শেইমলেসলি লিভিং টু টেল দ্য টেইল || সুমন রহমান

শেইমলেসলি লিভিং টু টেল দ্য টেইল || সুমন রহমান

যে-লেখাগুলা আমরা গানপারে আপ্লোডের জন্যে মনস্থির করে রেখেছিলাম, হননোন্মত্ত হাসিনাতাণ্ডবে সেসব আর ছাপানো সম্ভব হয় নাই। কেন হয় নাই, তার বিবরণব্যাখ্যা আর দরকার হবে না। আদতে সতেরো জুলাই থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া থেকে। ইন্টার্নেট, যত ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া, মানুষে-মানুষে এক্সপ্রেশন লেনদেনের ফোনসংযোগব্যবস্থা শাটডাউন করে দিয়ে হাসিনা শুরু করেন হত্যা আর হত্যা আর হত্যা। মিথ্যা আর মিথ্যা আর মিথ্যা। কারফিউ। কারফিউয়ের পর কারফিউ। গভমেন্ট হলিডে একের পর এক। হত্যা হাজার ছাড়ায় রাতারাতি (শুমার করিয়া দ্যাখো দুইশ ছেষট্টি!)। ইন্টার্নেট পুরাপুরি ফিরে পেতে পাঁচ অগাস্ট বিকাল গড়ায়, হাসিনা দেশের জাতীয় মর্যাদাবাহী বিল্ডিং-ভবনগুলি বিশেষত সংসদ ও গণভবন অরক্ষিত রেখে সেনাপাহারায় পালিয়ে যান। দিগ্বিদিক পালাতে থাকে ষোলো বছরের আইন-ও-বিচারবহির্ভূত হত্যাযজ্ঞের হোতা হাসিনার পোষা আইনশৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডাপাণ্ডারা। রাজনৈতিকভাবে অবদমিত জনতা ফাঁকা প্রবেশতোরণ পেয়ে ঢুকে যায় গণভবনে, সংসদে, ব্যাপক লুটের শিকার হয় ন্যাশনাল আইকনিক স্থাপনাসমূহ। লুট হয় ব্যক্তির সম্পদ দেদারসে। এবং, এবং, এবং, সনাতন ধর্মাবলম্বী নিপীড়ন শুরু হতে একমুহূর্তও হয় নাই বিলম্ব। শুধু হাসিনা গং নয়, ফাঁড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায় আভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রাখবার কাজে কমিটেড পুলিশবাহিনীও। গভীর সংকটে নিপতিত হয় দেশ ও মানুষ। ষোলো বছর ধরে তৈরি হওয়া বিচারহীনতার সংস্কৃতি গেঁড়ে বসা আজ সর্বত্র। অরক্ষিত অরাজক গোটা বাংলাদেশ আজ। শুভমনা সারাদেশের মানুষের মুখে মুখে একটাই কমন বাক্য : দরকার রাষ্ট্রের খোলনলচের সংস্কার।

যা-হোক। অতি সংক্ষিপ্তভাবে বলা হলেও উপরোক্ত কথাগুলি ইতিহাসের নিরিখে পাঠের ও প্রতিক্রিয়ার বিশদ পরিসর সামনের দিনগুলায় আমরা আরও করে নিতে পারব নিশ্চয়। আপাতত পুরানা লেখাগুলা আপ্লোড করে রাখি। নিচের লেখাটা আমরা পাচ্ছি কবি ও কথাসাহিত্যিক সুমন রহমানের বয়ানে। এই লেখা ডায়রির আদলে এগিয়েছে, যেখানে লেখক ক্রমশ-স্ফীত-হওয়া ছাত্রজোয়ারের সশব্দ ঢেউটুকু ধরে রেখেছেন; মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় তথা ফেইসবুকে জুলাই-অভ্যুত্থানের উন্মেষকাল থেকে যে-লেখকগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সমর্থন করে আসছিলেন, কথিত ‘মূলধারা’ সাহিত্যিক-কবি-লেখকদের ষোলো বছর ধরে মেনে নেওয়া ও মাখনের ভাগ পাওয়া আওয়ামী স্থিতাবস্থার প্রতি বিশ্বস্ততা বা আর-কোনো অজ্ঞাত মনোবৈকল্য হেতু শ্মশানকব্বরের নীরবতা বিরাজ করছিল যাদিগের ভিতর, অপেক্ষাকৃত তরুণ ‘অপ্রতিষ্ঠিত’ কবি-লেখকদের হন্তারকবিরোধী অবস্থান অটুট ছিল শুরু থেকে। এ-লেখার, এ-ধাঁচের লেখার, বড় বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এর তাৎক্ষণিকতা; আর, এর জ্যান্ততা, এর লিপ্ততা।

আর, দ্রুতপরিবর্তমান সময়ে এই লেখা আজকে এক নতুন গুমট/অচেনা আবহাওয়ায় পাঠ করতে কে/কারা আগ্রহী হবে তা জানি না, সামনে এখন মুহুর্মুহু তৎপরতার বিচিত্র ডঙ্কা ও তদুদ্ভূত শঙ্কা, আমরা চাই বিগত সময়ের যা-কিছু গরিমার তা ছাড়াও ন্যাক্কারজনক প্রতিটি অধ্যায় যেন পুনর্পাঠ করে যেতে পারি এবং পারি লার্নিং ডিসেমিনেইট করতে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোটা-(সংস্কার/বিরোধী) আন্দোলন কেন্দ্র করে শাসকের দল আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের নিপীড়ন ও পরিকল্পিত হত্যায় কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা আমাদের কাটে নাই এখনও। মূলত ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে ব্ল্যাকআউট গোটা বাংলাদেশ রক্তাক্ত হচ্ছিল রোজ শিক্ষার্থীদের খুন করার ধারাবাহিক ঘৃণ্য প্রক্রিয়ায়। ডিক্টেটর হাসিনা তার গণহত্যাকারী চেহারাটা আর লুকিয়ে রাখতে পারেন নাই, অগত্যা, উপায়ান্তরহীন, জনতার সগর্জন ধাওয়ায় পালিয়ে যেতে বাধ্য হন প্রকাশ্য দিবালোকে সেনাপাহারায়।

এই অভ্যুত্থানকালে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আমরা জাতিগতভাবে যেন অটুট রাখতে পারি। — গানপার / ১১ অগাস্ট ২০২৪


শেইমলেসলি লিভিং টু টেল দ্য টেইল || সুমন রহমান


১৬ জুলাই ২০২৪
‘সাংহাই’ নামে একটা ইন্ডিয়ান মুভি আছে। সেখানে ইন্ডিয়ার কোনো শহরকে ‘সাংহাই’ বানানোর অজুহাতে সরকার গরিবদের জায়গাজমি উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেয়। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক প্রবাসী অধ্যাপক শহরে আসেন। উপরমহলের নির্দেশে তার ওপর ট্রাক উঠিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি মারা যান। ড্রাইভারকে ধরা হয়, এবং দেখা যায় তিনি মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। ফলে এই হত্যাকাণ্ডকে একটি ড্রিংক-ড্রাইভিং কেইস বলে চটজলদি রিপোর্ট দিয়ে দেয়া হয়।

ছবিতে একজন সিভিল সার্ভিস অফিসার আছেন যিনি এই ব্যাখ্যাকে মেনে নেন না। সিনিয়রদের চাপ, পুলিশ অফিসারের চোখরাঙানি আর মুখ্যমন্ত্রীর তরফে প্রমোশন আর বিদেশ ভ্রমণের অফার ― কোনোকিছুই তাকে দমাতে পারে না। তার সঙ্গী হয় এক ভিডিওগ্রাফার, যে কিনা পর্ন বানায়। ক্যামেরা নিয়া ঘুরতে গিয়ে সে বেশ কিছু ফুটেজ পেয়ে যায়, যার ভিত্তিতে ঘটনাটিকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়।

দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, ছবিতে সাংবাদিক নেই কেন? একজন বিবেকবান সিভিল সার্ভিস অফিসারের সাথে একজন পেশাদার অনুসন্ধানী সাংবাদিক থাকলে কী এমন ক্ষতি হতো? এত এত মিডিয়া থাকতে একটা পর্ন ভিডিওগ্রাফারকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ভূমিকা নিতে হলো কেন?

আমাদের দেশের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ কি কোনো ধারণা দিতে পারেন? এটা কি সাংবাদিকদের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ণ করার কোনো অপচেষ্টা? আমরা কি এই সিনেমাটির বিরূদ্ধে প্রতিবাদ জানাবো?
.
*
“Most people deceive themselves with a pair of faiths: they believe in eternal memory (of people, things, deeds, nations) and in redressibility (of deeds, mistakes, sins, wrongs). Both are false faiths. In reality the opposite is true: everything will be forgotten and nothing will be redressed. The task of obtaining redress (by vengeance or by forgiveness) will be taken over by forgetting. No one will redress the wrongs that have been done, but all wrongs will be forgotten.” ― Milan Kundera, The Joke
.
.
১৭ জুলাই ২০২৪
আমার নাইনে-পড়া ছেলে কোটা বিষয়ে জানতে চাইল। বললাম। জিনিসটা বুঝল মনে হলো। আন্দোলন যারা করছে তাদের কেন মারা হচ্ছে সেটাও জানতে চাইল। সেটাও বললাম। কিন্তু সে বুঝতে পারল না। টিভির সংবাদ দেখিয়ে বলল, এরা তো আমার মতোই স্কুলছাত্র। ওর চোখ চিকচিক করছে। এই আন্দোলনের কোথাও কি সে নিজের রেপ্রিজেন্টেশন টের পাচ্ছে? বুক কেঁপে উঠল। ভাবলাম চ্যানেলটা বদলে দিই। নিতে গিয়ে দেখি, দৃঢ় হাতে রিমোটটা ধরে আছে। ছাড়ল না। ওর চোখ টিভির পর্দা ছাড়িয়ে সুদূরে। যেন কোনো সর্বনাশের পথে রওনা দিয়েছে!
.
*
স্বাধীন বাংলাদেশের একমাত্র রটেন টম্যাটো আপনিই, স্যার! অন্য অনেকেই অল্পবিস্তর পচেছে, তবে আপনার মতো কেউ নয়। অনেক হাই হোপ ছিল আপনাকে নিয়ে আমাদের তরুণ বয়সে। নব্বই দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিতার এথিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড আপনাকে দিয়েই মাপা হতো, ভাবলেই আশ্চর্য লাগে! আজকের প্রজন্ম বিশ্বাসই করবে না আপনি এককালে আসলেই কিশোরদের ছোটাচ্চু ছিলেন।

ওয়েল, আমি কখনোই আপনার লেখার পাঠক ছিলাম না। বরং যারা পাঠক ছিল, যারা আপনার কাছ থেকে সাহিত্য আর রেটরিক শিখল, আপনি গ্রসলি তাদের সাথেই বিট্রে করলেন! হোয়াট অ্যা ডিসগ্রেস!

খুব করুণা হচ্ছে আপনার জন্য।
.
.
৩০ জুলাই ২০২৪
Nothing ever will remain same.
.
*
A classic case of Red Herring: conspiracy theories, leaked videos, sensational transfers—what’s next? The resurrection of the expired corruption tales? The rise of militants?

But how could we ignore the ominous helicopter flyovers above, forget the massacre, terrifying block raids and people being taken to prison?

Nothing ever will remain the same. Our sons are buried, and we are shamelessly living to tell the tale.


তাৎক্ষণিকা  : ১৮ জুলাই ২০২৪
১৫, ১৬, ১৭, ১৮
লাল, চিরকাল
জুলাই লিপিকা
তাণ্ডব ও বিপ্লব
সুমন রহমান রচনারাশি

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you