আরও দু-দুটো ওয়ার্ল্ডকাপ এসেছে এবং চলে গেছে। মেসি আর নেইমার নিয়া ফ্যাসাদও হয়েছে ম্যালা। বাংলায় এবং অন্য দুনিয়ার নানান জায়গায় মেসি-নেইমারের আগে এবং পরে প্লেয়ার নিয়া দাঙ্গাহাঙ্গামা হামেশাই হয়ে থাকে এবং হবে। ক্রেইজ জিনিশটা ক্রীড়াজগতের সঙ্গেই যায় বেশি। নিশ্চয় কেউ অনুত্তেজ গুমড়ো মুখে খেলা দেখতে বসুক অঙ্কের মাশ্টারের মতো, আমরা তা চাইব না। কাজেই স্পোর্টস্ নিয়া কাজিয়াফ্যাসাদ বেদম হবে এইটা স্বাভাবিক।
যদি জিগ্যেশ করা হয় ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপের গানগুলার ভিত্তিতে কয়টা বিশ্বকাপ ইয়াদ করতে পারবেন আপনি? চিন্তা করতে হবে না বেশি। মিনিটের মাথায় মেমোরি ফিরিয়ে আনবে অ্যাট-লিস্ট দুইটা গান। একটা হচ্ছে রিকি মার্টিন যে-বিশ্বকাপের থিম স্যং করেছিলেন সেইটা আরেকটা হচ্ছে শাকিরার গাওয়া সেই বিশ্বকাপ ফুটবলের অফিসিয়্যাল থিম স্যঙের স্মৃতি।
কিন্তু এই দুইটা ছাড়াও কয়েকটা কাপের গান মনে পড়তে পারে, নেহায়েত আবছা সেই মনে পড়া। আনাস্তাশিয়া গাইলেন একটায়। তারপরে আরেকটায় গাইলেন পিট ব্যুল ও জেলো, মানে জেনিফার লোপেজ। তবে যে-যা ভাবেন অসুবিধা নাই, শাকিরার গানটার জুড়ি শাকিরার গানটাই।
২০১০ ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপ। শাকিরা আগে থেকেই ছিলেন সেন্সেশন পপদুনিয়ায়, বিশ্বকাপে নেচে-গেয়ে সেন্সেশনের পারদ বাংলার হেঁশেলে চড়াইতে পেরেছেন সাক্সেসফ্যুলি। বিশ্বের খবর জানি না, বাংলাদেশে চেনা গণ্ডির বাইরে একদম গিন্নি-ছাপোষারও কদর লাভ করেছেন শাকিরা এই একটা গানে।
সেই বছরের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার হোস্ট হওয়ার মাধ্যমে। সেইসঙ্গে এই লাতিনো সংগীতমানবীর অতুলনীয় গলা, গায়নপনা আর নির্নিমেষ নাচের বিস্ময় খেলায় এনেছিল অন্য মাত্রা।
আর সেবারের বিশ্বকাপের থিম-স্যং ছিল ‘ওয়াকা ওয়াকা’। নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মজমিনে অনুষ্ঠিত সেই গানটার ভিশ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন পুরো ওয়ার্ল্ডকাপের সৌরভ অনেক গাঢ় ও সুস্থায়ী করে রেখেছিল। ওয়াকা ওয়াকা যারাই শুনেছে তারা আর এর ইন্দ্রজাল ছিঁড়ে বেরোতে পারে নাই।
মিউজিক ভিডিয়ো হয়েছিল গানটার। দারুণ নৃত্যসাবলীল নেশাচাগানো সুরসংশ্রয়। দেখামাত্র চোখে, কানে এবং মনে গেঁথে যায়। গানটির ভিডিয়োতে কে বা কারা ছিলেন, এইভাবে জিগ্যেশ না করে বরং জিগাই ছিলেন না কারা! লিওনেল মেসি ছিলেন, শাকিরার হাসব্যান্ড ফুটবলার জেরার্ড পিকে ছিলেন, নেইমার তো ছিলেনই। কত কত ফুটবলরাঘবের উপস্থিতি নিয়া ভিডিয়োটা আমাদের অভিজ্ঞতাভুক্ত হয়েছিল!
গাওয়ার পাশাপাশি নৃত্যকলায় শাকিরার দখল তো দুনিয়া জানে। ফের জানল। পুনরায় দেখল। কলাম্বিয়ান এই পপনক্ষত্র যে-গানটা গেয়েছেন তা ফিফাহিস্ট্রিতে বেস্ট তিন বা পাঁচের একটা হবেই নির্ঘাৎ।
‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানটি নিয়া শাকিরা আরেক রেকর্ড গড়েন বছর-পাঁচের মধ্যেই। ইউটিউবে এই শিল্পীর শুধু ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানটা কোটি ভিয়্যু আর্ন করে ফেলে অচিরে। এইটা রেকর্ড একটা তখন পর্যন্ত।
অবশ্য কোটি ভিয়্যু তখনই রিচ করেছিলেন ব্রুনো মার্স এবং এনরিকে। অ্যানিওয়ে। তৃতীয় লাতিন শিল্পী হিশেবে এই রেকর্ড গড়েছিলেন জেরার্ড পিকে-র তৎকালীন গার্লফ্রেন্ড ও বর্তমান ধর্মপত্নী। শাকিরা সাক্ষাৎকারে এই জিনিশটা আল্টিমেইটলি স্বীকারও করেছিলেন যে ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গাইবার পরে তার জিন্দেগি বদলে গিয়েছে। জেরার্ডকে পেয়েছেন তিনি ফুটবলদৌত্যেই। মিষ্টি একটা সংসার হয়েছে তার, দেখেছেন সন্তানের স্বর্গীয় মুখটি।
পৃথিবী জুড়েই মিউজিক্যালি এবং প্রেজেন্টেশন্যালি রিচ এই গানের ঘোর আজও উবে গেছে বলা যাবে না। আর, অধিকন্তু ন দোষায়, শাকিরার নাচের ঘোর? বাঁকা দুই নয়নে লাগা সেই নিশা?
প্রতিবেদন / সুবর্ণ বাগচী
… …
- ফিউরিয়োসা - September 26, 2024
- অনবরত অনুসন্ধান || সজীব তানভীর - September 26, 2024
- অ্যাক্টর্স জার্নাল : শতেক পাতার লাইনটানা ব্ল্যাঙ্ক নোটবুক - September 26, 2024
COMMENTS