বাউলিয়ানা || মো. ফখরুল ইসলাম

বাউলিয়ানা || মো. ফখরুল ইসলাম

সূর্য আমি দিগন্তে হারাব। অস্তমিত হব ধরণীর বুকে তবু চিহ্ন রেখে যাব।

উপরের কথাগুলো মোঘলসম্রাট আকবরের।

যুগের হাওয়ায় আমি অনেককিছু শিখেছি। সেই শেখা থেকে আজ কিছু বলতে চাই।

আমি শিখেছি জেমসকে। জেনেছি জেমসকে।

বাউল। এক অদ্ভুত ভাষার অদ্ভুত শব্দ। বাউল বাংলার মূলমন্ত্র। বাউল বাংলাকে অনেক দিয়েছে। তেমনি এক বাউল ফারুক মাহফুজ আনাম। এক শহুরে বাউল। যার জনপ্রিয়তা তাকে বানিয়েছে গুরু। ইদানীং তিনি দেবতাও। হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি কিনা বলেন, “দুঃখ উড়াই এক তুড়িতে / স্বপ্ন পোড়াই যত্ন করে / চাঁদকে নাচাই হাতের উপর / জোছনা ছড়াই ইচ্ছেমতন।” এমনই অমোঘ বাণী নিঃসৃত হয় তার বক্ষ চিরে। তাকে পেয়ে গর্বিত আমি, গর্বিত আমরা।

ডায়ার স্ট্রেইটস এবং মার্ক নফ্লারের নগরবাউল জেমস্ সংগীতের মাঝে খুঁজে পায় তাঁর অস্তিত্ব আর ভালোবাসা। তাই তাঁরই ধ্বনি, “ভালোবাসো, ভালোবেসে যাও।” বাংলাকে ভালোবেসে জেমস্ বলেন, বাংলা আমার মা, আমি ভাতে-মাছে বাঙালি। বাংলাকে ভালোবেসে জেমস্ গেয়ে ওঠেন ‘সাড়ে-তিনহাত জন্মভূমি’-র মতো গান।

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত চোখ জুড়াতে সানগ্লাস ছাড়া ভালো দেখতে পান জেমস্। দেখেন দুটো তুখোড় চক্ষু দিয়ে। জেমসের স্বীয় ভাবমূর্তিতে এক অন্যরকম ভালোলাগা বিদ্যমান। চলন, বলন, গায়ন সবকিছুতেই তিনি অনন্য। সমাজের ৮-১০-১২-২০-৪০-৯০ সহস্রজনের চেয়ে আলাদা। তাই নাগরিক জীবনের তর্কবিতর্ক, স্বপ্ন-বাস্তব, জীবিত-মৃত এসবের ধার ধারেন না তিনি।

জীবনের কাছ থেকে লেনদেন বুঝে নেয় যে-যুবকের কণ্ঠস্বর, নিজেকে উজাড় করে যে ঝড়ের রাতে, ক্লান্ত পথের আঁধার যার সঙ্গী, যে তর্জনী উঁচিয়ে সবুজ আগুন জ্বালে, কেবল তার পক্ষেই সম্ভব জন্ম-জন্মান্তরে পুনর্জন্মের স্বপ্ন দেখা। তাঁর সংগীতবোধ তাঁর সারেগারে বলে, চুল খুলে চলো সবে ময়দানে নামি। দুঃখের স্বরকণ্ঠ ছিঁড়ে তাঁর গান জনারণ্যে চিৎকার করে, দুঃখিনী দুঃখ কোরো না। বিশ্বাস, ধর্ম, ঐক্য, প্রগতির নববাণী শোনায় তাঁর গান। শোনায় ভালোবাসা ও ভালোলাগার অমোঘ বাণী। তাই তাঁর আততায়ী ভালোবাসা গিটারের ঝঙ্কারে বলে ওঠে, এই চোখে তাকিও না চৌচির হয়ে যাবে।

বাঙালি জাতি আজ দুইভাগে বিভক্ত বলে বাংলার মানুষের জন্য তিনি বলেন : বাঁচো, বাঁচাও; ভাবো, ভাবাও; শুধু দুঃখ কোরো না। নওগাঁর বড়হাট্টিতে জন্ম নিয়ে জেমস্ ভুবনে আসে ২ অক্টোবর। নওগাঁ আদৌ জানে না যে সে শুধু গাঁজাই জন্ম দেয়নি, একজন জেমসও জন্ম দিয়েছে।

“হেঁটে যায় বিবাগী পথিক হেঁটে হেঁটে যায় / গেয়ে যায় সুরে তালে পথিকের ঠিকানায়।” এই উক্তিতে জেমস্ পরিপূর্ণতা লাভ করে না। নওগাঁর শ্যামল ছায়া রাজ্যপাট ছেড়ে এই জ্যামের শহরে এসে জেমস্ মাঝেমধ্যে যেন তাল হারিয়ে ফেলেন। তাই বের হন লং ড্রাইভে। বেরিয়ে পড়েন আশুলিয়ার দিকে, শ্রীপুরের উদ্দেশে। জেমস্ চিরবোহেমিয়ান।

এই চিরকুটলেখাটিতে চেয়েছি ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসকে তুলে ধরতে, পেরেছি কি না জানি না। সাঁওতালি রক্ত প্রবাহিত সেই মানবটিকে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়েছি শুধু। হয়তো পারিনি। জয়তু জেমস্!


লেখকতথ্য
মো. ফখরুল ইসলাম / জেমস্ পরিষদ / বাসা বি-২/৮, বহুতলা কলোনি / আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম ৪১০০ বাংলাদেশ

প্রথম-প্রকাশতথ্য
ঈদসংখ্যা আনন্দভুবন ২০০০ / জানুয়ারি, ২০০০, ঢাকা

লেখাটি সংক্ষেপিত ও ঈষৎ সম্পাদিত গানপার

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you