এবং সর্বশেষ (২২ অগাস্ট ২০২২) বন অধিদপ্তরের করা মামলায় আদালত সিনেমাটি বন্ধের লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করল!

চলুন এই পর্যায়ে আসল সত্য জেনে নেওয়া যাক। শালিক পাখিটিকে শুটিং শেষে খোলা আকাশে অবমুক্ত করা হয়েছে যা সিনেমার ডিসক্লেইমার অংশে বলা আছে এবং একটি দৃশ্যে পালিত পাখিটিকে চান মাঝির (চঞ্চল চৌধুরী) পুড়িয়ে খাওয়ার যে দৃশ্যটি দেখানো হয়েছে তা আদতে ছিল মুরগির গ্রিল করা মাংস, যা নাগরিক জীবনে আমরা প্রাত্যহিক সান্ধ্য নাস্তায় বীরদর্পে ভক্ষণ করে থাকি।

তো এভাবেই বাংলা কন্টেন্টের আকালে একটি ভালো সিনেমার গতিরোধের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা! যেখানে দেশের ক্ষমতাবানেরা বাড়ির পার্সোন্যাল চিড়িয়াখানায় ময়ূর-হরিণ পোষে, চিড়িয়াখানাগুলো বন্যপ্রাণী খাঁচায় বন্দি করে টিকেটের বিনিময়ে দেখায়, কাঁটাবন সহ দেশের শতশত জায়গায় লক্ষ-কোটি পশুপাখি খাঁচায় ভরে রমরমা ইন্ডাস্ট্রি তৈরি হয়ে আছে আর নানান রেস্টুরেন্টে বক সহ নানান রকমের পাখি রীতিমতো ঝালফ্রাই করে বিক্রি করা হচ্ছে সেখানে গ্লোবাল সিনেমার এই যুগে গল্পের প্রয়োজনে একটি শালিক পাখির দৃশ্যের ঘটনাকে ভালোভাবে না বুঝে তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, শেষ পর্যন্ত জোর করে বন্ধ করতে লিগ্যাল নোটিশ পর্যন্ত দিয়ে দেয়!

এদের জন্য যাত্রা সংলাপের, তামিল কপি প্রেম-ভালোবাসা, কাটপিস কাহিনিযুক্ত ৫টা গান আর ৬টা ফাইটের সিনেমাই কি ঠিক ছিল না তবে?

এই মুহূর্তে সিনেমাসংগঠনগুলোর উচিত হবে হাওয়ার পাশে দাঁড়ানো — অন্ততপক্ষে মেরুদণ্ডওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফিল্ম সোসাইটিগুলোর।

কাজী ইব্রাহিম পিয়াস রচনারাশি

আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: