প্রায় ২৫ বছর আগে রাকেশদার সঙ্গে আলাপ। চবির ১নং গেইটের কটেজগুলোর বেশিরভাগ সিটই তখন সিলেটি ছাত্রদের দখলে। শিবির কর্তৃক অবরুদ্ধ ক্যাম্পাসের হলগুলোতে স্বাধীনচেতা ছাত্ররা সাধারণত থাকতে চাইত না। আসলে থাকার উপায়ও ছিল না। তাই প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন কিংবা স্বাধীনতাকামী ছাত্রদের একটি বড় অংশের আস্তানা ছিল ১নং গেইট। কম খরচ এবং হলে থাকার অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাদ দিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি খরচ করেও ছাত্ররা স্বাধীনভাবে কটেজে থাকাটাই শ্রেয় মনে করত।
এমসি কলেজ থেকে অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর চবিতে মাস্টার্স করতে আসা শেষ দুটি ব্যাচের অনেকের সঙ্গেই আমার সেই ১নং গেইটে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। আমি তখন অনার্স প্রথম বর্ষ, আর রাকেশদারা মাস্টার্স। কিন্তু বয়সের এই ফারাক যেন নিমেষেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
রাকেশদা বাম ঘরানার প্রগতিশীল ছাত্ররাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাছাড়া নাটক ছিল তাঁর নেশা। সিলেট শহরই ছিল তাঁর মূল কর্মক্ষেত্র। অল্প সময়ের জন্য চবিক্যাম্পাসে আসা, তাই রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ততটা জড়িত হননি। কিন্তু প্রাণবন্ত আড্ডা থেকে তিনি ক্ষণিকের জন্যও বিরত থাকেননি। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলে কিংবা ছুটি শেষে দলবেঁধে আমরা সিলেটি ছেলেমেয়েরা যখন পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে আসা-যাওয়া করতাম, তখন সেই সুদীর্ঘ একঘেয়ে জার্নিকে প্রাণবন্ত করে তুলতে মুখ্য ভূমিকা রাখতেন আমাদের রাকেশদা।
তারপর আমরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছি অসংখ্যবার, কিন্তু সেইসব সোনালি দিনের স্মৃতি এখনও যেন হয়ে আছে অম্লান।
সিলেটে গেলে মাঝেমধ্যে শিল্পকলায় রাকেশদার সঙ্গে দেখা হতো। সম্ভবত বছরখানেক আগে তাঁর সঙ্গে শেষবার কথা হয়। ফোন করে আমার খোঁজখবর নিয়েছিলেন। এরপর আর দেখাও হয়নি, কথাও হয়নি। গতকাল হঠাৎ দেখি, ফেইসবুকে কেবল রাকেশদার ছবি ভাসে! প্রথমে খেয়াল করিনি, কিন্তু পরে দেখতে পেলাম, চারদিকের মৃত্যুর মিছিলের সঙ্গে ভেসে-বেড়ানো রাকেশদার ছবিগুলো মূলত বহন করছে স্ট্রোক করে তাঁর চলে যাওয়ার দুঃসংবাদ!
কিন্তু এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য? একজন স্বপ্নবাজ, প্রাণোচ্ছল মানুষকে এত তাড়াতাড়ি এভাবে চলে যেতে হয়!
গভীর শ্রদ্ধা।
গানপার ট্রিবিউট টু রাকেশ ভট্টাচার্য
সিলেটের অত্যন্ত পরিচিত ও সর্বজনপ্রিয় সংস্কৃতিকর্মী রাকেশ ভট্টাচার্য হঠাৎ করে দেহ রাখলেন। স্ট্রোক। অত্যন্ত হতচকিত অকাল বয়সে। এর মধ্যে একদিনও হয়ে গেল উনার শরীরী অনুপস্থিতির। বাগিচা নামে একটা উদ্যোগ বাস্তবায়িত করেছিলেন উনি নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে, একটা এমন দোকান যেখানে লোক্যাল রিসোর্স থেকে নান্দনিক নিত্যব্যবহার্য শোপিসেস পাওয়া যেত, নগরীর নাটকপাড়া লামাবাজারের সেন্টারেই ছিল দোকানটা, আমাদের অনেকেরই প্রথম প্রেমের কার্ডফার্ড ওইখান থেকে কেনা। দ্বিতীয়-তৃতীয়ও বোধহয়। এইটা ওই সময়, আর্চিস তখনও আসে নাই বা আরও যারা আজাদ-আইডিয়াল ছিল তাদের জিনিশপত্তর বাজারিমার্কা মনে হতো আমাদের প্রণয়িনীদের কাছে। সেহেতু সেই আমাদের যৌথচেতনা উন্মেষের দিনগুলায় নিঃসঙ্গতার করুণ কর্কট থেকে বাঁচানোর রক্ষাকর্ত্রী ম্যানেজমেন্টে রাকেশ ভট্টাচার্য ও তার বিউটিফ্যুল ইনিশিয়েটিভ বাগিচা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল। উনি ইন্তেকাল করলেন স্ট্রোকে। এই নিখিলবিস্তারী নিঃসঙ্গতার দিনগুলায়। তার শববাহক খুব বেশি নিশ্চয় হয় নাই, বিপর্যয়ের এই সময়ে কে হবে কার শ্মশানবন্ধু, যদিও সময় স্বাভাবিক থাকলে নগরীর সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যাপক সমাগম হতো উনার সৎকারযাত্রায়। অ্যানিওয়ে। একটা লেখার মাধ্যমে আমরা তারে শেষ শ্রদ্ধা জানাই গানপার থেকে। লেখাটি লিখেছেন কল্লোল তালুকদার।
.
হ্যাভ অ্যা নাইস ইটার্ন্যাল অভিযাত্রা, রাকেশ ভট্টাচার্য! সদগতি হউক সর্বায়তনিক। – গানপার
লেখার সঙ্গে ব্যবহৃত ব্যানারের নকশাসৃজক শিল্পী অরূপ বাউল
… …
- শরৎরাত্রিতে || আনম্য ফারহান - September 23, 2023
- হাওর সিরিজ || শামস শামীম - September 23, 2023
- জনমানসে বিরাজিত সাংস্কৃতিক সংঘাত ও মাতিয়ার রাফায়েলের কবিতা || আহমদ মিনহাজ - September 23, 2023
COMMENTS