নক্ষত্রনর্তক

নক্ষত্রনর্তক

নক্ষত্র কখনো মরে না, তারার মৃত্যু নাই। জিনিশটা হাসির মতো, খুশির মতো, ফুরিয়ে যেয়েও ফুরায় না। তারারা হাসি হয়ে যায়, ঝিকিমিকি হাসি, একটা কজমিক মিউজিকের মতো নক্ষত্ররা সারাক্ষণ ঘিরে থাকে এই পৃথিবীর আলোজলবায়ু। নক্ষত্ররা সারাক্ষণই নৃত্যপর থাকে এই ইউনিভার্স জুড়ে, দেখা যায় চাইলেই, দেখতে চাইতে হয় শুধু।

উপরের কথাগুলো বলেছিলেন মাইকেল জ্যাকসন, হুবহু নয় কিন্তু অনেকটা কাছাকাছিই ছিল কথাগুলো, কোনো-একটা সাক্ষাৎকারে বেশ-বহুকাল আগে এই কিসিমের কথাগুলো পড়েছি ইয়াদ আছে। একটু খুঁজলে সেই ইন্টার্ভিয়্যুটা পাওয়া যাবে না তা নয়, কিন্তু কথাগুলোর মূল সুরটা মনে আছে একটা কারণে। সেই কারণটা হলো, রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতায় এর কাছাকাছি কিছু লাইন আছে। এমজে-ডেথঅ্যানিভার্সারিতে এই মিলের পয়েন্টটা মাথায় এল বলেই লিখতে লেগেছি।

কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এককাতারে একই নিবন্ধে এমজে, এইটা দেখে কেউ যদি দৃষ্টি মটকাইয়া তাকান, ভাইস-ভার্সা জ্যাকসনের পাশে এক আলখাল্লাবুড়োকে দেখে কেউ যদি বিরক্ত হন, সেক্ষেত্রে খামোশ হওয়া লাগে। এখন, দুইজনেরে একফোটোতে রেখে একদমই মিল-বেমিল দেখানো যাবে না তা নয়, বের করতে চাইলে একটা-না-আরটা সাদৃশ্য তো খুঁজিয়া পায়ই মানুষ। রবির লগে এমজের মিলন কোথায় কেমন করে এসেছে এই নিবন্ধে, দেখা যাক।

পয়লা বাত্ ইয়ে হ্যায় কি যে এমজে-রবি উভয়েই বিশ্বসেলিব্রেটি, বিশ্বতারকা। ঠাকুরের তারাখ্যাতি বিশ্বে এমজের তুলনায় কিছুই না যদিও, যতই বিশ্বকবি ডাকি না কেন দুনিয়ায় তেরো-চোদ্দভাগের বেশি পিপ্যল তারে চেনে না ইভেন নামও জানে না। মাইকেলকে একাশিভাগ মানুষই চিনে-জানে। এইভাবেই মিলের পাশে অমিলগুলো গোছায়ে ওঠা যায়। এমজে তার গান ও নাচের জন্যই বিখ্যাত। ম্যুনওয়াকার হিশেবে দুনিয়া তারে চেনে। এবং দ্য কিং অফ প্যপ। মিউজিশিয়্যান। গীতিকার, সুরকার, গায়ক, ড্যান্সরচয়িতা। ড্যান্সার। রবীন্দ্রনাথও তা-ই। গীতিনৃত্যনাট্যকার। ড্যান্সার? হ্যাঁ, আর্লি দিনগুলোতে নাটকে অভিনয় করেছেন যেহেতু, ধরেই নেয়া যায় নেচেছেনও মঞ্চে একেবারে মন্দ না।

তা, কারণ তো কুল্লে এই-কয়টাই নয় মিলানুসন্ধানের। গোড়াতে যে-ন্যারেশনটা আমরা রেখে এসেছি, ইন্ডিরেক্ট ন্যারেশনের আদলে, ঠিক ওই বিবৃতিবাক্যগুলোরই মতো রবীন্দ্রনাথও বলেছিলেন কথা-কতিপয় একটা কবিতায়। ‘শ্যমলী’ কবিতাবইয়ের ‘হঠাৎ দেখা’ নামে সেই কবিতায় তিনিও বলেছিলেন : নক্ষত্র কখনো মরে না, তারার মৃত্যু নাই। জিনিশটা হাসির মতো, খুশির মতো, ফুরিয়ে যেয়েও ফুরায় না। ঠাকুরের কথাগুলো কবিতায় যেহেতু, বলেছিলেন যে রাতের সব তারাই নাকি দিনের আলোর গভীরে ঘাপটি মারিয়া থাকে। এক্স্যাক্ট পঙক্তিটা আছে এইভাবে, “রাতের সব তারাই আছে /  দিনের আলোর গভীরে।” এর আগের জিজ্ঞাসাবাক্যটা :: “আমাদের গেছে যে দিন / একেবারেই কি গেছে,?  কিছুই কি নেই বাকি?” নিশ্চয় আছে, রবি উবাচ, রাতের সব তারাই নাকি দিনের আলোয় দেখতে পাওয়া যায়। রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা হয়ে যেতেই পারে প্রেমস্পদের সঙ্গে আপনারও।

রবীন্দ্রনাথ-নজরুল ছাড়া বাঙালি কাউরেই বেইল দ্যায় না। জ্যাকসনকে তো আউলবাউল লালনের দেশে এসেছে বলিয়া আলাদা খাতিরদারি করা তো দূর-কথা, স্বাগতই জানাতে চায় না বাঙালির বড় একাংশ। ফলে, এমজে নিয়া আমরা কি-ইবা বলি আর। গত ছাব্বিশ জুন এমজের প্রয়াণবার্ষিকী ছিল। শুধু চন্দ্রপরিব্রাজকের প্রয়াণস্মৃতি মনে রেখে এই নিবন্ধটা পাঠ করা যেতে পারে। এরচেয়ে বেশি কিছু নয়।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you