উচ্চারণ, ওয়ারফেজ, নোভা : বাংলায় ব্যান্ডসাংগীতিক শোভা

উচ্চারণ, ওয়ারফেজ, নোভা : বাংলায় ব্যান্ডসাংগীতিক শোভা

শেয়ার করুন:

 

ব্যক্তিগত দুর্বিপাকের দিনগুলিতে শুয়ে শুয়ে, বসে বসে, খুঁড়িয়ে পায়চারি করার আবহে ব্যান্ডের গান শুনছিলাম। অতীতকালে যে-জিনিশটাকে ব্যান্ড বলিয়া আমরা জানতাম, বলতাম ব্যান্ডসংগীত, জমানা পাল্টে গেলে সেই জিনিশটাকে জেন-ওয়াই কি জেন-জেডরা ডাকতে শুরু করে এইটা-ওইটা নানা নামে; কেউ রক নামে, কেউবা ডাকে মেটাল, কেউ বহুধা আম্ব্রেলা টার্মের ভুজুংভাজুং ইত্যাদি। কিংবা সাইকেডেলিয়া, প্রোগ্রেসিভ রক, ব্লা ব্লা হাজারবিজার নামে ব্যান্ডসংগীতেরে এখন ডাকতে শুনি। বিদেশের নয়, বাংলার, বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতে এখন খালি নামডাকের বারফট্টাই। লিস্নারদের মধ্যে কেবল নাম লইয়াই কান্দাকাটা, গা-গরম রকবাজ কথাবাত্রা, প্রাণে বেচারিদিগের গান বুঝি ইক্কেবারেই নাই?

কিন্তু নামধাম ব্যাপার না। ব্যাপার গান। ব্যাপার গানশোনা। ব্যান্ড বলতে যে-একটা কালেক্টিভ ওয়েস্টার্নাইজড সংগীতচেষ্টা আমরা জানতাম পুরাকালে, সেইটাই এর শুরুয়াৎ নয়। এরও আগে, এর ঠিক অব্যবহিত পূর্বে, ব্যান্ড বলিয়া জানতাম তাদেরেই যারা শাদি কিংবা শারদীয় পূজাপার্বণে এমনকি সিনেমাহ্যলে কোনো ম্যুভির মহাসমারোহ মুক্তির বিজ্ঞাপন হিশেবে বড়সড়ক দিয়া ট্রাম্পেট-ক্ল্যারিয়োনেট-ফ্লুট বাজিয়ে পোস্টার বিলিয়ে যেত। পরে ‘ব্যান্ডসংগীত’ ব্যাপারটা সামনে এসে যাওয়ায় ‘ব্যান্ডপার্টি’ বলিয়া খ্যাত দলগুলো মহল্লার ঐতিহ্যফর্দ থেকেও উবে যেতে শুরু করে ধীরে। সেই বিশেষ নকশায় ঝালরওয়ালা লাল কটকটা বা শাদা বা হলুদ বর্ণিল মোটা ক্যাম্বিস কাপড়ের কস্টিয়্যুমপরা মানুষগুলোকে এখনও দেখা যায় বটে, রেয়ার্লি সিরিমোনিয়্যাল কোনো ইভেন্টে, সেকেলে কায়দাতেই তারা সাজানো তোরণসমুখে দাঁড়িয়ে বা হাল্কাধীর কুচকাওয়াজঢঙে হেঁটে বাজিয়ে যেতেছেন তাদের বাজনা। আগের সেই রবরবা নাই অবশ্য। লোকের হস্তধৃত ফোনে বা আইপডে এখন দুনিয়ার বাজনাবাদ্য সুলভ যেহেতু।

বলছিলাম নামায়ন নিয়া। নাম অত জরুরি কিছু নয়, বৃক্ষ কভু নামে নয় ফলের মধ্য দিয়াই তার পরিচয়, কিন্তু নামের সঙ্গে যেহেতু অনেক উত্থানপতন আর লড়াইয়ের ইতিহাস জড়িয়ে থাকে, এবং থাকে রক্তধারা আর জাতের পরিচয়, কাজেই নামকরণ হয়ে গেলে সেইটা পাল্টানোর আগে এগারোবার ভাবতে হয়। বাংলাদেশে এখন চলছে নাম পাল্টে ফেলে ইতিহাস নবায়ন তথা নয়া ইতিহাস ফাঁদবার ধুন্দুমার পাঁয়তারা। রাজনৈতিকতার বদ মতলব ছাড়াও এর পেছনে আছে বেশকিছু কন্সপিরেইসি ফ্যাক্টর, আছে ইনফেরিয়োরিটি কমপ্লেক্স, জোরজারি ডিগ্নিটি আদায় করবার একটা পার্টিজ্যান কারবার ছাড়াও দখলদার মানসিকতার হাজিরা শাদা আঁখিতেও লক্ষ করা যায় এসব বদ অভিপ্রায়ের পেছনে। দেখতে হবে শুধু যে একটা নামডাকের পেছনে অ্যাডমেইকারদের মতলববাজি ছিল, নাকি নামটা প্রাকৃতিকভাবে এসেছে। ব্যান্ডসংগীত ধারার জাতনামটা প্রাকৃতিকভাবে এসেছে দেখতে পাবো। কোনো জনবিচ্ছিন্ন মস্তান নেতাকে বা মন্ত্রীমিনিস্টারকে তেলাইবার খায়েশ থেকে ব্যান্ডসংগীত মানুষের মুখে সুনাম/বদনাম পায় নাই। কিন্তু বদলে যাও  আর বদলে দাও  মতলববাজির আওয়াজের মতোই ইদানীং দেখছি ব্যান্ডমিউজিক না-ডেকে লোকে রকমিউজিক ডেকে আরাম পায়। যেন জাতে ওঠে। আসলে তো ওঠে লাটে। ল্যাঠা আছেই-বা আর কট্টুকু অবশিষ্ট যে লাটে উঠবে? ব্যান্ড বলেন বা রক বলেন, কই, খুঁজিয়া নাহি পাই ময়দানে। এদিকে যেমন, ওদিকে তেমনি, ইস্টে-ওয়েস্টে রকের দিন বুড়িয়ে এসেছে ক্রমশ। তবে কি মেটালসূর্য উদিত হলো পূর্বদিগন্তে? র‍্যাপ, হিপহপ? সেইখানেও সমস্যা আছে। ব্যাপার সোজা, নাম নিয়া লাফালাফি থামাও। যদি পারো তো কমলিওয়ালা কামলা ব্যাটা কাম করো। ফুরায়া যায় বাহে, জ্যান্ত রক্তমাংশের খুনপসিনার চিৎকারঝরা গানের স্রোত মিইয়ে এসেছে ক্রমে। সে-প্রসঙ্গে পরে আসব।

পুরানা ব্যান্ডগুলোর মধ্যে বিশেষত নোভার কমপ্লিট ওয়ার্ক্স অনেকদিন ধরে একজায়গায় অ্যাভেইল্যাবল পাচ্ছিলাম না। ভাঙা ভাঙা আট-দশটা ডাউনলোড করা গেছে ঠিকই, ‘ঘুমপাড়ানি মা’ … ‘আয় মেঘ’ … ‘নভোচারী’ … ‘স্বপ্নরানী’ … ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ … ‘রাখাল ছেলে’ … ‘পদ্মার পারে’ … এই জিনিশগুলো বছর-পনেরো পরে শোনা হলো, কিন্তু কমপ্লিট নোভা  আবশ্যক এখনও। তবে যে-কলিগ রোগশয্যার শিয়রে এসে নোভা  তথা ফজল মাহমুদ সমগ্র দিয়া যাবেন মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন, অগত্যা কম্পেন্সেইট করেছেন অন্যান্য কয়েক রচনাসমগ্র দিয়ে; এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি গণ্য আজম খানের বিক্ষিপ্ত রচনাকাজগুলোর সমগ্র সংকলন, বলা ভালো প্রায়-সমগ্র, আমার অনুমান যে এর বাইরেও রয়ে গেছে বেশকিছু খানরচনা। চালুনি নিয়া বাদে একদিন বসা যাবে হয়তো।

মনে পড়বে যে, বেশ-একটা লম্বা বিরতি নিয়া খান যখন পুনরায় গানের মঞ্চে ফেরেন, নব্বইয়ের গোড়ায়, ইন ব্রিফ সময়টা তিরানব্বই-চুরানব্বই, ব্যাক ইন দ্য ডে ব্যান্ড মিউজিক এমনই উত্তাল আর তূরীয় দশায় ছিল যে, সেই-সময়টায় যারা কালেজ-ইশকুলের গলুই ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে/বসে ছিলেন তারা আজ মাঝবয়স পারায়ে গেছেন বা পারাচ্ছেন। ফলে মেমোরি রিকালেকশনের মোক্ষম মুহূর্ত এক্ষুনি না-হলেও অতি বিলম্ব হয়ে যায় পাছে তাই কিছুটা প্রারম্ভিকা আজকেই করিয়া রাখাটা খারাপ হবে না হয়তো।

তো, কথা হলো, নোভা  আর খান  ছাড়াও মাইলসওয়ারফেজ  মিলেছে সমগ্র। পরখ করে গেছি একে একে এই দুই দলের অ্যান্থোলোজি এবং মনে হয়েছে যে এ-দুটো ‘সমগ্র’ বলিয়া সার্টিফাই করা যেতে পারে। কেবল ওয়ারফেজ-এর একটা গান মনে হলো কোনো কারণে মিসিং রয়ে গেছে, সেই গানটার সুর স্পষ্ট বলতে পারব আগাগোড়া, লিরিকের শুরুর পঙক্তি বলতে না-পারলেও মধ্যিখানের ছেঁড়া-ছেঁড়া লাইন্স বেশ মনে আছে, যেখানে ধনী-দরিদ্র পোলারাইজড পৃথিবীচিত্র আঁকতে যেয়ে একপাশে ‘ক্ষুধার চিৎকার’ আর অন্যপাশে ‘প্যল ক্লি মাতিসের ছবি’-র সম্ভোক্তা শ্রেণির প্রসঙ্গ ওঠে, এবং সেই ভীষণ রোমহর্ষক কানপর্দা-ছিঁড়ে-ফেলা বাঁশের তরল্লার ন্যায় তীক্ষ্ণ আর্তনাদ “অথচ কী আনন্দ, কী ভয়াবহ আনন্দ, অথচ …” এইসব লাইনঘাট আছে। সাঞ্জয় না আর-কেউ, কণ্ঠটা নিয়াও দোলাচলে ভুগছি এখন। অপ্রসঙ্গত হলেও বলতে মন চাইছে যে, সাঞ্জয় বা আর-কেউ নয়, কণ্ঠের টিম্বার ভালো লাগত আমার বাবনারটা অধিকাংশত। বহুকাল বাদে মেঘদলের শিবু কুমার শীল এসে এই শ্রোতার কানে কণ্ঠসম্পদের কৌলীন্য দিয়া বাবনার রেন্ডিশন ইয়াদ করিয়ে দিয়েছেন বলা বাহুল্য। দুইজনের দুই কিসিম যদিও। শীলের কণ্ঠ ও প্রক্ষেপণভঙ্গি বিশেষভাবে ব্যান্ডগানে স্মর্তব্য।

তো, ওয়ারফেজ-এর ‘আলো’, ‘জীবনধারা’, ‘অবাক ভালোবাসা’, ‘অসামাজিক’ ছাড়াও পয়লা অ্যালবামটাও ফোল্ডার বানিয়ে পৃথকভাবে গুছিয়ে দিয়েছেন “অশ্লেষার রাক্ষসীবেলায় সমুদ্যত দৈবদুর্বিপাকে” দেখতে আসা আমার সেই সহকর্মী, ইভেন ট্র্যাকগুলোর সঙ্গে গানগুলোর নাম ও নাম্বারিং বাংলায় সেঁটে দেবার ‘মেঘ না-চাইতেই বৃষ্টি’-তুল্য বদান্যতা দেখিয়েছেন তিনি! কিন্তু কয়েকদিন একঘোরে, এবং একঘরে অবস্থায়, কাটানোর শেষে দেখতে পাচ্ছি এই কিস্তি সবচেয়ে বেশি শুনেছি দুইটা গান। এক, আজম খানের ‘জীবনে মরণ কেন আসে রে’, এবং দুই, ওয়ারফেজ-এর ‘জননী’! মিউজিকপ্লেয়ারের লিস্টরেকর্ড দেখে বলছি। কিন্তু কেন? কোন সেই কারণে এই দুইটাই হিট করল, রোগশয্যাশায়ী রিয়্যালিটিবিপর্যস্ত আমার ক্ষেত্রে, দুনিয়ায় এত গান থাকতে? এই জিনিশ নিয়া ভাবি নাই তা নয়, ভেবেছি, কিন্তু মূক বিধায় ভাবনা ভাষাবন্ধনে এনে প্রেজেন্ট করা যাচ্ছে না। ভাষাটা খানিক আয়ত্তে এলে ব্যাপারটা স্থাপিত হবে একদিন নিশ্চয়।

এই এক মুসিবত হয়েছে আজকাল। আগে তবু এহেন মুসিবতে চটজলদি সান্ত্বনা যোগাতাম নিজেরে যে বড় হয়ে এইটা করব ওইটা করব হ্যানত্যান ইত্যাদি বলেটলে; এখন তো এহেন সেল্ফ-কন্সোল্যাশনের সুযোগটাও অন্তর্হিত। বয়স হতে হতে এখন সান্ত্বনাপ্রাপ্তির কিছু নাই, নির্বাণের অপেক্ষা আছে কেবল। অ্যানিওয়ে। ওয়ারফেজ-এর ‘জীবনধারা’ অ্যালবামের ‘জননী’ গানের লিরিক্স আপাতত টুকে রেখে দিতে চাইছি বিশেষ কারণে। একদিন, বড় হয়ে, হয়তো-বা ভাষা হাতড়ে পেয়ে যাব ওয়ারফেজ এবং খানের প্রোক্ত কম্পোজিশনদ্বয় নিয়া আলাপের। জিলিপিপ্যাঁচানো আলাপ নয়, জলবৎ তরলং আলাপ। শ্রবণকালীন জনৈক শ্রোতার ইম্প্রেশন নিয়া আলাপ। তখন বোঝার চেষ্টা করা যাবে ঠিক কি কারণে এই লিরিক্স অতটা শাদামাটা সাধারণ হওয়া সত্ত্বেও সুর ও সংগীতযোজনায় এতটা হার্মোনাইজড। বোঝার চেষ্টা করা যাবে এর আবহে একটা বিদেশি টিউনস্কেপের ইশারা থাকা সত্ত্বেও কোথায় এইটা আপন ও অনন্য, গোটা বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের ক্ষেত্রে সেই কথাগুলো কতটা খাটানো সম্ভব তা-ও একবার বাজিয়ে দেখে নেয়া যাবে। কেন এবং কোন কোন নোশনের কারণে ব্যান্ডের মিউজিকটাকে বেশিরভাগ মানুষ বিদেশি বলিয়া ধাক্কা মারে এবং ফের বুকেও টানিয়া লয়। এই কথাগুলো বলার জন্য সময়সংগতি এবং পরিসর দরকার। সেইটা পাবার অপেক্ষায়। “পাবো বলে আশা রাখি না-পাইলে যাব মারা / আর-কিছু চাই না আমি গান ছাড়া” — কার লাইনদুইটা? আবার কার, এসএ করিমের ছাড়া? থাক, আপাতত, শুধু ওয়ারফেজের ‘জননী’ গানটা আরেকবার প্লে করা যাক।

আকাশ জুড়ে কী সুন্দর তারা
হীরের অলঙ্কারে পরী রূপসী
চাঁদের আলোয় মৃদু ঠাণ্ডা হাওয়া
গাছের ছায়ায় গভীর মায়া

এই সবই তো সুন্দর, এ-জীবনের আনন্দ
তার থেকেও সুন্দর আমার মা

মাগো মা, ও মা
এই পৃথিবীর এত আলো, এত-যে সুন্দর
জীবনের স্পন্দনে এত আনন্দ
জেনেছি সে-তো শুধু তোমারই জন্যে ওগো মা

সাগরের নীলে প্রশান্তির ছোঁয়া
এলোমেলো ঢেউয়ে দামাল হাওয়া
গাঙচিলের ঘরে ফেরার ডাকে
সূর্য ডোবে সাগরের বুকে

এই সবই তো সুন্দর, এ-জীবনের আনন্দ
তার থেকেও সুন্দর আমার মা
[গানটাইটেল  : ‘জননী’; ব্যান্ড : ওয়ারফেজ; অ্যালবাম : ‘জীবনধারা’]

বাবনা করিমের কণ্ঠে যতবার  ‘জননী’ টাইটেলটা শুনি, ঠিক ততবার প্রায় আরেকটা টাইটেল অনিবার্য শুনতে হয় এই দুই গান পরপর পাশাপাশি শোনার শান্তিটা পাবার জন্যে, সেই আরেকটা গান হলো ‘অবাক ভালোবাসা’। আর কার অজানা যে, এই দুই গানের একটারে আরটার জুড়িগান ভেবেই কান বারবার শুনতে চায়, শুনে শ্রবণ জুড়ায়। কেন ঘটনাটা ঘটে, একটা শুনে আরেকটা কান টানে, এর রহস্য উন্মোচিত হয় গানদ্বয় পাশাপাশি শুনে গেলে। দুইটাই বাবনার গাওয়া। শুনে মনে হয় একই ইন্সপিরেশন একই উৎস হতে উৎসারিত দুই গান। দুইটার লিরিক পাশাপাশি পড়ে গেলেও বোঝা যায় সাদৃশ্য, সুবেদী সিমিল্যারিটি। দুইখানেই সমুদ্র, হাওয়া, প্রশান্ত বিষাদ, মহাপিয়ানোর অনুনাদ।

ওয়ারফেজের ক্ল্যাসিক লাইনআপ যাদেরে নিয়া, তাদের সময়ের পরের একাধিক লাইনআপ সত্ত্বেও ওয়ারফেজের স্বধর্ম ও তার আলাদাত্ব কখনও কম্প্রোমাইজড হয়েছিল? বোল্ড চোখে তেমন তো মনে হয় নাই কখনো। ওয়ারফেজের ওয়ারফেজত্ব খর্ব হয় নাই। টিপুর ব্যাটন-হাতে-ব্যান্ডমাস্টার ভূমিকার কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। সাঞ্জয় আর বাবনার কণ্ঠ ও গায়ন শুনে বেড়ে ওঠা ফ্যানবেইস ওয়ারফেজের সঙ্গে পেরিয়ে এসেছে বালাম-মিজান সহ বড় একটা ট্র্যানজিশনশেষে পলাশ নুর পর্যন্ত। কখনও মনে হয় নাই কিঞ্চিৎ কোথাও ওয়ারফেজ  ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ব্যান্ডের জন্যে এইটা সবার উপরকার অ্যাক্লেইম। ব্লেসিংস। দোসরা গানটা শুনি।

সব আলো নিভে যাক আঁধারে
শুধু জেগে থাক ঐ দুরের
তারারা
সব শব্দ থেমে যাক নিস্তব্ধতায়
শুধু জেগে থাক এই সাগর
আমার পাশে

সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের
আনন্দে
হৃদয়গভীরে অবাক দৃষ্টিতে
থমকে দাঁড়িয়েছে মহাকাল
এখানে।।

শুভ্র বালুর সৈকতে
এলোমেলো বাতাসে
গিটার হাতে
নিস্তব্ধতা চৌচির
উন্মাদ ঝঙ্কারে কাঁদি
অবাক সুখের কান্না
যেন চুনি হিরা পান্না
সাগরের বুকে
আল্পনা এঁকে দিয়ে যায়
অবাক ভালোবাসায়
অবাক ভালোবাসায়…।

সব কষ্ট বয়ে যাক সুখের ঝড়
হৃদয় ভরে যাক সহজ নীল
স্বপনে
হৃদয় গভীরে অবাক দৃষ্টিতে
থমকে দাঁড়িয়েছে মহাকাল
এখানে।।

এমনিতে ব্যান্ডের অন্যান্য নাম্বারগুলো শুনতে শুনতে একের পর এক প্রজন্মের কণ্ঠসাধন গিটারবাদন ড্রামিং হার্মোনাইজিং চলছে চারদশক পাঁচদশক পেরিয়ে। ‘ধূপছায়া’, ‘প্রার্থনা’ আর শোনার ধৈর্য না রেখে শ্রোতা মাত্র গলা মিলায় এর সুরের পরতে পরতে। একটা ব্যান্ডের কালজয়ী বিবেচিত হবার জন্যে এরচেয়ে বেশি কিছু তো দরকার হয় না।

গান শুনতে শুনতে এমন কিছু জিনিশ আছে যেগুলো ধরা পড়ে কানে, মনে, নয়নে। একটু খুঁজে দেখতে ইচ্ছা হয়। বাদে সেই ইচ্ছা নানান বাহানার চাপে চ্যাপ্টা হয়ে মরেও যায়। তেমন একটা ব্যাপার মাথায় এল ওয়ারফেজ বহুদিন বাদে এই কিস্তি শুনতে যেয়ে, একবার গ্যুগল করে দেখব ভেবেও করা হয়ে ওঠে নাই আর। ওয়ারফেজের ‘অবাক ভালোবাসা’ অ্যালবামটাই তো পরে একসময় যেয়ে ‘পথচলা’ নামে বেরিয়েছিল? ‘পথচলা’ গানটা বারবার শোনার ইচ্ছায় প্লেস্টোরের ল্যুপে ফেলে এহেন কনফিউশন নিয়া ভাবছিলাম।

মোর ঘরের মাঝে পাঁচিল ভেঙে আসে বাস্তুহারার শত কান্না
প্রতিটি সন্ধ্যায় একা একা বসে ভাবি বিথোভেন-শঙ্কর আর না
এ পৃথিবী কালোজলে-বিদ্যুতে-বাজে পুড়ে জ্বলুক লক্ষ নদী
হয়তো-বা আমি তার পাশে বসে দেখছি পলক্লি-মাতিসের ছবি

অথচ কী আনন্দ! কী ভয়াবহ আনন্দ!
মদিরা-চালে দ্যাখো নরনারী চলে কামনাবাসনা দুরন্ত
অথচ এই পরকীয়া! দুর্বহ এই আল্পনা!
লক্ষ রক্তচোখ নীলিমা চিরে খোঁজে আশা
ভালোবাসা … হায় আশা … ভালোবাসা …
[‘পথচলা’ গানের কথাংশ ।। ওয়ারফেজ ।। ‘জীবনধারা’ অ্যালবাম]

উনিশশ’-সাতানব্বইয়ে এই জিনিশ পৃথিবী শুনেছিল। অথবা তার আগে দেখেছিল বিটিভিতে। এই জিনিশ শোনার, শ্রবণের, সচিত্ত অবগাহনের; অবভিয়াস্লি দৃষ্টি প্রসারিয়া বা আঁখি মুঞ্জিয়া দেখিয়া যাইবারও। দুনিয়ার সমস্ত মধু শুধু অক্ষর গলাধঃকরণের মধ্যেই নিবদ্ধ নেই মর্মে যারা আস্থা রাখেন তারা জানেন যে গান কখনো কবিতা নয়। গানের একটা ডেলিবারেইট চেষ্টা যদি না-থাকে কবিতামতো বস্তু হইবার নিয়তি প্রত্যাখ্যানের, তাহলে যা হয় তার নজির আমরা দেখেছি বিগত অর্ধশতাব্দীর ইন্ডিয়ান বাংলা গানে। এবং আরেকভাবে দেখেছি ইন্ডিয়াবাংলা কবিতায়। ‘জীবনমুখো’ অথবা ‘আধুনিক’, ব্র্যান্ডনেইম যা-ই হোক, ভূভারতের বাংলা গানে ব্যামো হিশেবেই লেপ্টে আছে আজও অন্ত্যমিলাবদ্ধতা। ব্যাপারটা জলাবদ্ধতার চেয়েও অসহনীয়। শুরুতে বেশ পিক্নিক ম্যুডে ব্যাপারটা মানতে পারলেও অচিরে আপনে টের পাবেন এই জীবনমুখা/আধুনিকঝোঁকা ভারতীয় গানাবাজানা আদতে একটা জায়গাতেই পেখম খুলছে পেখম বুঁজাচ্ছে। একটানা কয়দিন একটা মানুষ জলাবদ্ধ বনস্ফূর্তি নিয়া বাঁচতে পারে? এই মুখস্থ ময়ূরের পেখমখোলা নাচাগানাহাসাকান্না ভারতের সঙ্কীর্ণ ও পরাধীনতাজাত কমপ্লেক্স-মাইন্ডসেট-উদ্ভূত ক্ষুদ্র বঙ্গাংশের পপ্যুলার কালচারাল উৎপাদপণ্যগুলোকে একেবারেই নিঃশেষে ভ্যানিশ করে দিতে লেগেছে। এই নিঃশেষাবস্থা আপকামিং দিনগুলোতে আরও স্পষ্ট হবে আশা রাখি।

বিরাটবপু ভারতদেশের ছোট্ট ফুটকির মতো অপাঙক্তেয় অঙ্গ ওয়েস্টবেঙ্গল বর্তমানে শেষ মরিয়া চেষ্টাটা চালাইছে এই বিশাল বাংলাদেশের একটা কোণায় একটু গমের বা আটা-ময়দার বস্তা বিছাইয়া বাজারের আসনব্যবস্থা লাভ করিবারে। ‘অভিসন্ধিতে লিরিকে’ শান দিয়া ফায়দা নাই, লিরিকের মধ্যেই শিরদাঁড়াসমস্যা, বিষয়টা বুঝতে হবে দাদা। আজকের ইন্ডিয়ান বাংলা বাজারে ‘সেরা’ কবি কে? কেন ভাই, শ্রীজাত! আচ্ছা। আজকের ইন্ডিয়ান বাংলা বাজারে সেরদরে ‘শ্রেষ্ঠ’ সংগীতশিল্পী কে? কেন ভাই, অনুপম! বুঝে দেখেন অবস্থা। ভারতীয় ক্ষুদ্রবঙ্গের কবিতা এবং গান উভয়েই সেকেলে ‘স্বর্ণযুগ’ নিয়া দাদাগিরি ফলাতে না-পেরে এমন “উন্মাদ, ক্ষিপ্ত, রিক্ত, পথ চেনা নেই” সিচ্যুয়েশনে প্রায় নেঙ্গুটিয়া পাগলবদ্ধ দশা।

‘আধুনিক’ ইন্ডিয়াবাঙালি ‘জীবনমুখা’ গানে কবীর সুমনের কবিতাপশ্চাদ্ধাবনে সেই জিনিশগুলা আর-যা-হোক কবিতা যে হয় নাই কথাটা পাঁড় ক.সু.ভক্ত ব্যতিরেকে সকলেই স্বীকারিবে। এর কুফল হয়েছে যেইটা তা আমার নজরে এ-ই যে, জয় গোঁসাইয়ের পরে ইন্ডিয়াবাংলার কাছাখোলা বাজারে একমেবাদ্বিতীয়ম পোয়েট অন্ত্যমিলচটুল চটপটি শ্রীজাত। অন্যদিকে ইন্ডিয়াবাংলার গানে অনুপম রায়ের মিষ্টি পিরিতপণ্য উৎপাদনের দেদার কাটতি। ইন দি অ্যাবাভ সার্কাম্সটেন্সেস না-হলো কবিতার বিকাশ তাদের, না-হলো গানের। ফলে, এই অন্ত্যমিলানুশাসনের ব্যাপারটাকে মহাকবিতা ও মহাগান মনে করবার জগদ্দল চৈতন্যদর্শনসঞ্জাত ভ্রমের কারণে, গ্রেইট ইন্ডিয়াবাংলা গান ও প.বঙ্গজ কবিতার ফ্লাইট আজি বিপর্যস্ত। ধুঁকে ধুঁকে বত্তমানে প.বঙ্গ মরন্ত। দুঃখ। মুখ-থুবড়ে বেচারাদিগের ন্যাজেগোবরে অবস্থা। বাংলাদেশে এই অবস্থা ভাগ্যিস হয় নাই। বিগত বছর-পঞ্চাশের বাংলাদেশে ব্যান্ডগান সহস্র অনবধানতা আর ইম্যাচিয়্যুরিটির পরেও এই জায়গাতে গ্রেইট। হয়তো অজান্তেই জিনিশটা ঘটে গেছে এদেশের কালেক্টিভ কপালে। একদম অনায়াসলব্ধ ঘটনাটা, বা দৈবের বশে পেয়ে যাওয়া, ব্যাপার মোটেও তা না। আপাতত মুলতুবি থাকুক এতদপ্রাসঙ্গিক আলোচনা।

ব্যান্ডগানে অন্ত্যমিলানুবর্তন নাই, এইখান থেকে একটা আলাদা নোক্তা বার করে ফের কথা চালানো হতে পারে। ইন ফিউচার। এবং ব্যান্ডগান/রকগান বলতে এতদঞ্চলে শ্রীলঙ্কা বা থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুর বা ইন্ডিয়া না; ব্যান্ডগান/রকগান বলতেই বিগত চারদশক পাঁচদশক ধরিয়া বাংলাদেশ বোঝায়, নিপলচোষা বাচ্চালোগটিও জানে এইটুকু তথ্য। ওভারনাইট অর্জিত হয় নাই এটুকু। অনেক ফ্যুয়েল-ফ্যসিল পুড়িয়ে শেষে এহেন অর্জন হয়েছে সঞ্চিত। ফলে, ডেলিবারেইটলি, বিস্তর গঞ্জনা সয়েও বাংলাদেশের ব্যান্ডগান আলাদা ব্যক্তিত্ব অর্জন করতে পেরেছে। যে-ব্যক্তিত্ব ইন্ডিয়াবাংলার কথিত ‘রক’ রুপম ও তদানুসৃত গং অর্জিতে ব্যর্থ, সোজা কথায়, লম্ফঝম্প-করা হাজার অনুষ্ঠানান্তে।

একলপ্তে ইন্ডিয়াবাংলার যে-কয়টা ব্যান্ডের নাম আপনে নেবেন, সেগুলো যা পয়দা করে চলেছে সেসব সুমন ও নচি প্রমুখ একলাই ভীষণ শক্তিমত্তাবহ করে রেখেছেন আগেই। ইন্ডিয়াবাংলায় ব্যান্ড/রক বিষয়ক হুজুগে সেন্স কেমন, চটজলদি এর একটা উদাহরণ দিতে যেয়ে মনে পড়বে যে এককালে লোপামুদ্রা মিত্র দুম করে একদিন একটা ‘ব্যান্ড’ বানায়ে ফেলেন। অনেক মনন ও আবেগ লগ্নি করেও বুঝে উঠতে পারি নাই উনার সোলো আর দলগত পরিবেশনার ডাইমেনশন্যাল ডিফ্রেন্সেস। লোপা নিজেও হয়তো অচিরে এই জিনিশ বুঝে কিংবা না-বুঝেই মাথার বায়ু নেমে গেলে ফের রাবীন্দ্রিকতায় ফেরেন। শুধু লোপা নন, সেইসময় একা-একা গাইয়ে হিশেবে সুমন-অঞ্জন-নচি-মৌসুমীর সঙ্গে এঁটে উঠতে না-পেরে এবং বাংলাদেশের সাফল্য দুইদিনেই বিনা আয়াসে হাসিল করা সম্ভব ভেবে নিয়ে ‘ব্যান্ডবাজি’ শুরু করেন অনেকেই। হিড়িক পড়ে যায় ইন্ডিয়াবাংলায়, সেই-সময়, ব্যান্ড গঠনের। পরে ব্যান্ডচালনার শারীরিক শ্রমবিনিয়োগের ব্যাপারটায় ভড়কে যেয়েই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে ফের হার্মোনিয়্যম কোলে তুলে নেন সকলে। এবং প্রকাশ্য জনসভায় স্বীকার না-করলেও বুঝতে নিশ্চয় সক্ষম হন যে বাংলাদেশের ব্যান্ডসাফল্য দুই-তিনসন্ধ্যায় হাসিল হয় নাই। ইন্ডিয়াবাংলায় ‘একলব্য’, ‘ক্যাকটাস’, ‘ফসিলস’, ‘পরশপাথর’, ‘আগন্তুক’ প্রভৃতি তিনদশকে-গড়ে-ওঠা প্রায় তিন-আঙুলে-গণনীয় দলগত সংগীতানুশীলনের ইতিহাসে এক ‘চন্দ্রবিন্দু’ ছাড়া আর-কেউ সংগীত সৃজনে এবং পরিবেশনায় ব্যক্তিত্ব অর্জন করে উঠতে পারে নাই। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ অন্য একটা কারণে এই হিসাবখাতার বাইরে রেখে যাওয়া যাচ্ছে, ব্যাখ্যা না রেখে, আপাতত।

অত লম্বাচওড়া বাতচিতের শেষে অতীব দুঃখের সঙ্গে আপনাকে কবুল করতেই হবে যে বাংলাদেশের ব্যান্ডগান তার ছেঁড়াফাটা স্যাডলব্যাগে ঢের মালমাত্তা নিয়াও দিনশেষে ব্র্যান্ডিং করে উঠতে পারে নাই ঠিকঠাক। কেন পারে নাই, নেপথ্যে নয়শত নিরানব্বই কারণ থাকলেও একটা খাসলতগত কারণ অধুনা আরেকবার আমাদিগের সামনে এসেছে। একটা মামুলি ঘটনায় এই কিছুদিন আগে এদেশের এক ব্যান্ডমিউজিশিয়্যানের সঙ্গে বিদেশের পুরানাকালিক বাংলাভাষী মিউজিকের এক গায়কের ঝগড়া বাঁধার এক-পর্যায়ে দেখা যায় দেশবাসী ইয়াং সাংস্কৃতিক সোলজারেরা মাবাপের দেশের ব্যান্ডমিউজিকটাকে একছটাকও মূল্যের নজরে দেখে না। তা না-দেখুক, সংগীতে জাতীয়তাবাদী দলীয় কোন্দল কোনো বড়াইয়ের ব্যাপার না; আফসোসের ব্যাপার বলতে এ-ই যে, এই ইয়াঙেরা ভারতবৈদেশিক বাংলা গানটাকে সাংগীতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক সহ সর্ববিধ বিবেচনায় দ্বিদৈশিক বাটখারায় মেপে শ্রেষ্ঠত্ব ডিক্লেয়ার করে বিদেশের! অসুখটা বহোৎ পুরানা। অ্যানিওয়ে। সেই দুঃখে বেদনার নদী বইয়ে দিয়ে ‘এই রাত তোমার আমার’ নষ্ট করার দরকার নাই।

কিন্তু কথাগুলো বলতে হবে একদিন। কোলরিজের সেই অ্যানশিয়েন্ট ম্যারিনারের ন্যায় বিবাহভোজসভায় আগন্তুক ‘মদিরা-চালে’ ভেসে ভেসে বেড়ানো নরনারীদিগের ‘কামনা-বাসনা দুরন্ত’ পথচলা অ্যাব্রাপ্টলি থামায়ে দিয়ে তাদের কানে ঢেলে যেতে হবে এই দিনগত পাপক্ষয়ের খতিয়ান। শুধু নোক্তা হিশেবে এইটুকু বর্তমানে বলে রেখে যাওয়া যাক যে এই ‘পথচলা’ গানের লিরিক্সে যে-অন্ত্যমিল দৃষ্ট তা বাংলাদেশের ব্যান্ডগানে সর্বত্র দৃষ্ট নয়। বাংলাদেশের ব্যান্ডগান মূলত গদ্যকাব্যিক। অনেকানেক ইম্যাচিয়্যুরিটি সত্ত্বেও গদ্যস্পন্দে ব্যান্ডগান বাংলাদেশের এমনকি ইয়াং কবিদেরেও প্রথমাবধি উদ্বুদ্ধ করে এসেছে ট্র্যাডিশন ও কনভেনশনের বাইরে থেকে দেখতে জগতটারে। যেটুকু অনিয়মিত অন্ত্যমিল উপর্যুক্ত কথাভাগে দেখা যাচ্ছে, ব্যান্ডের বাংলা গানে এই ইন্ডিপেন্ডেন্ট দশা আমরা আগা থেকে গোড়া অব্দি নিরখিয়া যাই। ছিল না ‘আধুনিক’ বাংলা কাব্য হইবার উদ্ভট ও অদ্ভুতুড়ে খায়েশ বাংলাদেশের ব্যান্ডগানের; ছিল না বলেই নির্দ্বিধায় ব্যান্ডগানে ‘মোর’, ‘মোদের’ প্রভৃতি সর্বনামপদ নির্ভার-নির্বিকার ব্যবহৃত হয়েছে এবং উহার ফলে বাংলা আবহমানতায় পালক যুক্ত হয়েছে অন্যতর। প্রসঙ্গটায় প্রত্যাবর্তন করা যাবে একদিন নিশ্চয়। এতাবধি ফি-আমানিল্লা। মাইলস টু গ্য বিফোর য়্যু এনস্লেইভড বাই ইন্ডিয়াবাংলা, মাইন্ড ইট ব্রো! ওয়েল, য়্যু নো সিস, মিউজিকের নামে প্যারোডিমেইকিং কোয়ালিটি দিয়া বড়জোর তুমি হতে পারো নচিকেতাস্টাইলের কপিক্যাট ডিস্কোড্যান্সার ফসিলস। ওই হালুয়া আমরা খাই না। সাল্সা ধারার প্রবর্তনায় বাংলা সাউন্ডস্কেপে একটা হাল্কাপাৎলা স্বাদবদল একদা আনিয়াছিল বলিয়াই মাইলস মিয়াদিগেরে এখনও বর্তনের কোনায় খেতে-বসে রেখে দিতে চাইব। অন্য গল্প অন্যসময়ের জন্য রইল তোলা।

আপাতত ওয়ারফেজের ‘পথচলা’, সাঞ্জয় রেন্ডিশন, শুনতে শুনতে একবার ভাবি, কী অপরূপ রকশোভা আমাদের, কাইঞ্চা বাঁশের তরল্লায় চিরে চিরে কেটে দিয়ে যায় আমাদের অহৈতুকী ইহকাল!

এ মন উন্নাস, ক্ষিপ্ত, রিক্ত, পথ চেনা, নেই কোনো আনন্দ
অথচ এ মন কত উৎসাহে রচে সদা তন্ময় বসন্ত
আমি আশ্বাস, সুরেরই নিঃশ্বাস, শুনেছি যখন তোমায় চুমি
তবু্ও ভাবিনি তোমায় নিষ্ঠার মূর্তি তুমি মুগ্ধ নিমিষের ছবি

জাহেদ আহমদ (রচনা ২০১৬ পরিমার্জনা ২০২৫)

শেয়ার করুন:

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you